নৌবাহিনীকে শক্তিশালী করতে সরকার বদ্ধপরিকর- বানৌজা পদ্মার কমিশনিংয়ে প্রধানমন্ত্রী
নৌবাহিনীর জন্য বাংলাদেশে নির্মিত প্রথম যুদ্ধজাহাজ ‘পদ্মা’র কমিশনিং করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় স্বার্থে নৌবাহিনীকে বাংলাদেশের জলসীমায় যে কোন আগ্রাসন মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমাদের সীমিত সম্পদ দিয়ে নৌবাহিনীর মতো একটি প্রযুক্তিনির্ভর ব্যয়বহুল বাহিনীকে যুগোপযোগী করতে সবাইকে সচেষ্ট থাকতে হবে। সরকার গঠনের পর সাত বছরের স্থবিরতা কাটিয়ে নৌবাহিনীকে একটি কার্যকর বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে ইতোমধ্যে স্বল্প এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। ইনশাআল্লাহ ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য আমরা একটি আধুনিক ত্রিমাত্রিক নৌবাহিনী গড়ে তুলব যা যুদ্ধকালে নিজ জলসীমায় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সক্ষম হবে।বৃহস্পতিবার খুলনায় নৌবাহিনী ঘাঁটি তিতুমীরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নবনির্মিত জাহাজটি ‘বানৌজা পদ্মা’ হিসেবে কমিশন করে বাংলাদেশ নৌবহরে সংযোজন করেন। সকালে হেলিকপ্টারযোগে প্রধানমন্ত্রী খুলনার নৌবাহিনী ঘাঁটি তিতুমীরে এসে পৌঁছুলে নৌবাহিনীপ্রধান ভাইস এডমিরাল জহির উদ্দিন আহমেদ এবং কমডোর কমান্ডিং খুলনা কমডোর এমএম রাজীব তাঁকে স্বাগত জানান। নৌবাহিনীর একটি সুসজ্জিত দল প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার প্রদান করেন। প্রধানমন্ত্রী এ সময় গার্ড পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করেন।
কমিশনিং অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী জাহাজের অধিনায়ক লে. কমান্ডার শফিউল আজম পিএসসির কাছে কমিশন ফরমান হস্তান্তর করেন। এ সময় নৌবাহিনীর ঐতিহ্যগত প্রথা অনুযায়ী বেল বাজানো, পতাকা উত্তোলন, কমিশনিং পেনেন্ট উত্তোলন এবং জাহাজটি পতাকা দিয়ে সুসজ্জিত করা হয়। প্রধানমন্ত্রী এরপর ৫৪ কোটি টাকা ব্যয়ে দেশেই নির্মিত এই যুদ্ধজাহাজে উঠে উল্লেখযোগ্য স্থানসমূহ ঘুরে দেখেন। নৌবাহিনীর অফিসাররা জানান, বিদেশ থেকে এই মানের যুদ্ধজাহাজ কিনতে গেলে কমপক্ষে এক শ’ কোটি টাকা লাগত। দেশে এ জাহাজটি নির্মিত হওয়ায় সরকারের ৪৫ থেকে ৫০ কোটি টাকা কম খরচ হলো।
প্রধানমন্ত্রী কমিশনিং অনুষ্ঠানে আরও বলেন, আমরা যুদ্ধবিগ্রহ নয়, শাান্তি চাই। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমাদের নৌবাহিনীর প্রয়োজন আমাদের সম্পদ রক্ষার জন্য, সাইক্লোন মোকাবেলা করার জন্য। আমরা কারও সঙ্গে যুদ্ধ করতে চাই না, কিন্তু আত্মরক্ষা করার মতো ক্ষমতাও আমাদের থাকা দরকার।’ আমরাও এই নীতিতে বিশ্বাস করি। তিনি বলেন, আমাদের সমুদ্রসীমায় সার্বক্ষণিক টহলের মাধ্যমে অস্ত্র পাচার ও চোরাচালান রোধসহ সম্পদ সংরক্ষণ, সর্বোপরি সমুদ্রপথ উন্মুক্ত রাখতে নৌবাহিনীকে ভবিষ্যতে আরও সুসজ্জিত করে গড়ে তুলতে আমাদের সরকার বদ্ধপরিকর।
তিনি বলেন, বঙ্গোপসাগরকে ঘিরে নতুন অর্থনৈতিক এবং সামরিক শক্তি বিকশিত হচ্ছে। বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারত, মিয়ানমার ও চীনে বাণিজ্যিক জাহাজের চলাচল বেড়েই চলেছে। সোনাদিয়ায় পরিকল্পিত ‘ডিপ সি পোর্ট’ স্থাপনের মাধ্যমে সমুদ্রপথে বৈদেশিক বাণিজ্য বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে। এজন্য আমাদের সরকার ইতোমধ্যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং কূটনৈতিক অঙ্গনে সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্য চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর উন্মুক্ত করেছে। আর এজন্য সমুদ্রে নিরাপত্তার লক্ষ্যে আমাদের একটি শক্তিশালী নৌবাহিনী অত্যাবশ্যক।
গভীর সমুদ্রে বিশাল জলসীমায় বাংলাদেশের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের বিশাল সামুদ্রিক এলাকায় জলপথে বাণিজ্য পরিচালনা ছাড়াও এখানে আছে মৎস্য, গ্যাস ও অন্যান্য খনিজ পদার্থসহ অফুরন্ত সম্পদ। এসব সম্পদ এবং সমুদ্র এলাকার সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য আমাদের একটি শক্তিশালী ও আধুনিক নৌবাহিনীর কোন বিকল্প নেই। বিগত দিনগুলোতে দেশ গঠনমূলক কর্মকা-ে নৌবাহিনীর সক্রিয় ভূমিকার জন্য নৌবাহিনীর প্রতিটি সদস্যকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, আপনারা উন্নত কর্মদক্ষতা, শৃঙ্খলা এবং চেইন অব কমান্ড বজায় রেখে বিশ্ব দরবারে আমাদের নৌবাহিনীর মর্যাদাকে সমুন্নত রাখবেন।
বাংলাদেশে নির্মিত প্রথম এই যুদ্ধজাহাজ পদ্মা ৫০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং সাড়ে সাত মিটার প্রস্থের পরিসর বিশিষ্ট। জাহাজটি ঘণ্টায় প্রায় ২৪ নটিক্যাল মাইল বা ৪৪ কিলোমিটার বেগে চলতে সক্ষম। প্রতিপক্ষের ভূমি ও আকাশপথে আক্রমণ প্রতিরোধের জন্য এ জাহাজটিতে চারটি ৩৭ মিলিমিটার ও দুটি ২০ মিলিমিটার কামান সংযোজিত আছে। এছাড়া জাহাজটি শত্রুর অনুপ্রবেশরোধে সমুদ্র ও নদীপথে কার্যকরভাবে মাইন স্থাপন করতে সক্ষম। শান্তিকালীন সময়ে জাহাজটি খুলনা নৌ কমান্ডের অধীনে দেশের দক্ষিণ পশ্চিম উপকূলীয় সুন্দরবন এলাকা ও সংশ্লিষ্ট সমুদ্র এলাকায় নিরাপত্তা টহল কার্যক্রমে নিয়োজিত থাকবে।
No comments