আদর্শ প্রস্তুতি অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের- দুর্দান্ত ফর্মে সেরেনা
রাউন্ডে যখন আসরে অন্যতম ফেবারিট চেক প্রজাতন্ত্রের পেত্রা কেভিতোভাকে হারিয়ে দেন, তখন অনেক টেনিসবোদ্ধাই মনে করেছিলেন ব্রিসবেন ইন্টারন্যাশনালের ফাইনালে উঠবেন এবং শিরোপাও নিজের করে নিতে পারেন আনাস্তাসিয়া পাভলিউচেঙ্কোভা।
তাঁদের বিশ্লেষণ আংশিক ফলেছে। পাভলিউচেঙ্কোভা ফাইনালে উঠেছেন ঠিকই, কিন্তু চ্যাম্পিয়ন হতে পারেননি। পারবেন কি করে? সেখানে তো অপেক্ষা করছিলেন সেরেনা উইলিয়ামস, ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মে এখন যিনি অবস্থান করছেন। শনিবার প্যাট রাফটার এ্যারেনায় অনুষ্ঠিত ফাইনালের ম্যাচটি যে একপেশে হয়ে গেল, সেটা মেয়েদের পাওয়ার টেনিসের অন্যতম এ প্রবক্তা মার্কিন কৃষ্ণকলির কারণেই। রুশ প্রতিপক্ষ পাভলিউচেঙ্কোভাকে তিনি দাঁড়াতেই দিলেন না। শিরোপা জিতে নিলেন ৬-২, ৬-১ গেমে। এ আসরে এটাই সেরেনার প্রথম ও ক্যারিয়ারের ৪৭তম টাইটেল ট্রফি (মোট ফাইনাল-৬২, রানার্সআপ ১৫টিতে)। এ নিয়ে সর্বশেষ ৩৬ ম্যাচের মধ্যে ৩৫ ম্যাচেই জয় পেলেন ৩১ বছর বয়সী সেরেনা। তিনি এ আসরে ফাইনালের আগে একে একে হারান স্বদেশী ভারভারা লেপচেঙ্কো, ফ্রান্সের এ্যালিজ কর্নেট, স্বদেশী সেøায়ানে স্টেফেন্স এবং বেলারুশের ভিক্টোরিয়া আজারেঙ্কাকে (ওয়াকওভার)। র্যাঙ্কিংয়ে হয়ত এক নম্বরে অধিষ্ঠিত হতে পারেননি। তারপরও সন্দেহাতীতভাবে গত বছরের সেরা মহিলা টেনিস খেলোয়াড় সেরেনা উইলিয়ামসই। সেই সঙ্গে একই বছরে মহিলা এককে উইম্বলডন, অলিম্পিক ও ইউএস ওপেন জয়ে বড় বোন ভেনাস উইলিয়ামস ও সাবেক জার্মান কিংবদন্তি স্টেফি গ্রাফের অনন্য রেকর্ডে ভাগ বসান। ২০১২ সালে ৭টি আসরের ফাইনাল খেলে প্রতিটিরই শিরোপা কব্জা করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে দুটি গ্র্যান্ডসযাম শিরোপা উইম্বল্ডন ও ইউএস ওপেন।রাদওয়ানাস্কা ॥ নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডে অনুষ্ঠিত মেয়েদের হার্ডকোট সারফেসের টেনিস আসর ‘এএসবি ক্লাসিক’-এ চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন এ্যাগনিয়েস্কা রাদওয়ানাস্কা। ২৩ বছর বয়সী ও আসরের শীর্ষ বাছাই (ডব্লিউটিএ র্যাঙ্ক-৪) এই পোলিশকন্যা ফাইনালে হারান তৃতীয় বাছাই বেলজিয়ামের ইয়ানিনা উইকমেয়ারকে। ফাইনালের স্কোরলাইন ছিল : ৬-৪, ৬-৪। এটা ক্যারিয়ারে ১৫তম ফাইনাল খেলে রাদওয়ানাস্কার একাদশ শিরোপা। দীর্ঘ আট মাস পর কোন প্রতিযোগিতামূলক আসরের শিরোপা জিতলেন তিনি। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে তিনি এবারই প্রথমবারের মতো কোন শিরোপা জিতলেন। ফাইনালের আগে রাদওয়ানাস্কা হারান প্রথম রাউন্ডে গ্রেটা আর্ন, দ্বিতীয় রাউন্ডে সিমোনা হ্যালেপ, কোয়ার্টার ফাইনালে এলেনা ভেসনিনা এবং সেমিফাইনালে জেমি হ্যাম্পটনকে।
‘এর চেয়ে ভালভাবে আমি বছরটা শুরু করতে পারতাম না। অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের জন্য এটা ছিল আদর্শ প্রস্তুতি। এজন্য আমি খুশি।’ শিরোপা জয়ের পর এভাবেই নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করেন রাদওয়ানাস্কা। নাম্বার ওয়ান নন রাদওয়ানাস্কা। কিন্তু তাতে কি? শিরোপা জিততে সেটা কোন বাধা নয়, বরং নিজের চেয়ে র্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা খেলোয়াড়দের হারাচ্ছেন অহরহই। অনিন্দ্যসুন্দরী এ টেনিসকন্যার কারণেই পোল্যান্ড আজ সুপরিচিত। ৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৯ সালে পোল্যান্ডের ক্রাকৌউতে জন্ম নেয়া রাদওয়ানাস্কা ২৩ এপ্রিল, ২০০৫ সালে পেশাদারি টেনিসে প্রবেশ করেন। ডান-হাঁতি (দু’হাতে ব্যাকহ্যান্ড) রাদওয়ানাস্কা এ পর্যন্ত টেনিস খেলে উপার্জন করেছেন ১ কোটি ১০ লাখ ৫১ হাজার ৬৭৭ ডলার। ক্যারিয়ার রেকর্ড হচ্ছে এককে ৩৫৩ ম্যাচে জয়ের বিপরীতে হেরেছেন ১৫৩ ম্যাচে। ক্যারিয়ারে এ পর্যন্ত জিতেছেন ১৩টি টাইটেল ট্রফি। এখনও কোন গ্র্যান্ডসø্যাম শিরোপা জিততে পারেননি। তবে উইম্বল্ডন ওপেনে ফাইনাল খেলেছেন (২০১২)। এখন দেখার বিষয়, আসন্ন অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে চ্যাম্পিয়ন হতে পারেন কি না রাদওয়ানাস্কা।
পিছিয়ে নেই লি না ॥ চীনে অনুষ্ঠিত শেনঝেন ওপেনে শীর্ষ বাছাই ছিলেন যিনি, সেই ‘লোকাল ফেবারিট’ লি না-ই শনিবার শেষ পর্যন্ত ফাইনালে চেক প্রতিপক্ষ ক্লারা জাকাপালোভাকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হন। এটা ৩০ বছর বয়সী ও ২০১১ সালের ফ্রেঞ্চ ওপেন শিরোপাধারী লি’র ক্যারিয়ারের সপ্তম ডব্লিউটিএ টাইটেল ট্রফি (পঞ্চদশ ফাইনাল)। হার্ডকোর্টের এই টেনিস আসরের ফাইনালে আসতে লি হারান যথাক্রমে লুক্সেমবার্গের ম্যান্ডি মিনেলা, যুক্তরাষ্ট্রের জুলি কোহেন, সার্বিয়ার বোজানা জোভানভস্কি এবং স্বদেশী পেং শুয়াইকে। ২০১২ সালটা লি’র জন্য ছিল হতাশার। চারটি আসরের ফাইনালে উঠে চ্যাম্পিয়ন হন কেবল একটিতে (সিনসিনাতি ওপেন)। আর হেরে যান সিডনি, রোম এবং মন্ট্রিল ওপেনে।
চীনাদের কাছে ‘লি’ নামটি অনেক বেশি গুরুত্ব পায়। চলচ্চিত্রে মার্শাল আর্টকে প্রথম নিয়ে আসা ব্রুস লি চীনাদের কাছে অমরত্বের আসন পেয়ে গেছেন অনেক আগেই। ব্রুস লি’র মতো না হলেও চীনাদের কাছে দারুণ জনপ্রিয় হচ্ছেন একই ঘরানার শিল্পী জেট লি। এঁরা দু’জনই পুরুষ। তৃতীয় আরেকজন ‘লি’ আছেন, যিনি মহিলা। তিনিও শিল্পী, তবে চলচ্চিত্রের নন, টেনিসের। তাঁর নাম লি না। নিজের টেনিস কীর্তি দিয়ে ইতোমধ্যেই যিনি দেশবাসীর হৃদয়ের মণিকোঠায় নিয়েছেন ঠাঁই করে, টেনিসবিশ্বে ছড়িয়ে দিয়েছেন স্বীয় নৈপুণ্যের উদ্ভাসিত আলোকমালা। সেই লি না-ই হচ্ছেন আজকের চীনা টেনিসের মূল আকর্ষণ।
মারে কি পারবেন? ॥ রাফায়েল নাদাল, রজার ফেদেরার কিংবা নোভাক জোকোভিচ নয়, অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের শিরোপাধারী হতে পারেন এ্যান্ডি মারে! কিভাবে? সাম্প্রতিক নৈপুণ্যের প্রেক্ষাপটে। ব্রিসবেন ইন্টারন্যাশনাল টেনিস টুর্নামেন্টে পুরুষ এককে শিরোপা পুনরুদ্ধার করেছেন স্কটল্যান্ডের এ টেনিস তারকা। তবে জয়টা খুব সহজে পাননি তিনি। নিজের সব অভিজ্ঞতা ব্যয় করে রবিবারের ফাইনালে মারে ৭-৬ (৭/০), ৬-৪ গেমে হারান বুলগেরিয়ার গ্রেগর দিমিত্রভকে পরাজিত করে এ শিরোপা জয় করেন।
জমজমাট এ ফাইনালের প্রথম সেটে ৪-১ গেমে পিছিয়ে থাকার পর নিজের খেলার কৌশল পরিবর্তন করতে বাধ্য হন মারে।
প্রায় দেড় ঘণ্টা স্থায়ী ম্যাচ শেষে খেলোয়াড়ী জীবনে ২৫তম এটিপি শিরোপার মুখ দেখলেন এ স্কটিশ। এছাড়া সপ্তাহান্তে শুরু হতে যাওয়া অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের প্রস্তুতিটা বেশ ভালভাবেই শেষ করলেন তিনি।
এ বছর লন্ডন অলিম্পিক টেনিসে পুরুষদের এককে স্বর্ণ জেতেন মারে। ফাইনালে হারান ফেদেরারকে। তাঁর এ জয়ে অবসান হয় ব্রিটিশদের ১০৪ বছরের প্রতীক্ষার। ১৯০৮ সালে এ লন্ডনেই সর্বশেষ ব্রিটিশ হিসেবে অলিম্পিক টেনিসের পুরুষ এককে শিরোপা জিতেছিলেন জোসিয়া রিচি। একক জয়ের পর মারের সামনে ছিল মিশ্র দ্বৈত জিতে ‘ডাবল’ অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগও। লরা রবসনকে সঙ্গী করে বেলারুশিয়ান জুটি ভিক্টোরিয়া আজারেঙ্কা ও ম্যাক্স মিরনির বিপক্ষে ফাইনালে হেরে রুপা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাঁকে। এছাড়া জেতেন ইউএস ওপেনের শিরোপাও। এর মধ্য দিয়ে ১৯৩৬ সালে ফ্রেড পেরির পর কোন ব্রিটিশ পুরুষ গ্র্যান্ডসø্যাম জেতেন।
No comments