স্টেশন by আসিফ আবরার



স্টেশনের এই বেঞ্চটার জ্যামিতিক জ্ঞান বেশ ভালো। বেশ গা এলিয়ে আকাশ দেখা যায়। আজ আকাশটাকে অদ্ভুত লাগছে। সমুদ্রের মতো। তাতে মাছের মতো আচমকা ঘাঁই মেরে বালিকা মেঘদের চমকে দিচ্ছে একটি ঘুড়ি।
আচ্ছা, আকাশ দেখাটা কি বিলাসিতার পর্যায়ে পড়ে? নাকি এটি একধরনের নির্মমতা? যখন বেঞ্চের ঠিক পাশেই ভীষণ অবহেলায় একাকী গোলাপের মতো পড়ে থাকে আরও অনেক আকাশ? না, আমি অতটা নির্মম নই। তাই আমি ঘাড় ফেরালাম। দেখতে দেখতে আমার চোখ ছেয়ে যায় গোলাপি ছত্রাকে।
আসলে ভাবনা বিষয়টির কোনো শুরু নেই। শেষ নেই। নেই কোনো নিয়মতান্ত্রিক সুর। ভীষণ স্বেচ্ছাচারী বেসুরো ওরা। বেজে ওঠে যখন-তখন। বেলায়। অবেলায়। পালে লাগে উত্তরে হাওয়া। কখন যেন সেই নাম না-জানা নদীটির স্বচ্ছ জলে ঢেউ তুলে সরে যেতে থাকে আমার এত কালের পরিচিত নৌকার ছইটি। নদীটি একলা পড়ে থাকে। নিস্তরঙ্গ। ছায়াশূন্য।
উত্তরে বাতাসে কখনো কখনো প্রশ্ন থাকে না। স্বপ্নের বাঁ পাশজুড়ে কেবল উত্তরের ছড়াছড়ি। যার দৃষ্টি কেবল উত্তরমুখী, বলাই বাহুল্য, দক্ষিণের সঙ্গে তার নিদারুণ শত্রুতা। তাই আমার ভাবনাটিরও কোনো দক্ষিণ ছিল না। তবে দক্ষিণায়ন ছিল।
মেঘগুলোকে আজ এত রহস্যময় লাগছে কেন? কেন মনে হচ্ছে, এই রহস্যের সমাধান আমার বের করতেই হবে? আমি তো কখনোই আকাশপ্রেমী ছিলাম না। তবে কেন মনে হচ্ছে আজ এই নিরপরাধ গোলাপ হাতে আমার কিছুটা আকাশ চাই-ই চাই? চাই চাই স্বভাবটি তো আমার কখনোই ছিল না। পশ্চিমের প্রতি কখনোই তেমন আকর্ষণ বোধ করিনি আমি। কিছুটা অন্দর ও কিছুটা অন্ধকারমুখী বলে পূর্বের সঙ্গে আমার আজন্মের বৈরিতা। তবে কি আসলেই ভাবনার কোনো শুরু থাকে না? এই চরম অসত্যকে কি আমার নির্বিবাদে মেনে নিতে হবে?
স্টেশনের দেয়ালে পানের পিক, রেললাইনের দুই ধারে বর্জ্যের বিশ্রী বিন্যাস। দুই ধারে ঘর বেঁধেছে ভাগ্যের রেলে কাটা পড়া, চামেলী হাতে কিছু নিম্নমানের মানুষ। কিন্তু এর কোনো কিছুকেই আমার তেমন অসামঞ্জস্যপূর্ণ লাগছে না। কেবলই মনে হচ্ছে, আসন্ন আন্তনগরেই হতে পারে আমাদের বাসর। তার আঁচলে রচিত হবে আরও অনেক আকাশ। এক জনম কাটিয়ে দেওয়ার মতো অজস্র স্বপ্ন...ট্রেন এসে গেছে। মেয়েটি আমার পাশ ছেড়ে উঠে গেল অবলীলায়। আমার শুরুবিহীন ভাবনার সুরটিও যেন কেটে গেছে কখন। ঘুড়িটিও যে কখন সুতো কেটে বেরিয়ে গেছে স্টেশন ছেড়ে, আমি টেরও পেলাম না।

No comments

Powered by Blogger.