লাখ লাখ মানুষের শ্রদ্ধাঞ্জলি- জ্যোতি বসুর শেষকৃত্যে হাসিনা সোনিয়া আদভানি
জ্যোতি বসুর মামুন-অর-রশিদ আৰরিক অর্থেই অবিশ্বাস্য। পাঁচ থেকে ছয় লাখ লোকের জনঢেউ, আছড়ে পড়েছে বিধানসভা প্রাঙ্গণে। এখানে সর্বসাধারণের শেষ শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য জ্যোতির্ময় জ্যোতি বসুর মরদেহ কফিনে রাখা হয়েছিল ঘণ্টা চারেকের জন্য।
নারী-পুরম্নষ, বৃদ্ধবনিতা আর কিশোর, যুবক-যুবতী সবার হাতে পুষ্পমাল্য। মায়ের আরাধনা_তাঁর ছেলে জ্যোতি বসুর দর্শনে বেড়ে উঠুক। গোটা কলকাতা শহর সকাল থেকে ফুলশূন্য। কলকাতার ফুলের পাহকারি বাজার হাওড়ায়ও কোন ফুল নেই। ৰমতাসীন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী থেকে বিরোধী দলের নেতা লালকৃষ্ণ আদভানি, বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীবর্গসহ কে আসেননি জ্যোতি বসুকে শ্রদ্ধা জানাতে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবয়বে বাষ্পরম্নদ্ধ কান্নার ঢেউ মেঘের মতো ভেসে উঠেছে জ্যোতি বসুর নিথর দেহের সামনে। জ্যোতি বসুুর কফিনে পুষ্পসত্মবক দিয়ে তিনি নীরবে কিছু সময় কাটান। মরণেও ইতিহাস গড়ে গেলেন ভারতবর্ষের খ্যাতনামা বামনেতা জ্যোতি বসু। এ যেন জ্যোতির্ময় এক নৰত্রের লোকচৰুর আড়ালে চলে যাওয়া। সত্যিই মরণেও অমর হয়ে রইলেন জ্যোতি বসু। ভারতবর্ষের কিংবদনত্মি কমিউনিস্ট নেতা জীবদ্দশায়ই নিজদেহ চিকিৎসাবিজ্ঞানের কল্যাণে দান করে গেছেন। সত্যিই, মৃতু্য যেন হার মেনেছে জ্যোতি বসুর জ্যোতির্ময় জীবনের কাছে। ভারতের সরকারী দল কংগ্রেস সভানেত্রী ও ইউপিএ জোট নেত্রী সোনিয়া গান্ধী থেকে শুরম্ন করে মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, রাজনৈতিক নেতাকর্মী থেকে সাধারণ মানুষ আর পেশাজীবী-সংস্কৃতিকর্মী সবাই মঙ্গলবার সমবেত হয়েছেন প্রয়াত জ্যোতি বসুর মরদেহে পুষ্পিত শ্রদ্ধা জানাতে। সিপিএমের চির প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রয়াত জ্যোতি বসুর সম্মানে দলীয় পতাকা তিন দিনের জন্য অর্ধনমিত রাখলেন। দলীয় সব কর্মসূচী স্থগিত করেন। পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতবর্ষের ইতিহাসে মহাপ্রয়াণ যাত্রায় মৃতু্যঞ্জয়ী হয়ে ওঠার এমন ইতিহাস সংখ্যায় কম। মঙ্গলবার পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গানস্যালুট আর তোপধ্বনির পর জ্যোতি বসুর জীবদ্দশায় করে যাওয়া উইল অনুযায়ী মরদেহ কলকাতার পিজি হাসপাতাল কর্তৃপৰের কাছে হসত্মানত্মর করা হয়।পিস ভবনে ফ্রিজারে সংরৰিত মরদেহ মঙ্গলবার সকাল ৭টায় নিয়ে যাওয়া হয় মহাকরণের রাজ্য সচিবালয়ে। সেখান থেকে নেয়া হয় বিধানসভায়। এখানে রাষ্ট্রীয় পতাকায় আচ্ছাদিত করে সর্বসত্মরের মানুষের শেষ শ্রদ্ধা জানাতে চার ঘণ্টার জন্য রাখা হয় মৃতু্যঞ্জয়ী জননেতা জ্যোতি বসুর মরদেহ। দেশ বিদেশের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, দলের নেতাকর্মী, সাধারণ মানুষ ফুলেল শ্রদ্ধায় অভিসিক্ত করেছেন প্রয়াত জ্যোতি বসুকে। এখান থেকে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের পার্টি সদর দফতরে। পার্টি কার্যালয় থেকে তাঁর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় মহাপ্রয়াণ যাত্রায় মোহরকুঞ্জের রবীন্দ্র সদনের উদ্যানে। সেখানেই গানস্যালুট আর ২১ বার তোপধ্বনির পর জ্যোতি বসুুর দেহ মেডিক্যাল সায়েন্সের গবেষণার জন্য দান করা হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে পিজি হাসপাতাল কর্তৃপৰের কাছে এই জননেতার মরদেহ হসত্মানত্মর করা হয়। জীবদ্দশায় দান করে যাওয়া চোখ দু'টি মৃতু্যর পর নির্ধারিত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা গ্রহণ করে রবিবার দুপুরে।
মঙ্গলবার জ্যোতি বসুকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর আনুষ্ঠানিকতায় যা ঘটেছে তা না দেখলে যে কারও কাছেই অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে। স্থানীয় পুলিশের ধারণা ৫ থেকে ৬ লাখ লোক সমাগম ঘটেছে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণে। ঠিক মরণেও যেন ইতিহাস গড়ে গেলেন জ্যোতি বসু। কলকাতার একজন সিনিয়র সাংবাদিক পুলিশের মতামত তুলে ধরে জনকণ্ঠকে বলেন, কলকাতায় শেষ শ্রদ্ধা জানানোর এমন আনুষ্ঠানিকতায় বিশেষভাবে উলেস্নখ্যযোগ্য বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিধান চন্দ্র রায়, মহানায়ক উত্তম কুমার আর সত্যজিৎ রায়ের মহাপ্রয়াণ যাত্রা। কিন্তু সব মহাপ্রয়াণ যাত্রাকে ছাড়িয়ে জ্যোতি বসুুর মহাপ্রয়াণ যাত্রা নতুন রেকর্ড করে ইতিহাস গড়ল। কলকাতার সাংবাদিক সুব্রত রায় জনকণ্ঠকে টেলিফোনে জানান, ফুলেল শুভেচ্ছায় অভিসিক্ত হয়ে ফুলের সত্মূপ জমে যায় বিধানসভা প্রাঙ্গণে। অতীতের সকল মহাপ্রয়াণ যাত্রার ইতিহাস ভেঙ্গে জ্যোতি বসু মরণেও রেকর্ড গড়ে গেলেন। যাঁরা এসেছেন সবাই কেঁদেছেন। নীরব অশ্রম্ন বিসর্জন দিয়েছেন। এ যেন একানত্ম আপনজনের চলে যাওয়া। কিন্তু জ্যোতি বসুু তাঁর জীবন চর্চাবোধ দিয়ে শাণিত করা দর্শন রেখে গেছেন। সেখানেই জ্যোতি বসুুর শূন্যতা পূরণ হবে বলে ভক্ত-অনুরাগী নেতাকর্মী ও সমর্থকদের বিশ্বাস।
দু'দশকেরও বেশি সময় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের নেতৃত্বদানকারী স্বনামধন্য বর্ষীয়ান কমিউনিস্ট নেতা জ্যোতি বসুর জীবন অধ্যায়ের অবসান হলো। দীর্ঘ ১৭ দিন মৃতুর সঙ্গে লড়ে অবশেষে কলকাতা হাসপাতালে তাঁর জীবনাবসান ঘটে রবিবার সকালে। ১১টা ৪৭ মিনিটে তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন। ১৯৭৭ সালে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হন এবং নিরবচ্ছিন্নভাবে ২৩ বছর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর মৃতু্যর সংবাদে কলকাতাসহ গোটা ভারত এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন মহলে শোকের ছায়া নেমে আসে। উলেস্নখ্য, গত ১ জানুয়ারি ফুসফুসের সংক্রমণ নিয়ে সল্টলেকের এক বেসরকারী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ৯৬ বছরের ওই কমিউনিস্ট নেতা। তার পর গত ১৭ দিন ধরে একের পর এক তাঁর অঙ্গ বিকল হতে থাকে। শেষ চেষ্টা হিসেবে ওই দুপুরেই চিকিৎসকরা তাঁকে টানা ডায়ালসিস দেয়ার পরিকল্পনা নেন। রাতে অস্থায়ী পেসমেকারও বসানো হয়। কিন্তু সব লড়াই শেষ হয়ে যায় রবিবার সকালে। এদিকে জ্যোতি বসুর প্রতি সম্মান জানাতে পশ্চিমবঙ্গ সরকার গত সোমবার বন্ধ পালন করে।
অজস্র মানুষের অশ্রম্নধারা
একটানা ২৩ বছর মুখ্যমন্ত্রীর পদে থেকে পশ্চিমবঙ্গের চেহারা পাল্টে দিয়েছেন। অর্জন করেছেন মানুষের অকুণ্ঠ সমর্থন-ভালবাসা, বিশ্বাস আর আস্থা। পশ্চিমবঙ্গের মানুষের কাছে তিনিই ছিলেন নির্ভরযোগ্য ঠিকানা। পরহিতের জীবনব্রত জ্যোতি বসুুকে করেছে মৃতু্যঞ্জয়ী। ভোগবাদী এই সমাজ বাসত্মবতায় ত্যাগ আর সংস্কারের মানসে সাধারণ মানুষের জীবনধারণ মান উন্নয়নে আমৃতু্য সাধনা করেছেন প্রয়াত এই জননেতা। ভারতের ৰমতাসীন জোটের নেত্রী সোনিয়া গান্ধী থেকে শুরম্ন করে শীর্ষ পর্যায়ের মন্ত্রী, সকল রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদসহ মন্ত্রিপরিষদের কয়েকজন সদস্য তাঁর কফিনে পষ্পসত্মবক অর্পণ করেন।
সমাজতন্ত্র আর গণতন্ত্রের মেলবন্ধন তৈরিতে জ্যোতি বসু অনেক বাসত্মব পদৰেপ নিয়েছিলেন। কমিউনিস্ট নেতা হয়েও সংস্কার আন্দোলনের অগ্রযাত্রায় তিনি পশ্চিমবঙ্গে অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তা পঞ্চায়েত কমিটি হোক আর ভূমি সংস্কারই হোক_ কোথায় তাঁর হাতের ছাপ নেই? দীর্ঘ ২৩ বছর মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করার পর স্বেচ্ছায় তাঁর ৰমতা ত্যাগ বিরল ঘটনা। শুধু তাই নয়, দলীয় সিদ্ধানত্ম মেনে নিয়ে তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর পদ গ্রহণ করেননি। দলীয় সিদ্ধানত্মের বাইরে যেতে হবে বলে দিলস্নীর মসনদ তাঁকে টানতে পারেনি। সর্বভারতীয় রাজনীতিতে তিনি ছিলেন জীবনত্ম কিংবদনত্মি। তিনি জনসাধারণের কাছে প্রিয়তম পিতা, অভিভাববক, নেতা, শ্রদ্ধাভাজনেষু আর সাধারণের জীবনধারণ মান অর্জনের এক দিকপাল। তাঁর মৃতু্যতে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সতীর্থ সোমনাথ মুখোপাধ্যায় লিখেছেন, তিনি আমাদের মানুষের রাজনীতি করতে শিখিয়েছেন। তাঁর মৃতু্যতে দ্বিতীয়বার পিতৃবিয়োগের মতো ব্যথিত হয়েছি। মহাপ্রয়াণ যাত্রার আনুষ্ঠানিকতায় বিধানসভা প্রাঙ্গণে জড়ো হয়েছেন তাঁদের অনেকেই হাউমাউ করে কেঁদেছেন। কেউবা শোকে বিলাপ করেছেন। অনেকের চাপা কান্না অনেকটা বাষ্পরম্নদ্ধ হয়ে নীরব অশ্রম্ন বিসর্জনে অনুভব করেছেন তাঁদের প্রিয় নেতার পরলোকগমনের বেদনা। তবে দলের নেতাকর্মী ও অনেক সাধারণ মানুষ বলেছে, আদর্শিক নেতার মৃতু্য নেই। জ্যোতি বসু গোটা ভারতবর্ষের একজন পথপ্রদর্শক। রাজনীতি ভোগের নয়_ ত্যাগের, সেখানে নীতি দর্শনই হচ্ছে চূড়ানত্ম সত্য_ জ্যোতি বসুর এই শিৰার শীলন তাঁকে আমাদের মধ্যে মৃতু্যঞ্জয়ী করে রাখবে। বয়স হয়েছে। তিনি মারা যেতেই পারেন। কিন্তু তাঁর আদর্শের মৃতু্য নেই_ এমন কথা বলতে বলতে জনৈক ভদ্র মহিলা কেঁদেই ফেলেন। জ্যোতি বসুর আদর্শই পশ্চিমবঙ্গের মানুষের কাছে তাঁর শূণ্যতা পূরণ করবে বলে সবাই আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
জ্যোতির্ময় জীবনের এক ঝলক
১৯১৪ সালে কলকাতায় এক সম্ভ্রানত্ম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন জ্যোতি বসু। ছোটবেলায় তাঁর নাম রাখা হয় জ্যোতিন্দ্র বসু। কিন্তু স্কুলে ভর্তি হওয়ার সময় তাঁর নাম ছোট করে রাখা হয় জ্যোতি বসু। তাঁর বাবা নিশিকানত্ম বসু পেশায় ডাক্তার ছিলেন। কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলিজিয়েট স্কুলে প্রাথমিক শিৰার পর জ্যোতি বসু প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে কলা বিভাগে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন ১৯৩৫ সালে। এরপর তিনি আইন পড়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যান এবং সেখানেই ভূপেশ গুপ্তের হাত ধরে কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন। ১৯৪০ সালে ব্যারিস্টারি পাস করে তিনি কলকাতায় ফিরে আসেন। ১৯৪৪ সালে ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৪৬ সালে তিনি প্রাদেশিক আইনসভার সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৫৭ সাল থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যনত্ম পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলের নেতার দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৪ সালে তিনি প্রথম পলিটবু্যরোর সদস্য নিযুক্ত হন। ১৯৬৭ সালে তিনি পশ্চিমবঙ্গে যুক্তফ্রন্ট সরকারের উপমুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন ১৯৭৭ সালের ২১ জুন। ১৯৯৬ সালে জ্যোতি বসুর ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ নিশ্চিত হলেও পার্টির পলিটবু্যরোর সদস্যরা রাজি না থাকায় তিনি প্রধানমন্ত্রী হননি। জ্যোতি বসুর পরিবর্তে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হন জনতা দলের এইচডি দেব গৌড়া। ভারতের প্রধানমন্ত্রী না হলেও ভারতের রাজনীতির ইতিহাসে একটানা দীর্ঘ সময় মুখ্যমন্ত্রী থাকার রেকর্ড গড়েছেন জ্যোতি বসুু। ২০০০ সালে স্বাস্থ্যগত কারণে জ্যোতি বসু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান। দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন সতীর্থ রাজনীতিক বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে। মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছাড়লেও তিনি রাজনৈতিক কর্মকা-ের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। ২০০৬ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর বয়সের ভারে নু্যব্জ জ্যোতি বসু দল থেকে অবসর নেন। কিন্তু দলীয় স্বার্থেই পরে আবার এ সিদ্ধানত্ম প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।
শেখ হাসিনার পুষ্প অর্পণ
শেখ হাসিনা জ্যোতি বসুর মরদেহের সামনে ২০ মিনিট ছিলেন। সেখানে তখন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীও তাঁর পাশেই ছিলেন। বিধানসভা ভবনে প্রবেশকালে লাখ লাখ জনতা হাত নেড়ে শেখ হাসিনার এই সফরে তাঁদের কৃতজ্ঞতার কথা জানান। শেখ হাসিনাও হাতে নেড়ে তাঁদের সমবেদনা জানান। তবে শেখ হাসিনার মুখ ছিল বিষণ্ন। যেন কালো মেঘের ঘনঘটা। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্ষীয়ান এই কমিউনিস্ট নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে জ্যোতি বসুর কফিনে পুষ্পসত্মবক অর্পণ করেন। স্থানীয় সময় বেলা ১টা ২৫ মিনিটে তিনি এই পুষ্পসত্মবক অর্পণ করেন। তখন জ্যোতি বসুকে ঘিরে '৭৫-এর ১৫ আগস্ট পরবর্তী দুঃসময়ের স্মৃতির রোমন্থন শেখ হাসিনার অবয়বকে যেন আরও ভারি করে তোলে। জ্যোতি বসুর কফিনে পুষ্পার্ঘ্য দেয়ার পর শোক বইতে লিখেছেন, জ্যোতি বসুুর এই বিদায়ে যা ৰতি হবে তা অপূরণীয়। পুষ্পাঘর্্য অর্পণের পর শেখ হাসিনা প্রয়াতের পুত্র চন্দন বসু ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাঁদের প্রতি সমবেদনা জানান। সকাল ১১টা ৪৫ মিনিটে বিমানবাহিনীর একটি বিশেষ বিমানে তিনি কলকাতার উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন। বেলা ১২টা ১০ মিনিটে তিনি কলকতা পেঁৗছান। পুষ্পসত্মবক অর্পণ শেষে তিনি রাজ্যসভার লবিতে কিছুটা নীরব সময় কাটান। এর পর সেখান থেকে তিনি হোটেল তাজ বাংলার উদ্দেশে যাত্রা করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৭ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া, চীফ হুইপ উপাধ্যৰ আব্দুশ শহীদ, ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটবু্যরো সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরম্নলস্নাহ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এমএ করিম, প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ, সাংবাদিক বেবী মওদুদ, আওয়ামী লীগের উপ-দফতর সম্পাদক মৃণাল কানত্মি দাস প্রমুখ । উলেস্নখ্য, প্রধানমন্ত্রী কলকাতা পেঁৗছলে পশ্চিমবঙ্গের ভারপ্রাপ্ত রাজ্যপাল দেবানন্দ কনোয়ার, রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত এবং মুখ্য সচিব অশোক মোহন চক্রবর্তী বিমানবন্দরে তাঁকে অভ্যর্থনা জানান। জ্যোতি বসুর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে বিমানবন্দর থেকেই তাঁকে বিধানসভায় নিয়ে যাওয়া হয়। বিএসএস জানিয়েছে, শেখ হাসিনা তাঁর সফরসঙ্গীদের নিয়ে বিকেল পাঁচটা ২৫ মিনিটে কলকাতা থেকে ঢাকায় ফিরে এসেছেন।
No comments