চাকরি নিয়ে মালয়েশিয়ায় by শরিফুল হাসান
যাঁরা কাজের জন্য বিদেশে যেতে চান, তাঁদের জন্য নতুন বছরের সুখবর—মালয়েশিয়া। চার বছর পর দেশটি আবার বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়া শুরু করতে যাচ্ছে। তবে এবার দেশটিতে কর্মী যাবেন দুই দেশের সরকারি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, যার নাম দেওয়া হয়েছে জি টু জি (গভর্নমেন্ট টু গভর্নমেন্ট)।
ফলে এবার ৪০ হাজার টাকায় কর্মীরা সেখানে যেতে পারবেন।
মালয়েশিয়ায় চার বছর ধরে জনশক্তি রপ্তানি বন্ধ ছিল। দীর্ঘ কূটনৈতিক যোগাযোগের পর এ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে দেশটি। গত ২৬ নভেম্বর এ বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারকও (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়েছে। মালয়েশিয়া জানিয়েছে, আগামী কয়েক বছরে বনায়ন (প্লান্টেশন), কৃষি (এগ্রিকালচার), উৎপাদন (ম্যানুফ্যাকচারিং), নির্মাণ (কনস্ট্রাকশন) এবং সেবা (সার্ভিস)—এ পাঁচ খাতে বাংলাদেশ থেকে পাঁচ লাখ কর্মী নেবেন তারা।
তবে শুরুটা হবে বনায়ন খাত দিয়ে। ইতিমধ্যে মালয়েশিয়া ১০ হাজার কর্মীর চাহিদাপত্রও পাঠিয়েছে। আগামী দুই মাসে এ খাতে আরও ২০ হাজার চাহিদাপত্র আসবে। বনায়ন খাতে যাঁরা কাজ করতে যেতে চান, তাঁদের জন্য ১৩ জানুয়ারি থেকে নাম নিবন্ধন শুরু হবে। মনে রাখতে হবে, নাম নিবন্ধন ছাড়া কোনো কর্মী এবার মালয়েশিয়া যেতে পারবেন না।
কী কী যোগ্যতা লাগবে: বনায়ন খাতের কর্মী হিসেবে যাঁরা মালয়েশিয়ায় যেতে চান, তাঁদের মোট সাতটি যোগ্যতা থাকতে হবে। এগুলো হলো: বাংলাদেশের নাগরিকত্ব, কৃষিকাজে অভিজ্ঞতা, বয়স ১৮ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে, গ্রাম এলাকার প্রকৃত বাসিন্দা, উচ্চতা কমপক্ষে পাঁচ ফুট বা তদূর্ধ্ব, ওজন কমপক্ষে ৫০ কেজি এবং ২৫ কেজি মালামাল হাতে করে বহনের ক্ষমতা। এ যোগ্যতার বাইরে কেউ বনায়ন খাতে যেতে পারবেন না।
কবে, কোথায় নিবন্ধন: মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর জন্য ১০ জানুয়ারি দেশের সব গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হবে। এরপর বিভাগ অনুযায়ী নাম নিবন্ধন শুরু হবে। নিবন্ধনের জন্য খরচ হবে মাত্র ৫০ টাকা। একেক বিভাগের কর্মীরা নাম নিবন্ধনের জন্য তিন দিন করে সময় পাবেন। নাম নিবন্ধনের পরদিনই লটারির মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে, কারা কারা এবার মালয়েশিয়ায় যাওয়ার জন্য যোগ্য হলেন।
একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, কোনো সাইবার ক্যাফে বা বাড়ির ইন্টারনেটে নয়, কেবল ইউনিয়ন তথ্যসেবাকেন্দ্রে গিয়েই নাম নিবন্ধন করা যাবে। অনেকের মনেই প্রশ্ন আছে, কেন শুধু ইউনিয়ন তথ্যসেবাকেন্দ্রেই নাম নিবন্ধন করা হচ্ছে? সরকার বলছে, যেকোনো জায়গায় নিবন্ধন করার সুযোগ দিলে প্রতারণা হবে। সে কারণেই ইউনিয়ন তথ্যসেবাকেন্দ্রে নিবন্ধনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখন শহর এলাকার কেউ যদি বনায়নকর্মী হিসেবে মালয়েশিয়ায় যেতে চান, তাঁকেও আশপাশের কোনো ইউনিয়ন তথ্যসেবাকেন্দ্রে যেতে হবে। প্রতিদিন সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত নিবন্ধন করা যাবে।
এবার জেনে নিন, কার কবে নাম নিবন্ধন করতে হবে। ঢাকা ও বরিশাল বিভাগে যাঁদের বাড়ি, তাঁদের নিজ নিজ ইউনিয়ন তথ্যসেবাকেন্দ্রে গিয়ে ১৩ থেকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত নাম নিবন্ধন করতে পারবেন। মনে রাখবেন, তাড়াহুড়ো বা আগে নাম নিবন্ধনের কোনো বিষয় নেই। ওই তিন দিন যাঁরা তথ্যকেন্দ্রে যাবেন, তাঁরা সবাই নাম নিবন্ধনের সুযোগ পাবেন। এ দুই বিভাগে নিবন্ধিত ব্যক্তিদের মধ্যে কারা মালয়েশিয়ায় যাওয়ার সুযোগ পাবেন, তার লটারি হবে ১৬ জানুয়ারি। জেলা সদরে এ লটারি হবে।তবে ইউনিয়নভিত্তিক কোটা ঠিকই থাকবে।
রাজশাহী, রংপুর ও সিলেট বিভাগের লোকজন ১৪ থেকে ১৬ জানুয়ারি নাম নিবন্ধন করার সুযোগ পাবেন। এখানে ১৭ জানুয়ারি লটারি হবে। খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগে ১৫ থেকে ১৭ জানুয়ারি নাম নিবন্ধন করা হবে। এখানে লটারি হবে ১৮ জানুয়ারি।
ইউনিয়ন কোটায় লটারি: মালয়েশিয়ায় যাওয়ার জন্য বিপুলসংখ্যক লোক অপেক্ষা করছেন। সরকার বলছে, যাঁরা যেতে চাইবেন, তাঁদের সবারই নাম নিবন্ধন করা হবে। তবে শেষ পর্যন্ত কারা যেতে পারবেন, সেটা ঠিক করা হবে লটারির মাধ্যমে। জনসংখ্যার ভিত্তিতে প্রতি ইউনিয়ন থেকে কোটা ঠিক করে ওই লটারি করা হবে। তবে তালিকা শুধুমাত্র জেলা সদরে জানানো হবে।
প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, কারও মধ্যে যেন কোনো প্রশ্ন তৈরি না হয়, সে জন্য তিন দিন নিবন্ধনের পর প্রত্যেক জেলায় স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে লটারির মাধ্যমে ইউনিয়নের জনসংখ্যার অনুপাতে কোটা অনুযায়ী কর্মীর তালিকা করা হবে। এভাবে সারা দেশ থেকে পাওয়া কর্মীর তালিকা সমন্বয় করে জাতীয় ভিত্তিতে সাড়ে ১১ হাজার কর্মীর একটি তথ্যভান্ডার করা হবে। এখান থেকে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে আবার লটারির মাধ্যমে প্রাথমিক পর্যায়ে পাওয়া চাহিদা অনুযায়ী ১০ হাজার কর্মী পাঠানোর চূড়ান্ত তালিকা করা হবে। যে ১০ হাজার ব্যক্তিকে চূড়ান্ত করা হবে, তাঁদের সবার মুঠোফোনে প্রয়োজনীয় তথ্য পাঠানো হবে। যাঁরা প্রথম দফায় যেতে পারবেন না, তাঁরা পরে চাহিদাপত্র পাওয়ার ভিত্তিতে যেতে পারবেন। কাজেই কাউকে নতুন করে আর নিবন্ধন করতে হবে না।
প্রশিক্ষণ নিতে হবে: এবার মালয়েশিয়ায় পাঠানোর আগে প্রত্যেক কর্মীকে প্রশিক্ষণ দেবে সরকার। তবে তার আগে ১৩টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে (টিটিসি) তাদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হবে। চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত কর্মীদের মুঠোফোনে বার্তা পাঠিয়ে জানিয়ে দেওয়া হবে কার কোন টিটিসিতে সাক্ষাৎ ও তথ্য যাচাই-বাছাই হবে। সাক্ষাতের পর কর্মীর স্বাস্থ্যপরীক্ষা করা হবে। এরপর তাঁর আঙুলের ছাপ নেওয়া হবে। এরপর আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থা (আইওএম) প্রত্যেক কর্মীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা নেবে।
সরকার বলছে, এবার প্রশিক্ষণ ছাড়া কোনো কর্মীকে মালয়েশিয়ায় পাঠানো হবে না। দেশের ৩৭টি সরকারি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে এলাকা অনুযায়ী কর্মীদের আসতে বলা হবে। এরপর তাঁকে ১০ দিনের একটি প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এ প্রশিক্ষণে তাঁকে মালয়েশিয়ার ভাষা, খাবার, সংস্কৃতি, আইনকানুন—এসব সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হবে। এ-সংক্রান্ত বইপুস্তকও দেওয়া হবে তাঁকে, যাতে মালয়েশিয়ায় গিয়ে তিনি কোনো সমস্যায় না পড়েন কিংবা কোনো আইন ভঙ্গ না করেন।
কত খরচ, কত বেতন? সরকারিভাবে এবার মালয়েশিয়ায় যেতে একজন কর্মীর সর্বোচ্চ খরচ পড়বে ৪০ হাজার টাকা। এ ক্ষেত্রে তাঁকে যাওয়ার বিমানভাড়া দিতে হবে। তবে দেশে ফেরার সময় নিয়োগকর্তা তাঁর বিমানভাড়া দেবেন।
বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শুরুতে নাম নিবন্ধনের জন্য ৫০ টাকা দিতে হবে। স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য দিতে হবে তিন হাজার টাকা। প্রশিক্ষণ খরচ হিসেবে তাঁকে দিতে হবে দেড় হাজার টাকা। বহির্গমন ছাড়পত্র ও স্মার্ট কার্ডের জন্য তাঁকে দিতে হবে এক হাজার টাকা। টেড্র (যে খাতে কাজ করবেন) পরীক্ষার জন্য দিতে হবে ৫০০ টাকা। বিমানভাড়ার জন্য একজন কর্মীর ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা লাগবে। নিজের খরচেই কর্মীকে যন্ত্রে পাঠযোগ্য পাসপোর্ট বা এমআরপি করতে হবে।
বনায়ন খাতে যাঁরা যাবেন, তাঁদের বেতন কত হবে, জানতে চাইলে প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী ও সচিব জানিয়েছেন, নূন্যতম ৯০০ রিঙ্গিত বা ২৫ হাজার টাকা করে একেকজন বেতন পাবেন।
প্রতারিত হবেন না: মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য কোনো মধ্যস্বত্বভোগী বা দালালের কাছে না যাওয়ার জন্য বারবার সবাইকে সতর্ক করেছেন প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, সচিব জাফর আহমেদ খান ও বিএমইটির মহাপরিচালক বেগম শামসুন্নাহার। তাঁরা বলেছেন, সরকার ছাড়া অন্য কেউ এবার মালয়েশিয়ায় লোক পাঠাতে পারবে না। কাজেই কেউ অন্য কাউকে এক টাকাও দেবেন না, কারও কাছে যাবেনও না। আর মালয়েশিয়া যেতে অন্য কোথাও কোনো টাকা বা ঘুষ দেওয়ার প্রয়োজন নেই; বরং কেউ যদি টাকা দাবি করে, তাহলে তাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সরকার।
মালয়েশিয়ায় চার বছর ধরে জনশক্তি রপ্তানি বন্ধ ছিল। দীর্ঘ কূটনৈতিক যোগাযোগের পর এ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে দেশটি। গত ২৬ নভেম্বর এ বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারকও (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়েছে। মালয়েশিয়া জানিয়েছে, আগামী কয়েক বছরে বনায়ন (প্লান্টেশন), কৃষি (এগ্রিকালচার), উৎপাদন (ম্যানুফ্যাকচারিং), নির্মাণ (কনস্ট্রাকশন) এবং সেবা (সার্ভিস)—এ পাঁচ খাতে বাংলাদেশ থেকে পাঁচ লাখ কর্মী নেবেন তারা।
তবে শুরুটা হবে বনায়ন খাত দিয়ে। ইতিমধ্যে মালয়েশিয়া ১০ হাজার কর্মীর চাহিদাপত্রও পাঠিয়েছে। আগামী দুই মাসে এ খাতে আরও ২০ হাজার চাহিদাপত্র আসবে। বনায়ন খাতে যাঁরা কাজ করতে যেতে চান, তাঁদের জন্য ১৩ জানুয়ারি থেকে নাম নিবন্ধন শুরু হবে। মনে রাখতে হবে, নাম নিবন্ধন ছাড়া কোনো কর্মী এবার মালয়েশিয়া যেতে পারবেন না।
কী কী যোগ্যতা লাগবে: বনায়ন খাতের কর্মী হিসেবে যাঁরা মালয়েশিয়ায় যেতে চান, তাঁদের মোট সাতটি যোগ্যতা থাকতে হবে। এগুলো হলো: বাংলাদেশের নাগরিকত্ব, কৃষিকাজে অভিজ্ঞতা, বয়স ১৮ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে, গ্রাম এলাকার প্রকৃত বাসিন্দা, উচ্চতা কমপক্ষে পাঁচ ফুট বা তদূর্ধ্ব, ওজন কমপক্ষে ৫০ কেজি এবং ২৫ কেজি মালামাল হাতে করে বহনের ক্ষমতা। এ যোগ্যতার বাইরে কেউ বনায়ন খাতে যেতে পারবেন না।
কবে, কোথায় নিবন্ধন: মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর জন্য ১০ জানুয়ারি দেশের সব গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হবে। এরপর বিভাগ অনুযায়ী নাম নিবন্ধন শুরু হবে। নিবন্ধনের জন্য খরচ হবে মাত্র ৫০ টাকা। একেক বিভাগের কর্মীরা নাম নিবন্ধনের জন্য তিন দিন করে সময় পাবেন। নাম নিবন্ধনের পরদিনই লটারির মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে, কারা কারা এবার মালয়েশিয়ায় যাওয়ার জন্য যোগ্য হলেন।
একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, কোনো সাইবার ক্যাফে বা বাড়ির ইন্টারনেটে নয়, কেবল ইউনিয়ন তথ্যসেবাকেন্দ্রে গিয়েই নাম নিবন্ধন করা যাবে। অনেকের মনেই প্রশ্ন আছে, কেন শুধু ইউনিয়ন তথ্যসেবাকেন্দ্রেই নাম নিবন্ধন করা হচ্ছে? সরকার বলছে, যেকোনো জায়গায় নিবন্ধন করার সুযোগ দিলে প্রতারণা হবে। সে কারণেই ইউনিয়ন তথ্যসেবাকেন্দ্রে নিবন্ধনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখন শহর এলাকার কেউ যদি বনায়নকর্মী হিসেবে মালয়েশিয়ায় যেতে চান, তাঁকেও আশপাশের কোনো ইউনিয়ন তথ্যসেবাকেন্দ্রে যেতে হবে। প্রতিদিন সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত নিবন্ধন করা যাবে।
এবার জেনে নিন, কার কবে নাম নিবন্ধন করতে হবে। ঢাকা ও বরিশাল বিভাগে যাঁদের বাড়ি, তাঁদের নিজ নিজ ইউনিয়ন তথ্যসেবাকেন্দ্রে গিয়ে ১৩ থেকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত নাম নিবন্ধন করতে পারবেন। মনে রাখবেন, তাড়াহুড়ো বা আগে নাম নিবন্ধনের কোনো বিষয় নেই। ওই তিন দিন যাঁরা তথ্যকেন্দ্রে যাবেন, তাঁরা সবাই নাম নিবন্ধনের সুযোগ পাবেন। এ দুই বিভাগে নিবন্ধিত ব্যক্তিদের মধ্যে কারা মালয়েশিয়ায় যাওয়ার সুযোগ পাবেন, তার লটারি হবে ১৬ জানুয়ারি। জেলা সদরে এ লটারি হবে।তবে ইউনিয়নভিত্তিক কোটা ঠিকই থাকবে।
রাজশাহী, রংপুর ও সিলেট বিভাগের লোকজন ১৪ থেকে ১৬ জানুয়ারি নাম নিবন্ধন করার সুযোগ পাবেন। এখানে ১৭ জানুয়ারি লটারি হবে। খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগে ১৫ থেকে ১৭ জানুয়ারি নাম নিবন্ধন করা হবে। এখানে লটারি হবে ১৮ জানুয়ারি।
ইউনিয়ন কোটায় লটারি: মালয়েশিয়ায় যাওয়ার জন্য বিপুলসংখ্যক লোক অপেক্ষা করছেন। সরকার বলছে, যাঁরা যেতে চাইবেন, তাঁদের সবারই নাম নিবন্ধন করা হবে। তবে শেষ পর্যন্ত কারা যেতে পারবেন, সেটা ঠিক করা হবে লটারির মাধ্যমে। জনসংখ্যার ভিত্তিতে প্রতি ইউনিয়ন থেকে কোটা ঠিক করে ওই লটারি করা হবে। তবে তালিকা শুধুমাত্র জেলা সদরে জানানো হবে।
প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, কারও মধ্যে যেন কোনো প্রশ্ন তৈরি না হয়, সে জন্য তিন দিন নিবন্ধনের পর প্রত্যেক জেলায় স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে লটারির মাধ্যমে ইউনিয়নের জনসংখ্যার অনুপাতে কোটা অনুযায়ী কর্মীর তালিকা করা হবে। এভাবে সারা দেশ থেকে পাওয়া কর্মীর তালিকা সমন্বয় করে জাতীয় ভিত্তিতে সাড়ে ১১ হাজার কর্মীর একটি তথ্যভান্ডার করা হবে। এখান থেকে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে আবার লটারির মাধ্যমে প্রাথমিক পর্যায়ে পাওয়া চাহিদা অনুযায়ী ১০ হাজার কর্মী পাঠানোর চূড়ান্ত তালিকা করা হবে। যে ১০ হাজার ব্যক্তিকে চূড়ান্ত করা হবে, তাঁদের সবার মুঠোফোনে প্রয়োজনীয় তথ্য পাঠানো হবে। যাঁরা প্রথম দফায় যেতে পারবেন না, তাঁরা পরে চাহিদাপত্র পাওয়ার ভিত্তিতে যেতে পারবেন। কাজেই কাউকে নতুন করে আর নিবন্ধন করতে হবে না।
প্রশিক্ষণ নিতে হবে: এবার মালয়েশিয়ায় পাঠানোর আগে প্রত্যেক কর্মীকে প্রশিক্ষণ দেবে সরকার। তবে তার আগে ১৩টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে (টিটিসি) তাদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হবে। চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত কর্মীদের মুঠোফোনে বার্তা পাঠিয়ে জানিয়ে দেওয়া হবে কার কোন টিটিসিতে সাক্ষাৎ ও তথ্য যাচাই-বাছাই হবে। সাক্ষাতের পর কর্মীর স্বাস্থ্যপরীক্ষা করা হবে। এরপর তাঁর আঙুলের ছাপ নেওয়া হবে। এরপর আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থা (আইওএম) প্রত্যেক কর্মীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা নেবে।
সরকার বলছে, এবার প্রশিক্ষণ ছাড়া কোনো কর্মীকে মালয়েশিয়ায় পাঠানো হবে না। দেশের ৩৭টি সরকারি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে এলাকা অনুযায়ী কর্মীদের আসতে বলা হবে। এরপর তাঁকে ১০ দিনের একটি প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এ প্রশিক্ষণে তাঁকে মালয়েশিয়ার ভাষা, খাবার, সংস্কৃতি, আইনকানুন—এসব সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হবে। এ-সংক্রান্ত বইপুস্তকও দেওয়া হবে তাঁকে, যাতে মালয়েশিয়ায় গিয়ে তিনি কোনো সমস্যায় না পড়েন কিংবা কোনো আইন ভঙ্গ না করেন।
কত খরচ, কত বেতন? সরকারিভাবে এবার মালয়েশিয়ায় যেতে একজন কর্মীর সর্বোচ্চ খরচ পড়বে ৪০ হাজার টাকা। এ ক্ষেত্রে তাঁকে যাওয়ার বিমানভাড়া দিতে হবে। তবে দেশে ফেরার সময় নিয়োগকর্তা তাঁর বিমানভাড়া দেবেন।
বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শুরুতে নাম নিবন্ধনের জন্য ৫০ টাকা দিতে হবে। স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য দিতে হবে তিন হাজার টাকা। প্রশিক্ষণ খরচ হিসেবে তাঁকে দিতে হবে দেড় হাজার টাকা। বহির্গমন ছাড়পত্র ও স্মার্ট কার্ডের জন্য তাঁকে দিতে হবে এক হাজার টাকা। টেড্র (যে খাতে কাজ করবেন) পরীক্ষার জন্য দিতে হবে ৫০০ টাকা। বিমানভাড়ার জন্য একজন কর্মীর ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা লাগবে। নিজের খরচেই কর্মীকে যন্ত্রে পাঠযোগ্য পাসপোর্ট বা এমআরপি করতে হবে।
বনায়ন খাতে যাঁরা যাবেন, তাঁদের বেতন কত হবে, জানতে চাইলে প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী ও সচিব জানিয়েছেন, নূন্যতম ৯০০ রিঙ্গিত বা ২৫ হাজার টাকা করে একেকজন বেতন পাবেন।
প্রতারিত হবেন না: মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য কোনো মধ্যস্বত্বভোগী বা দালালের কাছে না যাওয়ার জন্য বারবার সবাইকে সতর্ক করেছেন প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, সচিব জাফর আহমেদ খান ও বিএমইটির মহাপরিচালক বেগম শামসুন্নাহার। তাঁরা বলেছেন, সরকার ছাড়া অন্য কেউ এবার মালয়েশিয়ায় লোক পাঠাতে পারবে না। কাজেই কেউ অন্য কাউকে এক টাকাও দেবেন না, কারও কাছে যাবেনও না। আর মালয়েশিয়া যেতে অন্য কোথাও কোনো টাকা বা ঘুষ দেওয়ার প্রয়োজন নেই; বরং কেউ যদি টাকা দাবি করে, তাহলে তাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সরকার।
No comments