ঘন কুয়াশা আর তীব্র শীতে বিপর্যসত্ম জীবনযাত্রা
ঘন কুয়াশা আর তীব্র শীতে সারাদেশের জীবনযাত্রা বিপর্যসত্ম হয়ে পড়েছে। সোমবার সারা দিন কুয়াশার চাদরে ঢাকা ছিল দেশ। কোথাও সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। লোকজনকে শীতে জড়সড় হয়ে চলতে দেখা গেছে।
বেশি কষ্ট ভোগ করছে শিশু ও বৃদ্ধরা। তারা বিভিন্ন রোগে আক্রানত্ম হয়ে পড়ছে। অভ্যনত্মরীণ বিমান চলাচল বিঘি্নত হয়ে পড়ছে। কুয়াশার কারণে দৃষ্টিসীমা নেমে আসায় বন্ধ হয়ে গেছে ভারত বাংলাদেশের মধ্যে অনুষ্ঠিত টেস্টের দ্বিতীয় দিনের খেলা। শীতের কারণে অফিস আদালত ও বিপণি কেন্দ্রগুলোর স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, সহজেই শীত পরিস্থিতির উন্নতির কোন লৰণই নেই। দিন যত যাচ্ছে শৈত্যপ্রবাহ ও কুয়াশায় একাকার হয়ে শীতের ততই অবনতি ঘটছে। এ অবস্থা আরও দু'তিন দিন থাকতে পারে। তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বৃষ্টিপাত না হলে সহজে ঘন কুয়াশা কেটে যাওয়ার কোন লৰণ নেই। আর কুয়াশা না গেলে শীত পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা কম। ঘন কুয়াশার কারণে সার্বিক তাপমাত্রা ৭ থেতে ৮ ডিগ্রী কোন কোন ৰেত্রে তা ৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যনত্ম নেমে যাচ্ছে। সার্বিক তাপমাত্রা এখন ১২ থেকে ১৩ ডিগ্রীর মধ্যে স্থির হয়ে রয়েছে। প্রয়োজনের তুলানায় তাপমাত্রার বিশাল এই গ্যাপের কারণে শীতের অনুভূতি হচ্ছে তীব্র। আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান জানান, দিনের তাপমাত্রা বৃদ্ধি না পাওয়া কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। দিনের তাপমাত্রা না বাড়া এবং রাতের তাপমাত্রা না কমার কারণে উষ্ণতার সৃষ্টি হচ্ছে না। ফলে শীতের যে কষ্ট তা লাঘব হওয়ার সুযোগ নেই।এদিকে সোমবার সারা দিন সূর্যের মুখ পর্যনত্ম দেখা যায়নি। দিনের তাপমাত্রাও আগের দিনের চেয়ে কিছুটা নেমে এসেছে। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে ৯ দশমিক ৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস, যা আগের দিনের চেয়ে দশমিক ৭ ডিগ্রী কম। তা ছাড়া সিলেটে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২৭ দশমিক ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, আজও দেশের বিভিন্ন বিভাগে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ থেকে ১০ ডিগ্রী সেলসিয়াস কম থাকতে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে ভোরের দিকে দৃষ্টিসীমা একেবারেই নেমে যাচ্ছে। বিশেষ করে নদীঅববাহিকায় তা ২০ থেকে ৩০ মিটারের মধ্যে চলে আসছে। ফেরি চলাচলের ওপর প্রভাব পড়ছে। মাওয়া ও কাওড়াকান্দি নৌরম্নটে ১১ ঘণ্টা এবং দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া রম্নটে ৪ ঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল। ফলে উভয় রম্নটেই বিশাল যানজটের সৃষ্টি হয়। নৈশ্য কোচে আটকে থাকা যাত্রীদের পোহাতে হয়েছে চরম দুর্ভোগ। কোথায়ও শিশির পড়ছে বৃষ্টির মতো। সারাদেশের মতো রাজধানীতেও সারা দিন সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। সকাল থেকে শীতে জড়সড় হয়ে সবাইকে চলতে দেখা গেছে। একটু উষ্ণতার আশায় ফুটপাথে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করতে দেখা গেছে। প্রায় সারা দিনই গরম কাপড়ের দোকানগুলোতে লোকজনের ভিড় করতে দেখা গেছে। প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া কেই ঘর থেকে বের হয়নি। বিকেল থেকেই সবাইকে ঘরে ফেরার তাড়া লৰ্য করা গেছে। তবে আনত্মর্জাতিক বিমানের কোন সিডিউল বিপর্যয় ঘটেনি। ঢাকা বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, আনত্মর্জাতিক রম্নটের সব ক'টি বিমান যথাসময়ে বিমানবন্দর ছেড়ে গেছে।
আবহাওয়াবিদদের মতে, দু'-একদিন কিছুটা ব্যতিক্রম ছাড়া নবেম্বরের শেষ অর্ধেক থেকে শুরম্ন করে এখন পর্যনত্ম শীত পরিস্থিতি একই রয়েছে। এবারে যে শীত জেঁকে বসতে পারে আবহাওয়াবিদরা প্রথম থেকেই তা অনুমান করছিলেন। বিশেষ করে প্রায় ১০ বছরের রেকর্ড ভেঙ্গে নবেম্বরে তাপমাত্রা ১৪ ডিগ্রীর কাছাকাছি নেমে এসেছিল। বিগত কয়েক বছরের তাপমাত্রা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে নবেম্বরে তাপমাত্রা সাধারণত ১৬ ডিগ্রীর বেশি থাকে। গত নবেম্বরে এ তাপমাত্রা ১৪ ডিগ্রীতে নেমে আসায় তা কিছুটা অস্বাভাবিক হিসেবে ধরা হয়েছিল। আবহাওয়াবিদদের মতে, উপমহাদেশীয় হাই বলয়ের কারণে প্রতিবছর শীত আসে। এবার এ বলয় আগে আসার কারণে নবেম্বর থেকে তাপমাত্রা কমতে থাকে এবং শীত অনুভূত হতে থাকে বেশি যা এখনও অব্যাহত রয়েছে।
স্টাফ রিপোর্টার চট্টগ্রাম অফিস থেকে জানান, তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে চট্টগ্রামের জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়ে পড়েছে। চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে ফাইট ওঠানামা বিঘি্নত হচ্ছে। কর্ণফুলী চ্যানেলও এখন নৌ-চলাচলের মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ্। কুয়াশায় দৃষ্টিসীমা ১শ' মিটারে নেমে আসায় সাগরিকা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হওয়া ভারত-বাংলাদেশের টেস্ট ম্যাচের দ্বিতীয় দিনের খেলা বন্ধ হয়ে গেছে। তীব্র শীতের কারণে অফিস-আদালত এবং বিপণি বিতানগুলো স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। নগরীর ফুটপাথগুলোতে আগুন জ্বালিয়ে অনেকে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। সন্ধ্যার পর গ্রামে নেমে আসছে নীরবতা। রাসত্মাঘাটে যান চলাচল হ্রাস পেয়েছে।
মুন্সীগঞ্জ থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, ঘন কুয়াশার কারণে ঢাকা-মাওয়া-খুলনা মহাসড়কে মাওয়া কাওড়াকান্দি নৌরম্নটে আগের দিন রাত ১টা থেকে সোমবার ১১টা পর্যনত্ম ১১ ঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল। নদীর মাঝখানে ৪টি এবং তীরে আরও ৯টি ফেরি আটকা পড়ে। দীর্ঘ সময় পারাপার বন্ধ থাকায় উভয় ঘাটে বিশাল যানজটের সৃষ্টি হয়। শীতে যাত্রীদের ব্যাপক দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।
খুলনা অফিস থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, ঘন কুয়াশা মেঘাচ্ছন্ন আকাশ এবং শৈত্যপ্রবাহে নাকাল খুলনাবাসী। সোমবার সারা দিন সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। শিশির ঝরেছে ঝিরঝিরে বৃষ্টির মতো। রাসত্মাঘাট ও হাটবাজারে লোক সমাগম ছিল অনেক কম। দরিদ্র ভাসমান শ্রেণী সবচেয়ে বেশি কষ্ট ভোগ করছে। রাজবাড়ী থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, প্রচ- শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে রবিবার রাত থেকে সোমবার সকাল ৬টা পর্যনত্ম দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ৪ ঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল। এ সময় ইভয় পাড়ে আটকাপড়া যাত্রীরা চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়ে।
কলাপাড়া থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, ঘন কুয়াশা ও শীতের কারণে কুয়াকাটায় পর্যটক শূন্য হয়ে পড়েছে। শত শত মানুষ শ্বাসকষ্টে ভুগছে। দুপুরের পর থেকেই শুরম্ন হয় মানুষের ঘরমুখী যাত্রা।
No comments