ছাত্রাবাসের আড়ালে শিবিরের ঘাঁটি, অস্ত্র গুলি উদ্ধার- চট্টগ্রামে পুলিশী অভিযানে ১২ গ্রেফতার ক্যাডারদের মহড়া

চট্টগ্রাম অফিস চট্টগ্রামে ছাত্রাবাস হিসেবে পরিচালিত জামায়াত-শিবিরের ঘাঁটি থেকে বেশকিছু পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারম্নদ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গ্রেফতার করা হয়েছে জামায়াতপন্থী ভবন মালিকসহ ১২ শিবির ক্যাডারকে।
পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, পুরনো এ ভবনটি বসবাসের অযোগ্য হলেও মৌলবাদী জামায়াত-শিবির এটিকে ছাত্রাবাসের আড়ালে অস্ত্রধারী ক্যাডারদের নিরাপদ ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে আসছিল। নগরীর আগ্রাবাদের মিস্ত্রিপাড়ায় চারতলা বিশিষ্ট হক ভিলা নামের একটি ভবনের দু'টি ফ্যাটে সিএমপির ডবলমুরিং থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে অস্ত্রধারী জামায়াত-শিবিরের এসব ক্যাডারকে গ্রেফতার করতে সৰম হয়েছে। ঘটনার পর গ্রেফতারকৃতদের ছাড়িয়ে নিতে জামায়াত-শিবির নগরীতে বিৰোভ মিছিল ও সাংবাদিক সম্মেলন করেছে।
ডবলমুরিং পুলিশ জানায়, রবিবার রাত প্রায় ১টার দিকে ডবলমুরিং জোনের এসি এসএম তানভীর ও অফিস ইনচার্জ একেএম মঞ্জুরম্নল হকসহ পুলিশের বড় একটি টিম গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মিস্ত্রিপাড়া এলাকায় অভিযান চালায়। সেখানে হক ভিলার চারতলা ভবনের দ্বিতীয় ও চতুর্থ তলায় চিরম্ননি অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে দ্বিতীয় তলা থেকে ৬টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৪র্থ তলা থেকে ১টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়। উদ্ধারকৃত অস্ত্র ও গোলাবারম্নদের মধ্যে রয়েছে ৪টি পয়েন্ট টু-টু বোরের রিভলবার ও ৩টি দেশীয় এলজি, ১২টি রিভলবারের গুলি, ১১টি কাতর্ুজ ও ১৪টি বিভিন্ন আগ্নেয়াস্ত্রের গুলি।
এ ঘটনায় দ্বিতীয় তলা থেকে গ্রেফতার করা হয় ১০ শিবির ক্যাডারকে। গ্রেফতারকৃত শিবির ক্যাডাররা হলো_ মা ও শিশু হাসপাতাল মেডিক্যাল কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র একরামুল হক (১৯), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সের গণিত বিভাগের ছাত্র শহীদ আল আমিন (২৮), বিজিসি ট্রাস্ট ইউনির্ভাসিটির ব্যবস্থাপনা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মিজানুর রহমান (১৯), মোসত্মাফিজুর রহমান ডিগ্রী কলেজ থেকে বিকম পাস করা ছাত্র জহির উদ্দিন বাবর (২৩), আল জাবের ইনস্টিটিউটের এসএসসি পরীৰাথর্ী লুৎফর রহমান, বাইতুশ শরফ কামিল মাদ্রাসার ছাত্র মহি উদ্দিন (২০), জাহেদ মুনতাসির (১৭), রফিকুল হোসেন (১৮), আরিফ হোসেন (১৭), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষ (অনার্স) শিৰাথর্ী মঞ্জুর আলম (২০)। এ ছাড়াও বাড়ির মালিক জামায়াতপন্থী ও বিএমএ'র চট্টগ্রাম শাখার সদস্য ডা. একরামুল হক এবং তার সর্বকনিষ্ঠ পুত্র চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্র গোলাম আজমকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ।
পুলিশ সূত্রে জানানো হয়, রাতে এ অভিযান ও গ্রেফতারকৃতদের থানায় আনার পর বিভিন্ন দিক থেকে তদ্বির শুরম্ন হয়েছে। জামায়াত শিবির ছাড়াও বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দও দফায় দফায় থানায় অনাকাঙ্ৰিত ও অবৈধ চাপ সৃষ্টি করে। দুপুর ১টায় ডবলমুরিং থানার ওসিকে বিএমএ'র সাবেক সেক্রেটারি ডাঃ আবু নাসের আসামিদেরকে কোন প্রকার নির্যাতন না করার অনুরোধ জানান। সকাল থেকে ডবল মুরিং থানার চারপাশে জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা জমায়েত হয়ে মহড়া প্রদান শুরম্ন করে। এদের মধ্য থেকে দফায় দফায় সদস্য পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে থানাকে ম্যানেজসহ থানা হেফাজতে থাকা আসামিদের বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র দিতে অনেকটা চাপ সৃষ্টি করে রাখে ।
অভিযানে সম্পৃক্ত ছিলেন পুলিশের এমন এক সদস্য জানান, দ্বিতীয় তলাটি আবাসিক ভবন হিসেবে পরিত্যক্ত হলেও শিবিরের অনেক ক্যাডার সেখানে আসত্মানা গেড়ে বসে। ঐ ফ্যাটের বাথরম্নমের পরিত্যক্ত লোডাউন, ভেন্টিলেটর, বেসিন ও রান্নাঘরের শিক থেকে ৩টি রিভলবার ও ৩টি এলজি উদ্ধার করা হয়। মেঝেতে পাতানো তোশকের নিচ থেকে গোলাবারম্নদ উদ্ধার করা হয়। অপরদিকে, ভবন মালিক ডাঃ একরামের চতুর্থতলার পুত্রের আবাসস্থলের ওয়াশিং মেশিনের ভেতর থেকে একটি পিসত্মল পাওয়া যায়। প্রত্যেকটি আগ্নেয়াস্ত্র সচল এবং তেল মবিল দিয়ে ব্যবহার উপযোগী করে রাখা হয়েছে।
অভিযানের পর থানা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা গেছে, বিএমএ'র সাবেক সেক্রেটারি ডা. আবু নাসের ওসির কৰে বসে নানাভাবে নিজের পরিচয় তুলে ধরে তদ্বির করছেন। দীর্ঘ প্রায় ১৫ মিনিটেরও বেশি সময় ধরে এ নেতা ওসির কৰে অবস্থান নিয়ে পুলিশ কর্মকর্তার পাশাপাশি সংবাদিকদেরও এ বিষয়ে নিউজ না ছাপাতে অন্যায় আবদার চালান। শুধু তাই নয়, একটি চ্যানেলের এক সাংবাদিককে অস্ত্র ও আসামিদের ছবি তুলে কি লাভ বলে প্রশ্ন ছুড়ে দেন। এ সময় বিএমএ'র বেশ কয়েক ডাক্তার থানা কম্পাউন্ডে অবস্থান নিয়ে অন্যদেরও তদ্বিরের জন্য থানায় জমায়েত হতে অনুরোধ করতে দেখা যায়। থানা কম্পাউন্ডে অবস্থানরত বিএমএ'র এসব নেতা থানা হাজতে থাকা আসামি বিশেষ করে ডা. একরামুল হককে শীতের চাদর ও মাফলার পেঁৗছে দেয়ার অনুরোধ জানান। শুধু তাই নয়, জামায়াতপন্থী এ ডাক্তারকেসহ শিবির ক্যাডারদের যাতে কোনপ্রকার নির্যাতন চালানো না হয় সে বিষয়ে প্রকাশ্যে পুলিশ সদস্যদের বলতে দেখা যায়।
অপরদিকে, এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, চারতলা ভবনের নিচতলা ও দ্বিতীয়তলা চট্টগ্রাম আনত্মর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার জামায়াতপন্থী ওবায়দুলস্নাহ ও তৃতীয় ও চতুর্থতলা বিএমএ সদস্য ও জামায়াতপন্থী ডা. একরামুল হকের। এরা দু'জন এক সময় বন্ধু ছিলেন। যৌথভাবে ভূমি ক্রয়ের মাধ্যমে এ ভবন নির্মাণ করলেও আবাসিক ভবন হিসেবে ব্যবহারের উপযোগিতা হারানোর কারণে ছাত্রাবাস হিসেবে ভাড়া দেয়া হয়েছে দ্বিতীয়তলা। চতুর্থতলায় ভবন মালিক ডাক্তারের বড় ছেলে ও কনিষ্ঠ ছেলে বসবাস করত। ডা. সপরিবারে তৃতীয়তলায় থাকতেন।
সকাল থেকে বিষয়টি লোকমুখে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লে শিবিরকেন্দ্রিক শিৰা প্রতিষ্ঠানগুলোসহ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবির ক্যাডাররা নগরীর মুসলিম হলের সামনে জড়ো হতে থাকে। একপর্যায়ে দুপুর ১টার দিকে শিবিরের দেড় শতাধিক কমর্ী ও ক্যাডার অস্ত্রসহ ধরাপড়া শিবির ক্যাডারদের ছেড়ে দিতে বিৰোভ মিছিল সহকারে নগরীর গুরম্নত্বপূর্ণ সড়ক প্রদৰিণ শেষে চট্টগ্রাম প্রেসকাব চত্বরে অবস্থান নেয়। এ সময় শিবির ক্যাডাররা সেস্নাগান দিতে থাকে। গ্রেফতারকৃতদের নিঃশর্তভাবে ছেড়ে দেয়াসহ কোন প্রকার হয়রানি করা হলে মঙ্গলবার থেকে চট্টগ্রামের চেহারা পাল্টে দেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি প্রদান করা হয়। বিৰোভকারীরা প্রেসকাব চত্বরে সাংবাদিকদের উদ্দেশ করেও সেস্নাগান দেয়। এ খবর পেয়ে কোতোয়ালি থানা পুলিশের অফিস ইনচার্জ মহিউদ্দিন আহমদ ও এসআই মহসিনের নেতৃত্বে একটি টিম প্রেসকাব চত্বরে এসে পেঁৗছলে শিবির ক্যাডাররা স্থান ত্যাগ করে। সোমবার বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেসকাবে বিএনপির সাবেক মন্ত্রী আবদুলস্নাহ আল নোমানের একটি অনুষ্ঠান থাকায় নোমানপন্থী অনেক সমর্থকও এ বিৰোভ মিছিলে অংশ নেয় বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

মেহেরপুর
নিজস্ব সংবাদদাতা মেহেরপুর থেকে জানান, সোমবার সন্ধ্যায় মেহেরপুর জেলা ছাত্রশিবিরের কার্যালয়ে (মেহেরপুর কলেজ রোড় স্বপ্নায়ন ভবন) মেহেরপুর জেলা প্রশাসনের এনডিসি অবিদিও মার্ডির নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে একটি দেশী তৈরি শাটারগানসহ বিপুল পরিমাণ মেয়াদ উত্তীর্ণ প্রসাধনী সামগ্রী উদ্ধার করেছে। এ ব্যাপারে এসআই কামাল বলেন অবৈধ প্রসাধনী সামগ্রী দেখে আমরা অবাক হচ্ছি। তদনত্মসাপেৰে সঠিক তথ্য বেরিয়ে আসবে। এ ব্যাপারে ছাত্রশিবিরের ঐ অফিসটি সিলগালা করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.