সরকারকে ওএমএস সেবা চালু রাখতে হবে গবর্নর- প্রবৃদ্ধি সহায়ক ও গণমুখী মুদ্রানীতি ঘোষণা
অর্থনৈতিক রিপোর্টার ২০০৯-১০ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের (জানুয়ারি-জুন ২০১০) জন্য নমনীয়, প্রবৃদ্ধি সহায়ক এবং গণমুখী মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়েছে। আগের মুদ্রানীতির প্রধান বিষয়গুলোর তেমন কোনো পরিবর্তন না করেই নতুন এ মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়।
ঘোষিত এ মুদ্রানীতি মূল্যস্ফীতি কমাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। তবে এ জন্য সরকারকে ওএমএসসহ যুগোপযোগী পদৰেপ গ্রহণ করতে হবে।নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা উপলৰে মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের মিলনায়তনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্যোগে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠিত এ সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ড. আতিউর রহমান। এ সময় অন্যদের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গবর্নর মোঃ নজরম্নল হুদা ও জিয়াউল হাসান সিদ্দিকী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ড. আতিউর রহমান বলেন, এ মুদ্রানীতিতে মূল্যস্ফীতির হার কমাতে সহায়তা করবে। তবে এ জন্য সরকারকে জনগণের মধ্যে ওএমএসের সেবা বিদ্যমান রাখতে হবে। সেই সঙ্গে প্রয়োজন অনুযায়ী যুগোপযোগী উদ্যোগও গ্রহণ করতে হবে। একই সঙ্গে তিনি বলেন, এবারের মুদ্রানীতিতে দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় নিয়ে আসার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এটিই দেশে প্রথম। বর্তমানে দেশে ২৫ শতাংশ লোক ব্যাংকিং সেবার বাইরে রয়েছেন। যারা ব্যাংকিং সেবার সকল সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এদেরকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনার লৰ্যেই মূলত নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়েছে। একই সঙ্গে মুদ্রানীতিকে অধিকতর সহায়ক করা হয়েছে। যাতে দেশের অর্থনীতির সার্বিক উন্নয়নের সুবিধার্থে যুগোপযোগী সিদ্ধানত্ম গ্রহণ করা সম্ভব হয়।
প্রবৃদ্ধি পরিস্থিতি ও নিকটমেয়াদী সম্ভাবনা, মূল্য পরিস্থিতি এবং ২০১০ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের জন্য মুদ্রানীতির কথা উলেস্নখ করে গবর্নর বলেন, বর্তমানে বাড়তি মূল্যস্ফীতির চাপের বিষয়টি নজরে রেখে রফতানি প্রবৃদ্ধি ও নতুন বিনিয়োগে গতিশীলতা আনয়নে অর্থবছরের প্রথমার্ধের প্রবৃদ্ধি সহায়ক মুদ্রানীতি ভঙ্গিতে দ্বিতীয়ার্ধেও অব্যাহত রাখা হয়েছে। প্রবৃদ্ধি সহায়ক সার্বিক মুদ্রানীতি ভঙ্গির আওতায় কৃষি, ৰুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতগুলোয় পর্যাপ্ত অর্থায়নসহ আর্থিক খাত সেবায় দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর আওতাভুক্তি প্রসারে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতি অধিকতর সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে।
ড. আতিউর রহমান বলেন, চলতি অর্থবছরের শুরম্নতে (জুলাই '০৯) বার্ষিক গড় ভোক্তা মূল্যস্ফীতি ৬.৬ শতাংশ ছিল। যা অক্টোবরে ২০০৯-এ ৫.১১ শতাংশে নেমে আসে। বর্তমানেও এ চিত্র বিদ্যমান রয়েছে। তবে সামনে কিছুটা বৃদ্ধি পেতে পারে। কিন্তু ৫.৬ শতাংশের বেশি হবে না।
তিনি বলেন, আনত্মর্জাতিক বাজারে খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যের তেজীভাবের কারণে ফসল কাটা মৌসুমেও অভ্যনত্মরীণ বাজারে খাদ্যশস্যের উচ্চমূল্য বিরাজমান। তাই চলতি অর্থবছরের বাকি মাসগুলোতেও পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভোক্তা মূল্যস্ফীতিতে কিছুটা উর্ধমুখী প্রবণতা থাকবে। তবে এ জন্য সরকারকে প্রযোজন অনুযায়ী পদৰেপ গ্রহণ করতে হবে।
গবর্নর বলেন, বিভিন্ন প্রতিকূলতা থাকা সত্ত্বেও দেশের বিনিয়োগ বাড়ছে। বেসরকারী খাতের উদ্যোক্তারা বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের জন্য এগিয়ে আসছেন। রফতানিমুখী বস্ত্র ও পোশাক খাতের জন্য অক্টোবরের ঘোষিত সরকারী প্রেণোদনা প্যাকেজে এ খাতগুলোর উৎপাদনকারীদের নিজস্ব বিদু্যত উৎপাদনের জন্য লাইসেন্স ফি মওকুফ এবং প্রচলিত বাজারের বাইরে নতুন গনত্মব্যে রফতানির জন্য অতিরিক্ত আর্থিক সুবিধার ব্যবস্থা রয়েছে। এ গতিধারা ও উদ্যোগ অব্যাহত থাকলে চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে দু'অঙ্কের ঘরে রফতানি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে। যা শিল্প খাতের উৎপাদনে বর্ধিত প্রবৃদ্ধি যোগ করবে।
কৃষি খাতের কথা উলেস্নখ করে ড. আতিউর রহমান বলেন, চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধেই কৃষি ঋণ যোগান বাৎসরিক লৰ্যমাত্রার ৪৯ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। একই সঙ্গে কৃষকদের ব্যাংক হিসাব খোলার জন্য বিশেষ সুযোগও দেয়া হয়েছে। এখন থেকে কৃষকরা মাত্র ১০ টাকার বিনিময়ে ব্যাংকে হিসাব খুলতে পারবেন। এসব পদৰেপ গ্রহণ করার ফলে কৃষকরা অনেক উপকৃত হবেন।
No comments