অবৈধ ভিওআইপি কল বন্ধে বাড়ানো হচ্ছে লাইসেন্স সংখ্যা- বিশেষজ্ঞরা বলছেন এতে লাভ হবে না, মোকাবেলা করতে হবে প্রযুক্তি দিয়ে
ফিরোজ মান্না অবৈধ ভিওআইপি (ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রটোকল) কল বন্ধ করতে সর্বোচ্চ পদৰেপ হিসেবে সরকার টেলিযোগাযোগের বিভিন্ন খাতে লাইসেন্স বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছে।
লাইসেন্স সংখ্যা বাড়ালে প্রতিযোগিতা মূলকভাবে লাইসেন্সধারীরা কল বাড়াবে। বর্তমানে বিদেশ থেকে প্রতিদিন ৫ কোটি মিনিট কল আসছে। এর মধ্যে ২ কোটি মিনিট কল অবৈধ পথে হচ্ছে। সরকার মনে করছে লাইসেন্স বাড়ালে বেশি পরিমাণ রাজস্ব পাবে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এতে কোন লাভ হবে না। অবৈধ ভিওআইপি চলতেই থাকবে। ভিওআইপি একটি প্রযুক্তি এবং সেটিকে মোকাবেলা করতে হবে প্রযুক্তি দিয়ে।বিটিআরসি'র চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব) জিয়া আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, নতুন নীতিমালা কার্যকর হলে আইজিডবিস্নউদের (ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে) অবৈধ কলকে বৈধ পথে করার তাগিদ থাকবে। তখন প্রতিযোগিতামূলক ব্যবসা হবে। বর্তমানে মনোপলি ব্যবসা হচ্ছে। কতটা লাইসেন্স দেয়া হবে এটা এখনও সিদ্ধানত্ম হয়নি। আনত্মঃমন্ত্রণালয় বৈঠকের পরই এ সম্পর্কে জানা যাবে।
সোমবার মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে ইন্টারন্যাশনাল লং ডিস্টেন্স সার্ভিসেস (আইএলডিটিএস) নীতিমালা সংশোধন করা হয়। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লৰ্যে টেলিযোগাযোগ খাতকে কুৰিগত না রেখে সবার জন্য নীতিমালা সংশোধন করে একই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে একাধিক ক্যাটাগরিতে লাইসেন্স দেয়ার বিধান রাখা হয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে,
২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আইএলডিটিএস নীতিমালা ঘোষণা করার আগেই ভিওআইপি উন্মুক্ত করা হয়েছে। বর্তমান সরকার কেবল নীতিমালা সংশোধনের উদ্যোগ নেয়। নতুন সরকার ৰমতায় আসার পর সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে বলা হয়েছে, জরম্নরী অবস্থায় তিন ক্যাটাগরিতে মাত্র ৬টি লাইসেন্স দিয়ে কিছু লোককে মনোপলির সুযোগ দেয়া হয়েছে। এর পরিপ্রেৰিতে সংশোধিত নীতিমালায় লাইসেন্স সংখ্যা বৃদ্ধি ছিল সময়ের ব্যাপার। নীতিমালা সংশোধনকেই ভিওআইপি উন্মুক্ত করা বলা হয়েছে। লাইসেন্স বৃদ্ধির মাধ্যমে সরকার কেবল নতুন ব্যবসায়ী বাড়াচ্ছে। এর ফলে অসাধু ব্যবসায়ীরা সব সৎ হয়ে যাবে না।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) বলেছে, সংশোধিত নীতিমালায় আরও অনত্মত ১০টি নতুন আনত্মর্জাতিক গেটওয়ের লাইসেন্স দেয়া হবে। লাইসেন্স দেয়ার পর লাইসেন্সধারীরা আনত্মর্জাতিক কল বাড়ানোর জন্য বিদেশী বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করে কল বাড়াতে পারে। বর্তমানে যে পরিমাণ কল হচ্ছে তার চেয়ে অনেক বেশি কল হবে। এখান থেকে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পাবে। হাজার হাজার অসৎ ব্যবসায়ীকে এর মধ্যে বৈধ পথে নিয়ে আসার কোন সুযোগ থাকছে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শীর্ষ এক অপারেটর কর্মকর্তা বলেন, এর ফলে কিছু লোক হয়ত অবৈধ কল টার্মিনেশনকে বৈধ পথে নিয়ে আসবে, কিন্তু বাকিদের কি হবে? সে সম্পর্কে নীতিমালায় কিছুই বলা হয়নি। লাইসেন্স না বাড়িয়েও বরং যে মাধ্যমে কলগুলো চোরাচালান হচ্ছে সেখানে পাহারা বসালেই বেশি সুবিধা পাওয়া যেতে পারে। তাদের দাবি, এর মাধ্যমে অনত্মত ৯০ শতাংশ অবৈধ ইনকামিং আনত্মর্জাতিক কলকে বৈধ পথে আনা সম্ভব।
বর্তমানে দেশে আসা ইনকামিং কলের পরিমাণ দিনে প্রায় ৫ কোটি মিনিট। এর মধ্যে আড়াই থেকে তিন কোটি মিনিটের কল আসে বৈধ পথে। অবৈধ কল অনেক বেশি হওয়ায় সরকারের দিনে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ৰতি হচ্ছে। বছর শেষে এ ৰতির পরিমাণ কয়েক হাজার কোটিতে দাঁড়াচ্ছে। অবৈধ কল যাচাইয়ের জন্য ডিপ প্যাকেট ইনস্পেকশন (ডিপিআই) নামে একটি যন্ত্র আছে। যেসব প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের ব্যান্ডউইথ দেয় সেখানে এটি স্থাপন করা হলেই অবৈধ কল বন্ধ করা যায়। বিটিআরসি বলেছে, ডিপিআই যন্ত্র বসানো হয়েছে। এখন থেকে প্রতিদিনের কল প্রতিদিন দেখা হচ্ছে। সোমবার ২ কোটি ৯০ লাখ মিনিট কল রেকর্ড করা হয়েছে।
আইজিডবিস্নউ কোম্পানি বাংলাট্রাকের পরিচালক (রেগুলেটরি এ্যাফেয়ার্স) ফজলুল হক জনকণ্ঠকে এ প্রসঙ্গে বলেন, অবৈধ কল সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়ার জন্য ডিপিআই-ই হচ্ছে সবচেয়ে কার্যকর প্রযুক্তি। কিন্তু দুটি ব্যান্ডউইথ দেয়া প্রতিষ্ঠানের একটি বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিঃ (বিটিসিএল) এ বিষয়ে তেমন উদ্যোগী নয়। তবে অপর কোম্পানি ম্যাঙ্গো টেলিকমে যন্ত্রটি বসানো হয়েছে। অন্যদিকে বিটিসিএল যন্ত্রটি না কিনলেও পরে সবাই মিলে দেড় কোটি টাকায় তাদের যন্ত্রটি কিনে দিয়েছে। এরপরও তারা যন্ত্রটির ব্যবহার করছে না। ফলে অবৈধ কলের বেশিরভাগ সেখান দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে।
No comments