ধর নির্ভয় গান- রাজনীতির ওপরে যে জননীতি by আলী যাকের
কোনো কিছুই চিরায়ত বলে ধরে নেবেন না দয়া করে। আজকের বিপুল জনসমর্থন সহজেই কাল শূন্যতায় পর্যবসিত হতে পারে। আমার মনে হয়, প্রত্যেক জনপ্রতিনিধির উচিত প্রতিটি ইস্যুতে গণমানুষের ধ্যান-ধারণাকে পর্যবেক্ষণ করা।
এর কোনো বিকল্প নেই
রাজনীতি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা, বন্ধুদের সঙ্গে তর্কাতর্কি করা অথবা রাজনীতি নিয়ে নিজ ধ্যান-ধারণা সম্পর্কে কথা বলাও নিত্যদিনের ব্যাপার আমার জন্য। কেননা সেই বয়ঃসন্ধিকাল থেকে রাজনীতির সঙ্গেই তো আমাদের বসবাস! আমরা বড় হয়েছি এক কণ্ঠরোধকারী পাকিস্তানি অপশাসনের আমলে। প্রয়াত পটুয়া কামরুল হাসানকে যখন জিজ্ঞেস করতাম, 'কেমন আছেন কামরুল ভাই?' তিনি স্বভাবসুলভ মিষ্টি হাসি, হাসিমুখ করে বলতেন, 'ভালো আছি। কারণ ভালো থাকার অর্ডার আছে।' এহেন পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করতে হয়েছিল আমাদের।
উপরের কথাগুলো বললাম বটে, কিন্তু এটিও সত্য যে, রাজনীতি নিয়ে খুব বেশি লেখালেখি করা হয়নি। কেননা রাজনীতি সচেতনতা সত্ত্বেও আমার ভুবন হলো সংস্কৃতি। তবুও বুকে হাত দিয়ে কি বলতে পারি, আমাদের মতো সমাজে সংস্কৃতি রাজনীতিবিবর্জিত? বস্তুতপক্ষে অনেকেই মনে করেন, আমি তো বটেই, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ আসলেই ছিল সংস্কৃতির জন্য যুদ্ধ। অনেক রাজনীতিবিদ এমন কথা শুনে আঁতকে উঠবেন। আঁতকে ওঠাই স্বাভাবিক। তবে কি সংস্কৃতিজনরা রাজনীতিবিদদের পেশায় ভাগ বসাবেন? ভয় নেই ভাইসব। এখানে যে সংস্কৃতির কথা আমি উল্লেখ করলাম তা হচ্ছে আমাদের জাতিগত জীবনধারা। অর্থাৎ আমাদের শিক্ষা, সামাজিক আচার, খাদ্য, পরিচ্ছদ ইত্যাদি। এমনকি ধর্মও সংস্কৃতির অন্তর্গত একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় নিয়ামক। তবে এ ধর্মের চর্চা একটি জনগোষ্ঠীর চর্চিত নিজস্ব ধর্ম হতে হবে। অর্থাৎ আমাদের বাংলাদেশের মুসলমানরা যেসব ধর্মীয় আচার মেনে চলেন তার সঙ্গে আরব দেশের মুসলমানদের ধর্মীয় আচারে বিস্তর ফারাক রয়েছে। হিন্দু ধর্মের সম্পর্কেও একই কথা বলা যায়। বাঙালি হিন্দু আর তামিলনাড়ূর হিন্দু কি একইভাবে ধর্মচর্চা করেন?
যাই হোক, একটি জাতির সামগ্রিক পরিচয় হলো গিয়ে তার সাংস্কৃতিক পরিচয়। সেই অর্থে আমরা কোনোভাবেই পাকিস্তানের অংশ ছিলাম না, হতেও পারতাম না। অতএব যদি সংস্কৃতিজনের রাজনৈতিক আলোচনা বৈধ বলে গ্রহণযোগ্য হয় তাহলে আমার কিছু বলার আছে।
আমরা সবাই সম্ভবত বিশ্বাস করি, একটা বীভৎস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদস্বরূপ বাঙালি জাতি অস্ত্র ধারণ করে বাংলাদেশকে ১৯৭১-এ স্বাধীন করেছিল। এ স্বাধীনতা যুদ্ধ কতগুলো প্রায় আপসহীন মূল্যবোধের বাস্তবায়ন বলে আমরা ধরে নিতে পারি। কিন্তু লক্ষ্য করা সম্ভব হবে, স্বাধীনতার পর থেকে একের পর এক ষড়যন্ত্র করা হয়েছে আমাদের মূল্যবোধ এবং আদর্শগুলোকে ধ্বংস করে সেখানে একটি পাকিস্তানি চেহারাসদৃশ সরকার অথবা ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত করার। এর শিকার এ দেশের পিতৃপুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তার পরিবারবর্গ, জেলখানায় নিহত চার জাতীয় নেতা যারা মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এবং পরে একটির পর একটি গোপন অথবা প্রকাশ্য হত্যাকাণ্ড যার মাধ্যমে আমরা হারিয়েছি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের শীর্ষস্থানীয় অনেক সহযোদ্ধাকে।
সবচেয়ে বড় কথা এই, যে অরাজকতা চলেছে এতগুলো বছর ধরে তার মাধ্যমে আমাদের আদর্শ, মূল্যবোধ, সংস্কৃতি, বস্তুতপক্ষে আমাদের জাতিগত পরিচয় নিশ্চিহ্ন করার একটা প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। এসবের পেছনে একাত্তর-পূর্ববর্তী পাকিস্তানি মানসিকতাসম্পন্ন কতিপয় মানুষ সক্রিয় ছিল। তারা মাঝে মধ্যে থমকে দাঁড়িয়েছে যখন গণমানুষ তাদের দুঃশাসন, দুর্নীতি এবং দুশ্চরিত্রের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে অথবা নিজেদের অধিকার প্রয়োগ করেছে। আমরা অদূর অতীতে দেখেছি, গণমানুষের জন্মগত অধিকার ভোটের মাধ্যমে নিজের পছন্দমতো নেতৃত্বের নির্বাচন বিষয়টিও প্রায় দুঃসাধ্য করে ফেলা হয়েছিল। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমাদের গণমানুষ ভোটকেন্দ্রের কাছাকাছি যেতে পারেনি। কোটির অধিক ভুয়া ভোটার, মাস্তান নিয়োগ অথবা আদেশ-নির্দেশের মাধ্যমে ভোটকেন্দ্রে সেনাসদস্যদের অনভিপ্রেত হস্তক্ষেপ আমাদের দেশের গণতন্ত্রের পথকে অমসৃণ করেছে। কিন্তু যখনই আমাদের সাধারণ মানুষ নির্বিবাদে তাদের ভোটের অধিকার প্রয়োগ করতে পেরেছে তখনই বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসমৃদ্ধ প্রতিনিধিরা জাতীয় পরিষদে ব্যাপক হারে নির্বাচিত হয়েছেন। এখানে 'মুক্তিযুদ্ধের চেতনা' শব্দটির একটু ব্যাখ্যার প্রয়োজন আছে বলে আমার বিশ্বাস। কেননা আমরা প্রায়ই বক্তব্য-বিবৃতিতে এ চেতনা সম্পর্কে বলি বটে, কিন্তু এর অর্থ যেমন শ্রোতার কাছে অবোধ্য ঠেকে তেমনি নিজেরাও বোধহয় এর দ্যোতনা সম্পর্কে সচেতন থাকি না। এ কারণে 'মুক্তিযুদ্ধের চেতনা' শব্দ দুটির রাজনৈতিক ব্যবহার যত ব্যাপক, সামাজিক বা ব্যক্তিসচেতনতা বৃদ্ধিতে এ শব্দের প্রয়োগ ততই সীমাবদ্ধ। একটু চিন্তা করলেই বোঝা যাবে যে, যে কোনো সুকৃতিই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা উদ্ভূত। আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম একটি দুষ্কৃতিকে হটাতে। অতএব দুষ্কৃতিকে কেবল সুকৃতি দ্বারাই বিতাড়িত করা সম্ভব। প্রসঙ্গত বলা যায়, যে ফুটপাতের ওপর পড়ে থাকা একটা কলার খোসাকে তুলে নিকটবর্তী ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়াও সুকৃতি এবং নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য একটি মিথ্যা বাক্যের প্রয়োগও দুষ্কৃতি। দুষ্কৃতির এ সংজ্ঞার প্রেক্ষাপটে আমরা কিন্তু অবলীলায় ফুটপাতের ওপর কলার খোসা ছুড়ে ফেলছি এবং মিথ্যার ফুলঝুরি দিয়ে জীবন সাজাচ্ছি। অথচ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলতে বলতে আমাদের প্রায় কণ্ঠরোধ হয়ে আসছে। এই আপাত সাধারণ বিষয় থেকেই আমাদের জাতীয় জীবনের উপরে স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি এবং সন্ত্রাসের করাল গ্রাস নেমে আসে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অন্তর্গত যে বিশেষ আদর্শগুলো আছে সেগুলোর প্রতি চরম অবজ্ঞা দেখাবে বাংলাদেশের জন্মবিরোধী শক্তি এটা তো স্বাভাবিক। কিন্তু যখন আপাতদৃষ্টিতে 'স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি' এ ধরনের আচরণে প্রবৃত্ত হয় তখন তা চরম দুঃখজনক হয়ে ওঠে বৈকি। এ কারণেই কতিপয় দুষ্কৃতকারী, যারা নিজেদের স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি হিসেবে জাহির করে তাদের কৃত অপকর্মের দ্বারা সত্যিকারের স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিরা চরম বিপদের সম্মুখীন হয়। যারা বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত তাদের চেনা যায় সহজেই। কিন্তু ঘরের শত্রু যখন বিভীষণ হয় তখন দেখা দেয় সবচেয়ে বড় বিপদ। এ কারণে দিনবদলের সনদ নিয়ে যে সরকার আজকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে তাদের অনেক বেশি বিচক্ষণ, ক্ষিপ্র এবং সাবধানীও হতে হবে। বাংলাদেশ একটি ক্ষুদ্র দেশ হতে পারে, কিন্তু জনসংখ্যায় এটি অনেক বৃহদাকারের দেশকেও ছাড়িয়ে যায়। এ জনগোষ্ঠীর মধ্যে বেশিরভাগই অতি সাধারণ মানুষ যারা মোটা কাপড়, মোটা ভাতে সন্তুষ্ট থাকেন এবং নীরবে নিজস্ব কাজ করে যান। তবে হাতেগোনা কয়েকজন দুষ্কৃতকারীর অপকর্মে যখন তাদের জীবন বিপন্ন হয় তখন তাদের গতি হয় রবীন্দ্রনাথের ভাষায় : 'নাহি জানে কার দ্বারে/দাঁড়াইবে বিচারের আশে/দরিদ্রের ভগবানে বারেক ডাকিয়া দীর্ঘশ্বাসে/মরে সে নীরবে'।
আমার শঙ্কা হয় যে, জনগণ দ্বারা নির্বাচিত গণমানুষের সরকার যদি আবারও ষড়যন্ত্রের শিকার হয়, তাহলে নীরবে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করা ভিন্ন আমাদের আর কোনো পথ থাকবে না। প্রসঙ্গত একটু পেছনের দিকে তাকাতে চাই। পাকিস্তানি কারাগার থেকে সদ্য মুক্ত বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ব্রিটিশ এয়ারফোর্সের কমেট উড়োজাহাজখানি যখন '৭১-এর ১০ জানুয়ারি ঢাকায় ফিরছিল তখন ঢাকা বিমানবন্দরে লাখ লাখ মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষমাণ ছিল। প্লেনের ভেতর থেকে বঙ্গবন্ধুর একজন সহযোগী, পরবর্তী সময়ে আমাদের পররাষ্ট্র সচিব, ফারুক চৌধুরী উড়োজাহাজের জানালা দিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে ওই জনসমুদ্র দেখে উদ্বেলিত হয়ে বঙ্গবন্ধুকে সে দৃশ্য দেখতে অনুরোধ করেন। বঙ্গবন্ধু সে দৃশ্য দেখে কিছুক্ষণ স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। তারপর নীরবে অশ্রুপাত করতে শুরু করলেন। ফারুক চৌধুরী ভাবলেন, এ হয়তো আনন্দাশ্রু। তিনি বঙ্গবন্ধুকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে বঙ্গবন্ধু কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, 'আমার দেশ তো ধ্বংস হয়ে গেছে, আমি এদেরকে খাওয়াব কীভাবে?' বঙ্গবন্ধু হত্যার অনেকদিন পরে আমি এ ঘটনাটি ফারুক ভাইয়ের কাছে শুনেছি। কত বড়মাপের একজন মানুষ হলে পরে সবকিছুর আগে দেশবাসীর কথা মনে আসে একজন নেতার? তারই তো কন্যা আজকে ক্ষমতায় আসীন। দেশবাসীর মঙ্গলের কথা তাকে যে ভাবতেই হবে এবং এ ভাবনাই ইঙ্গিত দেবে তার প্রথম করণীয় কী তার প্রতি। তার সর্বপ্রথম দায়িত্ব দেশের আপামর জনসাধারণের প্রতি। কতিপয় অবস্থাপন্ন তথাকথিত বিশেষ ব্যক্তি বা পরিবারের প্রতি নয়। তার উচিত হবে কঠোরভাবে আদেশ-নির্দেশ দেওয়া যেন এদেশ থেকে দুর্নীতি এবং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে দল-মত নির্বিশেষে সকলের ক্ষেত্রে অতি কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। সত্যিকার অর্থে জনগণের দ্বারা নির্বাচিত যে সরকার তাকে অনেক বেশি সচেতন এবং সাবধানী হতে হয়। কেননা জনগণ সম্পূর্ণ আস্থা আছে বলেই তাদের নির্বাচিত করে। এ আস্থার পূর্ণ মর্যাদা সরকারকে দিতেই হবে। এ কথা অনস্বীকার্য যে, দুরভিসন্ধি এবং ক্রমাগত ষড়যন্ত্রে অভ্যস্ত যে মহল তারা একটার পর একটা বাধা সৃষ্টি করবেই। জনসাধারণ বোকা নয়। তারা জানে এবং বোঝে সবকিছুই। এ ধরনের ষড়যন্ত্রে তারা বিভ্রান্ত হয় না। কিন্তু জনগণ নিরাপত্তা এবং শান্তির প্রত্যাশী। সেই কারণে আমাদের প্রশাসনকে আরও বেশি উদ্যোগী এবং সংবেদনশীল হতে হবে। গ্রাম পর্যায় থেকে উপজেলা হয়ে জেলা পর্যন্ত যে প্রশাসন তারা অদূর অতীতের স্বেচ্ছাচারী কর্মকাণ্ডে প্রায় সম্পূর্ণ লাগামহীন হয়ে পড়েছে। এই লাগাম টেনে ধরতে হবে। পার্টির নাম করে দুর্নীতিগ্রস্ত এবং সন্ত্রাসী যারা সর্বত্র সাধারণ মানুষের জীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে, তাদের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। প্রয়োজনে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। আশা করি, বঙ্গবন্ধুর মতো মানবপ্রেমী এবং স্বদেশপ্রেমী মহান ব্যক্তির উত্তরাধিকার যার বা যাদের ওপর বর্তেছে তারা এ বিষয়গুলোর ওপর সত্বর নজর দেবেন। অতি অল্প সময়ের মধ্যেই বিভিন্ন অর্থনৈতিক, বৈদেশিক এবং সাংবিধানিক বিষয়ে যথেষ্ট প্রতিশ্রুতির স্বাক্ষর রেখেছে যে সরকার, আমি নিশ্চিত সে সরকার আগামী ছয় মাসের মধ্যে সবকিছুর ওপর সুচারু নিয়ন্ত্রণ আনতে পারবে। তবে সর্বপ্রথম যেটা প্রয়োজন, সেটা হলো জনগণের সঙ্গে সরকারের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন। এটি সম্ভব কেবল জনপ্রতিনিধিদের দ্বারাই। অতএব যে দল আজকে ক্ষমতায় রয়েছে বা ভবিষ্যতে ক্ষমতায় আসবে, তাদের জনপ্রতিনিধিদের কাছে আমার নিবেদন এই যে, আপনারা প্রতিনিয়ত নিজ নিজ এলাকায় সফর করুন এবং সেখানকার গণমানুষের যে দাবি-দাওয়া, ধ্যান-ধারণা অথবা ভাবনা-চিন্তা তার সঙ্গে নিয়মিত সংস্পর্শে থাকুন। কোনো কিছুই চিরায়ত বলে ধরে নেবেন না দয়া করে। আজকের বিপুল জনসমর্থন সহজেই কাল শূন্যতায় পর্যবসিত হতে পারে। আমার মনে হয়, প্রত্যেক জনপ্রতিনিধির উচিত প্রতিটি ইস্যুতে গণমানুষের ধ্যান-ধারণাকে পর্যবেক্ষণ করা। এর কোনো বিকল্প নেই।
আলী যাকের : সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব
রাজনীতি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা, বন্ধুদের সঙ্গে তর্কাতর্কি করা অথবা রাজনীতি নিয়ে নিজ ধ্যান-ধারণা সম্পর্কে কথা বলাও নিত্যদিনের ব্যাপার আমার জন্য। কেননা সেই বয়ঃসন্ধিকাল থেকে রাজনীতির সঙ্গেই তো আমাদের বসবাস! আমরা বড় হয়েছি এক কণ্ঠরোধকারী পাকিস্তানি অপশাসনের আমলে। প্রয়াত পটুয়া কামরুল হাসানকে যখন জিজ্ঞেস করতাম, 'কেমন আছেন কামরুল ভাই?' তিনি স্বভাবসুলভ মিষ্টি হাসি, হাসিমুখ করে বলতেন, 'ভালো আছি। কারণ ভালো থাকার অর্ডার আছে।' এহেন পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করতে হয়েছিল আমাদের।
উপরের কথাগুলো বললাম বটে, কিন্তু এটিও সত্য যে, রাজনীতি নিয়ে খুব বেশি লেখালেখি করা হয়নি। কেননা রাজনীতি সচেতনতা সত্ত্বেও আমার ভুবন হলো সংস্কৃতি। তবুও বুকে হাত দিয়ে কি বলতে পারি, আমাদের মতো সমাজে সংস্কৃতি রাজনীতিবিবর্জিত? বস্তুতপক্ষে অনেকেই মনে করেন, আমি তো বটেই, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ আসলেই ছিল সংস্কৃতির জন্য যুদ্ধ। অনেক রাজনীতিবিদ এমন কথা শুনে আঁতকে উঠবেন। আঁতকে ওঠাই স্বাভাবিক। তবে কি সংস্কৃতিজনরা রাজনীতিবিদদের পেশায় ভাগ বসাবেন? ভয় নেই ভাইসব। এখানে যে সংস্কৃতির কথা আমি উল্লেখ করলাম তা হচ্ছে আমাদের জাতিগত জীবনধারা। অর্থাৎ আমাদের শিক্ষা, সামাজিক আচার, খাদ্য, পরিচ্ছদ ইত্যাদি। এমনকি ধর্মও সংস্কৃতির অন্তর্গত একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় নিয়ামক। তবে এ ধর্মের চর্চা একটি জনগোষ্ঠীর চর্চিত নিজস্ব ধর্ম হতে হবে। অর্থাৎ আমাদের বাংলাদেশের মুসলমানরা যেসব ধর্মীয় আচার মেনে চলেন তার সঙ্গে আরব দেশের মুসলমানদের ধর্মীয় আচারে বিস্তর ফারাক রয়েছে। হিন্দু ধর্মের সম্পর্কেও একই কথা বলা যায়। বাঙালি হিন্দু আর তামিলনাড়ূর হিন্দু কি একইভাবে ধর্মচর্চা করেন?
যাই হোক, একটি জাতির সামগ্রিক পরিচয় হলো গিয়ে তার সাংস্কৃতিক পরিচয়। সেই অর্থে আমরা কোনোভাবেই পাকিস্তানের অংশ ছিলাম না, হতেও পারতাম না। অতএব যদি সংস্কৃতিজনের রাজনৈতিক আলোচনা বৈধ বলে গ্রহণযোগ্য হয় তাহলে আমার কিছু বলার আছে।
আমরা সবাই সম্ভবত বিশ্বাস করি, একটা বীভৎস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদস্বরূপ বাঙালি জাতি অস্ত্র ধারণ করে বাংলাদেশকে ১৯৭১-এ স্বাধীন করেছিল। এ স্বাধীনতা যুদ্ধ কতগুলো প্রায় আপসহীন মূল্যবোধের বাস্তবায়ন বলে আমরা ধরে নিতে পারি। কিন্তু লক্ষ্য করা সম্ভব হবে, স্বাধীনতার পর থেকে একের পর এক ষড়যন্ত্র করা হয়েছে আমাদের মূল্যবোধ এবং আদর্শগুলোকে ধ্বংস করে সেখানে একটি পাকিস্তানি চেহারাসদৃশ সরকার অথবা ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত করার। এর শিকার এ দেশের পিতৃপুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তার পরিবারবর্গ, জেলখানায় নিহত চার জাতীয় নেতা যারা মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এবং পরে একটির পর একটি গোপন অথবা প্রকাশ্য হত্যাকাণ্ড যার মাধ্যমে আমরা হারিয়েছি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের শীর্ষস্থানীয় অনেক সহযোদ্ধাকে।
সবচেয়ে বড় কথা এই, যে অরাজকতা চলেছে এতগুলো বছর ধরে তার মাধ্যমে আমাদের আদর্শ, মূল্যবোধ, সংস্কৃতি, বস্তুতপক্ষে আমাদের জাতিগত পরিচয় নিশ্চিহ্ন করার একটা প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। এসবের পেছনে একাত্তর-পূর্ববর্তী পাকিস্তানি মানসিকতাসম্পন্ন কতিপয় মানুষ সক্রিয় ছিল। তারা মাঝে মধ্যে থমকে দাঁড়িয়েছে যখন গণমানুষ তাদের দুঃশাসন, দুর্নীতি এবং দুশ্চরিত্রের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে অথবা নিজেদের অধিকার প্রয়োগ করেছে। আমরা অদূর অতীতে দেখেছি, গণমানুষের জন্মগত অধিকার ভোটের মাধ্যমে নিজের পছন্দমতো নেতৃত্বের নির্বাচন বিষয়টিও প্রায় দুঃসাধ্য করে ফেলা হয়েছিল। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমাদের গণমানুষ ভোটকেন্দ্রের কাছাকাছি যেতে পারেনি। কোটির অধিক ভুয়া ভোটার, মাস্তান নিয়োগ অথবা আদেশ-নির্দেশের মাধ্যমে ভোটকেন্দ্রে সেনাসদস্যদের অনভিপ্রেত হস্তক্ষেপ আমাদের দেশের গণতন্ত্রের পথকে অমসৃণ করেছে। কিন্তু যখনই আমাদের সাধারণ মানুষ নির্বিবাদে তাদের ভোটের অধিকার প্রয়োগ করতে পেরেছে তখনই বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসমৃদ্ধ প্রতিনিধিরা জাতীয় পরিষদে ব্যাপক হারে নির্বাচিত হয়েছেন। এখানে 'মুক্তিযুদ্ধের চেতনা' শব্দটির একটু ব্যাখ্যার প্রয়োজন আছে বলে আমার বিশ্বাস। কেননা আমরা প্রায়ই বক্তব্য-বিবৃতিতে এ চেতনা সম্পর্কে বলি বটে, কিন্তু এর অর্থ যেমন শ্রোতার কাছে অবোধ্য ঠেকে তেমনি নিজেরাও বোধহয় এর দ্যোতনা সম্পর্কে সচেতন থাকি না। এ কারণে 'মুক্তিযুদ্ধের চেতনা' শব্দ দুটির রাজনৈতিক ব্যবহার যত ব্যাপক, সামাজিক বা ব্যক্তিসচেতনতা বৃদ্ধিতে এ শব্দের প্রয়োগ ততই সীমাবদ্ধ। একটু চিন্তা করলেই বোঝা যাবে যে, যে কোনো সুকৃতিই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা উদ্ভূত। আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম একটি দুষ্কৃতিকে হটাতে। অতএব দুষ্কৃতিকে কেবল সুকৃতি দ্বারাই বিতাড়িত করা সম্ভব। প্রসঙ্গত বলা যায়, যে ফুটপাতের ওপর পড়ে থাকা একটা কলার খোসাকে তুলে নিকটবর্তী ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়াও সুকৃতি এবং নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য একটি মিথ্যা বাক্যের প্রয়োগও দুষ্কৃতি। দুষ্কৃতির এ সংজ্ঞার প্রেক্ষাপটে আমরা কিন্তু অবলীলায় ফুটপাতের ওপর কলার খোসা ছুড়ে ফেলছি এবং মিথ্যার ফুলঝুরি দিয়ে জীবন সাজাচ্ছি। অথচ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলতে বলতে আমাদের প্রায় কণ্ঠরোধ হয়ে আসছে। এই আপাত সাধারণ বিষয় থেকেই আমাদের জাতীয় জীবনের উপরে স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি এবং সন্ত্রাসের করাল গ্রাস নেমে আসে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অন্তর্গত যে বিশেষ আদর্শগুলো আছে সেগুলোর প্রতি চরম অবজ্ঞা দেখাবে বাংলাদেশের জন্মবিরোধী শক্তি এটা তো স্বাভাবিক। কিন্তু যখন আপাতদৃষ্টিতে 'স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি' এ ধরনের আচরণে প্রবৃত্ত হয় তখন তা চরম দুঃখজনক হয়ে ওঠে বৈকি। এ কারণেই কতিপয় দুষ্কৃতকারী, যারা নিজেদের স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি হিসেবে জাহির করে তাদের কৃত অপকর্মের দ্বারা সত্যিকারের স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিরা চরম বিপদের সম্মুখীন হয়। যারা বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত তাদের চেনা যায় সহজেই। কিন্তু ঘরের শত্রু যখন বিভীষণ হয় তখন দেখা দেয় সবচেয়ে বড় বিপদ। এ কারণে দিনবদলের সনদ নিয়ে যে সরকার আজকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে তাদের অনেক বেশি বিচক্ষণ, ক্ষিপ্র এবং সাবধানীও হতে হবে। বাংলাদেশ একটি ক্ষুদ্র দেশ হতে পারে, কিন্তু জনসংখ্যায় এটি অনেক বৃহদাকারের দেশকেও ছাড়িয়ে যায়। এ জনগোষ্ঠীর মধ্যে বেশিরভাগই অতি সাধারণ মানুষ যারা মোটা কাপড়, মোটা ভাতে সন্তুষ্ট থাকেন এবং নীরবে নিজস্ব কাজ করে যান। তবে হাতেগোনা কয়েকজন দুষ্কৃতকারীর অপকর্মে যখন তাদের জীবন বিপন্ন হয় তখন তাদের গতি হয় রবীন্দ্রনাথের ভাষায় : 'নাহি জানে কার দ্বারে/দাঁড়াইবে বিচারের আশে/দরিদ্রের ভগবানে বারেক ডাকিয়া দীর্ঘশ্বাসে/মরে সে নীরবে'।
আমার শঙ্কা হয় যে, জনগণ দ্বারা নির্বাচিত গণমানুষের সরকার যদি আবারও ষড়যন্ত্রের শিকার হয়, তাহলে নীরবে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করা ভিন্ন আমাদের আর কোনো পথ থাকবে না। প্রসঙ্গত একটু পেছনের দিকে তাকাতে চাই। পাকিস্তানি কারাগার থেকে সদ্য মুক্ত বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ব্রিটিশ এয়ারফোর্সের কমেট উড়োজাহাজখানি যখন '৭১-এর ১০ জানুয়ারি ঢাকায় ফিরছিল তখন ঢাকা বিমানবন্দরে লাখ লাখ মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষমাণ ছিল। প্লেনের ভেতর থেকে বঙ্গবন্ধুর একজন সহযোগী, পরবর্তী সময়ে আমাদের পররাষ্ট্র সচিব, ফারুক চৌধুরী উড়োজাহাজের জানালা দিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে ওই জনসমুদ্র দেখে উদ্বেলিত হয়ে বঙ্গবন্ধুকে সে দৃশ্য দেখতে অনুরোধ করেন। বঙ্গবন্ধু সে দৃশ্য দেখে কিছুক্ষণ স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। তারপর নীরবে অশ্রুপাত করতে শুরু করলেন। ফারুক চৌধুরী ভাবলেন, এ হয়তো আনন্দাশ্রু। তিনি বঙ্গবন্ধুকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে বঙ্গবন্ধু কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, 'আমার দেশ তো ধ্বংস হয়ে গেছে, আমি এদেরকে খাওয়াব কীভাবে?' বঙ্গবন্ধু হত্যার অনেকদিন পরে আমি এ ঘটনাটি ফারুক ভাইয়ের কাছে শুনেছি। কত বড়মাপের একজন মানুষ হলে পরে সবকিছুর আগে দেশবাসীর কথা মনে আসে একজন নেতার? তারই তো কন্যা আজকে ক্ষমতায় আসীন। দেশবাসীর মঙ্গলের কথা তাকে যে ভাবতেই হবে এবং এ ভাবনাই ইঙ্গিত দেবে তার প্রথম করণীয় কী তার প্রতি। তার সর্বপ্রথম দায়িত্ব দেশের আপামর জনসাধারণের প্রতি। কতিপয় অবস্থাপন্ন তথাকথিত বিশেষ ব্যক্তি বা পরিবারের প্রতি নয়। তার উচিত হবে কঠোরভাবে আদেশ-নির্দেশ দেওয়া যেন এদেশ থেকে দুর্নীতি এবং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে দল-মত নির্বিশেষে সকলের ক্ষেত্রে অতি কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। সত্যিকার অর্থে জনগণের দ্বারা নির্বাচিত যে সরকার তাকে অনেক বেশি সচেতন এবং সাবধানী হতে হয়। কেননা জনগণ সম্পূর্ণ আস্থা আছে বলেই তাদের নির্বাচিত করে। এ আস্থার পূর্ণ মর্যাদা সরকারকে দিতেই হবে। এ কথা অনস্বীকার্য যে, দুরভিসন্ধি এবং ক্রমাগত ষড়যন্ত্রে অভ্যস্ত যে মহল তারা একটার পর একটা বাধা সৃষ্টি করবেই। জনসাধারণ বোকা নয়। তারা জানে এবং বোঝে সবকিছুই। এ ধরনের ষড়যন্ত্রে তারা বিভ্রান্ত হয় না। কিন্তু জনগণ নিরাপত্তা এবং শান্তির প্রত্যাশী। সেই কারণে আমাদের প্রশাসনকে আরও বেশি উদ্যোগী এবং সংবেদনশীল হতে হবে। গ্রাম পর্যায় থেকে উপজেলা হয়ে জেলা পর্যন্ত যে প্রশাসন তারা অদূর অতীতের স্বেচ্ছাচারী কর্মকাণ্ডে প্রায় সম্পূর্ণ লাগামহীন হয়ে পড়েছে। এই লাগাম টেনে ধরতে হবে। পার্টির নাম করে দুর্নীতিগ্রস্ত এবং সন্ত্রাসী যারা সর্বত্র সাধারণ মানুষের জীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে, তাদের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। প্রয়োজনে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। আশা করি, বঙ্গবন্ধুর মতো মানবপ্রেমী এবং স্বদেশপ্রেমী মহান ব্যক্তির উত্তরাধিকার যার বা যাদের ওপর বর্তেছে তারা এ বিষয়গুলোর ওপর সত্বর নজর দেবেন। অতি অল্প সময়ের মধ্যেই বিভিন্ন অর্থনৈতিক, বৈদেশিক এবং সাংবিধানিক বিষয়ে যথেষ্ট প্রতিশ্রুতির স্বাক্ষর রেখেছে যে সরকার, আমি নিশ্চিত সে সরকার আগামী ছয় মাসের মধ্যে সবকিছুর ওপর সুচারু নিয়ন্ত্রণ আনতে পারবে। তবে সর্বপ্রথম যেটা প্রয়োজন, সেটা হলো জনগণের সঙ্গে সরকারের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন। এটি সম্ভব কেবল জনপ্রতিনিধিদের দ্বারাই। অতএব যে দল আজকে ক্ষমতায় রয়েছে বা ভবিষ্যতে ক্ষমতায় আসবে, তাদের জনপ্রতিনিধিদের কাছে আমার নিবেদন এই যে, আপনারা প্রতিনিয়ত নিজ নিজ এলাকায় সফর করুন এবং সেখানকার গণমানুষের যে দাবি-দাওয়া, ধ্যান-ধারণা অথবা ভাবনা-চিন্তা তার সঙ্গে নিয়মিত সংস্পর্শে থাকুন। কোনো কিছুই চিরায়ত বলে ধরে নেবেন না দয়া করে। আজকের বিপুল জনসমর্থন সহজেই কাল শূন্যতায় পর্যবসিত হতে পারে। আমার মনে হয়, প্রত্যেক জনপ্রতিনিধির উচিত প্রতিটি ইস্যুতে গণমানুষের ধ্যান-ধারণাকে পর্যবেক্ষণ করা। এর কোনো বিকল্প নেই।
আলী যাকের : সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব
No comments