রহস্যময় দেড় শ' মেস_ সংঘবদ্ধ হচ্ছে ক্যাডাররা- জামায়াত-শিবিরের আর্থিক সহায়তা আগ্রাবাদের অভিযানে বহু অত্যাধুনিক অস্ত্র হাতছাড়া
চট্টগ্রাম অফিস মৌলবাদী ভিত নতুন করে শক্ত ও সরকারবিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলতে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে জামায়াত শিবির মেসভিত্তিক কর্মকা-ের আবারও উত্থান ঘটেছে। এ জন্য চট্টগ্রামে এ চক্রের তত্ত্বাবধানে খোলা হয়েছে প্রায় দেড়'শ' মেস।
জামায়াত-শিবিরের আর্থিক সহায়তায় পরিচালিত হচ্ছে এসব মেস। মেসগুলোর আড়ালে সংঘবদ্ধ হচ্ছে এ চক্রের সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী। রবিবার রাতে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ মিস্ত্রিপাড়ায় শিবির পরিচালিত একটি মেসে পুলিশ সংঘবদ্ধ অভিযান চালিয়ে এ ধরনের রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনার প্রমাণ পেয়েছে। ঐ অভিযানে অত্যাধুনিক অস্ত্রের বেশকিছু গুলি পাওয়া গেলেও মূল অস্ত্র হাতছাড়া হয়েছে বলে পুলিশ ধারণা করছে। মেসে উদ্ধারকৃত অস্ত্রের কয়েকটি লোডেড থাকা অবস্থায় থাকায় পুলিশ কর্মকর্তারা রীতিমতো শঙ্কিত। পুলিশ ইতোমধ্যে শিবিরের চিহ্নিত মেসগুলোর উপর নজরদারিতে নেমেছে।চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, নগরীর দৰিণাংশে প্রায় ১শ'টি এবং উত্তরাংশে ৫০টি মেস জামায়াত-শিবির সরাসরি ও নেপথ্যে পরিচালনা করছে। এসব মেসের সদস্যদের সিংহভাগই তাদের অনুসারী অথবা সরাসরি ক্যাডার। লেখাপড়াকে সামনে রেখে আড়ালে জামায়াত, শিবিরের রাজনৈতিক কর্মকা- পাকাপোক্ত করতেই মূলত তৎপরতা চলছে। বরাবরের মতো শিবির এসব পরিকল্পনা নিয়েই চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসিন কলেজে দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্য বিরাজ করে আসছে। চকবাজার, বাকলিয়া ও চন্দনপুরাভিত্তিক বিভিন্ন স্থানে মেস সৃষ্টি করে তারা সফলতা পাবার পর এ পরিকল্পনা এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। গত সংসদ নির্বাচনে জামায়াত শিবিরের ব্যাপক ভরাডুবির পর চট্টগ্রামে নতুন করে তাদের ভিত শক্ত করতে মেস ছড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়। এতে তারা আগ্রাবাদ, হালিশহর, অক্সিজেন, ষোলশহর, নাসিরাবাদ এবং বহদ্দারহাট এলাকায় টার্গেট করে মেস সৃষ্টির মাধ্যমে বিপুলসংখ্যক শিবির ক্যাডার জড়ো করতে থাকে। অনুসন্ধানে জানা যায়, মেসে শিবির আর্থিকভাবে সরাসরি সহায়তা করে না। অভিভাবকের ভূমিকাতেই থাকে। থাকা খাওয়াসহ ভর্তি সংক্রানত্ম নানা বিষয়ে সহযোগিতা এবং মেস পরিচালনার দায়িত্বে থাকে জামায়াত শিবিরের সিনিয়র নেতারা। বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার ছাত্রদের নিয়ে এসব মেস পরিচালনা করা হয়। মেসেই শিবিরের আদর্শ দীৰা দেয়ার পাশাপাশি আশপাশের এলাকাগুলোর ছাত্রদের টার্গেট করে দলীয় আদর্শ ছড়িয়ে দেয়া হয়। মেস প্রসঙ্গে শিবিরের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা দাবি করেন মেস পরিচালনা দোষের কিছু নয়। তবে মেস ঘিরে তারা কোন অস্ত্র মজুদের কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত নয়।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) বনজ কুমার মজুমদার সাংবাদিকদের জানান, নগরীতে প্রায় দেড় শ'টি মেস রয়েছে বলে তারা প্রাথমিকভাবে তথ্য পেয়েছেন। এর মধ্যে উত্তরাংশে ৫০টির মতো মেস আছে। এসব মেস সম্পর্কে বিসত্মারিত তথ্য সংগ্রহ করে গোয়েন্দা নজরদারিতে নেমেছে পুলিশ। পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, চকবাজার, বাকলিয়া, কাপাসগোলা, বাদুড়তলা ও শুলকবহর এলাকায় এক সময় শিবির মেস সৃষ্টি করে আধিপত্য বিরাজ করছিল। কিন্তু পরবতর্ীতে তাদের কৌশল ফাঁস হয়ে গেলে নানামুখী চাপে পিছিয়ে পড়ে। এখন তারা কৌশল পাল্টিয়ে মেসগুলোকে চান্দগাঁও পর্যনত্ম বিসত্মৃত করে বিভিন্ন শিৰা প্রতিষ্ঠানে দলীয় কর্মকা- পরিচালনার টার্গেট নিয়েছে। বাকলিয়া এবং পলিটেকনিক এলাকায় মার খাবার পর বেশকিছু মেস বন্ধ হলেও তারা পরিকল্পনা থেকে পিছিয়ে আসেনি। পুলিশ আগ্রাবাদের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন স্থানে মেসের ওপর তথ্য সংগ্রহ করে যে কোন সময় অভিযান চালাতে পারে বলেও জানিয়েছে।
এদিকে আগ্রাবাদ মিস্ত্রিপাড়ায় শিবির মেস থেকে বেশকিছু সংখ্যক অস্ত্র উদ্ধার করলেও দামীর অত্যাধুনিক কিছু অস্ত্র হাতছাড়া হয়ে গেছে বলে তাদের ধারণা। জামায়াত নেতার মালিকাধীন ঐ মেস থেকে উদ্ধার করা কিছু অস্ত্র ছিল লোডেড অবস্থায়। লোডেড অবস্থাকে ঘিরে পুলিশের এখন নানা সন্দেহ। কারণ উদ্ধারের সময় গোলাগুলির ঘটনা ঘটেনি আবার গত কিছুদিনে এমনও রাজনৈতিক ঝুঁকিপূর্ণ কোন পরিবেশ ছিল না। তারপরও অস্ত্রগুলো কেন লোডেড ছিল _এ নিয়ে পুলিশের নানা সন্দেহ। এছাড়া নাইন এমএম পিসত্মল ও পয়েন্ট টু টু রাইফেলের গুলি উদ্ধারের ঘটনা। কারণ এসব গুলি বিকল্প কোন অস্ত্রে ব্যবহার করা যায় না। অথচ গুলি পাওয়া গেল কিন্তু অস্ত্র মিলল না। এ নিয়ে তাদের সন্দেহ। পুলিশের ধারণা, হয় দ্রম্নত সময়ে অথবা অভিযানের সামান্য আগে আধুনিক অস্ত্রগুলো সরিয়ে ফেলা হয়েছে। পুলিশের সন্দেহ বেড়েছে পাশে আরেকটি ভবনে শিবিরের মহানগর দৰিণ শাখার ১০ নেতার ফ্যাট নিয়েও। আগের রাতেই তারা ঢাকায় সম্মেলনে যোগ দিতে ঐ এলাকা থেকে বেরিয়ে যায়। পুলিশ সন্দেহ করছে ঐসব নেতারাই হয়ত আধুনিক অস্ত্রগুলো সঙ্গে নিয়ে গেছে। এছাড়া কৰগুলো ছিল রহস্যময়। দেয়ালের বিভিন্ন অংশে গর্ত থাকার বিষয়টিও তাদের ভাবিয়ে তুলেছে। ফলস সিলিং এবং অস্ত্র রাখার ধরন সম্পর্কে পুলিশের ধারণা ঐ কৰে বিপুলসংখ্যক অস্ত্রের মজুদ ছিল। ট্রানজিট হিসেবেই হয়ত এ মেসকে ব্যবহার করা হয়। এ বিষয়ে গ্রেফতারকৃতদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই অনেক প্রশ্নের জবাব পাবে বলে পুলিশ ধারণা করছে। মঙ্গলবার পুলিশের পৰ থেকে গ্রেফতারকৃতদের ৫ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফজলুল বারী বৃহস্পতিবার আসামিদের হাজির করে শুনানির দিন ধার্য করেছেন। পুলিশ সূত্র জানায়, রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে আগ্রাবাদের মেস নিয়ে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য বের হয়ে আসবে। এছাড়া বন্দরনগরী চট্টগ্রামে শিবির মেসের আড়ালে মৌলবাদী কার্যক্রমের ভিত শক্ত ও সরকারবিরোধী কর্মকা- জোরদার করতে যে পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে তা ফাঁস হয়ে যেতে পারে। এসি প্রাকিউশন নেমলেন্দু বিকাশ চক্রবতর্ী জানান, আসামিদের পৰে জামিন আবেদন করা হয়েছিল। আদালত তা নাকচ করে দেয়।
অন্যদিকে অস্ত্র আটক ও শিবির নেতা গ্রেফতারের ঘটনাকে সাজানো হিসেবে দাবি করেছে শিবির। অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনার নেতিবাচক প্রভাব এড়াতে শিবির নেতারা তাদের মুরবি্ব সংগঠন জামায়াত নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে করণীয় কি ঠিক করতে যাচ্ছে বলেও জানা গেছে। এছাড়া হক ভিলার একাংশের মালিক ও জামায়াতের সদস্য ডা. একরামুল হকের পরিবারের প থেকে মঙ্গলবার সকালে চট্টগ্রাম প্রেসকাবে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সম্মেলনে পরিবারের প থেকে ডাক্তারের অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে ও ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয় এমন দাবি করে মুক্তি দাবি করা হয়। এটা পুলিশের সাজানো নাটক বলে অভিহিত করেন ডা. একরামের স্ত্রী খালেদা পারভীন।
এদিকে মহানগর জামায়াতের পৰ থেকে দাবি করা হয়েছে আগ্রাবাদের মিস্ত্রিপাড়ায় ছাত্র মেস থেকে নিরীহ শিবির কমর্ীদের অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা অস্ত্র মামলায় জড়ানো হয়েছে। তারা এ ঘটনার নিন্দা করে গ্রেফতারকৃতদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছে। জামায়াতের নগর আমির মাওলানা মোঃ শামসুল ইসলাম এমপি ও সেক্রেটারি মাওলানা নজরম্নল ইসলাম, জেলা আমির মোঃ জাফর সাদেক ও সেক্রেটারি অধ্যাপক মোঃ নুরম্নলস্নাহ, উত্তর জেলা আমির আমীরম্নজ্জামান ও সেক্রেটারি অধ্যাপক মোঃ নুরম্নল আমিন চৌধুরী মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগ ও ৰোভের সঙ্গে লৰ্য করছি যে, ইসলামের পতাকাবাহী ইসলামী ছাত্র শিবিরের অগ্রযাত্রা ও জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে সরকার ষড়যন্ত্র ও মিথ্যা মামলা দিয়ে দমন নিপীড়নের পথ বেছে নিয়েছে। আমরা এ ধরনের কর্মকা- থেকে সরকারকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।
No comments