'হাতুড়ি বাহিনী' আবারও সক্রিয় লক্ষ্য ১৮ জেলা by মাসুদ কার্জন ও রফিকুল ইসলাম
২০০১ সালের কথা। বরিশালের সদর উপজেলায় কাশিপুরের শার্শি এলাকায় একটি মসজিদের মুসল্লিদের ওপর হাতুড়ি নিয়ে হামলা চালায় কথিত ইসলামী সংগঠন হিযবুত তাওহীদের সদস্যরা।
২০০২ সালের ১৭ জুন বরিশালের গৌরনদীতে স্থানীয় মুসল্লিদের সঙ্গে মারামারির সময় আবারও হাতুড়ি ব্যবহার করে তারা। এ সময় সংগঠনটির স্থানীয় নেতা সোহরাব হোসেন খানকে ১১ সহযোগীসহ আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে এলাকাবাসী। ২০০৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর এ দলের কর্মীরা হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে নারায়ণগঞ্জের পাগলা এলাকার হাফেজ
আবদুল মালেককে। এ ছাড়া মাদারীপুর ও কুষ্টিয়ার উদীবাড়িতে স্থানীয় মুসল্লিদের সঙ্গে সংঘর্ষে হিযবুত তাওহীদ অস্ত্র হিসেবে হাতুড়ি ব্যবহার করে।
দেশের যেসব এলাকায় এই সংগঠনের কার্যক্রম বিস্তৃত সেখানেই তারা �হাতুড়ি বাহিনী� হিসেবে পরিচিত। সংগঠনটির কার্যক্রম দেখে মনে হয়, হাতুড়িকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে তারা কথিত সংগ্রাম বা �কিতাল�-এর মাধ্যমে ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চায়। ফলে স্থানীয়ভাবে সংগঠনটিকে অনেকেই বলে থাকে হাতুড়ি বাহিনী। তাদের প্রত্যেকটি সংঘর্ষের নেপথ্যে ছিল ইসলাম সম্পর্কে হিযবুত তাওহীদের অপব্যাখ্যা। উগ্র বক্তৃতা বা ইসলামের অপব্যাখ্যা দেওয়ায় ১৯৯৬ সালে দলটির প্রতিষ্ঠাতা বায়েজিদ খান পন্নী ওরফে ইমামুজ্জামানকেও একবার গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। বর্তমানে সংগঠনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কালো তালিকাভুক্ত।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, কথিত ইসলামী শরিয়াভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে জঙ্গি কার্যক্রম চালানো বা ইসলামের অপব্যাখ্যা দিয়ে খুন-খারাবির কারণে দুই বছর আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংগঠনটিকে কালো তালিকাভুক্ত করে। এরপর কিছুদিন নিজেদের আড়াল করে রাখলেও সম্প্রতি আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে এই গোষ্ঠীটি। প্রকাশ্যেই তৎপরতা চালাচ্ছে তারা। নিষিদ্ধ ঘোষিত জেএমবি বা হুজির কর্মী-সমর্থকরা এ দলে যোগ দিয়ে অপতৎপরতা চালাতে পারে বলেও অনেকের ধারণা।
গত এক সপ্তাহে চট্টগ্রাম ও বরিশালে কর্মকাণ্ড চালানোর অভিযোগে চার মহিলাসহ সাতজন আটক হয়েছে। এ ছাড়া গত এক বছরে উত্তরাঞ্চল, নোয়াখালী, ফেনী, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে অর্ধশত হিযবুত তাওহীদের নেতা-কর্মী আটক হয়। অবশ্য তাদের অধিকাংশই জামিনে বের হয়ে এসেছে।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে রাজধানী, চট্টগ্রাম, বরিশাল, ফেনী, নোয়াখালী, টাঙ্গাইলসহ দেশের ১৬টি জেলাকে টার্গেট করে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে তারা। তবে বরিশালের সব উপজেলাতেই তাওহীদের কর্মকাণ্ড বিস্তৃত। সোহরাব খান এ অঞ্চলে সংগঠনের গোড়াপত্তন করেছিলেন। স্থানীয়রা তাঁকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করলেও তিনি পরে ছাড়া পান।
অনুসন্ধানে জানা যায়, দলটির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী পন্নী পরিবারের সদস্য বায়েজিদ খান পন্নী ওরফে ইমামুজ্জামান (৮৪)। তিনি বিএনপি নেতা সাবেক ডেপুটি স্পিকার হুমায়ুন খান পন্নীর আপন ভাই। ১৯৯২ সালে বায়েজিদ খান দলটি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৯৪ সালে প্রকাশ্যে জনসভার মাধ্যমে শুরু হয় কার্যক্রম। এরই মধ্যে বিপুল পরিমাণ কথিত জেহাদি বই ও সিডি প্রকাশ করেছে তারা। এগুলো প্রকাশ্যে মাইকিং করে বিক্রি করা হয়। শুভাকাক্সক্ষীদের দেওয়া জাকাত-ফিতরা, কোরবানির চামড়ার টাকা ছাড়াও তাদের প্রকাশিত বই ও সিডি বিক্রি আয়ের অন্যতম উৎস বলে জানা যায়।
সূত্র মতে, বর্তমানে ঢাকার উত্তরার বায়েজিদ খান পন্নীর বাসা ঘিরেই তৎপরতা চলে। বার্ধক্যজনিত কারণে প্রকাশ্যে না এলেও নেপথ্যে থেকে এখনো বায়েজিদ খান সব দেখ-ভাল করেন। ঢাকার আমিরের দায়িত্বে আছেন মাসিহ-উর-রহমান নামের একজন। আপাতত �দাওয়াতি� কাজে কর্মী সংখ্যা, বিশেষ করে মহিলা কর্মীর সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। গোপন পাঠচক্র এর অন্যতম পন্থা।
র্যাবের মহাপরিচালক মোখলেসুর রহমান কালের কণ্ঠকে জানান, জঙ্গি তৎপরতার অভিযোগে কালো তালিকাভুক্ত এ সংগঠনটির দিকে তীক্ষ� নজর রাখা হচ্ছে। এ ছাড়া অন্য কোনো নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন নিজেদের বাঁচাতে এ দলে ভিড়ছে কি না তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
জানা যায়, বায়েজিদ খান পন্নী ছিলেন হিযবুত তাওহীদের অন্যতম অর্থদাতা। তবে পারিবারিক বিরোধের কারণে তিনি এখন অর্থ সংকটে আছেন। এ ব্যাপারে বায়েজিদ খান পন্নীর মন্তব্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। তাঁর ভাই বান্টিং পন্নী বলেন, বায়েজিদ খান পন্নীর সঙ্গে তাঁদের এখন যোগাযোগ নেই।
জানা যায়, সংগঠনটিতে সক্রিয় ২০০ মহিলা সদস্য রয়েছে। দলে তারা �বালাগ� বলে পরিচিত। তারা রাতের অন্ধকারে বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে সাধারণ বা গ্রামের মহিলাদের টার্গেট করে কাজ করে। প্রয়োজনে এসব বালাগ বা মহিলা স্বামী-সংসার ত্যাগ করতেও দ্বিধা করে না। ২০০৭ সালের ৩০ ডিসেম্বর উজিরপুর উপজেলার ইসলাদী গ্রামের আলাউদ্দিন তাঁর স্ত্রী সাবিনা বেগমের (৩৫) বিরুদ্ধে উগ্রপন্থী সংগঠন হিযবুত তাওহীদের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে থানায় ডায়েরি করেন। পরে ওই দম্পতিকে থানায় ডেকে আনা হয়। তখন প্রকাশ্যে আলাউদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, তাঁর স্ত্রী অপরিচিত মহিলাদের সঙ্গে রাতের বেলা নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। আলাউদ্দিন স্ত্রীকে বাড়িতে বসে রোজা-নামাজ আদায়ের জন্য বারবার পরামর্শ দিলেও সাবিনা শুনছে না। সাবিনা বিষয়টি স্বীকার করে প্রকাশ্যে থানা চত্বরে বলে, সে স্বামীকে ত্যাগ করবে কিন্তু সংগঠনকে নয়। এ ঘটনার পর তাদের মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে।
আবদুল মালেককে। এ ছাড়া মাদারীপুর ও কুষ্টিয়ার উদীবাড়িতে স্থানীয় মুসল্লিদের সঙ্গে সংঘর্ষে হিযবুত তাওহীদ অস্ত্র হিসেবে হাতুড়ি ব্যবহার করে।
দেশের যেসব এলাকায় এই সংগঠনের কার্যক্রম বিস্তৃত সেখানেই তারা �হাতুড়ি বাহিনী� হিসেবে পরিচিত। সংগঠনটির কার্যক্রম দেখে মনে হয়, হাতুড়িকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে তারা কথিত সংগ্রাম বা �কিতাল�-এর মাধ্যমে ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চায়। ফলে স্থানীয়ভাবে সংগঠনটিকে অনেকেই বলে থাকে হাতুড়ি বাহিনী। তাদের প্রত্যেকটি সংঘর্ষের নেপথ্যে ছিল ইসলাম সম্পর্কে হিযবুত তাওহীদের অপব্যাখ্যা। উগ্র বক্তৃতা বা ইসলামের অপব্যাখ্যা দেওয়ায় ১৯৯৬ সালে দলটির প্রতিষ্ঠাতা বায়েজিদ খান পন্নী ওরফে ইমামুজ্জামানকেও একবার গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। বর্তমানে সংগঠনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কালো তালিকাভুক্ত।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, কথিত ইসলামী শরিয়াভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে জঙ্গি কার্যক্রম চালানো বা ইসলামের অপব্যাখ্যা দিয়ে খুন-খারাবির কারণে দুই বছর আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংগঠনটিকে কালো তালিকাভুক্ত করে। এরপর কিছুদিন নিজেদের আড়াল করে রাখলেও সম্প্রতি আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে এই গোষ্ঠীটি। প্রকাশ্যেই তৎপরতা চালাচ্ছে তারা। নিষিদ্ধ ঘোষিত জেএমবি বা হুজির কর্মী-সমর্থকরা এ দলে যোগ দিয়ে অপতৎপরতা চালাতে পারে বলেও অনেকের ধারণা।
গত এক সপ্তাহে চট্টগ্রাম ও বরিশালে কর্মকাণ্ড চালানোর অভিযোগে চার মহিলাসহ সাতজন আটক হয়েছে। এ ছাড়া গত এক বছরে উত্তরাঞ্চল, নোয়াখালী, ফেনী, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে অর্ধশত হিযবুত তাওহীদের নেতা-কর্মী আটক হয়। অবশ্য তাদের অধিকাংশই জামিনে বের হয়ে এসেছে।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে রাজধানী, চট্টগ্রাম, বরিশাল, ফেনী, নোয়াখালী, টাঙ্গাইলসহ দেশের ১৬টি জেলাকে টার্গেট করে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে তারা। তবে বরিশালের সব উপজেলাতেই তাওহীদের কর্মকাণ্ড বিস্তৃত। সোহরাব খান এ অঞ্চলে সংগঠনের গোড়াপত্তন করেছিলেন। স্থানীয়রা তাঁকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করলেও তিনি পরে ছাড়া পান।
অনুসন্ধানে জানা যায়, দলটির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী পন্নী পরিবারের সদস্য বায়েজিদ খান পন্নী ওরফে ইমামুজ্জামান (৮৪)। তিনি বিএনপি নেতা সাবেক ডেপুটি স্পিকার হুমায়ুন খান পন্নীর আপন ভাই। ১৯৯২ সালে বায়েজিদ খান দলটি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৯৪ সালে প্রকাশ্যে জনসভার মাধ্যমে শুরু হয় কার্যক্রম। এরই মধ্যে বিপুল পরিমাণ কথিত জেহাদি বই ও সিডি প্রকাশ করেছে তারা। এগুলো প্রকাশ্যে মাইকিং করে বিক্রি করা হয়। শুভাকাক্সক্ষীদের দেওয়া জাকাত-ফিতরা, কোরবানির চামড়ার টাকা ছাড়াও তাদের প্রকাশিত বই ও সিডি বিক্রি আয়ের অন্যতম উৎস বলে জানা যায়।
সূত্র মতে, বর্তমানে ঢাকার উত্তরার বায়েজিদ খান পন্নীর বাসা ঘিরেই তৎপরতা চলে। বার্ধক্যজনিত কারণে প্রকাশ্যে না এলেও নেপথ্যে থেকে এখনো বায়েজিদ খান সব দেখ-ভাল করেন। ঢাকার আমিরের দায়িত্বে আছেন মাসিহ-উর-রহমান নামের একজন। আপাতত �দাওয়াতি� কাজে কর্মী সংখ্যা, বিশেষ করে মহিলা কর্মীর সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। গোপন পাঠচক্র এর অন্যতম পন্থা।
র্যাবের মহাপরিচালক মোখলেসুর রহমান কালের কণ্ঠকে জানান, জঙ্গি তৎপরতার অভিযোগে কালো তালিকাভুক্ত এ সংগঠনটির দিকে তীক্ষ� নজর রাখা হচ্ছে। এ ছাড়া অন্য কোনো নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন নিজেদের বাঁচাতে এ দলে ভিড়ছে কি না তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
জানা যায়, বায়েজিদ খান পন্নী ছিলেন হিযবুত তাওহীদের অন্যতম অর্থদাতা। তবে পারিবারিক বিরোধের কারণে তিনি এখন অর্থ সংকটে আছেন। এ ব্যাপারে বায়েজিদ খান পন্নীর মন্তব্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। তাঁর ভাই বান্টিং পন্নী বলেন, বায়েজিদ খান পন্নীর সঙ্গে তাঁদের এখন যোগাযোগ নেই।
জানা যায়, সংগঠনটিতে সক্রিয় ২০০ মহিলা সদস্য রয়েছে। দলে তারা �বালাগ� বলে পরিচিত। তারা রাতের অন্ধকারে বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে সাধারণ বা গ্রামের মহিলাদের টার্গেট করে কাজ করে। প্রয়োজনে এসব বালাগ বা মহিলা স্বামী-সংসার ত্যাগ করতেও দ্বিধা করে না। ২০০৭ সালের ৩০ ডিসেম্বর উজিরপুর উপজেলার ইসলাদী গ্রামের আলাউদ্দিন তাঁর স্ত্রী সাবিনা বেগমের (৩৫) বিরুদ্ধে উগ্রপন্থী সংগঠন হিযবুত তাওহীদের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে থানায় ডায়েরি করেন। পরে ওই দম্পতিকে থানায় ডেকে আনা হয়। তখন প্রকাশ্যে আলাউদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, তাঁর স্ত্রী অপরিচিত মহিলাদের সঙ্গে রাতের বেলা নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। আলাউদ্দিন স্ত্রীকে বাড়িতে বসে রোজা-নামাজ আদায়ের জন্য বারবার পরামর্শ দিলেও সাবিনা শুনছে না। সাবিনা বিষয়টি স্বীকার করে প্রকাশ্যে থানা চত্বরে বলে, সে স্বামীকে ত্যাগ করবে কিন্তু সংগঠনকে নয়। এ ঘটনার পর তাদের মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে।
No comments