আড্ডায় মুখরিত রাবি
দু’জন যোদ্ধার পরনেই প্যান্ট, মাথায় এলোমেলো চুল। মনে হচ্ছে এখনই দেশ স্বাধীন করে ফিরল স্বদেশ ভূমিতে। একজন রাইফেল উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে, বাঁ বাহু মুষ্টিবদ্ধ করে জাগানো। অন্যজন রাইফেল হাতে দৌড়ানোর জন্য যেন প্রস্তুত।
মুক্তিযোদ্ধাদের পেছনে ৩৬ ফুট উঁচু দেয়াল। তার উপরের দিকে রয়েছে সূর্যের আকারে শূন্য বৃত্ত। তাদের ডানদিকে রয়েছে দু’জন যুবক-যুবতী। যুবকের কাঁধে রাইফেল, মুখে কালো দাড়ি, কোমরে গামছা বাঁধা। মনে হচ্ছে যেন বাউল।পাশেই যুবতীর হাতে একতারা। গাছের নিচে মহিলা বাউলের ডান হাত আউলের বুকে বাম দিকের দেয়ালে রয়েছে মায়ের কোলে শিশু, দু’জন যুবতী একজনের হাতে পতাকা। পতাকার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে গেঞ্জি পরা এক কিশোর।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থী শহীদ হওয়ায় তাদের স্মৃতিকে চিরস্মরণীয় করে রাখতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনের দক্ষিণ পাশে বিশালাকার মাঠজুড়ে তৈরি করা হয় শাবাশ বাংলাদেশ নামের স্মারক ভাস্কর্য। দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়ার পর ১৯৯১ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের উদ্যোগে শিল্পী নিতুন কু-ুর কারু দক্ষতায় এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এর কাজ শেষে হলে ফলক উন্মোচন করেন শহীদ জননী জাহানারা ইমাম।
তার উপরে বসেই চলে বন্ধুদের নানা রঙের গল্প। চলে সামনের দিনের পরিকল্পনা নিয়ে মিষ্টি আলাপচারিতা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখা মিলল একদল স্বপ্নচারী শিক্ষার্থীর। তাদের দিকে এগোতেই তন্মণা মিষ্টি হেসে জানিয়ে দিলেন তার আড্ডার মজার কথা-নিজেকে নিয়ে বেশি চিন্তা করে না সে। ভাবে কিভাবে মা-বাবার কথা রাখা যায়। তার কথারে টিপ্পনি কেটে মিতু বলল, নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয় অনেক সময়। ক্লাস, এসাইনমেন্ট, টিউটোরিয়াল ও পরীক্ষা নিয়ে এত ব্যস্ত থাকতে হয় যে, মায়ের সঙ্গে অনেক সময় তিন দিনেও কথা বলা হয় না।
পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত রাসেল। আমি পড়ার ফাঁকে শুধুই হাসতে ভালবাসি। অযথা কারও সঙ্গে কথা বলে সময় নষ্ট করা ভাল লাগে না। তবে মজার সময় কাটে বন্ধুদের সঙ্গে। রাসেলের কথাগুলো উল্টো বলে হেসে উড়িয়ে দিলেন ফিরোজ। বিশ্ববিদ্যালয় মানেই বাহারি অভিজ্ঞতা। মাঠে বল নিয়ে খেলা করা, পত্রিকার কক্ষে গিয়ে বিনোদনের পাতা পড়া, নিয়মিত পড়ার টেবিলে বসা নিয়েও চিন্তা করেন ফিরোজ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিকেট টিম নিয়ে সব সময় ব্যস্ত থাকতে হয় পাভেলকে। খেলা ছাড়া শরীর ভাল থাকে না বলেই খেলে যাই। এটা আমার নেশায় পরিণত হয়েছে। মনের আঙ্গিনায় ভালবাসার পাখির নাম খেলা তার কাছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শেষ করে এভাবে অনেক জায়গায় বিচরণ করে তারা। তাদের কাজই হলো পড়ার ফাঁকে আড্ডা দেয়া।
‘শাবাশ বাংলাদেশ’র পেছনেই রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট ভবন। বিকেল বা সকাল সকাল সারাক্ষণ এখানে শিক্ষার্থীদের মিলনমেলা লেগে থাকে। সিনেটের ভেতরে যখন চলে বিশ্ববিদ্যালয়কে সামনে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা। তখন এর বাইরে চলে বন্ধুদের নিয়ে শিক্ষার্থীদের আড্ডা। কেউবা আবার প্রিয়জনের হাত ধরে চলে আসে সিনেটের আঙ্গিনায়। সামনে সবুজ গাছের সারি আর পাতার ফাঁক দিয়ে মিষ্টি মিষ্টি রোদের ফোঁটায় চলে আনন্দের কথা। তাদের সময়ের যে পরিমাণ যে কম তা বোঝা যায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা সেখানে বসে থাকা দেখে।
শাবাশ বাংলাদেশের মাঠে সর্বদায় যাদের দেখা মেলে তারা হলেন ফুটবল ও ক্রিকেট খেলোয়াড়। সকালে ফুটবল দলের দেখা গেলে বিকেলে মাঠভর্তি আওয়াজ করে ক্যাম্পাস প্রবেশ পথকে মাতিয়ে তোলে উদ্যমী ক্রিকেটাররা। তাদের ব্যাট-বলের শৈল্পিক শিল্পের দ্বারা সব শিক্ষার্থীর মনকে ভরে তোলে সব সময়। গল্পের ফাঁকে অনেক সময় ছক্কা মারা বলও কুড়িয়ে দেয় বাইরে গল্পে মেতে থাকা প্রেমিক যুগলের একজন। এভাবেই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের পাঁচটি বছর শেষ করে পাড়ি জমায় চাকরির মতো জীবনযুদ্ধে। চলে জীবন সংগ্রাম। চলে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়। বাড়ে জীবনের পরিধি। অনেকেই ক্যাম্পাসের মায়ায় সুযোগ পেলেই চলে আসে শাবাশ বাংলাদেশ ও সিনেট ভবনের পাদদেশে। চলে বন্ধুদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মতো আড্ডা।
জাকির হোসেন তমাল
No comments