চোখ ও কানের হেফাজত প্রয়োজন by জহির উদ্দিন বাবর

মানুষের দুটি অঙ্গ চোখ-কানের গুরুত্ব একটু বেশিই। মানুষের বোধ ও উপলব্ধির মাপকাঠি এ দুটি অঙ্গ। দেখা এবং শোনার মাধ্যমেই মানুষ তাদের সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ আসনে আসীন করতে সক্ষম হয়েছে। মানুষের মনুষ্যত্ববোধের বিকাশ ঘটেছে চোখ ও কানের মাধ্যমে।
সূরা নাহালে আছে, 'আল্লাহ তোমাদের মায়ের গর্ভ থেকে বের করেছেন। তোমরা কিছুই জানতে না। তিনি তোমাদের চোখ, কান ও আত্মা দিয়েছেন, যাতে তোমরা অনুগ্রহ স্বীকার করো।' এখানে আল্লাহতায়ালা মানুষকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন, তারা মূলত কিছুই ছিল না। নিজের ভালো-মন্দের খবর পর্যন্ত রাখতে পারত না। তাই তাকে দিয়েছেন চোখ, কান ও আত্মা, যেন এগুলো দ্বারা বুঝতে ও জানতে পারে, উপলব্ধি করতে পারে।
অতি মূল্যবান এ দুটি অঙ্গের নেয়ামতমান সম্পর্কে আজ অধিকাংশ মানুষ উদাসীন। আল্লাহর পবিত্র সত্তার পরিচয় লাভ, তার সৃষ্টিরাজি সম্পর্কে যথার্থ চিন্তা ও গবেষণা, তার নিদর্শনগুলো অনুধাবন করা থেকে বঞ্চিত। আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান জাগতিকভাবে অনেক দূর এগিয়ে গেলেও মূল্যবান এ দুটি অঙ্গ দ্বারা প্রকৃত উপকারিতা ও সার্থকতা উপলব্ধি করতে পারেনি। উপরন্তু আল্লাহ প্রদত্ত এ গুণ ব্যয় করা হচ্ছে অপাত্রে। নিজেদের বিবেক-বুদ্ধি, দৃষ্টি ও শ্রবণশক্তিকে অকেজো-নিষ্ক্রিয় করে ফেলেছে। জ্ঞানের ওপর তারা মূর্খতাকে প্রাধান্য দিয়েছে। ফলে তারা চোখ থাকতেও অন্ধ, কান থাকতেও বধির।
আল্লাহতায়ালা মানুষকে চোখ, কান ও অন্তর দান করার উদ্দেশ্য হচ্ছে মহান প্রভুর আনুগত্য। পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করা হচ্ছে, 'আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি মিশ্র শুষ্ক বিন্দু থেকে এভাবে যে তাকে পরীক্ষা করব। অতঃপর তাকে করে দিয়েছি শ্রবণ ও দৃষ্টিসম্পন্ন।' এখানে দৃষ্টি ও শ্রবণ বোঝাতে এমন শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে সর্বাধিক ও সার্বক্ষণিক অর্থ বোঝায়। এতে বোঝা যায়, মানুষের শ্রবণ ও দর্শন অন্য যে কোনো প্রাণীর তুলনায় অধিক শক্তিশালী। কারণ মানুষ শ্রবণশক্তি দ্বারা শরিয়ত ও রাসূলদের দাওয়াত কবুল করে। দৃষ্টিশক্তি দ্বারা আল্লাহর অস্তিত্বের প্রমাণগুলো ও তার সৃষ্টির অপূর্ব কলাকৌশল অবলোকন করে। এ দুই শক্তির মাধ্যমেই মানুষ এই মহাজগতের বিস্ময় সম্পর্কে জ্ঞাত হয়েছে। এ জন্য এ দুটি অঙ্গের গুরুত্ব, ব্যবহারবিধি, প্রয়োগস্থল এবং সৃষ্টিগত তাৎপর্য অনেক বেশি।
আমাদের এই বস্তুগত জীবনে চোখ-কান যে কত জরুরি অঙ্গ এবং কত মহামূল্যবান নেয়ামত, তা শুধু টের পাই তাদের দেখে যারা এ দুটি অঙ্গের অভাবে অন্ধ, নয়তো বধির। সৃষ্টির রূপ-রস, এর মোহিত সৌরভ উপভোগ করার অন্যতম উপকরণ এ দুটি অঙ্গ। মূল্যায়ন বিচারে এর কোনো বিকল্প কিংবা অনুরূপ কোনো বস্তু হতে পারে না। এ জন্য আমরা যারা সুস্থ ও নিখুঁত দেহের অধিকারী, তাদের জন্য উচিত অঙ্গদ্বয়ের শোকর আদায় করা। এগুলোর প্রয়োগ ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা। গোনাহের সম্ভাবনা থেকে যথাসম্ভব হেফাজত থাকা। আমাদের জীবনচলায় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের গোনাহের মধ্যে চোখ ও কানের একটি বিশাল অংশ রয়েছে। রাসূল (সা.) হাদিসে বারবার এ দুটি অঙ্গের গোনাহ সম্পর্কে উম্মতকে সতর্ক করেছেন। রাসূল (সা.) বলেছেন, তোমরা চোখ ও কানের গোনাহ থেকে বেঁচে থাক। বর্তমানে সমাজে সংঘটিত গোনাহগুলোর মূল হিসেবে এ দুটি অঙ্গকে দায়ী করা যায়। স্রষ্টার কৃপা ও দান হিসেবে অঙ্গদ্বয়ের যথাযথ হেফাজত আমাদের নৈতিক ও ইমানি দায়িত্ব।
zahirbabor@yahoo.com
 

No comments

Powered by Blogger.