আমরা গালি না দেই by মুফতি এনায়েতুল্লাহ
চিন্তা ও কল্পনা করে বুদ্ধি যা নিশ্চিত করে, জিহ্বা তা-ই বর্ণনা করতে সক্ষম। জিহ্বা ছাড়া অন্য কোনো ইন্দ্রিয়ের এরূপ শক্তি নেই। এ জন্য জিহ্বা যা প্রকাশ করে, মন তা হৃদয়ের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে এক নতুন ভাব সৃষ্টি করে। যেমন_ কোনো কিছু পড়ার সময় জিহ্বা প্রকাশ করে, আর মন তা আঁকড়ে ধরে।
আবার মানুষ যখন আনন্দ অনুভব করে, তখন আনন্দে তার মনও প্রফুল্ল হয় এবং জিহ্বাও তাতে সায় দেয়।
এভাবে মানুষ যেরূপ কথা বলে থাকে, তার মনেও অনুরূপ ভাব জন্মে। আর এ জন্যই অশ্লীল কথা বা বাক্য উচ্চারণ করলে কিংবা শ্রবণ করলে মন অন্ধকারময় হয়ে যায়। ফলে অন্তরে কোনো ভালো কথা স্থান পায় না। আবার জিহ্বার ভালো এবং উত্তম কথা উচ্চারণের দ্বারা মন সুন্দর ও পবিত্র হয়।
তাই জিহ্বার হেফাজত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জিহ্বা বিভিন্ন অনিষ্টের মূল। সেসব অনিষ্ট থেকে বাঁচার জন্য জিহ্বার হেফাজত করা কর্তব্য। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'যে ব্যক্তি দু'রানের মাঝের অঙ্গ এবং দু'চোয়ালের মাঝের অঙ্গ, অর্থাৎ লজ্জাস্থান ও জিহ্বার হেফাজতের জিম্মাদার হবে, আমি তাকে জান্নাতে দাখিলের জিম্মাদার হবো।'
জিহ্বা দ্বারা মানুষ মিথ্যা কথা বলে গুনাহগার হয়; আবার কোরআন তিলাওয়াত করে সওয়াব অর্জন করে। জিহ্বা দ্বারা মানুষ পরনিন্দা-গিবত-চুগলখোরি করে গুনাহ কামায়, আবার দ্বীনি কথা বলে সওয়াবও কামায়। জিহ্বা দ্বারা কাউকে গালি দিয়ে কিংবা ঝগড়া করে পাপ করে, সেই জিহ্বা দিয়েই মুমিন জিকির করে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে।
এ জন্য হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, 'যে ব্যক্তি চুপ থাকে, সে মুক্তি পায়।' তিনি (সা.) আরও বলেন, 'পেট, যৌনেন্দ্রিয় ও জিহ্বার ক্ষতি থেকে আল্লাহ যাকে রক্ষা করেন, সে সব বিপদ থেকে রক্ষা পায়।'
হজরত মুয়াজ (রা.) একদিন হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে জিজ্ঞেস করলেন, কোন কাজ সবচেয়ে উত্তম? হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজের মুখ থেকে জিহ্বা বের করে আঙুল দিয়ে চেপে ধরলেন। অর্থাৎ ইঙ্গিত করলেন, জবানের হেফাজত করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) একবার সমবেত লোকদের উদ্দেশে বললেন, 'সহজতম ইবাদত তোমাদের শিক্ষা দিচ্ছি। তা হচ্ছে চুপ থাকা ও সৎ স্বভাব।' তিনি (সা.) অন্যত্র বলেছেন, 'যে ব্যক্তি আল্লাহ ও কেয়ামতের ওপর ইমান আনে, সে যেন ভালো কথা বলে অথবা চুপ থাকে।' হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'যে অতিরিক্ত কথা বলে, তার অধিক ভুল হয়। আর যে বড় পাপী হয়ে যায়, তার জন্য দোজখের আগুন উপযুক্ত।'
জিহ্বা দ্বারা মিথ্যা বা অশ্লীল কথা বলা এবং বিভিন্নভাবে ফেতনা সৃষ্টি ছাড়াও অনেকে আবার জিহ্বা দ্বারা নানা স্বাদের হারাম খাবার চেখে আমল-আখলাক নষ্ট করে থাকে। এ ছাড়া জিহ্বা দ্বারা অন্যকে কুপরামর্শ বা অসৎ প্ররোচনা দিয়ে পথভ্রষ্ট ও গোমরা করে ইত্যাকার বিভিন্ন উপায়ে জিহ্বা দ্বারা পাপ সংঘটিত হয়। এসব থেকে দূরে থাকার মাধ্যমে জিহ্বার হেফাজত অত্যন্ত জরুরি। সে সঙ্গে জিহ্বাকে আল্লাহর জিকির, কোরআন তিলাওয়াত, দ্বীনি আলোচনা ও দ্বীনের দাওয়াত প্রভৃতি সৎ কাজে নিয়োজিত করে অনেক নেকি অর্জন করা যায়।
মুমিনের জবান সংযত থাকা একান্ত কাম্য। অশ্লীল ভাষা তার জন্য শোভা পায় না। সে জন্য হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'মুসলিমকে গালি দেওয়া ফাসেকি ও হত্যা করা কুফরি।' _মিশকাত
মানুষ রাগ করলে বিভিন্নভাবে তা প্রকাশ পায়। রাগ প্রশমনের একটি প্রক্রিয়া হচ্ছে গালি। আমাদের দেশে অনেকেই এ পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকেন। অশিক্ষিত এবং গরিবরা গালিকে নিজের অধিকার আদায়ের হাতিয়ার ভাবেন। অনেকেই গালিতে এমন সব অশ্লীল শব্দ ব্যবহার করেন, যা শুনে কানে আঙুল দিতে হয়। তখন পরিবার-পরিজন সঙ্গে থাকলে ভীষণ বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। গালাগালের মাধ্যমে রাগ প্রশমনের ব্যবস্থা একটি সামাজিক অনাচার। এ অনাচার থেকে সমাজকে মুক্ত করা একান্ত প্রয়োজন। গালি শরিয়তেও নিষেধ করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, 'অত্যাচারিত ব্যক্তি যদি সীমা লঙ্ঘন না করে তাহলে দু'জন গালাগালকারী ব্যক্তির মধ্যে প্রথম যে সূচনাকারী, তার ওপর উভয়ের পাপ বর্তাবে।'_তিরমিজি
আরেক হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'যারা একে অপরকে গালি দেয়, তারা উভয়েই শয়তান। উভয়েই কটু কথা বলে এবং উভয়েই মিথ্যুক।'_আদাবুল মুফরাদ
সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রা.) থেকে বর্ণিত_ তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যার মধ্যে চারটি দোষ পাওয়া যাবে, সে খালেস মুনাফিক। যার মধ্যে চারটির একটি পাওয়া যাবে, বুঝতে হবে তার নিফাকের খাসলত সৃষ্টি হয়ে গেছে। যতক্ষণ পর্যন্ত না সে বর্জন করে। সেগুলো হলো_ ক. তার কাছে আমানত রাখা হলে সে তা খিয়ানত করে; খ. কথা বললে মিথ্যা বলে; গ. ওয়াদা করলে তা ভঙ্গ করে এবং ঘ. ঝগড়ায় লিপ্ত হলে গালাগাল করে।
muftianaet@gmail.com
এভাবে মানুষ যেরূপ কথা বলে থাকে, তার মনেও অনুরূপ ভাব জন্মে। আর এ জন্যই অশ্লীল কথা বা বাক্য উচ্চারণ করলে কিংবা শ্রবণ করলে মন অন্ধকারময় হয়ে যায়। ফলে অন্তরে কোনো ভালো কথা স্থান পায় না। আবার জিহ্বার ভালো এবং উত্তম কথা উচ্চারণের দ্বারা মন সুন্দর ও পবিত্র হয়।
তাই জিহ্বার হেফাজত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জিহ্বা বিভিন্ন অনিষ্টের মূল। সেসব অনিষ্ট থেকে বাঁচার জন্য জিহ্বার হেফাজত করা কর্তব্য। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'যে ব্যক্তি দু'রানের মাঝের অঙ্গ এবং দু'চোয়ালের মাঝের অঙ্গ, অর্থাৎ লজ্জাস্থান ও জিহ্বার হেফাজতের জিম্মাদার হবে, আমি তাকে জান্নাতে দাখিলের জিম্মাদার হবো।'
জিহ্বা দ্বারা মানুষ মিথ্যা কথা বলে গুনাহগার হয়; আবার কোরআন তিলাওয়াত করে সওয়াব অর্জন করে। জিহ্বা দ্বারা মানুষ পরনিন্দা-গিবত-চুগলখোরি করে গুনাহ কামায়, আবার দ্বীনি কথা বলে সওয়াবও কামায়। জিহ্বা দ্বারা কাউকে গালি দিয়ে কিংবা ঝগড়া করে পাপ করে, সেই জিহ্বা দিয়েই মুমিন জিকির করে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে।
এ জন্য হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, 'যে ব্যক্তি চুপ থাকে, সে মুক্তি পায়।' তিনি (সা.) আরও বলেন, 'পেট, যৌনেন্দ্রিয় ও জিহ্বার ক্ষতি থেকে আল্লাহ যাকে রক্ষা করেন, সে সব বিপদ থেকে রক্ষা পায়।'
হজরত মুয়াজ (রা.) একদিন হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে জিজ্ঞেস করলেন, কোন কাজ সবচেয়ে উত্তম? হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজের মুখ থেকে জিহ্বা বের করে আঙুল দিয়ে চেপে ধরলেন। অর্থাৎ ইঙ্গিত করলেন, জবানের হেফাজত করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) একবার সমবেত লোকদের উদ্দেশে বললেন, 'সহজতম ইবাদত তোমাদের শিক্ষা দিচ্ছি। তা হচ্ছে চুপ থাকা ও সৎ স্বভাব।' তিনি (সা.) অন্যত্র বলেছেন, 'যে ব্যক্তি আল্লাহ ও কেয়ামতের ওপর ইমান আনে, সে যেন ভালো কথা বলে অথবা চুপ থাকে।' হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'যে অতিরিক্ত কথা বলে, তার অধিক ভুল হয়। আর যে বড় পাপী হয়ে যায়, তার জন্য দোজখের আগুন উপযুক্ত।'
জিহ্বা দ্বারা মিথ্যা বা অশ্লীল কথা বলা এবং বিভিন্নভাবে ফেতনা সৃষ্টি ছাড়াও অনেকে আবার জিহ্বা দ্বারা নানা স্বাদের হারাম খাবার চেখে আমল-আখলাক নষ্ট করে থাকে। এ ছাড়া জিহ্বা দ্বারা অন্যকে কুপরামর্শ বা অসৎ প্ররোচনা দিয়ে পথভ্রষ্ট ও গোমরা করে ইত্যাকার বিভিন্ন উপায়ে জিহ্বা দ্বারা পাপ সংঘটিত হয়। এসব থেকে দূরে থাকার মাধ্যমে জিহ্বার হেফাজত অত্যন্ত জরুরি। সে সঙ্গে জিহ্বাকে আল্লাহর জিকির, কোরআন তিলাওয়াত, দ্বীনি আলোচনা ও দ্বীনের দাওয়াত প্রভৃতি সৎ কাজে নিয়োজিত করে অনেক নেকি অর্জন করা যায়।
মুমিনের জবান সংযত থাকা একান্ত কাম্য। অশ্লীল ভাষা তার জন্য শোভা পায় না। সে জন্য হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'মুসলিমকে গালি দেওয়া ফাসেকি ও হত্যা করা কুফরি।' _মিশকাত
মানুষ রাগ করলে বিভিন্নভাবে তা প্রকাশ পায়। রাগ প্রশমনের একটি প্রক্রিয়া হচ্ছে গালি। আমাদের দেশে অনেকেই এ পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকেন। অশিক্ষিত এবং গরিবরা গালিকে নিজের অধিকার আদায়ের হাতিয়ার ভাবেন। অনেকেই গালিতে এমন সব অশ্লীল শব্দ ব্যবহার করেন, যা শুনে কানে আঙুল দিতে হয়। তখন পরিবার-পরিজন সঙ্গে থাকলে ভীষণ বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। গালাগালের মাধ্যমে রাগ প্রশমনের ব্যবস্থা একটি সামাজিক অনাচার। এ অনাচার থেকে সমাজকে মুক্ত করা একান্ত প্রয়োজন। গালি শরিয়তেও নিষেধ করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, 'অত্যাচারিত ব্যক্তি যদি সীমা লঙ্ঘন না করে তাহলে দু'জন গালাগালকারী ব্যক্তির মধ্যে প্রথম যে সূচনাকারী, তার ওপর উভয়ের পাপ বর্তাবে।'_তিরমিজি
আরেক হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'যারা একে অপরকে গালি দেয়, তারা উভয়েই শয়তান। উভয়েই কটু কথা বলে এবং উভয়েই মিথ্যুক।'_আদাবুল মুফরাদ
সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রা.) থেকে বর্ণিত_ তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যার মধ্যে চারটি দোষ পাওয়া যাবে, সে খালেস মুনাফিক। যার মধ্যে চারটির একটি পাওয়া যাবে, বুঝতে হবে তার নিফাকের খাসলত সৃষ্টি হয়ে গেছে। যতক্ষণ পর্যন্ত না সে বর্জন করে। সেগুলো হলো_ ক. তার কাছে আমানত রাখা হলে সে তা খিয়ানত করে; খ. কথা বললে মিথ্যা বলে; গ. ওয়াদা করলে তা ভঙ্গ করে এবং ঘ. ঝগড়ায় লিপ্ত হলে গালাগাল করে।
muftianaet@gmail.com
No comments