জবাবদিহি- দুর্নীতির ধারণাসূচকে বাংলাদেশ: অগ্রগতির উপায় by ইফতেখারুজ্জামান
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) তাদের ২০১২-এর দুর্নীতির ধারণাসূচক প্রকাশ করেছে গতকাল, ৫ ডিসেম্বর। সূচকের ০-১০০-এর স্কেলে ২৬ পেয়ে বাংলাদেশ ১৭৬টি দেশের মধ্যে ১৪৪তম অবস্থানে, যা তালিকার নিম্নক্রম অনুযায়ী ২০১১ সালের মতো ত্রয়োদশ স্থান, তবে উচ্চক্রম অনুযায়ী ২৪ ধাপ নিচে।
গতবারের তুলনায় বাংলাদেশের স্কোরেও অবনতি হয়েছে। গত বছর বাংলাদেশ ০-১০ স্কেলে ২.৭ স্কোর (যা এবারের ০-১০০ স্কেলে ২৭) নিয়ে তালিকার উচ্চক্রম অনুযায়ী ১২০তম স্থানে ছিল।
বাংলাদেশের সমান স্কোর পেয়ে এবার একই স্থান পেয়েছে ক্যামেরুন, ইউক্রেন, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, সিরিয়া ও মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র। দক্ষিণ এশিয়ার অন্য প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের স্কোর ও র্যাঙ্কিং এবার দ্বিতীয় সর্বনিম্ন, শুধু আফগানিস্তান বাংলাদেশের তুলনায় খারাপ অবস্থানে রয়েছে। প্রতিবারের মতো দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে ৬৩ স্কোর পেয়ে তালিকার উচ্চক্রম অনুযায়ী ৩৩তম অবস্থানে থাকা ভুটান, তারপর শ্রীলঙ্কা ৪০ স্কোর পেয়ে ৭৯তম স্থানে, ভারত ৩৬ স্কোর পেয়ে ৯৪তম, পাকিস্তান ও নেপাল ২৭ স্কোর পেয়ে ১৩৯তম এবং সবশেষে আফগানিস্তান ৮ স্কোর পেয়ে ১৭৪তম, যা তালিকা অনুযায়ী সোমালিয়া ও উত্তর কোরিয়ার মতো যৌথভাবে সর্বনিম্ন অবস্থান। উল্লেখ্য, ভুটান ছাড়া দক্ষিণ এশীয় সব দেশেরই স্কোর সূচকের গড় ৪৩-এর নিচে, অর্থাৎ বাংলাদেশসহ এ অঞ্চলে দুর্নীতির ব্যাপকতা ও গভীরতা বিশেষভাবে উদ্বেগজনক।
১৯৯৫ সাল থেকে প্রণীত দুর্নীতির ধারণাসূচক বা সিপিআই সরকারি খাতে, বিশেষ করে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক দুর্নীতির ব্যাপকতার ধারণার ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন দেশের তুলনামূলক চিত্র প্রদান করে থাকে। এটিকে জরিপভিত্তিক জরিপ বলা হয়, যার মাধ্যমে এক ডজনের বেশি আন্তর্জাতিক সংস্থা কর্তৃক পরিচালিত জরিপের তথ্যের বিশ্লেষণ করে বিভিন্ন দেশের তুলনামূলক অবস্থান নিরূপণের প্রয়াস করা হয়। গবেষণাপদ্ধতির ও উপস্থাপনার উৎকর্ষ বৃদ্ধির প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এত দিনকার ০-১০-এর স্কেলের পরিবর্তে এ বছর ০-১০০ স্কেল ব্যবহার করা হয়েছে।
সিপিআই নিরূপণে এমন জরিপের তথ্যই ব্যবহূত হয়, যার মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরা সম্ভব। অতএব জাতীয়ভাবে টিআইবি বা এর মতো অন্য কোনো দেশের টিআই চ্যাপ্টারের গবেষণা বা জরিপলব্ধ কোনো তথ্য বা উপাত্ত এ সূচকে বিবেচিত হয় না। অন্যদিকে সূচকে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য কোনো দেশ সম্পর্কে কমপক্ষে তিনটি আন্তর্জাতিক জরিপ থাকতে হবে। যে কারণে প্রায় প্রতিবছরই জরিপে অন্তর্ভুক্ত দেশের সংখ্যার হেরফের হয়। যেমন, এবার দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর মধ্যে মালদ্বীপ অন্তর্ভুক্ত হয়নি সে দেশের ওপর পর্যাপ্তসংখ্যক জরিপের অভাবের কারণে।
সূচকটি টিআইয়ের বার্লিনভিত্তিক সচিবালয়ের গবেষণা ও জ্ঞান বিভাগ কর্তৃক প্রণীত হয়। পদ্ধতি ও বিশ্লেষণে উৎকর্ষ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রতিবছর আন্তর্জাতিকভাবে সুখ্যাত বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এ বছর এরূপ পরামর্শ দিয়েছেন কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের গবেষণাপদ্ধতি ইনস্টিটিউট এবং সরকার বিভাগ, ইউরোপীয় কমিশনের যৌথ গবেষণাকেন্দ্র, হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল, ডাও জোন্স এবং স্ট্যান্ডার্ড ও পুওর-এর সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা।
এ বছরের জরিপে ১৩টি আন্তর্জাতিক জরিপ থেকে তথ্য নেওয়া হয়। বাংলাদেশের বেলায় যে সাতটি সূত্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে সেগুলো হলো, বার্টলসম্যান ফাউন্ডেশন ট্রান্সফরমেশন ইনডেক্স, ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের কান্ট্রি রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট, গ্লোবাল ইনসাইট কান্ট্রি রিস্ক রেটিং, পলিটিক্যাল রিস্ক সার্ভিসেস ইন্টারন্যাশনাল কান্ট্রি রিস্ক গাইড, বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি পারফরম্যান্স অ্যান্ড ইনস্টিটিউশনাল অ্যাসেসমেন্ট, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম এক্সিকিউটিভ ওপিনিয়ন সার্ভে এবং ওয়ার্ল্ড জাস্টিস প্রজেক্ট রুল অব ল ইনডেক্স। তথ্যের সময়কাল ছিল জানুয়ারি ২০১১ থেকে সেপ্টেম্বর ২০১২ পর্যন্ত।
আফগানিস্তান ছাড়া যেসব দেশের অবস্থান বাংলাদেশের তুলনায় নিম্নতর অবস্থানে তাদের মধ্যে রয়েছে সুদান, মিয়ানমার, উজবেকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, ইরাক, ভেনেজুয়েলা, চাদ, বুরুন্ডি, হাইতি, ইকুটেরিয়াল গিনি, জিম্বাবুয়ে, লিবিয়া, লাওস, অ্যাঙ্গোলা, তাজিকিস্তান, কম্বোডিয়া, ইয়েমেন, গিনি, কিরগিজস্তান, গিনি-বিসাউ, প্যারাগুয়ে, ইরিত্রিয়া, পাপুয়া নিউগিনি, সিরিয়া, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র ও ইউক্রেন।
অন্যদিকে যেসব দেশে দুর্নীতির ব্যাপকতা ও গভীরতা সবচেয়ে কম বলে নিরূপিত হয়েছে তার মধ্যে শীর্ষে যৌথভাবে রয়েছে ৯০ স্কোর পেয়ে ফিনল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড ও ডেনমার্ক। এরপর সুইডেন, সিঙ্গাপুর, সুইজারল্যান্ড, নরওয়ে, অস্ট্রেলিয়া, নেদারল্যান্ডস, কানাডা, হংকং, জাপান, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, আইসল্যান্ড, লুক্সেমবার্গ, জার্মানি, বারবাডোস, বেলজিয়াম, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, উরুগুয়ে, চিলি ও ফ্রান্স।
কোনো দেশই ৯০-এর বেশি স্কোর পায়নি। আরও লক্ষণীয়, ওইসিডিভুক্ত দেশগুলোর অনেকগুলোই যেমন জার্মানি, বেলজিয়াম, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া, স্পেন, ইতালি ৮০ শতাংশের কম স্কোর পেয়েছে। ১৭৬টি দেশের মধ্যে ১২৪টি অর্থাৎ দুই-তৃতীয়াংশ ৫০-এর কম স্কোর পেয়েছে। ৬৭টি দেশ সূচকে অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর প্রাপ্ত গড় স্কোর ৪৩-এর কম।
সার্বিক বিবেচনায় এটি পরিষ্কার, দুর্নীতি একটি বৈশ্বিক সমস্যা। যদিও আমাদের মতো দেশের ক্ষেত্রে উন্নত বিশ্বের তুলনায় দুর্নীতির চ্যালেঞ্জ অনেক বেশি উদ্বেগের কারণ। স্মরণ করা যেতে পারে যে ২০০১ থকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত পর পর পাঁচবার বাংলাদেশ দুর্নীতি ব্যাপকতার ধারণার এই সূচকে শীর্ষে অবস্থান করেছিল। সোমালিয়া এ বছরসহ ছয়বার শীর্ষে অবস্থান পাওয়ার ফলে আমাদের সেই গ্লানির কিছুটা লাঘব হতে পারে। তা ছাড়া, পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ ২০০৬-এ তৃতীয়, ২০০৭-এ সপ্তম, ২০০৮-এ দশম, ২০০৯-এ ত্রয়োদশ, ২০১০-এ দ্বাদশ এবং ২০১১-তে এবারের মতো ত্রয়োদশ স্থান পাওয়ায় আন্তর্জাতিক তুলনামূলক অবস্থানের মাপকাঠিতে একধরনের স্থিতিশীল অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়।
তবে, এবারের সূচক অনুযায়ী বাংলাদেশ পৃথিবীর ৩১টি দেশের মধ্যে একটি, যাদের স্কোরে অবনতি হয়েছে। অন্যদিকে তালিকার উচ্চক্রম অনুযায়ী বাংলাদেশের মতো ৫৭টি দেশের ক্ষেত্রে অবস্থানের অবনতি ঘটেছে। আবার নিম্নক্রম অনুযায়ী যদিও ২০১১-এর সমান, অর্থাৎ ত্রয়োদশ স্থানে, উচ্চক্রম অনুযায়ী ২০১১-এর তুলনায় বাংলাদেশ ১২০-এর স্থলে ১৪৪তম, অর্থাৎ ২৪ ধাপ নিচে অবস্থান পেয়েছে। ২০১০-এর তুলনায় ২০১১ সালে উচ্চক্রম অনুযায়ী ১৪ ধাপ (১৩৪ থেকে ১২০) অগ্রগতি হয়েছিল।
মূল প্রশ্ন হলো, আমরা কি এর চেয়ে ভালো করতে পারতাম না? যেসব কারণে এই নিম্নমুখী স্কোর ও অবস্থান, তার মধ্যে রয়েছে দুর্নীতিবিরোধী নির্বাচনী অঙ্গীকারের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু কিছু ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ইতিবাচক উদ্যোগ সত্ত্বেও কার্যকরভাবে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে অনুকরণীয় দৃষ্টান্তের ঘাটতি। বিশেষ করে, সাম্প্রতিক কালে পদ্মা সেতু প্রকল্প, রেলওয়েতে নিয়োগ-বাণিজ্য, শেয়ারবাজার, হল-মার্ক ও ডেসটিনির মতো হাই-প্রোফাইল দুর্নীতির অভিযোগের একধরনের মিছিল।
ক্ষমতাবানদের একাংশের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ অংশগ্রহণ বা সহায়তায় ভূমি-বনাঞ্চল-নদী-জলাশয় দখল থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ে টেন্ডারবাজিসহ আইনের শাসনপরিপন্থী কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণের ঊর্ধ্বেই রয়ে গেছে। জনপ্রতিনিধি ও সরকারের উচ্চপর্যায়ে অধিষ্ঠিত ব্যক্তিরা আয়-ব্যয়ের হিসাব জনসমক্ষে প্রকাশের প্রতিশ্রুতি পূরণ থেকে দূরেই থেকেছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনকে স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করার অঙ্গীকারের বিপরীতে একগুচ্ছ এমন সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়, যার ফলে বাস্তবে কমিশন আরও অকার্যকর হতে পারত। যদিও সে পদক্ষেপ থেকে পরবর্তী সময়ে সরকার সরে আসে। বিষয়টি একদিকে যেমন এখনো সুরাহা হয়নি অন্যদিকে এর ফলে কমিশনের ওপর রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও মনস্তাত্ত্বিক চাপ সৃষ্টি হয়।
এর ফলেই হোক আর কমিশনের নিজস্ব দুর্বলতা বা আত্মবিশ্বাসের ঘাটতির কারণেই হোক দুর্নীতি দমন কমিশন একদিকে যেমন বড় ধরনের দুর্নীতির অভিযোগগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে প্রত্যাশিত দৃঢ়তা ও সক্রিয়তা দেখাতে পারেনি, অন্যদিকে অনেক সময়ই সরকারের অবস্থানের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের মতোই নিজেকে উপস্থাপন করেছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগসংক্রান্ত অসংখ্য মামলার প্রত্যাহার আইনের শাসনের যেমন পরিপন্থী তেমনি জবাবদিহিমূলক গণতান্ত্রিক সুশাসনের অন্যতম প্রতিষ্ঠান বিচারব্যবস্থার অবমূল্যায়নের সমতুল্য।
গণতান্ত্রিক জবাবদিহির আরেক অন্যতম প্রতিষ্ঠান জাতীয় সংসদ। বিরোধী দলের শুধু আসন সংরক্ষণের প্রয়োজনে অপরিহার্য উপস্থিতির বাইরে ধারাবাহিকভাবে বর্জনের ফলে সংসদ রূপান্তরিত হয়েছে সরকারি দল ও জোটের একচ্ছত্র ভুবনে। অন্যদিকে সংসদীয় কমিটিতে অনেক ক্ষেত্রেই স্বার্থের দ্বন্দ্বের কারণে সংসদের প্রতি প্রত্যাশার অনেকটাই অপূরণ রয়েছে, বিশেষ করে সরকারকে সংসদের মাধ্যমে জনগণের কাছে জবাবদিহি করার ক্ষেত্রে। একদিকে সাংবিধানিক অঙ্গীকার ও অন্যদিকে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির অবজ্ঞা করে ও কালোটাকা অর্জনকে পুরস্কৃত করা অব্যাহত রয়েছে।
সংবিধানের ৭(১) অনুচ্ছেদ প্রজাতন্ত্রের সব ক্ষমতা জনগণের হাতে অর্পণ করেছে, অথচ উল্লিখিত পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্ন জাগে রাষ্ট্রক্ষমতা কি বাস্তবেই জনগণের হাতে, নাকি দুর্নীতি নামক ক্যানসার রাষ্ট্রক্ষমতা ক্রমান্বয়ে দখল করে নিচ্ছে? নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে শুরু করে সরকারি সিদ্ধান্ত ও আইনের প্রয়োগসহ বিভিন্ন জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রভাব কি জনগণের ও জনস্বার্থের, না দুর্নীতির প্রসারে বা দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতায় যারা সুবিধাভোগী তাদের?
তবু আমরা আশাবাদী। প্রত্যাশ্যার তুলনায় প্রাপ্তি কম হলেও গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় কাঠামো সৃষ্টিতে আমাদের অগ্রযাত্রায় গৌরবের অনেক কিছুই রয়েছে। তবে আমরা গণতন্ত্রের অবকাঠামো তথা হার্ডওয়্যার তৈরিতে যতটুকু সক্ষম হয়েছি, সফটওয়্যার বা গণতান্ত্রিক চর্চায় ততটা সাফল্য অর্জন করিনি। অবস্থার পরিবর্তনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে জনগণের কাছে প্রদত্ত অঙ্গীকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীলতা। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির প্রতি মাঝেমধ্যে ফিরে তাকিয়ে কারও প্রতি ভয়-করুণার ঊর্ধ্বে থেকে করণীয় নির্ধারণ দুর্নীতির ধারণাসূচকে ইতিবাচক অগ্রগতির অন্যতম উপায়।
জনগণকেই সোচ্চার হতে হবে। এ দেশের মানুষ প্রত্যাশিত অগ্রগতি অর্জনে ব্যর্থ হয়, তবে হার মানে না। জনগণই চাইবে গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যকর হোক, যারা দুর্নীতি করে তারা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ভোগ করুক, রাজনৈতিক অঙ্গীকার বাস্তবায়িত হোক, গণতান্ত্রিক চর্চার বিকাশ ঘটুক যেন দেশের স্বার্থ প্রাধান্য পায় অন্য কোনো স্বার্থের ঊর্ধ্বে। জনগণের এই চাওয়া, এই দাবি যত বেশি জোরালো হবে দুর্নীতি প্রতিরোধ ততই ত্বরান্বিত হবে।
ইফতেখারুজ্জামান: নির্বাহী পরিচালক, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের সমান স্কোর পেয়ে এবার একই স্থান পেয়েছে ক্যামেরুন, ইউক্রেন, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, সিরিয়া ও মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র। দক্ষিণ এশিয়ার অন্য প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের স্কোর ও র্যাঙ্কিং এবার দ্বিতীয় সর্বনিম্ন, শুধু আফগানিস্তান বাংলাদেশের তুলনায় খারাপ অবস্থানে রয়েছে। প্রতিবারের মতো দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে ৬৩ স্কোর পেয়ে তালিকার উচ্চক্রম অনুযায়ী ৩৩তম অবস্থানে থাকা ভুটান, তারপর শ্রীলঙ্কা ৪০ স্কোর পেয়ে ৭৯তম স্থানে, ভারত ৩৬ স্কোর পেয়ে ৯৪তম, পাকিস্তান ও নেপাল ২৭ স্কোর পেয়ে ১৩৯তম এবং সবশেষে আফগানিস্তান ৮ স্কোর পেয়ে ১৭৪তম, যা তালিকা অনুযায়ী সোমালিয়া ও উত্তর কোরিয়ার মতো যৌথভাবে সর্বনিম্ন অবস্থান। উল্লেখ্য, ভুটান ছাড়া দক্ষিণ এশীয় সব দেশেরই স্কোর সূচকের গড় ৪৩-এর নিচে, অর্থাৎ বাংলাদেশসহ এ অঞ্চলে দুর্নীতির ব্যাপকতা ও গভীরতা বিশেষভাবে উদ্বেগজনক।
১৯৯৫ সাল থেকে প্রণীত দুর্নীতির ধারণাসূচক বা সিপিআই সরকারি খাতে, বিশেষ করে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক দুর্নীতির ব্যাপকতার ধারণার ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন দেশের তুলনামূলক চিত্র প্রদান করে থাকে। এটিকে জরিপভিত্তিক জরিপ বলা হয়, যার মাধ্যমে এক ডজনের বেশি আন্তর্জাতিক সংস্থা কর্তৃক পরিচালিত জরিপের তথ্যের বিশ্লেষণ করে বিভিন্ন দেশের তুলনামূলক অবস্থান নিরূপণের প্রয়াস করা হয়। গবেষণাপদ্ধতির ও উপস্থাপনার উৎকর্ষ বৃদ্ধির প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এত দিনকার ০-১০-এর স্কেলের পরিবর্তে এ বছর ০-১০০ স্কেল ব্যবহার করা হয়েছে।
সিপিআই নিরূপণে এমন জরিপের তথ্যই ব্যবহূত হয়, যার মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরা সম্ভব। অতএব জাতীয়ভাবে টিআইবি বা এর মতো অন্য কোনো দেশের টিআই চ্যাপ্টারের গবেষণা বা জরিপলব্ধ কোনো তথ্য বা উপাত্ত এ সূচকে বিবেচিত হয় না। অন্যদিকে সূচকে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য কোনো দেশ সম্পর্কে কমপক্ষে তিনটি আন্তর্জাতিক জরিপ থাকতে হবে। যে কারণে প্রায় প্রতিবছরই জরিপে অন্তর্ভুক্ত দেশের সংখ্যার হেরফের হয়। যেমন, এবার দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর মধ্যে মালদ্বীপ অন্তর্ভুক্ত হয়নি সে দেশের ওপর পর্যাপ্তসংখ্যক জরিপের অভাবের কারণে।
সূচকটি টিআইয়ের বার্লিনভিত্তিক সচিবালয়ের গবেষণা ও জ্ঞান বিভাগ কর্তৃক প্রণীত হয়। পদ্ধতি ও বিশ্লেষণে উৎকর্ষ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রতিবছর আন্তর্জাতিকভাবে সুখ্যাত বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এ বছর এরূপ পরামর্শ দিয়েছেন কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের গবেষণাপদ্ধতি ইনস্টিটিউট এবং সরকার বিভাগ, ইউরোপীয় কমিশনের যৌথ গবেষণাকেন্দ্র, হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল, ডাও জোন্স এবং স্ট্যান্ডার্ড ও পুওর-এর সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা।
এ বছরের জরিপে ১৩টি আন্তর্জাতিক জরিপ থেকে তথ্য নেওয়া হয়। বাংলাদেশের বেলায় যে সাতটি সূত্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে সেগুলো হলো, বার্টলসম্যান ফাউন্ডেশন ট্রান্সফরমেশন ইনডেক্স, ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের কান্ট্রি রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট, গ্লোবাল ইনসাইট কান্ট্রি রিস্ক রেটিং, পলিটিক্যাল রিস্ক সার্ভিসেস ইন্টারন্যাশনাল কান্ট্রি রিস্ক গাইড, বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি পারফরম্যান্স অ্যান্ড ইনস্টিটিউশনাল অ্যাসেসমেন্ট, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম এক্সিকিউটিভ ওপিনিয়ন সার্ভে এবং ওয়ার্ল্ড জাস্টিস প্রজেক্ট রুল অব ল ইনডেক্স। তথ্যের সময়কাল ছিল জানুয়ারি ২০১১ থেকে সেপ্টেম্বর ২০১২ পর্যন্ত।
আফগানিস্তান ছাড়া যেসব দেশের অবস্থান বাংলাদেশের তুলনায় নিম্নতর অবস্থানে তাদের মধ্যে রয়েছে সুদান, মিয়ানমার, উজবেকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, ইরাক, ভেনেজুয়েলা, চাদ, বুরুন্ডি, হাইতি, ইকুটেরিয়াল গিনি, জিম্বাবুয়ে, লিবিয়া, লাওস, অ্যাঙ্গোলা, তাজিকিস্তান, কম্বোডিয়া, ইয়েমেন, গিনি, কিরগিজস্তান, গিনি-বিসাউ, প্যারাগুয়ে, ইরিত্রিয়া, পাপুয়া নিউগিনি, সিরিয়া, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র ও ইউক্রেন।
অন্যদিকে যেসব দেশে দুর্নীতির ব্যাপকতা ও গভীরতা সবচেয়ে কম বলে নিরূপিত হয়েছে তার মধ্যে শীর্ষে যৌথভাবে রয়েছে ৯০ স্কোর পেয়ে ফিনল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড ও ডেনমার্ক। এরপর সুইডেন, সিঙ্গাপুর, সুইজারল্যান্ড, নরওয়ে, অস্ট্রেলিয়া, নেদারল্যান্ডস, কানাডা, হংকং, জাপান, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, আইসল্যান্ড, লুক্সেমবার্গ, জার্মানি, বারবাডোস, বেলজিয়াম, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, উরুগুয়ে, চিলি ও ফ্রান্স।
কোনো দেশই ৯০-এর বেশি স্কোর পায়নি। আরও লক্ষণীয়, ওইসিডিভুক্ত দেশগুলোর অনেকগুলোই যেমন জার্মানি, বেলজিয়াম, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া, স্পেন, ইতালি ৮০ শতাংশের কম স্কোর পেয়েছে। ১৭৬টি দেশের মধ্যে ১২৪টি অর্থাৎ দুই-তৃতীয়াংশ ৫০-এর কম স্কোর পেয়েছে। ৬৭টি দেশ সূচকে অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর প্রাপ্ত গড় স্কোর ৪৩-এর কম।
সার্বিক বিবেচনায় এটি পরিষ্কার, দুর্নীতি একটি বৈশ্বিক সমস্যা। যদিও আমাদের মতো দেশের ক্ষেত্রে উন্নত বিশ্বের তুলনায় দুর্নীতির চ্যালেঞ্জ অনেক বেশি উদ্বেগের কারণ। স্মরণ করা যেতে পারে যে ২০০১ থকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত পর পর পাঁচবার বাংলাদেশ দুর্নীতি ব্যাপকতার ধারণার এই সূচকে শীর্ষে অবস্থান করেছিল। সোমালিয়া এ বছরসহ ছয়বার শীর্ষে অবস্থান পাওয়ার ফলে আমাদের সেই গ্লানির কিছুটা লাঘব হতে পারে। তা ছাড়া, পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ ২০০৬-এ তৃতীয়, ২০০৭-এ সপ্তম, ২০০৮-এ দশম, ২০০৯-এ ত্রয়োদশ, ২০১০-এ দ্বাদশ এবং ২০১১-তে এবারের মতো ত্রয়োদশ স্থান পাওয়ায় আন্তর্জাতিক তুলনামূলক অবস্থানের মাপকাঠিতে একধরনের স্থিতিশীল অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়।
তবে, এবারের সূচক অনুযায়ী বাংলাদেশ পৃথিবীর ৩১টি দেশের মধ্যে একটি, যাদের স্কোরে অবনতি হয়েছে। অন্যদিকে তালিকার উচ্চক্রম অনুযায়ী বাংলাদেশের মতো ৫৭টি দেশের ক্ষেত্রে অবস্থানের অবনতি ঘটেছে। আবার নিম্নক্রম অনুযায়ী যদিও ২০১১-এর সমান, অর্থাৎ ত্রয়োদশ স্থানে, উচ্চক্রম অনুযায়ী ২০১১-এর তুলনায় বাংলাদেশ ১২০-এর স্থলে ১৪৪তম, অর্থাৎ ২৪ ধাপ নিচে অবস্থান পেয়েছে। ২০১০-এর তুলনায় ২০১১ সালে উচ্চক্রম অনুযায়ী ১৪ ধাপ (১৩৪ থেকে ১২০) অগ্রগতি হয়েছিল।
মূল প্রশ্ন হলো, আমরা কি এর চেয়ে ভালো করতে পারতাম না? যেসব কারণে এই নিম্নমুখী স্কোর ও অবস্থান, তার মধ্যে রয়েছে দুর্নীতিবিরোধী নির্বাচনী অঙ্গীকারের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু কিছু ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ইতিবাচক উদ্যোগ সত্ত্বেও কার্যকরভাবে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে অনুকরণীয় দৃষ্টান্তের ঘাটতি। বিশেষ করে, সাম্প্রতিক কালে পদ্মা সেতু প্রকল্প, রেলওয়েতে নিয়োগ-বাণিজ্য, শেয়ারবাজার, হল-মার্ক ও ডেসটিনির মতো হাই-প্রোফাইল দুর্নীতির অভিযোগের একধরনের মিছিল।
ক্ষমতাবানদের একাংশের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ অংশগ্রহণ বা সহায়তায় ভূমি-বনাঞ্চল-নদী-জলাশয় দখল থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ে টেন্ডারবাজিসহ আইনের শাসনপরিপন্থী কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণের ঊর্ধ্বেই রয়ে গেছে। জনপ্রতিনিধি ও সরকারের উচ্চপর্যায়ে অধিষ্ঠিত ব্যক্তিরা আয়-ব্যয়ের হিসাব জনসমক্ষে প্রকাশের প্রতিশ্রুতি পূরণ থেকে দূরেই থেকেছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনকে স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করার অঙ্গীকারের বিপরীতে একগুচ্ছ এমন সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়, যার ফলে বাস্তবে কমিশন আরও অকার্যকর হতে পারত। যদিও সে পদক্ষেপ থেকে পরবর্তী সময়ে সরকার সরে আসে। বিষয়টি একদিকে যেমন এখনো সুরাহা হয়নি অন্যদিকে এর ফলে কমিশনের ওপর রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও মনস্তাত্ত্বিক চাপ সৃষ্টি হয়।
এর ফলেই হোক আর কমিশনের নিজস্ব দুর্বলতা বা আত্মবিশ্বাসের ঘাটতির কারণেই হোক দুর্নীতি দমন কমিশন একদিকে যেমন বড় ধরনের দুর্নীতির অভিযোগগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে প্রত্যাশিত দৃঢ়তা ও সক্রিয়তা দেখাতে পারেনি, অন্যদিকে অনেক সময়ই সরকারের অবস্থানের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের মতোই নিজেকে উপস্থাপন করেছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগসংক্রান্ত অসংখ্য মামলার প্রত্যাহার আইনের শাসনের যেমন পরিপন্থী তেমনি জবাবদিহিমূলক গণতান্ত্রিক সুশাসনের অন্যতম প্রতিষ্ঠান বিচারব্যবস্থার অবমূল্যায়নের সমতুল্য।
গণতান্ত্রিক জবাবদিহির আরেক অন্যতম প্রতিষ্ঠান জাতীয় সংসদ। বিরোধী দলের শুধু আসন সংরক্ষণের প্রয়োজনে অপরিহার্য উপস্থিতির বাইরে ধারাবাহিকভাবে বর্জনের ফলে সংসদ রূপান্তরিত হয়েছে সরকারি দল ও জোটের একচ্ছত্র ভুবনে। অন্যদিকে সংসদীয় কমিটিতে অনেক ক্ষেত্রেই স্বার্থের দ্বন্দ্বের কারণে সংসদের প্রতি প্রত্যাশার অনেকটাই অপূরণ রয়েছে, বিশেষ করে সরকারকে সংসদের মাধ্যমে জনগণের কাছে জবাবদিহি করার ক্ষেত্রে। একদিকে সাংবিধানিক অঙ্গীকার ও অন্যদিকে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির অবজ্ঞা করে ও কালোটাকা অর্জনকে পুরস্কৃত করা অব্যাহত রয়েছে।
সংবিধানের ৭(১) অনুচ্ছেদ প্রজাতন্ত্রের সব ক্ষমতা জনগণের হাতে অর্পণ করেছে, অথচ উল্লিখিত পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্ন জাগে রাষ্ট্রক্ষমতা কি বাস্তবেই জনগণের হাতে, নাকি দুর্নীতি নামক ক্যানসার রাষ্ট্রক্ষমতা ক্রমান্বয়ে দখল করে নিচ্ছে? নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে শুরু করে সরকারি সিদ্ধান্ত ও আইনের প্রয়োগসহ বিভিন্ন জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রভাব কি জনগণের ও জনস্বার্থের, না দুর্নীতির প্রসারে বা দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতায় যারা সুবিধাভোগী তাদের?
তবু আমরা আশাবাদী। প্রত্যাশ্যার তুলনায় প্রাপ্তি কম হলেও গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় কাঠামো সৃষ্টিতে আমাদের অগ্রযাত্রায় গৌরবের অনেক কিছুই রয়েছে। তবে আমরা গণতন্ত্রের অবকাঠামো তথা হার্ডওয়্যার তৈরিতে যতটুকু সক্ষম হয়েছি, সফটওয়্যার বা গণতান্ত্রিক চর্চায় ততটা সাফল্য অর্জন করিনি। অবস্থার পরিবর্তনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে জনগণের কাছে প্রদত্ত অঙ্গীকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীলতা। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির প্রতি মাঝেমধ্যে ফিরে তাকিয়ে কারও প্রতি ভয়-করুণার ঊর্ধ্বে থেকে করণীয় নির্ধারণ দুর্নীতির ধারণাসূচকে ইতিবাচক অগ্রগতির অন্যতম উপায়।
জনগণকেই সোচ্চার হতে হবে। এ দেশের মানুষ প্রত্যাশিত অগ্রগতি অর্জনে ব্যর্থ হয়, তবে হার মানে না। জনগণই চাইবে গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যকর হোক, যারা দুর্নীতি করে তারা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ভোগ করুক, রাজনৈতিক অঙ্গীকার বাস্তবায়িত হোক, গণতান্ত্রিক চর্চার বিকাশ ঘটুক যেন দেশের স্বার্থ প্রাধান্য পায় অন্য কোনো স্বার্থের ঊর্ধ্বে। জনগণের এই চাওয়া, এই দাবি যত বেশি জোরালো হবে দুর্নীতি প্রতিরোধ ততই ত্বরান্বিত হবে।
ইফতেখারুজ্জামান: নির্বাহী পরিচালক, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ।
No comments