পোশাকশিল্পে অস্থিরতা-বিশ্ববাজারে যেন বিরূপ প্রভাব না পড়ে
আশুলিয়ায় গার্মেন্ট কারখানা এলাকায় শ্রমিকদের মধ্যে এখনো অশান্ত অবস্থা বিরাজ করছে। একটি কারখানার শ্রমিকদের চাকরিচ্যুতির প্রতিবাদে ও বকেয়া বেতনের দাবিতে সেখানে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়।
আর একই দিন তাজরীন গার্মেন্ট কারখানায় আগুনে পুড়ে নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছিল ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে। কিন্তু সেই তাজরীন গার্মেন্ট কারখানার বেঁচে থাকা কর্মীদের কর্মসংস্থান, তাদের বকেয়া বেতন ইত্যাদির এখনো সমাধান হয়নি। ফলে কর্মীদের এখানে-ওখানে দেনদরবার, দাবি-দাওয়া জানাতে দেখা যাচ্ছে। এক তাজরীন গার্মেন্ট কারখানার এই সমস্যা সমাধানই যেখানে হয়নি, সেখানে আরো কারখানায় অশান্তি তৈরি হওয়াটা গোটা গার্মেন্ট খাতকে ক্ষতিগ্রস্ত করে কি না, তা দেখা অতি জরুরি। সবচেয়ে বড় কথা, তাজরীনের এই ক্ষতির পেছনে কী কারণ কাজ করেছে, তা অনুসন্ধান করে বের করা বোধ করি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বলা হচ্ছে, তাজরীনে আগুন লাগানো হয়েছিল। এটা সরকারপ্রধানের মুখ থেকে যেমন বেরিয়েছে, তেমনি অন্য অনেক সূত্র থেকেই প্রকাশ পেয়েছে। এটাকে নাশকতা বলে অভিহিত করেছেন খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও। ফলে গার্মেন্ট শিল্প খাতে অসন্তোষ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই সূত্রটির গুরুত্ব আরো বেড়ে যায়। তাই আমরা মনে করি, তাজরীনের এ অগ্নিকাণ্ডের কারণ উদ্ঘাটন করা শুধু তাজরীনের ঘটনা জানার জন্যই নয়, গোটা গার্মেন্ট শিল্প খাতের ভবিষ্যতের জন্যও জরুরি। প্রাণ হারানো গার্মেন্টকর্মীদের পরিবারকে ছয় লাখ টাকা করে দেওয়া হচ্ছে মোট। টাকার অঙ্কে এটা মোটামুটি বেশি হলেও যে বিশাল ক্ষতি হয়েছে তা পূরণ হওয়ার মতো নয়। তার পরও আমরা মনে করি, এটা ভালো উদ্যোগ। কিন্তু যাঁরা বেঁচে আছেন, তাঁদের বিষয়টি দেখতে হবে। সেখানে কয়েক হাজার কর্মী আজ চাকরিচ্যুত, তাদের পথে নামতে হলে অন্য কারখানাগুলোতেও এর প্রভাব পড়তে পারে। তাই তাদের বকেয়া বেতন ও পাওনাদি পরিশোধের জন্য তৈরি পোশাক শিল্প মালিক সমিতি ও সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি বহির্বিশ্বে যাতে এ ঘটনার সূত্র ধরে কোনো বিরূপ প্রভাব না পড়ে তার চেষ্টা করতে হবে। সেই কাজটিও সরকার, বিজিএমইএ ও সম্ভাব্য অন্যদের করতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রচারমাধ্যমও ভূমিকা রাখতে পারে। তদন্তকারীরা নিশ্চয়ই নাশকতার অভিযোগটিকে গুরুত্বসহ বিবেচনা করবেন। যদি নাশকতা হয়ে থাকে তাহলে এর পেছনে বহিঃশক্তি কিংবা অভ্যন্তরীণ কোন শক্তি জড়িত, তা চিহ্নিত করে তার মূলোৎপাটন করতে না পারলে ভবিষ্যতে আমাদের আরো কর্মী হারানোর দৃশ্য দেখতে হবে। নিশ্চয়ই আমরা সেই দৃশ্য দেখতে চাইব না। আশুলিয়ায় সাম্প্রতিক অশান্ত পরিবেশ তৈরির পেছনে কর্মীদের দাবিগুলো স্পর্শকাতর। তারা বেতনের দাবি করছে। চাকরিচ্যুতির প্রতিবাদ করছে। কোনো কারখানার শ্রমিক তার ন্যায্য পাওনা নিয়মিত পাবে- এটাই স্বাভাবিক। তাদের পারিশ্রমিক এমনিতেই কম, সে ক্ষেত্রে তাদের টাকা না দেওয়া কিংবা নিয়মিত না দেওয়ার মতো ঘটনা এ শিল্পকে নানামুখী সমস্যায় জড়িয়ে দেয়। বিজিএমইএ ও সরকার যৌথ প্রচেষ্টা নিলে এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হবে না বলে আমরা মনে করি। সবচেয়ে বড় কথা, অশান্ত পরিস্থিতির উদ্ভব হওয়ার আগেই তা প্রতিরোধ করতে হবে। তা না হলে বহির্বিশ্বে আমাদের বাজারে বিরূপ প্রভাব পড়বে।
No comments