স্কুলে শিক্ষার্থী নির্যাতন-শিশুরা কী শিখছে?
২০১০ সালের আগস্টে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সরকারি-বেসরকারি নির্বিশেষে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শারীরিক শাস্তি প্রদান সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
একই সঙ্গে এ কথাও বলা হয়, শারীরিক শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের নৈতিক ও শিক্ষাগত বিকাশে কাঙ্ক্ষিত ফল অর্জন করা সম্ভব নয়। বরং এতে শিক্ষার্থীদের বিকাশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রজ্ঞাপনে, শারীরিক নির্যাতন অসদাচরণ বলে গণ্য করা হয়েছে এবং শারীরিক শাস্তিদানের জন্য অভিযুক্ত শিক্ষককে চিহ্নিত করে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনাটি শুধু জরুরি ছিল না, এটি অবশ্যপালনীয় নীতি হিসেবে দেশের সকল স্কুলে অনুসৃত হওয়া উচিত। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, দেশের স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থী নির্যাতন বন্ধ হয়নি। বরং নানা প্রক্রিয়ায় মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মন বিষিয়ে তোলা হচ্ছে। অনেকক্ষেত্রে অভিভাবকদের অসচেতনতার কারণে শিক্ষার্থীরা বিষয়টি বাবা-মাকেও জানাচ্ছে না। অভিভাবকরাও শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন ও ভবিষ্যতের স্বার্থে বিষয়গুলোকে উপেক্ষা করে যাচ্ছেন। প্রতিযোগিতার বাজারে সন্তানকে স্কুলে পড়ানোর সুযোগ পেয়েই তারা কৃতার্থ। ফলে অনেকক্ষেত্রে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ পেয়েও প্রতিবিধানের জন্য কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন না। স্কুল কর্তৃপক্ষগুলোও বিষয়গুলো নিয়ে ততটা সচেতন নয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এ অবস্থা কিছুতে কাম্য হতে পারে না। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়ে ক্রমশ শিক্ষাবিমুখ, বিমর্ষ ও নির্জীব হয়ে পড়ে। ভবিষ্যৎ জীবন মারাত্মক ক্ষতির মধ্যে পড়ে। বস্তুত স্কুল পর্যায়ে কোনো শিক্ষার্থীকে মারধর করলে তার কোমল মনে গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয়। এ বিষয়টি শিক্ষকদের উপলব্ধি করা জরুরি। পাশাপাশি এ সত্যও জানা দরকার, নির্যাতনের মাধ্যমে সমস্যা কোনোভাবেই কমানো যায় না। প্রকারান্তরে তা বেড়ে যায়। স্কুলে পাঠদানের ক্ষেত্রে শিক্ষকের মনোনিবেশ, অধ্যবসায় থাকলে শারীরিক নির্যাতনের প্রশ্নই ওঠে না। শাসন ও শৃঙ্খলা ঠিক রাখতে গিয়ে যে শিক্ষক নির্যাতনের পথ বেছে নেন, তিনি কার্যত ব্যর্থ শিক্ষক বলেই পরিগণিত হন। কোনো স্কুলে এমন শিক্ষক থাকলে তাকে সংশোধন করা উচিত। আর তাতেও যদি শিক্ষকদের শোধরানো না যায় তবে সে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। এ বিষয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ ও মন্ত্রণালয়ের মনোযোগ দরকার। সম্প্রতি রাজধানীর সাউথ পয়েন্ট নামক একটি অভিজাত স্কুলেও নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি কিছুতে কাম্য নয়। স্কুল কর্তৃপক্ষগুলো দ্রুত আত্মসংশোধন করে শিশুদের শিক্ষাদানের উপযুক্ত হয়ে উঠুক।
No comments