মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার-সাঈদীর রায়ের তারিখ ঘোষণা হতে পারে আজ
মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায়ের দিন ধার্য হতে পারে আজ। এ জন্য তাঁর আইনজীবীকে আজকের মধ্যে যাবতীয় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি নিজামুল হকের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।
মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনাল এক আদেশে সাঈদীর পক্ষ যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের সমাপ্তি ঘোষণা করলেও গতকাল তাঁর আইনজীবী মিজানুল ইসলামের আবেদন গ্রহণ করে তাঁকে আবারও বক্তব্য উপস্থাপনের সুযোগ দেওয়া হয়।
এদিকে 'শিকদার' হিসেবে সাঈদীর বংশ-পরিচয়ের স্বপক্ষে গতকাল রাষ্ট্রপক্ষ থেকে পিরোজপুরের সাউথখালী মৌজায় সাঈদীদের বাড়ির ও মসজিদের জমিসংক্রান্ত দলিলাদি আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষে প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী ও প্রসিকিউটর আবদুর রহমান হাওলাদার সাংবাদিকদের বলেন, জমির দলিল বা পর্চায় সাঈদীর বাবার নাম ইউসুফ আলী শিকদার উল্লেখ আছে। পিতার পরিচয়েই ছেলের পরিচয় হবে- এটাই স্বাভাবিক। রাষ্ট্রপক্ষের নতুন এ ডকুমেন্টের বিষয়ে আসামিপক্ষ পরে জবাব দেবে।
গতকাল সকালে রাষ্ট্রপক্ষের হয়ে প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। তিনি সাঈদীর আইনজীবীর দেওয়া যুক্তিতর্ক খণ্ডন করেন। তাঁর জবাব দেওয়া এখনো শেষ হয়নি। আজ তিনি অসমাপ্ত যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবেন। এরপর সাঈদীর পক্ষে তাঁর আইনজীবী মিজানুল ইসলাম যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য আরো সময় চান। তিনি বলেন, তাঁর বক্তব্য এখনো শেষ হয়নি। কারণ হরতালের জন্য তিনি গত মঙ্গলবার আসতে পারেননি। ট্রাইব্যুনাল অনুমতি দিলে দুপুর ২টা পর্যন্ত তিনি বক্তব্য উপস্থাপন করেন। এরপর ট্রাইব্যুনাল আজকের মধ্যে তাঁকে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করার অনুরোধ জানান।
এ বিষয়ে প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী সাংবাদিকদের বলেন, 'ট্রাইব্যুনাল ডিফেন্সকে (আসামিপক্ষ) কাল (বৃহস্পতিবার) যুক্তিতর্ক উপস্থাপন সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য শেষ হলে রাষ্ট্রপক্ষে কিছু বক্তব্য রাখা হবে। উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হলে বিচারিক প্রক্রিয়া অনুযায়ী ট্রাইব্যুনাল রায়ের তারিখ নির্ধারণ করবেন।'
ট্রাইব্যুনাল-২-এ সাফাই সাক্ষ্য
মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মাদ মুজাহিদের হাতে তলোয়ার থাকত। তিনি ভিলেনের মতো চলাফেরা করতেন। বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবিরের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ মুজাহিদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে গতকাল বুধবার রাষ্ট্রপক্ষের অষ্টম সাক্ষী মীর লুৎফর রহমান এসব তথ্য জানিয়েছেন। একই ট্রাইব্যুনালে আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে দেওয়া রাষ্ট্রপক্ষের ১৪তম সাক্ষী বিনোদ চন্দ্র বিশ্বাস জানিয়েছেন, তাঁর দুই বৌদির ধর্ষণের ঘটনা।
এ ছাড়া আবদুল কাদের মোল্লার পক্ষে গতকাল ট্রাইব্যুনাল-২-এ সাফাই সাক্ষ্য দিয়েছেন রাজধানীর পল্লবী এলাকার বিএনপি নেতা আলতাব উদ্দিন মোল্লা।
মীর লুৎফর রহমান জবানবন্দিতে জানান, 'মুজাহিদকে ফরিদপুর শহরে একটি জিপে করে ঘোরাফেরা করতে দেখেছি। বাচ্চু রাজাকারের নেতৃত্বাধীন রাজাকারের ক্যাম্প ছিল ময়রা পট্টির হিরা লাল মোক্তারের বাড়িতে।' তিনি ট্রাইব্যুনালকে জানান, ক্যাম্পগুলোতে বাচ্চু রাজাকার আলবদরদের ট্রেনিং দিতেন। মুজাহিদ পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে ফরিদপুর সার্কিট হাউসে বসে কাকে কাকে ধরতে হবে- এসব নিয়ে পরামর্শ করতেন। তখন তাঁর সঙ্গে বাচ্চু রাজাকারকে দেখা গেছে।
মীর লুৎফর রহমান বলেন, 'মুজাহিদের হাতে তলোয়ার থাকত এবং তিনি ভিলেনের মতো চলাফেরা করতেন।'
বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে বিনোদ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, '১৯৭১ সালে আমি ফরিদপুরে দর্জির কাজ শিখছিলাম। একাত্তর সালে অসহযোগ আন্দোলনের পর মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। আমি তখন ফরিদপুর শহরে ছিলাম। এপ্রিল মাসের শেষ দিকে পাকিস্তানি বাহিনী ফরিদপুর ঢোকে। গোয়ালচামট এলাকায় এসে পাকিস্তানি বাহিনী জগৎবন্ধু সুন্দর আশ্রমে ঢোকে। সেখানে পাকিস্তানি সেনারা প্রার্থনারত আট সাধুকে গুলি চালিয়ে হত্যা করে। এরপর তারা ফরিদপুর শহরে ঢোকে রাজেন্দ্র কলেজ, সার্কিট হাউস, স্টেডিয়াম প্রভৃতি এলাকায় ক্যাম্প স্থাপন এবং শহরের বিভিন্ন এলাকায় জ্বালাওপোড়াও শুরু করে। ওই সময় আমি প্রাণভয়ে ফরিদপুর শহর থেকে হেঁটে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে গ্রামের বাড়ি চলে যাই। এরপর সম্ভবত ৮ জুন বাচ্চু রাজাকারসহ ৮-১০ জন আমাদের বাড়ি আক্রমণ করে। আমরা বাড়ির পুরুষরা সবাই পাশের পাটক্ষেতে লুকিয়ে থাকি।'
সাক্ষী ট্রাইব্যুনালকে জানান, তাঁর মা ও তিন বৌদি বাড়িতে ছিলেন। তাঁদের বাচ্চু ও তাঁর সঙ্গীরা ঘেরাও করে উঠবস করায়। বাচ্চুসহ চার-পাঁচজন দুই বৌদিকে জোর করে ধরে নিয়ে এক বৌদির ঘরে ঢোকায়। সেখানে তাঁদের প্রায় আধা ঘণ্টা আটকে রেখে তারা বাড়িতে লুটপাট চালায়। বাচ্চুরা চলে যাওয়ার পর মা ও এক বৌদি ওই ঘরে ঢুকে বিবস্ত্র ও রক্তাক্ত অবস্থায় কাপড়-চোপড় পরিয়ে বাইরে নিয়ে আসে তাঁদের। তখনও তাঁরা বেহুশ ছিলেন। সেবা শুশ্রূষার পর জ্ঞান ফিরলে তাঁরা জানান, 'আমাদের ইজ্জত চলে গেছে। আমরা আর বেঁচে থাকতে চাই না। আমাদের সব শেষ হয়ে গেছে।' এ কথা বলতে বলতে তাঁরা নিজেদের চুল ছিড়তে থাকেন। সাক্ষী জানান, পরে তাঁরা ভারতে চলে যান।
এদিকে 'শিকদার' হিসেবে সাঈদীর বংশ-পরিচয়ের স্বপক্ষে গতকাল রাষ্ট্রপক্ষ থেকে পিরোজপুরের সাউথখালী মৌজায় সাঈদীদের বাড়ির ও মসজিদের জমিসংক্রান্ত দলিলাদি আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষে প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী ও প্রসিকিউটর আবদুর রহমান হাওলাদার সাংবাদিকদের বলেন, জমির দলিল বা পর্চায় সাঈদীর বাবার নাম ইউসুফ আলী শিকদার উল্লেখ আছে। পিতার পরিচয়েই ছেলের পরিচয় হবে- এটাই স্বাভাবিক। রাষ্ট্রপক্ষের নতুন এ ডকুমেন্টের বিষয়ে আসামিপক্ষ পরে জবাব দেবে।
গতকাল সকালে রাষ্ট্রপক্ষের হয়ে প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। তিনি সাঈদীর আইনজীবীর দেওয়া যুক্তিতর্ক খণ্ডন করেন। তাঁর জবাব দেওয়া এখনো শেষ হয়নি। আজ তিনি অসমাপ্ত যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবেন। এরপর সাঈদীর পক্ষে তাঁর আইনজীবী মিজানুল ইসলাম যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য আরো সময় চান। তিনি বলেন, তাঁর বক্তব্য এখনো শেষ হয়নি। কারণ হরতালের জন্য তিনি গত মঙ্গলবার আসতে পারেননি। ট্রাইব্যুনাল অনুমতি দিলে দুপুর ২টা পর্যন্ত তিনি বক্তব্য উপস্থাপন করেন। এরপর ট্রাইব্যুনাল আজকের মধ্যে তাঁকে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করার অনুরোধ জানান।
এ বিষয়ে প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী সাংবাদিকদের বলেন, 'ট্রাইব্যুনাল ডিফেন্সকে (আসামিপক্ষ) কাল (বৃহস্পতিবার) যুক্তিতর্ক উপস্থাপন সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য শেষ হলে রাষ্ট্রপক্ষে কিছু বক্তব্য রাখা হবে। উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হলে বিচারিক প্রক্রিয়া অনুযায়ী ট্রাইব্যুনাল রায়ের তারিখ নির্ধারণ করবেন।'
ট্রাইব্যুনাল-২-এ সাফাই সাক্ষ্য
মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মাদ মুজাহিদের হাতে তলোয়ার থাকত। তিনি ভিলেনের মতো চলাফেরা করতেন। বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবিরের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ মুজাহিদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে গতকাল বুধবার রাষ্ট্রপক্ষের অষ্টম সাক্ষী মীর লুৎফর রহমান এসব তথ্য জানিয়েছেন। একই ট্রাইব্যুনালে আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে দেওয়া রাষ্ট্রপক্ষের ১৪তম সাক্ষী বিনোদ চন্দ্র বিশ্বাস জানিয়েছেন, তাঁর দুই বৌদির ধর্ষণের ঘটনা।
এ ছাড়া আবদুল কাদের মোল্লার পক্ষে গতকাল ট্রাইব্যুনাল-২-এ সাফাই সাক্ষ্য দিয়েছেন রাজধানীর পল্লবী এলাকার বিএনপি নেতা আলতাব উদ্দিন মোল্লা।
মীর লুৎফর রহমান জবানবন্দিতে জানান, 'মুজাহিদকে ফরিদপুর শহরে একটি জিপে করে ঘোরাফেরা করতে দেখেছি। বাচ্চু রাজাকারের নেতৃত্বাধীন রাজাকারের ক্যাম্প ছিল ময়রা পট্টির হিরা লাল মোক্তারের বাড়িতে।' তিনি ট্রাইব্যুনালকে জানান, ক্যাম্পগুলোতে বাচ্চু রাজাকার আলবদরদের ট্রেনিং দিতেন। মুজাহিদ পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে ফরিদপুর সার্কিট হাউসে বসে কাকে কাকে ধরতে হবে- এসব নিয়ে পরামর্শ করতেন। তখন তাঁর সঙ্গে বাচ্চু রাজাকারকে দেখা গেছে।
মীর লুৎফর রহমান বলেন, 'মুজাহিদের হাতে তলোয়ার থাকত এবং তিনি ভিলেনের মতো চলাফেরা করতেন।'
বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে বিনোদ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, '১৯৭১ সালে আমি ফরিদপুরে দর্জির কাজ শিখছিলাম। একাত্তর সালে অসহযোগ আন্দোলনের পর মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। আমি তখন ফরিদপুর শহরে ছিলাম। এপ্রিল মাসের শেষ দিকে পাকিস্তানি বাহিনী ফরিদপুর ঢোকে। গোয়ালচামট এলাকায় এসে পাকিস্তানি বাহিনী জগৎবন্ধু সুন্দর আশ্রমে ঢোকে। সেখানে পাকিস্তানি সেনারা প্রার্থনারত আট সাধুকে গুলি চালিয়ে হত্যা করে। এরপর তারা ফরিদপুর শহরে ঢোকে রাজেন্দ্র কলেজ, সার্কিট হাউস, স্টেডিয়াম প্রভৃতি এলাকায় ক্যাম্প স্থাপন এবং শহরের বিভিন্ন এলাকায় জ্বালাওপোড়াও শুরু করে। ওই সময় আমি প্রাণভয়ে ফরিদপুর শহর থেকে হেঁটে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে গ্রামের বাড়ি চলে যাই। এরপর সম্ভবত ৮ জুন বাচ্চু রাজাকারসহ ৮-১০ জন আমাদের বাড়ি আক্রমণ করে। আমরা বাড়ির পুরুষরা সবাই পাশের পাটক্ষেতে লুকিয়ে থাকি।'
সাক্ষী ট্রাইব্যুনালকে জানান, তাঁর মা ও তিন বৌদি বাড়িতে ছিলেন। তাঁদের বাচ্চু ও তাঁর সঙ্গীরা ঘেরাও করে উঠবস করায়। বাচ্চুসহ চার-পাঁচজন দুই বৌদিকে জোর করে ধরে নিয়ে এক বৌদির ঘরে ঢোকায়। সেখানে তাঁদের প্রায় আধা ঘণ্টা আটকে রেখে তারা বাড়িতে লুটপাট চালায়। বাচ্চুরা চলে যাওয়ার পর মা ও এক বৌদি ওই ঘরে ঢুকে বিবস্ত্র ও রক্তাক্ত অবস্থায় কাপড়-চোপড় পরিয়ে বাইরে নিয়ে আসে তাঁদের। তখনও তাঁরা বেহুশ ছিলেন। সেবা শুশ্রূষার পর জ্ঞান ফিরলে তাঁরা জানান, 'আমাদের ইজ্জত চলে গেছে। আমরা আর বেঁচে থাকতে চাই না। আমাদের সব শেষ হয়ে গেছে।' এ কথা বলতে বলতে তাঁরা নিজেদের চুল ছিড়তে থাকেন। সাক্ষী জানান, পরে তাঁরা ভারতে চলে যান।
No comments