টিআইয়ের প্রতিবেদন-বাংলাদেশে দুর্নীতি বেড়েছে
গত বছরের তুলনায় এবার বাংলাদেশে দুর্নীতির মাত্রা বেড়েছে। গতবার বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১২০তম স্থানে। এবার ১৪৪-এ অবনমন ঘটেছে। অবশ্য দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় গতবারের মতো এবারও ১৩তম অবস্থানই ধরে রেখেছে বাংলাদেশ।
এবার শীর্ষ দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হয়েছে যৌথভাবে সোমালিয়া, উত্তর কোরিয়া ও আফগানিস্তান। আর সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের মর্যাদা পেয়েছে যৌথভাবে ফিনল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড ও ডেনমার্ক।
গতকাল বুধবার রাজধানীর মহাখালীতে ব্র্যাক সেন্টার ইনে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) সংবাদ সম্মেলন করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) তৈরি করা দুর্নীতির ধারণাসূচক গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গতবার ১৮৩টি দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশ ছিল ১৩তম। ওপরের দিক থেকে এ অবস্থান ছিল ১২০তম। এবার ১৭৬টি দেশের মধ্যে সেই অবস্থান ২৪ ধাপ নেমে ১৪৪-এ ঠেকেছে। তবে সর্বোচ্চ দুর্নীতির তালিকায় থাকা ১৩তম অবস্থানের কোনো হেরফের হয়নি। এতে প্রতীয়মান হয়, অবস্থানগত পরিবর্তন না হলেও দেশে দুর্নীতির মাত্রা বেড়েছে। এই চিত্র উদ্বেগজনক।
অনুষ্ঠানে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, '২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত সময়ের প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক খাতের বিভিন্ন বিষয় বিশ্লেষণ করে জার্মানির বার্লিনভিত্তিক সংস্থা টিআই প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে। এই জরিপ টিআইবির নয়। আমরা গবেষণা প্রতিবেদনটি বিশ্বের অন্য দেশগুলোর সঙ্গে একযোগে প্রকাশ করছি মাত্র।'
ইফতেখারুজ্জামান জানান, বিগত নির্বাচনের আগে দুটি রাজনৈতিক দলই দুর্নীতি প্রতিরোধের অঙ্গীকার করেছিল। সেই অঙ্গীকার তারা ধরে রাখতে পারেনি। দুর্নীতি রোধে আইন করে সংসদ বর্জন বন্ধ করতে হবে। সংসদীয় স্থায়ী কমিটিগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে। গোপনীয়তার সংস্কৃতি থেকে মুক্ত সংস্কৃতির দিকে যেতে হবে।
টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, দুর্নীতি, অনিয়ম, অবিচার থাকলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশের কৃষক-শ্রমিক ও দরিদ্র জনগণ। যেকোনো দায়িত্বশীল নাগরিকের কর্তব্য হচ্ছে দুর্নীতি প্রতিরোধে সরকারকে সহযোগিতা করা।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রকাশিত বিভিন্ন সংবাদ পর্যালোচনা ও গবেষণা করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, লন্ডন স্কুল অব ইকনোমিক্স, ইউরোপিয়ান কমিশন জয়েন্ট রিসার্চ সেন্টার, হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলসহ মোট সাতটি প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞরা প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন। এবার দুর্নীতির ক্ষেত্রে ১০-এর পরিবর্তে ১০০কে স্কোর হিসেবে মূল্যায়ন করা হয়েছে। তবে ১০০ স্কোর কোনো দেশই পায়নি। এতে বোঝা যায়, কোনো দেশই দুর্নীতির ঊর্ধ্বে নয়।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ ফিনল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড ও ডেনমার্কের প্রত্যেকের স্কোর ৯০। এ ছাড়া ৮৮ স্কোর পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে সুইডেন এবং ৮৭ স্কোর পেয়ে তৃতীয় অবস্থানে আছে সিঙ্গাপুর। আর সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ তিনটির স্কোর ৮ করে। এর পরে ১৩ স্কোর পেয়ে সুদান দ্বিতীয় ও ১৫ পেয়ে মিয়ানমার তৃতীয় সর্বোচ্চ দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে।
বাংলাদেশের সঙ্গে সমান স্কোর পেয়ে একই অবস্থানে আছে ক্যামেরুন, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, কঙ্গো রিপাবলিক, সিরিয়া ও ইউক্রেইন। বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এবার দুর্নীতির মাত্রা কমেছে। গত বছর দেশটির অবস্থান ছিল ১২০তম। এবার তাদের অবস্থান ৯৪। পাকিস্তানের অবস্থান ১৩৪ থেকে বেড়ে ১৩৯তম হয়েছে। জার্মানি, বেলজিয়াম, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া, স্পেন ও ইতালির স্কোর ৮০-এর কম। প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ ১২৪টি দেশের স্কোর ৫০-এর নিচে।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর ক্ষেত্রে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় আছে আফগানিস্তান (স্কোর ৮)। পর্যায়ক্রমে আছে বাংলাদেশ (২৬), নেপাল (২৭), পাকিস্তান (২৭), ভারত (৩৬), শ্রীলঙ্কা (৪০) ও ভুটান (৬৩)। একমাত্র ভুটান ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার কোনো দেশই দুর্নীতি রোধের বিবেচনায় ভালো অবস্থানে নেই।
বাংলাদেশে দুর্নীতি না কমার কারণ : টিআইবি মনে করে, বাংলাদেশে দুর্নীতি একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে আছে। চলতি বছরেই পদ্মা সেতু, হলমার্ক ও ডেসটিনির মতো বড় বড় দুর্নীতির ঘটনা ঘটেছে। ক্ষমতাবানরা নির্বিচারে জমি-নদী-জলাশয় দখল করেছেন। জনপ্রতিনিধিরা তাঁদের সম্পদের হিসাব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা করেননি। দুর্নীতি দমন কমিশনের কার্যকারিতা কমানো হয়েছে। এ ছাড়া রাজনৈতিক বিবেচনায় মামলা প্রত্যাহার, বয়কট ও স্বার্থের দ্বন্দ্বে জর্জরিত সংসদ, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর রাজনীতিকীকরণ, কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা ও দুর্বলতর সরকারি ক্রয় নীতিমালা থাকায় দুর্নীতি আশানুরূপভাবে কমছে না।
দুর্নীতি রোধের উপায় : টিআইবি মনে করে, অপরাধীর আইনের ঊর্ধ্বে থাকার সুযোগ বন্ধ করা, প্রাতিষ্ঠানিক নীতিকাঠামো শক্তিশালী করা, দুদককে কার্যকর করা, তথ্য অধিকার আইনের বাস্তবায়ন, সরকারি ক্রয়ে স্বচ্ছতা, রাজনৈতিক প্রভাবের উর্ধ্বে পেশাগত উৎকর্ষ নিশ্চিত করলে দুর্নীতি কমানো যেতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন টিআইবি ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য এম হাফিজউদ্দিন খান।
গতকাল বুধবার রাজধানীর মহাখালীতে ব্র্যাক সেন্টার ইনে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) সংবাদ সম্মেলন করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) তৈরি করা দুর্নীতির ধারণাসূচক গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গতবার ১৮৩টি দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশ ছিল ১৩তম। ওপরের দিক থেকে এ অবস্থান ছিল ১২০তম। এবার ১৭৬টি দেশের মধ্যে সেই অবস্থান ২৪ ধাপ নেমে ১৪৪-এ ঠেকেছে। তবে সর্বোচ্চ দুর্নীতির তালিকায় থাকা ১৩তম অবস্থানের কোনো হেরফের হয়নি। এতে প্রতীয়মান হয়, অবস্থানগত পরিবর্তন না হলেও দেশে দুর্নীতির মাত্রা বেড়েছে। এই চিত্র উদ্বেগজনক।
অনুষ্ঠানে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, '২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত সময়ের প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক খাতের বিভিন্ন বিষয় বিশ্লেষণ করে জার্মানির বার্লিনভিত্তিক সংস্থা টিআই প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে। এই জরিপ টিআইবির নয়। আমরা গবেষণা প্রতিবেদনটি বিশ্বের অন্য দেশগুলোর সঙ্গে একযোগে প্রকাশ করছি মাত্র।'
ইফতেখারুজ্জামান জানান, বিগত নির্বাচনের আগে দুটি রাজনৈতিক দলই দুর্নীতি প্রতিরোধের অঙ্গীকার করেছিল। সেই অঙ্গীকার তারা ধরে রাখতে পারেনি। দুর্নীতি রোধে আইন করে সংসদ বর্জন বন্ধ করতে হবে। সংসদীয় স্থায়ী কমিটিগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে। গোপনীয়তার সংস্কৃতি থেকে মুক্ত সংস্কৃতির দিকে যেতে হবে।
টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, দুর্নীতি, অনিয়ম, অবিচার থাকলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশের কৃষক-শ্রমিক ও দরিদ্র জনগণ। যেকোনো দায়িত্বশীল নাগরিকের কর্তব্য হচ্ছে দুর্নীতি প্রতিরোধে সরকারকে সহযোগিতা করা।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রকাশিত বিভিন্ন সংবাদ পর্যালোচনা ও গবেষণা করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, লন্ডন স্কুল অব ইকনোমিক্স, ইউরোপিয়ান কমিশন জয়েন্ট রিসার্চ সেন্টার, হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলসহ মোট সাতটি প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞরা প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন। এবার দুর্নীতির ক্ষেত্রে ১০-এর পরিবর্তে ১০০কে স্কোর হিসেবে মূল্যায়ন করা হয়েছে। তবে ১০০ স্কোর কোনো দেশই পায়নি। এতে বোঝা যায়, কোনো দেশই দুর্নীতির ঊর্ধ্বে নয়।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ ফিনল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড ও ডেনমার্কের প্রত্যেকের স্কোর ৯০। এ ছাড়া ৮৮ স্কোর পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে সুইডেন এবং ৮৭ স্কোর পেয়ে তৃতীয় অবস্থানে আছে সিঙ্গাপুর। আর সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ তিনটির স্কোর ৮ করে। এর পরে ১৩ স্কোর পেয়ে সুদান দ্বিতীয় ও ১৫ পেয়ে মিয়ানমার তৃতীয় সর্বোচ্চ দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে।
বাংলাদেশের সঙ্গে সমান স্কোর পেয়ে একই অবস্থানে আছে ক্যামেরুন, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, কঙ্গো রিপাবলিক, সিরিয়া ও ইউক্রেইন। বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এবার দুর্নীতির মাত্রা কমেছে। গত বছর দেশটির অবস্থান ছিল ১২০তম। এবার তাদের অবস্থান ৯৪। পাকিস্তানের অবস্থান ১৩৪ থেকে বেড়ে ১৩৯তম হয়েছে। জার্মানি, বেলজিয়াম, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া, স্পেন ও ইতালির স্কোর ৮০-এর কম। প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ ১২৪টি দেশের স্কোর ৫০-এর নিচে।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর ক্ষেত্রে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় আছে আফগানিস্তান (স্কোর ৮)। পর্যায়ক্রমে আছে বাংলাদেশ (২৬), নেপাল (২৭), পাকিস্তান (২৭), ভারত (৩৬), শ্রীলঙ্কা (৪০) ও ভুটান (৬৩)। একমাত্র ভুটান ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার কোনো দেশই দুর্নীতি রোধের বিবেচনায় ভালো অবস্থানে নেই।
বাংলাদেশে দুর্নীতি না কমার কারণ : টিআইবি মনে করে, বাংলাদেশে দুর্নীতি একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে আছে। চলতি বছরেই পদ্মা সেতু, হলমার্ক ও ডেসটিনির মতো বড় বড় দুর্নীতির ঘটনা ঘটেছে। ক্ষমতাবানরা নির্বিচারে জমি-নদী-জলাশয় দখল করেছেন। জনপ্রতিনিধিরা তাঁদের সম্পদের হিসাব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা করেননি। দুর্নীতি দমন কমিশনের কার্যকারিতা কমানো হয়েছে। এ ছাড়া রাজনৈতিক বিবেচনায় মামলা প্রত্যাহার, বয়কট ও স্বার্থের দ্বন্দ্বে জর্জরিত সংসদ, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর রাজনীতিকীকরণ, কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা ও দুর্বলতর সরকারি ক্রয় নীতিমালা থাকায় দুর্নীতি আশানুরূপভাবে কমছে না।
দুর্নীতি রোধের উপায় : টিআইবি মনে করে, অপরাধীর আইনের ঊর্ধ্বে থাকার সুযোগ বন্ধ করা, প্রাতিষ্ঠানিক নীতিকাঠামো শক্তিশালী করা, দুদককে কার্যকর করা, তথ্য অধিকার আইনের বাস্তবায়ন, সরকারি ক্রয়ে স্বচ্ছতা, রাজনৈতিক প্রভাবের উর্ধ্বে পেশাগত উৎকর্ষ নিশ্চিত করলে দুর্নীতি কমানো যেতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন টিআইবি ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য এম হাফিজউদ্দিন খান।
No comments