প্রতিক্রিয়া : পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতি-দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি অপরিহার্য by লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান
শেষ পর্যন্ত পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের আভাস পেয়েছে দুদক। বিশ্বব্যাংকের অভিমতের সঙ্গে একতম পোষণ করেছে তারা। পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের আভাস পাওয়ার পর সরকারের করণীয় কী হতে পারে সে বিষয়ে কালের কণ্ঠের সঙ্গে কথা বলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক সেনাপ্রধান লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান।
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী কাজী ফিরোজ রশীদমহাজোট সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল দুর্নীতির মূলোৎপাটন। কিন্তু সরকারের চার বছরে আমরা কী দেখতে পাচ্ছি। ঠিক এই সময়ে আমাদের অভিজ্ঞতা হচ্ছে, এ সরকারের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি ঢুকে গেছে। সর্বক্ষেত্রে দুর্নীতি হচ্ছে। সরকার স্বজনপ্রীতিতে রেকর্ড করে ফেলেছে। গত চার বছরে দুর্নীতি বিস্তার লাভ করেছে। প্রশাসন নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। গুড গভর্নেন্স বলতে আমরা যা বুঝি, তা সরকার নিশ্চিত করতে পারেনি। সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়নি। অথচ সুশাসনই একটা দেশকে উন্নতির চরম শিখরে নিয়ে যেতে পারে। আজ জাতি হিসেবে, দেশ হিসেবে সামনের দিকে যেতে পারছি না। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, দেশের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। দেশের শেয়ারবাজার দুর্নীতিবাজদের হাতে। ডেসটিনি, হলমার্ক কেলেঙ্কারির মতো ঘটনা ঘটেছে। অনেক অপকর্ম চাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে দুর্নীতির কারণে। পদ্মা সেতু প্রকল্পের মতো একটি স্বপ্ন বাস্তবের মুখই দেখল না শুধু এই দুর্নীতির কারণে। সরকারের মন্ত্রী-উপদেষ্টা-সচিবসহ শীর্ষ ব্যক্তিদের নাম শোনা যাচ্ছে।
পদ্মা সেতু বর্তমান সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার। তার চেয়েও বেশি- এই সেতুটি হচ্ছে একটা স্বপ্নের সেতু। জনগণের স্বপ্নপূরণের দায়িত্ব সরকারের। স্বপ্নপূরণের পথে যাত্রা শুরুও হয়েছিল। দাতা সংস্থাগুলো এগিয়ে এসেছিল। আমাদের প্রস্তুতি নিতান্তই কম ছিল- এমন কথা বলা যাবে না। কিন্তু সেই সেতু নির্মাণ প্রকল্প থেমে গেল। প্রশ্নবিদ্ধ হলো। শুরুতেই দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন বন্ধ করে দেয়। তখন সরকারের পক্ষ থেকে নানা কথা বলা হয়েছে। নিজেদের দুর্নীতির তদন্ত শুরু না করে উল্টো বিশ্বব্যাংকের সমালোচনা করা হয়েছে। প্রশ্ন তোলা হয়েছে। কিন্তু বিশ্বব্যাংক তথ্য-উপাত্ত সরবরাহ করার পর পরিস্থিতি পাল্টে যায়। প্রশ্ন হচ্ছে, সরকারের শীর্ষব্যক্তিরা কার স্বার্থে দুর্নীতির অভিযোগ এড়িয়ে যেতে চেয়েছিলেন? আজ যে দুদক দুর্নীতির গন্ধ পাচ্ছে, ষড়যন্ত্রের আভাস পাচ্ছে, কিছুদিন আগেও তো এই সংস্থাটি কিছু খুঁজে পায়নি। আজ (বুধবার) দুদক ও বিশ্বব্যাংকের বৈঠকের পর পদ্মা সেতুর ভাগ্য নির্ধারণ হবে। তবে এর আগে দেশের ভাবমূর্তি যতটুকু নষ্ট করার তা করা হয়ে গেছে। আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের কপালে কলঙ্কতিলক এঁকে দিয়েছে পদ্মা সেতু প্রকল্প। কথায় বলে- মাছের পচন ধরে মাথা থেকে, পানি সব সময় নিচের দিকে গড়ায়। দুর্নীতিও ঠিক তা-ই। বাংলাদেশেও দুর্নীতি শীর্ষ পর্যায় থেকেই শুরু হয়। নিচের দিকে নামতে থাকে।
দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেছেন, 'ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে বিশ্বব্যাংকের অভিমতের সঙ্গে আমরা একমত হয়েছি। আমরাও ষড়যন্ত্রের প্রমাণ পেয়েছি। দ্রুতই এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।' দুদকের আইন উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট আনিসুল হক জানিয়েছেন, দেশের আইন অনুযায়ী দুর্নীতির ষড়যন্ত্রও ফৌজদারি অপরাধ। প্রতিবেদনে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়েছে। তা ছাড়া অনুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদনে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের জন্য মামলার সুপারিশ করা হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি অ্যালেন গোল্ডস্টেইন বলেছেন, 'পদ্মা সেতু দুর্নীতির বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসতে পারিনি। আমরা এখনো আলোচনার মধ্যে আছি। আমি মনে করি, তদন্তের ক্ষেত্রে কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে।'
বিশ্বব্যাংক একটি আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা। এই সংস্থার অনুদানের ওপর দেশের উন্নয়ন অনেকাংশেই নির্ভর করে। বিশেষ করে দেশের অনেক প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থার অর্থায়ন রয়েছে। বিশ্বব্যাংক হঠাৎ করে কোনো প্রকল্পে অর্থায়ন বন্ধ করে দিলে তার প্রভাব অন্য দাতা সংস্থার ওপরও পড়ে। তাতে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। কাজেই বিশ্বব্যাংক যে অভিযোগ তুলেছে, তার যথাযথ তদন্ত হতে হবে। দেশের উন্নয়নের স্বার্থে দুর্নীতিকে জয়ী হতে দেওয়া যাবে না।
এর আগে বাংলাদেশ পাঁচ বছর দুর্নীতিতে শীর্ষে ছিল। সে অবস্থায় আর আমরা ফিরে যেতে চাই না। যদিও গত বছরের মতো এবারও জার্মানির বার্লিনভিত্তিক দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) দুর্নীতির ধারণাসূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩তম। আমরা এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে চাই।
বিজয়ের মাসে আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হতে চাই। দেশের মানুষের এই চাওয়ার প্রতি সম্মান জানিয়ে সরকার নিশ্চয়ই পদ্মা সেতু প্রকল্পের দুর্নীতিবাজদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থাই গ্রহণ করবে।
পদ্মা সেতু বর্তমান সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার। তার চেয়েও বেশি- এই সেতুটি হচ্ছে একটা স্বপ্নের সেতু। জনগণের স্বপ্নপূরণের দায়িত্ব সরকারের। স্বপ্নপূরণের পথে যাত্রা শুরুও হয়েছিল। দাতা সংস্থাগুলো এগিয়ে এসেছিল। আমাদের প্রস্তুতি নিতান্তই কম ছিল- এমন কথা বলা যাবে না। কিন্তু সেই সেতু নির্মাণ প্রকল্প থেমে গেল। প্রশ্নবিদ্ধ হলো। শুরুতেই দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন বন্ধ করে দেয়। তখন সরকারের পক্ষ থেকে নানা কথা বলা হয়েছে। নিজেদের দুর্নীতির তদন্ত শুরু না করে উল্টো বিশ্বব্যাংকের সমালোচনা করা হয়েছে। প্রশ্ন তোলা হয়েছে। কিন্তু বিশ্বব্যাংক তথ্য-উপাত্ত সরবরাহ করার পর পরিস্থিতি পাল্টে যায়। প্রশ্ন হচ্ছে, সরকারের শীর্ষব্যক্তিরা কার স্বার্থে দুর্নীতির অভিযোগ এড়িয়ে যেতে চেয়েছিলেন? আজ যে দুদক দুর্নীতির গন্ধ পাচ্ছে, ষড়যন্ত্রের আভাস পাচ্ছে, কিছুদিন আগেও তো এই সংস্থাটি কিছু খুঁজে পায়নি। আজ (বুধবার) দুদক ও বিশ্বব্যাংকের বৈঠকের পর পদ্মা সেতুর ভাগ্য নির্ধারণ হবে। তবে এর আগে দেশের ভাবমূর্তি যতটুকু নষ্ট করার তা করা হয়ে গেছে। আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের কপালে কলঙ্কতিলক এঁকে দিয়েছে পদ্মা সেতু প্রকল্প। কথায় বলে- মাছের পচন ধরে মাথা থেকে, পানি সব সময় নিচের দিকে গড়ায়। দুর্নীতিও ঠিক তা-ই। বাংলাদেশেও দুর্নীতি শীর্ষ পর্যায় থেকেই শুরু হয়। নিচের দিকে নামতে থাকে।
দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেছেন, 'ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে বিশ্বব্যাংকের অভিমতের সঙ্গে আমরা একমত হয়েছি। আমরাও ষড়যন্ত্রের প্রমাণ পেয়েছি। দ্রুতই এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।' দুদকের আইন উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট আনিসুল হক জানিয়েছেন, দেশের আইন অনুযায়ী দুর্নীতির ষড়যন্ত্রও ফৌজদারি অপরাধ। প্রতিবেদনে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়েছে। তা ছাড়া অনুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদনে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের জন্য মামলার সুপারিশ করা হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি অ্যালেন গোল্ডস্টেইন বলেছেন, 'পদ্মা সেতু দুর্নীতির বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসতে পারিনি। আমরা এখনো আলোচনার মধ্যে আছি। আমি মনে করি, তদন্তের ক্ষেত্রে কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে।'
বিশ্বব্যাংক একটি আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা। এই সংস্থার অনুদানের ওপর দেশের উন্নয়ন অনেকাংশেই নির্ভর করে। বিশেষ করে দেশের অনেক প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থার অর্থায়ন রয়েছে। বিশ্বব্যাংক হঠাৎ করে কোনো প্রকল্পে অর্থায়ন বন্ধ করে দিলে তার প্রভাব অন্য দাতা সংস্থার ওপরও পড়ে। তাতে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। কাজেই বিশ্বব্যাংক যে অভিযোগ তুলেছে, তার যথাযথ তদন্ত হতে হবে। দেশের উন্নয়নের স্বার্থে দুর্নীতিকে জয়ী হতে দেওয়া যাবে না।
এর আগে বাংলাদেশ পাঁচ বছর দুর্নীতিতে শীর্ষে ছিল। সে অবস্থায় আর আমরা ফিরে যেতে চাই না। যদিও গত বছরের মতো এবারও জার্মানির বার্লিনভিত্তিক দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) দুর্নীতির ধারণাসূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩তম। আমরা এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে চাই।
বিজয়ের মাসে আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হতে চাই। দেশের মানুষের এই চাওয়ার প্রতি সম্মান জানিয়ে সরকার নিশ্চয়ই পদ্মা সেতু প্রকল্পের দুর্নীতিবাজদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থাই গ্রহণ করবে।
No comments