দুদক নিরপেক্ষ নয় by কাজী ফিরোজ রশীদ
আজ যখন পদ্মা সেতু প্রকল্পের দুর্নীতি নিয়ে কথা বলছি, তখনই খবর পাওয়া গেল জার্মানির বার্লিনভিত্তিক দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) দুর্নীতির ধারণাসূচকে চলতি বছর বাংলাদেশের অবস্থান ১৩তম। গতবারও একই অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ।
অর্থাৎ দুর্নীতির ধারণাসূচকে বাংলাদেশের অবস্থান অপরিবর্তিত। যেমন অপরিবর্তিত পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে বিশ্বব্যাংকের মনোভাব। অবশ্য আজ (মঙ্গলবার) একটি বৈঠক রয়েছে।
পদ্মা সেতু প্রকল্পটি নিয়ে আলোচনা কম হয়নি। একদিকে এই সেতুটি মহাজোট তথা আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ছিল। অর্থাৎ সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার এটি। অন্যদিকে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পদ্মা সেতু। সেদিক দিয়ে বিবেচনা করলে বলতে হবে, দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের স্বপ্ন পূরণ হয়নি। পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ এনে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন বন্ধ করে দেওয়ার পর সরকারের পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা যায়। বিশ্বব্যাংকের সন্দেহের তীর ছিল সরাসরি সরকারের এক মন্ত্রীর দিকে। তাঁকে পরে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। মামলাও হচ্ছে দুর্নীতির।
আমদের মতো দরিদ্র কিন্তু উন্নয়নশীল দেশে এসব ব্যাপার একটু সাবধানে, সতর্কতার সঙ্গে হ্যান্ডেল করতে হতো। সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত ছিল। এখন যে দুদক বলছে, দুর্নীতির আভাস পাওয়া গেছে, এই দুদক শুরুতে সম্পূর্ণ উল্টো পথে হেঁটেছে। এমনকি সরকারের পক্ষ থেকেও একই ধরনের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়। এখন বিশ্বব্যাংকের চাপের মুখে সরকারকে নিজের অবস্থান থেকে সরে আসতে হয়েছে। দুদকও এখন পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছে। দুদকের মূল তদন্ত প্রতিবেদনে ১০ জনকে দায়ী করা হয়েছে। ৮৬ পৃষ্ঠার একটি খসড়া প্রতিবেদনও জমা দিয়েছেন দুদকের তদন্তকারী কর্মকর্তারা। এই প্রতিবেদনে পদ্মা সেতু প্রকল্পের জন্য পরামর্শক সংস্থা নিয়োগকে কেন্দ্র করে দুর্নীতির অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, মন্ত্রী-সচিবসহ সরকারি কর্মকর্তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির উদ্যোগ গ্রহণের অভিযোগ আনা হয়েছে। দায়ী ১০ জনের বিরুদ্ধেই মামলা করার সুপারিশ করা হয়েছে। দুদক ১৫ জনের বিরুদ্ধে আরো অনুসন্ধানের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ওই তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'এসএনসি-লাভালিনকে কাজ পাইয়ে দিতেই বারবার দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি পরিবর্তন করা হয়েছে। আর এই কাজ পেতে ১০ শতাংশ ঘুষ লেনদেনেরও আলোচনা হয়েছিল।'
পদ্মা সেতু প্রকল্পের জন্য পরামর্শক সংস্থা এসএনসি-লাভালিনকে প্রথম হিসেবে নির্বাচনের পর কার্যাদেশ দিতে কাজের ১০ শতাংশ ঘুষ লেনদেনের আলোচনা, সে অনুযায়ী ষড়যন্ত্র করে দরপত্র অংশগ্রহণকারী অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে পেছনে রাখতে বারবার দরপত্র কমিটি পরিবর্তন ও পরামর্শক সংস্থা নিয়োগের কাজটি চূড়ান্ত করতে এক বছর ১০ মাস সময়ক্ষেপণের বিষয়টিই দুদক সন্দেহজনক ও দুর্নীতির ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে।
আমাদের দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী, দুর্নীতি যেমন শাস্তিযোগ্য অপরাধ, তেমনি দুর্নীতির জন্য ষড়যন্ত্র অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। পদ্মা সেতু নিয়ে আর্থিক দুর্নীতি হয়তো হয়নি, কিন্তু আর্থিক দুর্নীতির ষড়যন্ত্র হয়েছে। এতে বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। আবার সরকারের পক্ষ থেকে সেই দুর্নীতি চেপে যাওয়া হয়েছে। কাদের বা কার স্বার্থে এমন করা হলো, এটা এখন একটা বড় প্রশ্ন। হাতেগোনা গুটিকয়েক লোকের স্বার্থ দেখতে গিয়ে সরকার কি দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিতে পারে? আমরা শেয়ারবাজারের ক্ষেত্রেও একই ধরনের বিষয় লক্ষ করি। গুটিকয়েক লোককে রক্ষা করতে গিয়ে সরকার নিজের ভোটব্যাংকে ভাঙন ধরিয়েছে। আমার ধারণা, সরকার যাদের স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে নিজেদের ভোট হারিয়েছে, হারিয়েছে জনসমর্থন- হাতেগোনা এই গুটিকয়েক লোক নির্বাচনের আগেই দেশত্যাগ করবে। মাঝেখানে সরকার নিজেকে বিপন্ন করল।
এখন আমাদের আর পেছনে তাকানোর সময় নেই। এখন সরকারকে কঠোর হতে হবে। কঠোর হাতে দমন করতে হবে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে নিতে হবে আইনানুগ ব্যবস্থা। ভাবমূর্তি রক্ষা করতে দুদককে নতুন করে ঢেলে সাজাতে হবে। কারণ পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুদক প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। দুদক যে নিরপেক্ষ নয়, তা প্রমাণিত। কাজেই সরকারকে এখন সঠিক ব্যবস্থা নিতে হবে। দুর্নীতির জন্য যারা দায়ী, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হতে হবে।
গ্রন্থনা : আলী হাবিব
পদ্মা সেতু প্রকল্পটি নিয়ে আলোচনা কম হয়নি। একদিকে এই সেতুটি মহাজোট তথা আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ছিল। অর্থাৎ সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার এটি। অন্যদিকে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পদ্মা সেতু। সেদিক দিয়ে বিবেচনা করলে বলতে হবে, দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের স্বপ্ন পূরণ হয়নি। পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ এনে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন বন্ধ করে দেওয়ার পর সরকারের পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা যায়। বিশ্বব্যাংকের সন্দেহের তীর ছিল সরাসরি সরকারের এক মন্ত্রীর দিকে। তাঁকে পরে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। মামলাও হচ্ছে দুর্নীতির।
আমদের মতো দরিদ্র কিন্তু উন্নয়নশীল দেশে এসব ব্যাপার একটু সাবধানে, সতর্কতার সঙ্গে হ্যান্ডেল করতে হতো। সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত ছিল। এখন যে দুদক বলছে, দুর্নীতির আভাস পাওয়া গেছে, এই দুদক শুরুতে সম্পূর্ণ উল্টো পথে হেঁটেছে। এমনকি সরকারের পক্ষ থেকেও একই ধরনের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়। এখন বিশ্বব্যাংকের চাপের মুখে সরকারকে নিজের অবস্থান থেকে সরে আসতে হয়েছে। দুদকও এখন পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছে। দুদকের মূল তদন্ত প্রতিবেদনে ১০ জনকে দায়ী করা হয়েছে। ৮৬ পৃষ্ঠার একটি খসড়া প্রতিবেদনও জমা দিয়েছেন দুদকের তদন্তকারী কর্মকর্তারা। এই প্রতিবেদনে পদ্মা সেতু প্রকল্পের জন্য পরামর্শক সংস্থা নিয়োগকে কেন্দ্র করে দুর্নীতির অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, মন্ত্রী-সচিবসহ সরকারি কর্মকর্তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির উদ্যোগ গ্রহণের অভিযোগ আনা হয়েছে। দায়ী ১০ জনের বিরুদ্ধেই মামলা করার সুপারিশ করা হয়েছে। দুদক ১৫ জনের বিরুদ্ধে আরো অনুসন্ধানের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ওই তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'এসএনসি-লাভালিনকে কাজ পাইয়ে দিতেই বারবার দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি পরিবর্তন করা হয়েছে। আর এই কাজ পেতে ১০ শতাংশ ঘুষ লেনদেনেরও আলোচনা হয়েছিল।'
পদ্মা সেতু প্রকল্পের জন্য পরামর্শক সংস্থা এসএনসি-লাভালিনকে প্রথম হিসেবে নির্বাচনের পর কার্যাদেশ দিতে কাজের ১০ শতাংশ ঘুষ লেনদেনের আলোচনা, সে অনুযায়ী ষড়যন্ত্র করে দরপত্র অংশগ্রহণকারী অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে পেছনে রাখতে বারবার দরপত্র কমিটি পরিবর্তন ও পরামর্শক সংস্থা নিয়োগের কাজটি চূড়ান্ত করতে এক বছর ১০ মাস সময়ক্ষেপণের বিষয়টিই দুদক সন্দেহজনক ও দুর্নীতির ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে।
আমাদের দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী, দুর্নীতি যেমন শাস্তিযোগ্য অপরাধ, তেমনি দুর্নীতির জন্য ষড়যন্ত্র অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। পদ্মা সেতু নিয়ে আর্থিক দুর্নীতি হয়তো হয়নি, কিন্তু আর্থিক দুর্নীতির ষড়যন্ত্র হয়েছে। এতে বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। আবার সরকারের পক্ষ থেকে সেই দুর্নীতি চেপে যাওয়া হয়েছে। কাদের বা কার স্বার্থে এমন করা হলো, এটা এখন একটা বড় প্রশ্ন। হাতেগোনা গুটিকয়েক লোকের স্বার্থ দেখতে গিয়ে সরকার কি দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিতে পারে? আমরা শেয়ারবাজারের ক্ষেত্রেও একই ধরনের বিষয় লক্ষ করি। গুটিকয়েক লোককে রক্ষা করতে গিয়ে সরকার নিজের ভোটব্যাংকে ভাঙন ধরিয়েছে। আমার ধারণা, সরকার যাদের স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে নিজেদের ভোট হারিয়েছে, হারিয়েছে জনসমর্থন- হাতেগোনা এই গুটিকয়েক লোক নির্বাচনের আগেই দেশত্যাগ করবে। মাঝেখানে সরকার নিজেকে বিপন্ন করল।
এখন আমাদের আর পেছনে তাকানোর সময় নেই। এখন সরকারকে কঠোর হতে হবে। কঠোর হাতে দমন করতে হবে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে নিতে হবে আইনানুগ ব্যবস্থা। ভাবমূর্তি রক্ষা করতে দুদককে নতুন করে ঢেলে সাজাতে হবে। কারণ পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুদক প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। দুদক যে নিরপেক্ষ নয়, তা প্রমাণিত। কাজেই সরকারকে এখন সঠিক ব্যবস্থা নিতে হবে। দুর্নীতির জন্য যারা দায়ী, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হতে হবে।
গ্রন্থনা : আলী হাবিব
No comments