চট্টগ্রামে ৩৫ শতাংশ কারখানার অগ্নিনির্বাপণ-ব্যবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ! by প্রণব বল
চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের হোসেন কোর্ট ভবনের চতুর্থ তলায় পোশাক কারখানা সান ফ্যাশন ওয়্যার লিমিটেডের অবস্থান। একই ভবনের ষষ্ঠ তলায় রয়েছে এটিডি গার্মেন্টস নামের আরেকটি কারখানা। এই ভবনের মূল সিঁড়ি প্রশস্ত।
কিন্তু সিঁড়ির চতুর্থ তলার মুখে কার্টন রেখে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে রাখা হয়েছে।
হোসেন কোর্ট ভবনের দুটি পোশাক কারখানার জন্য বিকল্প বা জরুরি নির্গমন সিঁড়ি আছে। এই সিঁড়ি লোহার অ্যাঙ্গেল দিয়ে তৈরি, যা আড়াই ফুট প্রশস্ত ও খাড়া। স্বাভাবিক সময়েও এই সিঁড়ি দিয়ে নামতে গেলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। এই অবস্থায় ওই ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে সেখানে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
গত মঙ্গলবার সরেজমিনে এই চিত্র দেখা গেছে। নগরের অন্যান্য এলাকায় গিয়েও একই ধরনের চিত্র দেখা গেছে। বিভিন্ন বহুতল ভবনে গড়ে ওঠা এসব কারখানার কোনোটির সিঁড়ি অপ্রশস্ত, কোনোটির বিকল্প সিঁড়ি লোহার অ্যাঙ্গেল দিয়ে তৈরি, আবার কোনোটিতে অগ্নিনির্বাপণের সামগ্রী পর্যাপ্ত নেই।
এদিকে, ফায়ার সার্ভিস চট্টগ্রামের পোশাক কারখানায় অগ্নিনির্বাপণ-ব্যবস্থার চিত্র দেখতে জরিপকাজ শুরু করেছে। মাসব্যাপী এই জরিপ চলবে। গতকাল বুধবার পর্যন্ত ৭৮টি কারখানার ওপর জরিপ শেষ হয়েছে। যার মধ্যে ৩৫ শতাংশ কারখানায় অগ্নিনির্বাপণ-ব্যবস্থার শর্তাবলি মানা হয় না। তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর হিসাবে, চট্টগ্রামের প্রায় ১৫০টি কারখানায় অগ্নিনির্বাপণ-ব্যবস্থা নাজুক কিংবা কর্ম উপযোগী পরিবেশের শর্ত মানা হচ্ছে না।
সূত্র জানায়, ২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রামের কেটিএস টেক্সটাইলে অগ্নিকাণ্ডে ৬৪ জনের মৃত্যুর পর গঠিত তদন্ত কমিটি প্রশস্ত সিঁড়ি ও অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র রাখাসহ ৩০ দফা সুপারিশ করেছিল। কিন্তু ছয় বছরেও চট্টগ্রামের এসব পোশাক কারখানা বেশির ভাগ সুপারিশ বাস্তবায়ন করেনি। ফলে অগ্নিকাণ্ডের সময় হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটে।
সর্বশেষ গত ২৮ নভেম্বর ইপিজেডের ‘সেকশন-৭’ নামের একটি পোশাক কারখানায় আগুন-আতঙ্কে হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে ৪৫ জন শ্রমিক আহত হন। ওই কারখানার সিঁড়ি প্রশস্ত থাকলেও অগ্নিনির্বাপণ মহড়ার অভাব রয়েছে বলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের ধারণা।
সরেজমিনে দেখা যায়, চট্টগ্রাম নগরের বাদামতলীর জাহান ভবনে তিনটি কারখানা রয়েছে। সব মিলিয়ে কারখানাগুলোতে শ্রমিকের সংখ্যা এক হাজার ২০০ জন। এই তিন কারখানার মূল সিঁড়ি প্রশস্ত। তিন কারখানার শ্রমিকদের জন্য জরুরি নির্গমন সিঁড়িটি লোহার অ্যাঙ্গেল দিয়ে নির্মিত। ভবনটির দ্বিতীয় তলায় মাস ফ্যাশন লিমিটেড, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় ম্যাক্সিম অ্যাপারেলস এবং ষষ্ঠ তলায় ইফা অ্যাপারেলস নামের পোশাক কারখানা রয়েছে।
মাস ফ্যাশনের গুদাম সংরক্ষক মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আমাদের জরুরি নির্গমন সিঁড়ি ঠিক আছে। ভবনে অপর যে দুটি কারখানা রয়েছে, তারা বাইরের লোহার সিঁড়িটি ব্যবহার করে।’
ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক সুবাস চন্দ্র দেবনাথ ও মো. জসিম উদ্দিন মাঠপর্যায়ে কারখানা পরিদর্শনের কাজ তদারকি করছেন।
সুবাস চন্দ্র দেবনাথ বলেন, ‘আমরা গত তিন দিনে বিভিন্ন কারখানা পরিদর্শন করে দেখেছি, কারখানাগুলো অগ্নিনির্বাপণ-ব্যবস্থার শর্ত শতভাগ মানছে না। কোনোটির সিঁড়ি অপ্রশস্ত, কোনোটির জরুরি নির্গমন সিঁড়ি নেই, কোনোটিতে পানি নেই। ৩৫ শতাংশ এ রকম কারখানা পাওয়া গেছে।’
তবে বিজিএমইএ পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেক ভালো বলে দাবি করেছে। বিজিএমইএর হিসাবে, চট্টগ্রামে ৭৮৬টি কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে ৫৫০টি চালু রয়েছে। চালু কারখানার মধ্যে প্রায় ১৮০ থেকে ২০০টির অগ্নিনির্বাপণ-ব্যবস্থা নাজুক।
জানতে চাইলে বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি মো. নাসির উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের পোশাকশিল্প পরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠেনি। অনেকে ভাড়া ভবনে আগে থেকে কাজ করে যাচ্ছে। তাদের বেশির ভাগই উপচুক্তিতে (সাব-কন্ট্রাক্ট) কাজ করে। এখন যদি ফায়ার সার্ভিস থেকে বলা হয়, এক মাসের মধ্যে অগ্নিনির্বাপণ-ব্যবস্থা ঠিক করতে হবে, তাহলে শতাধিক কারখানা বন্ধ করে দিতে হবে। কারণ, এসব কারখানার নতুন কোনো জায়গায় গিয়ে কর্ম উপযোগী পরিবেশের শর্ত মেনে অবকাঠামো নির্মাণ করার সামর্থ্য নেই।’
সুপারিশ বাস্তবায়িত হয়নি: ২০০৬ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি কালুরঘাটের কেটিএস টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামের পোশাক কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন অতিরিক্ত সচিব সিরাজুল ইসলামকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এ ছাড়া বিজিএমইএ পৃথক আরেকটি কমিটি গঠন করেছিল।
পরে মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে ৩০ দফা সুপারিশ করা হয়। সুপারিশে কারখানায় দুই বা ততোধিক প্রশস্ত সিঁড়ি থাকার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু অনেক কারখানা এই সুপারিশ বাস্তবায়ন করেনি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির সদস্য বিজিএমইএর তৎকালীন পরিচালক মো. এরশাদউল্লাহ বলেন, ‘আমরা বেশ কিছু সুপারিশ করেছিলাম। এর কিছু কিছু বাস্তবায়িত হয়েছে। আবার অনেকগুলো বাস্তবায়িত হয়নি।’
হোসেন কোর্ট ভবনের দুটি পোশাক কারখানার জন্য বিকল্প বা জরুরি নির্গমন সিঁড়ি আছে। এই সিঁড়ি লোহার অ্যাঙ্গেল দিয়ে তৈরি, যা আড়াই ফুট প্রশস্ত ও খাড়া। স্বাভাবিক সময়েও এই সিঁড়ি দিয়ে নামতে গেলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। এই অবস্থায় ওই ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে সেখানে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
গত মঙ্গলবার সরেজমিনে এই চিত্র দেখা গেছে। নগরের অন্যান্য এলাকায় গিয়েও একই ধরনের চিত্র দেখা গেছে। বিভিন্ন বহুতল ভবনে গড়ে ওঠা এসব কারখানার কোনোটির সিঁড়ি অপ্রশস্ত, কোনোটির বিকল্প সিঁড়ি লোহার অ্যাঙ্গেল দিয়ে তৈরি, আবার কোনোটিতে অগ্নিনির্বাপণের সামগ্রী পর্যাপ্ত নেই।
এদিকে, ফায়ার সার্ভিস চট্টগ্রামের পোশাক কারখানায় অগ্নিনির্বাপণ-ব্যবস্থার চিত্র দেখতে জরিপকাজ শুরু করেছে। মাসব্যাপী এই জরিপ চলবে। গতকাল বুধবার পর্যন্ত ৭৮টি কারখানার ওপর জরিপ শেষ হয়েছে। যার মধ্যে ৩৫ শতাংশ কারখানায় অগ্নিনির্বাপণ-ব্যবস্থার শর্তাবলি মানা হয় না। তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর হিসাবে, চট্টগ্রামের প্রায় ১৫০টি কারখানায় অগ্নিনির্বাপণ-ব্যবস্থা নাজুক কিংবা কর্ম উপযোগী পরিবেশের শর্ত মানা হচ্ছে না।
সূত্র জানায়, ২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রামের কেটিএস টেক্সটাইলে অগ্নিকাণ্ডে ৬৪ জনের মৃত্যুর পর গঠিত তদন্ত কমিটি প্রশস্ত সিঁড়ি ও অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র রাখাসহ ৩০ দফা সুপারিশ করেছিল। কিন্তু ছয় বছরেও চট্টগ্রামের এসব পোশাক কারখানা বেশির ভাগ সুপারিশ বাস্তবায়ন করেনি। ফলে অগ্নিকাণ্ডের সময় হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটে।
সর্বশেষ গত ২৮ নভেম্বর ইপিজেডের ‘সেকশন-৭’ নামের একটি পোশাক কারখানায় আগুন-আতঙ্কে হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে ৪৫ জন শ্রমিক আহত হন। ওই কারখানার সিঁড়ি প্রশস্ত থাকলেও অগ্নিনির্বাপণ মহড়ার অভাব রয়েছে বলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের ধারণা।
সরেজমিনে দেখা যায়, চট্টগ্রাম নগরের বাদামতলীর জাহান ভবনে তিনটি কারখানা রয়েছে। সব মিলিয়ে কারখানাগুলোতে শ্রমিকের সংখ্যা এক হাজার ২০০ জন। এই তিন কারখানার মূল সিঁড়ি প্রশস্ত। তিন কারখানার শ্রমিকদের জন্য জরুরি নির্গমন সিঁড়িটি লোহার অ্যাঙ্গেল দিয়ে নির্মিত। ভবনটির দ্বিতীয় তলায় মাস ফ্যাশন লিমিটেড, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় ম্যাক্সিম অ্যাপারেলস এবং ষষ্ঠ তলায় ইফা অ্যাপারেলস নামের পোশাক কারখানা রয়েছে।
মাস ফ্যাশনের গুদাম সংরক্ষক মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আমাদের জরুরি নির্গমন সিঁড়ি ঠিক আছে। ভবনে অপর যে দুটি কারখানা রয়েছে, তারা বাইরের লোহার সিঁড়িটি ব্যবহার করে।’
ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক সুবাস চন্দ্র দেবনাথ ও মো. জসিম উদ্দিন মাঠপর্যায়ে কারখানা পরিদর্শনের কাজ তদারকি করছেন।
সুবাস চন্দ্র দেবনাথ বলেন, ‘আমরা গত তিন দিনে বিভিন্ন কারখানা পরিদর্শন করে দেখেছি, কারখানাগুলো অগ্নিনির্বাপণ-ব্যবস্থার শর্ত শতভাগ মানছে না। কোনোটির সিঁড়ি অপ্রশস্ত, কোনোটির জরুরি নির্গমন সিঁড়ি নেই, কোনোটিতে পানি নেই। ৩৫ শতাংশ এ রকম কারখানা পাওয়া গেছে।’
তবে বিজিএমইএ পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেক ভালো বলে দাবি করেছে। বিজিএমইএর হিসাবে, চট্টগ্রামে ৭৮৬টি কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে ৫৫০টি চালু রয়েছে। চালু কারখানার মধ্যে প্রায় ১৮০ থেকে ২০০টির অগ্নিনির্বাপণ-ব্যবস্থা নাজুক।
জানতে চাইলে বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি মো. নাসির উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের পোশাকশিল্প পরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠেনি। অনেকে ভাড়া ভবনে আগে থেকে কাজ করে যাচ্ছে। তাদের বেশির ভাগই উপচুক্তিতে (সাব-কন্ট্রাক্ট) কাজ করে। এখন যদি ফায়ার সার্ভিস থেকে বলা হয়, এক মাসের মধ্যে অগ্নিনির্বাপণ-ব্যবস্থা ঠিক করতে হবে, তাহলে শতাধিক কারখানা বন্ধ করে দিতে হবে। কারণ, এসব কারখানার নতুন কোনো জায়গায় গিয়ে কর্ম উপযোগী পরিবেশের শর্ত মেনে অবকাঠামো নির্মাণ করার সামর্থ্য নেই।’
সুপারিশ বাস্তবায়িত হয়নি: ২০০৬ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি কালুরঘাটের কেটিএস টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামের পোশাক কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন অতিরিক্ত সচিব সিরাজুল ইসলামকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এ ছাড়া বিজিএমইএ পৃথক আরেকটি কমিটি গঠন করেছিল।
পরে মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে ৩০ দফা সুপারিশ করা হয়। সুপারিশে কারখানায় দুই বা ততোধিক প্রশস্ত সিঁড়ি থাকার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু অনেক কারখানা এই সুপারিশ বাস্তবায়ন করেনি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির সদস্য বিজিএমইএর তৎকালীন পরিচালক মো. এরশাদউল্লাহ বলেন, ‘আমরা বেশ কিছু সুপারিশ করেছিলাম। এর কিছু কিছু বাস্তবায়িত হয়েছে। আবার অনেকগুলো বাস্তবায়িত হয়নি।’
No comments