পরকালে আপনাদেরও বিচার হবেঃ ট্রাইব্যুনালকে সাঈদী by জাকিয়া আহমেদ
মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী তার বিরুদ্ধে আনা প্রতিটি অভিযোগই মিথ্যা বলে দাবি করে অভিযোগ করেছেন, বর্তমান সরকারের দ্বারা প্ররোচিত হয়ে পিরোজপুরের বর্তমান এমপির সঙ্গে যোগসাজশ করে এসব মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার তার বিরুদ্ধে বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার মুহূর্তে ট্রাইব্যুনালের কাছে সময় নিয়ে এ অভিযোগ করেন সাঈদী।
সাঈদী ট্রাইব্যুনালের উদ্দেশ্যে হক (ন্যায়) বিচার করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘‘আমার বিরুদ্ধে আনা একটি অভিযোগও যদি সত্য হয়, তবে আমি আল্লাহর নামে শপথ করে পাক কোরআন ছুঁয়ে বলছি, এই বিচার দুই পর্বে সম্পন্ন হবে।’’
ট্রাইব্যুনালকে উদ্দেশ্য করে সাঈদী আরো বলেন, ‘‘বিচারের প্রথম পর্বে আপনারা ওই দিকে আর আমি এই দিকে আছি। কিন্তু দ্বিতীয় পর্বে নিখিল সার্বভৌমত্বের মালিক যিনি সেই আল্লাহর বিচারের দিনে আমি হবো বাদী। আর আপনারা হবেন আসামি। আমি আশা করবো, আপনারা হক বিচার করবেন। পরম করুণাময়ের কাছে দোয়া করি, তিনি আপনাদের হেদায়েত করুন।’’
‘‘যদি আপনারা হক বিচার না করেন, আমার সন্তান, আমার প্রিয়জন, আমার ভক্ত প্রতিটি অভিশাপের চোখের পানি অগ্নিশিখা, বহ্নিশিখা হয়ে জ্বলবে।’’
আগামী যে কোনো দিন মামলার রায় ঘোষণা করা হবে বলে বৃহস্পতিবার আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান তার আদেশ দানের আগে কিছু বলার জন্য আইনজীবীর মাধ্যমে সময় চান সাঈদী। তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের কাছে সময় চাইলে ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক তাকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘আপনি কি নিশ্চিত করতে পারবেন, তিনি (সাঈদী) কাউকে কটাক্ষ করে, কাউকে হেয় প্রতিপন্ন করে কথা বলবেন না?’’
এ সময় সাঈদী আসামির কাঠগড়ায় উঠে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘‘আমি যা বলবো, সত্য কথা বলবো। কাউকে কটাক্ষ করে বা হেয় করে কথা বলবো না।’’
এর পর ট্রাইব্যুনাল সময় দিলে তিনি তার আড়াই মিনিটের বক্তব্যে সাঈদী দাবি করেন, ‘‘আমি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ৫৬ হাজার বর্গমাইলের এই বাংলাদেশের সর্বত্র একটি মাত্র নাম। অথচ তদন্ত কর্মকর্তা আমাকে কখনও দেলোয়ার হোসেন, কথনও দেলু, কখনও দেইল্যা আবার কখনও রাজাকার বলে অভিহিত করেছেন। আমার বিরুদ্ধে চুরি, ব্যাভিচার, লুটপাট ইত্যাদি অভিযোগ এনেছেন।’’
সাঈদী অভিযোগ করে বলেন, ‘‘বর্তমান সরকারের প্ররোচনায় তদন্ত কর্মকর্তা ১২-১৪ বার পিরোজপুরে গেছেন। তিনি বর্তমান এমপির (আব্দুল আওয়াল) সঙ্গে যোগসাজশ করে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনেছেন। যিনি মুসলিম, যিনি বিশ্বাস করেন, কেয়ামত আছে, আল্লাহর প্রতি যার প্রেম আছে, তিনি কোনো মুসলমানের বিরুদ্ধে এতো মিথ্যা অভিযোগ আনতে পারেন না।
বৃহস্পতিবার সকালে প্রথমার্ধে ও দুপুরে মধ্যাহ্ন বিরতির পরে দু’বেলায় যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) উপস্থাপন শেষ করেন আসামিপক্ষ। এরপর রাষ্ট্রপক্ষ সংক্ষিপ্ত আকারে পাল্টা যুক্তিতর্ক উপস্থাপনও সম্পন্ন করেন। উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে যে কোনো দিন সাঈদীর মামলার রায় দেওয়ার জন্য অপেক্ষমাণ (সিভিএ) বলে রেখে দেন চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল।
সকালে এজলাস বসার পরই সাঈদীর আইনজীবী আইনজীবী অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম সমাপনী দিনের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেন। তার যুক্তি উপস্থাপন শেষের পরই একবার সময় প্রার্থনা করেছিলেন সাঈদী। সে সময় তিনি আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বলেন, ‘‘ন্যায়বিচারের স্বার্থে আল্লাহর ওয়াস্তে আমাকে দুই থেকে আড়াই মিনিট সময় দিন।’’ তবে এ দফায় সাঈদীকে বসতে বলে রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটরকে সমাপনী যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করতে বলেন ট্রাইব্যুনাল।
ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক আদেশ দেওয়ার সময় বলেন, ‘‘আজ ৬ ডিসেম্বর। গত বছরের ৭ ডিসেম্বর এই মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছিল। ঠিক এক বছরের মাথায় সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্তিতর্ক শেষ হলো। আমি আগেও বলেছি, এখনও বলছি, আল্লাহ আমাদের যে মহান দায়িত্ব দিয়েছেন, সে দায়িত্ব আমরা সঠিকভাবে পালন করবো। আমরা সাক্ষ্য ছাড়া আর কোনো দিকে তাকাবো না। নথিপত্রের বাইরে আর কিছু দেখা হবে না। ট্রাইব্যুনালের ওপর বিশ্বাস রাখেন। আমরা কাগজপত্র, সাক্ষী, যুক্তিতর্ক ইত্যাদির ভিত্তিতে সঠিক রায় দেওয়ার চেষ্টা করবো।’’
এ আদেশের মাধ্যমে ট্রাইব্যুনাল এখন তার সুবিধামতো সময়ে যে কোনো দিন রায় ঘোষণা করবেন বলে সাংবাদিকদের জানান রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা।
রাষ্ট্রপক্ষের শেষ পাল্টা যুক্তি উপস্থাপন করেন প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী। তিনি বলেন, ‘‘আমরা আসামির বিরুদ্ধে ২০টি অভিযোগ গঠন করেছিলাম। তার মধ্যে ১৯টি সন্দেহাতীতভাবে সাক্ষ্য-প্রমাণ দিয়ে প্রমাণ করতে পেরেছি। আমরা তার সর্বোচ্চ শাস্তি কামনা করছি।’’ সমাপনী বক্তব্যে সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া সফলভাবে সম্পন্ন করতে সহযোগিতা করায় আসামিপক্ষ, প্রসিকিউশন, তদন্ত সংস্থা, আইন বিশেষজ্ঞ, সাংবাদিক ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান সৈয়দ হায়দার আলী।
উল্লেখ্য, আসামিপক্ষ মোট ১৩ কার্যদিবসে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করেছেন। এর মধ্যে সাঈদীর প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক ৪ দিন আইনি যুক্তিতর্ক এবং অপর আইনজীবী অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম ৯ দিন তথ্যগত যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। গত ১৮ নভেম্বর থেকে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেন তারা।
অন্যদিকে সাঈদীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী গত ৫ থেকে ১৫ নভেম্বর যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। ৯ কার্যদিবসে তিনি যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করেন। এরপর আসামিপক্ষের যুক্তির জবাবে গত মঙ্গলবার শুরু করে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পাল্টা যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। সব মিলিয়ে রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তিতর্ক উপস্থাপনে সময় নেন ১২ কার্যদিবস।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের লক্ষ্যে ২০১০ সালের ২৫ মার্চ গঠিত হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। গঠনের পর প্রায় পৌনে ৩ বছরের কাছাকাছি সময়ে এসে এই প্রথম কোনো অভিযুক্তের বিরুদ্ধে বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ হলো। সাঈদীর মামলার মধ্য দিয়ে প্রথম কোনো মামলার রায় ঘোষণা করতে যাচ্ছেন ট্রাইব্যুনাল। সাঈদীর মামলাটিও ট্রাইব্যুনালের ১ নম্বর মামলা। গত বছরের ২২ মার্চ গঠনের পর থেকে বিচারিক কার্যক্রম চলছে দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনালেও।
বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীর দায়ের করা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে একটি মামলায় সাঈদীকে ২০১০ সালের ২৯ জুন গ্রেফতার করা হয়। ওই বছরের ২ আগস্ট তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।
গত বছরের ১১ জুলাই সাঈদীর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন রাষ্ট্রপক্ষ। ১৪ জুলাই তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। অভিযোগের বিষয়ে শুনানি শেষে ৩ অক্টোবর সাঈদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এই মামলার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়।
ট্রাইব্যুনালকে উদ্দেশ্য করে সাঈদী আরো বলেন, ‘‘বিচারের প্রথম পর্বে আপনারা ওই দিকে আর আমি এই দিকে আছি। কিন্তু দ্বিতীয় পর্বে নিখিল সার্বভৌমত্বের মালিক যিনি সেই আল্লাহর বিচারের দিনে আমি হবো বাদী। আর আপনারা হবেন আসামি। আমি আশা করবো, আপনারা হক বিচার করবেন। পরম করুণাময়ের কাছে দোয়া করি, তিনি আপনাদের হেদায়েত করুন।’’
‘‘যদি আপনারা হক বিচার না করেন, আমার সন্তান, আমার প্রিয়জন, আমার ভক্ত প্রতিটি অভিশাপের চোখের পানি অগ্নিশিখা, বহ্নিশিখা হয়ে জ্বলবে।’’
আগামী যে কোনো দিন মামলার রায় ঘোষণা করা হবে বলে বৃহস্পতিবার আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান তার আদেশ দানের আগে কিছু বলার জন্য আইনজীবীর মাধ্যমে সময় চান সাঈদী। তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের কাছে সময় চাইলে ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক তাকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘আপনি কি নিশ্চিত করতে পারবেন, তিনি (সাঈদী) কাউকে কটাক্ষ করে, কাউকে হেয় প্রতিপন্ন করে কথা বলবেন না?’’
এ সময় সাঈদী আসামির কাঠগড়ায় উঠে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘‘আমি যা বলবো, সত্য কথা বলবো। কাউকে কটাক্ষ করে বা হেয় করে কথা বলবো না।’’
এর পর ট্রাইব্যুনাল সময় দিলে তিনি তার আড়াই মিনিটের বক্তব্যে সাঈদী দাবি করেন, ‘‘আমি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ৫৬ হাজার বর্গমাইলের এই বাংলাদেশের সর্বত্র একটি মাত্র নাম। অথচ তদন্ত কর্মকর্তা আমাকে কখনও দেলোয়ার হোসেন, কথনও দেলু, কখনও দেইল্যা আবার কখনও রাজাকার বলে অভিহিত করেছেন। আমার বিরুদ্ধে চুরি, ব্যাভিচার, লুটপাট ইত্যাদি অভিযোগ এনেছেন।’’
সাঈদী অভিযোগ করে বলেন, ‘‘বর্তমান সরকারের প্ররোচনায় তদন্ত কর্মকর্তা ১২-১৪ বার পিরোজপুরে গেছেন। তিনি বর্তমান এমপির (আব্দুল আওয়াল) সঙ্গে যোগসাজশ করে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনেছেন। যিনি মুসলিম, যিনি বিশ্বাস করেন, কেয়ামত আছে, আল্লাহর প্রতি যার প্রেম আছে, তিনি কোনো মুসলমানের বিরুদ্ধে এতো মিথ্যা অভিযোগ আনতে পারেন না।
বৃহস্পতিবার সকালে প্রথমার্ধে ও দুপুরে মধ্যাহ্ন বিরতির পরে দু’বেলায় যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) উপস্থাপন শেষ করেন আসামিপক্ষ। এরপর রাষ্ট্রপক্ষ সংক্ষিপ্ত আকারে পাল্টা যুক্তিতর্ক উপস্থাপনও সম্পন্ন করেন। উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে যে কোনো দিন সাঈদীর মামলার রায় দেওয়ার জন্য অপেক্ষমাণ (সিভিএ) বলে রেখে দেন চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল।
সকালে এজলাস বসার পরই সাঈদীর আইনজীবী আইনজীবী অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম সমাপনী দিনের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেন। তার যুক্তি উপস্থাপন শেষের পরই একবার সময় প্রার্থনা করেছিলেন সাঈদী। সে সময় তিনি আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বলেন, ‘‘ন্যায়বিচারের স্বার্থে আল্লাহর ওয়াস্তে আমাকে দুই থেকে আড়াই মিনিট সময় দিন।’’ তবে এ দফায় সাঈদীকে বসতে বলে রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটরকে সমাপনী যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করতে বলেন ট্রাইব্যুনাল।
ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক আদেশ দেওয়ার সময় বলেন, ‘‘আজ ৬ ডিসেম্বর। গত বছরের ৭ ডিসেম্বর এই মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছিল। ঠিক এক বছরের মাথায় সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্তিতর্ক শেষ হলো। আমি আগেও বলেছি, এখনও বলছি, আল্লাহ আমাদের যে মহান দায়িত্ব দিয়েছেন, সে দায়িত্ব আমরা সঠিকভাবে পালন করবো। আমরা সাক্ষ্য ছাড়া আর কোনো দিকে তাকাবো না। নথিপত্রের বাইরে আর কিছু দেখা হবে না। ট্রাইব্যুনালের ওপর বিশ্বাস রাখেন। আমরা কাগজপত্র, সাক্ষী, যুক্তিতর্ক ইত্যাদির ভিত্তিতে সঠিক রায় দেওয়ার চেষ্টা করবো।’’
এ আদেশের মাধ্যমে ট্রাইব্যুনাল এখন তার সুবিধামতো সময়ে যে কোনো দিন রায় ঘোষণা করবেন বলে সাংবাদিকদের জানান রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা।
রাষ্ট্রপক্ষের শেষ পাল্টা যুক্তি উপস্থাপন করেন প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী। তিনি বলেন, ‘‘আমরা আসামির বিরুদ্ধে ২০টি অভিযোগ গঠন করেছিলাম। তার মধ্যে ১৯টি সন্দেহাতীতভাবে সাক্ষ্য-প্রমাণ দিয়ে প্রমাণ করতে পেরেছি। আমরা তার সর্বোচ্চ শাস্তি কামনা করছি।’’ সমাপনী বক্তব্যে সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া সফলভাবে সম্পন্ন করতে সহযোগিতা করায় আসামিপক্ষ, প্রসিকিউশন, তদন্ত সংস্থা, আইন বিশেষজ্ঞ, সাংবাদিক ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান সৈয়দ হায়দার আলী।
উল্লেখ্য, আসামিপক্ষ মোট ১৩ কার্যদিবসে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করেছেন। এর মধ্যে সাঈদীর প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক ৪ দিন আইনি যুক্তিতর্ক এবং অপর আইনজীবী অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম ৯ দিন তথ্যগত যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। গত ১৮ নভেম্বর থেকে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেন তারা।
অন্যদিকে সাঈদীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী গত ৫ থেকে ১৫ নভেম্বর যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। ৯ কার্যদিবসে তিনি যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করেন। এরপর আসামিপক্ষের যুক্তির জবাবে গত মঙ্গলবার শুরু করে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পাল্টা যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। সব মিলিয়ে রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তিতর্ক উপস্থাপনে সময় নেন ১২ কার্যদিবস।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের লক্ষ্যে ২০১০ সালের ২৫ মার্চ গঠিত হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। গঠনের পর প্রায় পৌনে ৩ বছরের কাছাকাছি সময়ে এসে এই প্রথম কোনো অভিযুক্তের বিরুদ্ধে বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ হলো। সাঈদীর মামলার মধ্য দিয়ে প্রথম কোনো মামলার রায় ঘোষণা করতে যাচ্ছেন ট্রাইব্যুনাল। সাঈদীর মামলাটিও ট্রাইব্যুনালের ১ নম্বর মামলা। গত বছরের ২২ মার্চ গঠনের পর থেকে বিচারিক কার্যক্রম চলছে দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনালেও।
বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীর দায়ের করা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে একটি মামলায় সাঈদীকে ২০১০ সালের ২৯ জুন গ্রেফতার করা হয়। ওই বছরের ২ আগস্ট তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।
গত বছরের ১১ জুলাই সাঈদীর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন রাষ্ট্রপক্ষ। ১৪ জুলাই তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। অভিযোগের বিষয়ে শুনানি শেষে ৩ অক্টোবর সাঈদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এই মামলার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়।
No comments