বপ্নযাত্রা থামিয়ে দিলেন স্যামুয়েলস by উৎপল শুভ্র
স্বপ্নযাত্রায় আপাতত বিরতি পড়ল। ‘আপাতত’-ই তো? তা হলে ভালো। নইলে ইতিহাস কিন্তু উঁকিঝুঁকি দিতে শুরু করবে। ২-০ এগিয়ে গিয়েও পাঁচ ম্যাচের সিরিজ হারার ঘটনা ওয়ানডে ইতিহাসে মাত্র দুটি। এর একটি দুকূলপ্লাবী আনন্দে ভাসিয়েছিল বাংলাদেশকে।
২০০৫ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম দুই ওয়ানডেতে হারার পর শেষ তিনটিতে জিতেছিল বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো টেস্ট সিরিজ জয়ের আনন্দটা আরও বেড়ে গিয়েছিল অমন নাটকীয়ভাবে ওয়ানডে সিরিজ জেতায়।
এবার খুলনা থেকে ২-০ করে ঢাকায়। সিরিজটা মনে হচ্ছিল হাতের মুঠোয়। সেটি যে মুঠো থেকে বেরিয়ে গেছে, এমন নয়। তবে ২-১ স্কোরলাইনটা তো একটু অস্বস্তি জাগাচ্ছেই। খুলনায় দুই ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের এমন লেজেগোবরে অবস্থা যে, দ্বিতীয় ম্যাচের পর ড্যারেন স্যামির কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছিল, ঢাকা তাঁর সবচেয়ে প্রিয় শহর! সেখানে ফেরার জন্য তাঁর তর সইছে না।
মিরপুর যে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে সব সময় দুহাত ভরেই দিয়েছে। এই মাঠে এর আগে বাংলাদেশের বিপক্ষে তিনটি ওয়ানডেতেই জিতেছে স্যামির দল। এর প্রথমটি তো বিশ্বকাপের সেই ‘বিখ্যাত’ ৫৮ রানের ম্যাচ।
টসে জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠানোর সময় সেই স্মৃতি স্যামির মনে পড়ে গিয়ে থাকবে। হাসিটার অবশ্য অন্য অর্থও হতে পারে। হয়তো সেটি শিশিরভেজা মাঠে বোলিং করতে না হওয়ার স্বস্তি। তা শিশির ভালোই পড়ল। বিরতির সময় মাঠ শুকাতে চট নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটল মাঠকর্মীদের।
শিশির পড়লে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয় স্পিনারদের। তা হয়তো একটু হয়েছেও। তবে পরাজয়ের দায় শুধু সেটির ওপর চাপানোর উপায় নেই। বাংলাদেশ তো ম্যাচটা হেরে বসেছে ব্যাটিংয়ের সময়ই। মাত্র ২২৭ রানের পুঁজি নিয়েই বোলাররা যে লড়াইটা করলেন, তাতে আক্ষেপটা আরও বেড়েই গেল। আর ২০-২৫টা রান হলে দুই ম্যাচ বাকি থাকতেই হয়তো সিরিজ জয়ের উৎসবটা করে ফেলা যেত!
ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুর্বলতা স্পিন, বাংলাদেশের শক্তিও সেখানেই। মিরপুরের উইকেট যে সেই কথা মাথায় রেখে ‘ডিজাইনার পিচ’-এর রূপে দেখা দিল, এতে তাই আশ্চর্যের কিছু নেই। বল টার্ন করানোটা কখনোই যাঁর মূল শক্তির দিক নয়, সেই আবদুর রাজ্জাক পর্যন্ত দারুণ টার্ন পেলেন। এমনকি খণ্ডকালীন বোলার মমিনুলও। কিন্তু মারলন স্যামুয়েলস যে বাধার পাহাড় হয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন সামনে। মিরপুর ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য ‘পয়া’ বলছিলাম, স্যামুয়েলসের জন্য তো আরও বেশি। এই ম্যাচের আগে এ মাঠে তাঁর ওয়ানডে গড় ১৫৯! যে উইকেটে কাল অন্য ব্যাটসম্যানরা হাবুডুবু খেলেন, সেটিতেই তাঁর ১৪৯ বলে ১২৬!
ওয়েস্ট ইন্ডিজের উইকেট পড়লে গ্যালারি থেকে যে গর্জনটা উঠেছে, সেটি স্টেডিয়ামের আশপাশে দু-তিন বর্গকিলোমিটারের মধ্যে শুনতে পাওয়ার কথা। অথচ স্যামুয়েলসের আউটের পর গ্যালারি নিশ্চুপ। ততক্ষণে ম্যাচ যে প্রায় শেষ!
ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয়ের জন্য লাগে মাত্র ৬ রান। সেটি কি আর ঠেকানো যায় নাকি! ব্যাপারটাকে এমন সহজ করেও দিয়ে গেছেন স্যামুয়েলসই। রুবেল ও মমিনুলের বলে দুবার মরতে মরতে বেঁচে গিয়েছেন। ওয়ানডে সিরিজে রানের জন্য ব্যর্থ সংগ্রাম করে যাওয়া স্যামুয়েলসের মনে হলো, এবার একটা পাল্টা আঘাত হানা উচিত। রুবেলের এক ওভারে তিনটি চার ও দুটি ছয়ে তা এমনই হানলেন যে, ম্যাচের গায়ে লেগে থাকা সামান্য অনিশ্চয়তাটাও উড়ে গেল তাতে।
এই ম্যাচের আগে স্যামুয়েলসের ব্যর্থতা বেশি নজরে আসেনি দুজনের কারণে। সিরিজ শুরুর আগে যে দুটি নাম নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা, এই ম্যাচের আগে তাঁরা দুজন একই তরণির মাঝি। মাঝদরিয়ায় ঝড়ে পড়ে দিশেহারা তরণি। এই ম্যাচের পরও ক্রিস গেইল সেটিতেই থেকে গেলেন। তবে অবশেষে কূলের দেখা পেলেন সুনীল নারাইন।
টেস্ট সিরিজে ৩৪৩ রানে মাত্র ৩ উইকেট। খুলনায় প্রথম দুই ওয়ানডেতে ৮৭ রানে মাত্র একটি। সব জারিজুরি ফাঁস হয়ে ‘রহস্য স্পিনার’ নিজেই যেন এক রহস্য! বিশ্বের বড় বড় সব ব্যাটসম্যানকে নাচিয়ে ছাড়া নারাইনকে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা এমন সাধারণ বানিয়ে ফেললেন কীভাবে!
এর আগে ৯৬.৩ ওভার বোলিং করে যাঁর ৪ উইকেট, কাল ১০ ওভারেই তিনি উইকেট পেয়ে গেলেন ৪টি। এর প্রথম তিনটি মাত্র নয় বলের মধ্যে। উদ্বোধনী জুটিতে ৫৭ রানের মোটামুটি শক্ত ভিত্তিকে একেবারেই নড়বড়ে বানিয়ে দেওয়ার মূলে এটিই। বাংলাদেশের টপ-অর্ডার যে চোখের পলকে নাই হয়ে গেল!
বাংলাদেশের স্পিনের জবাব স্পিন দিয়েই দিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ নেমেছিল বাড়তি একজন স্পিনার নিয়ে। বাঁহাতি পেরমলও যোগ দিলেন ধ্বংসযজ্ঞে। মাহমুদউল্লাহর ৫২ তাই একসময় দুই শ পেরোনো নিয়েও অনিশ্চয়তাটাই শুধু দূর করতে পারল।
গেইলকে শুরুতেই ফিরিয়ে মাশরাফি ২২৭-কেও একটু বড় মনে করিয়েছিলেন। কিন্তু পাওয়েল ও স্যামুয়েলসের ১১১ রানের জুটিতে আবারও সেটি স্বাভাবিক চেহারায়। পর পর কয়েকটি উইকেট পড়ে ২০-২৫টা রান কম হওয়ার আক্ষেপটাই শুধু বাড়াল!
বাংলাদেশ: ৪৯.১ ওভারে ২২৭
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৪৭ ওভারে ২২৮/৬
ফল: উইন্ডিজ ৪ উইকেটে জয়ী
এবার খুলনা থেকে ২-০ করে ঢাকায়। সিরিজটা মনে হচ্ছিল হাতের মুঠোয়। সেটি যে মুঠো থেকে বেরিয়ে গেছে, এমন নয়। তবে ২-১ স্কোরলাইনটা তো একটু অস্বস্তি জাগাচ্ছেই। খুলনায় দুই ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের এমন লেজেগোবরে অবস্থা যে, দ্বিতীয় ম্যাচের পর ড্যারেন স্যামির কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছিল, ঢাকা তাঁর সবচেয়ে প্রিয় শহর! সেখানে ফেরার জন্য তাঁর তর সইছে না।
মিরপুর যে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে সব সময় দুহাত ভরেই দিয়েছে। এই মাঠে এর আগে বাংলাদেশের বিপক্ষে তিনটি ওয়ানডেতেই জিতেছে স্যামির দল। এর প্রথমটি তো বিশ্বকাপের সেই ‘বিখ্যাত’ ৫৮ রানের ম্যাচ।
টসে জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠানোর সময় সেই স্মৃতি স্যামির মনে পড়ে গিয়ে থাকবে। হাসিটার অবশ্য অন্য অর্থও হতে পারে। হয়তো সেটি শিশিরভেজা মাঠে বোলিং করতে না হওয়ার স্বস্তি। তা শিশির ভালোই পড়ল। বিরতির সময় মাঠ শুকাতে চট নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটল মাঠকর্মীদের।
শিশির পড়লে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয় স্পিনারদের। তা হয়তো একটু হয়েছেও। তবে পরাজয়ের দায় শুধু সেটির ওপর চাপানোর উপায় নেই। বাংলাদেশ তো ম্যাচটা হেরে বসেছে ব্যাটিংয়ের সময়ই। মাত্র ২২৭ রানের পুঁজি নিয়েই বোলাররা যে লড়াইটা করলেন, তাতে আক্ষেপটা আরও বেড়েই গেল। আর ২০-২৫টা রান হলে দুই ম্যাচ বাকি থাকতেই হয়তো সিরিজ জয়ের উৎসবটা করে ফেলা যেত!
ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুর্বলতা স্পিন, বাংলাদেশের শক্তিও সেখানেই। মিরপুরের উইকেট যে সেই কথা মাথায় রেখে ‘ডিজাইনার পিচ’-এর রূপে দেখা দিল, এতে তাই আশ্চর্যের কিছু নেই। বল টার্ন করানোটা কখনোই যাঁর মূল শক্তির দিক নয়, সেই আবদুর রাজ্জাক পর্যন্ত দারুণ টার্ন পেলেন। এমনকি খণ্ডকালীন বোলার মমিনুলও। কিন্তু মারলন স্যামুয়েলস যে বাধার পাহাড় হয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন সামনে। মিরপুর ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য ‘পয়া’ বলছিলাম, স্যামুয়েলসের জন্য তো আরও বেশি। এই ম্যাচের আগে এ মাঠে তাঁর ওয়ানডে গড় ১৫৯! যে উইকেটে কাল অন্য ব্যাটসম্যানরা হাবুডুবু খেলেন, সেটিতেই তাঁর ১৪৯ বলে ১২৬!
ওয়েস্ট ইন্ডিজের উইকেট পড়লে গ্যালারি থেকে যে গর্জনটা উঠেছে, সেটি স্টেডিয়ামের আশপাশে দু-তিন বর্গকিলোমিটারের মধ্যে শুনতে পাওয়ার কথা। অথচ স্যামুয়েলসের আউটের পর গ্যালারি নিশ্চুপ। ততক্ষণে ম্যাচ যে প্রায় শেষ!
ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয়ের জন্য লাগে মাত্র ৬ রান। সেটি কি আর ঠেকানো যায় নাকি! ব্যাপারটাকে এমন সহজ করেও দিয়ে গেছেন স্যামুয়েলসই। রুবেল ও মমিনুলের বলে দুবার মরতে মরতে বেঁচে গিয়েছেন। ওয়ানডে সিরিজে রানের জন্য ব্যর্থ সংগ্রাম করে যাওয়া স্যামুয়েলসের মনে হলো, এবার একটা পাল্টা আঘাত হানা উচিত। রুবেলের এক ওভারে তিনটি চার ও দুটি ছয়ে তা এমনই হানলেন যে, ম্যাচের গায়ে লেগে থাকা সামান্য অনিশ্চয়তাটাও উড়ে গেল তাতে।
এই ম্যাচের আগে স্যামুয়েলসের ব্যর্থতা বেশি নজরে আসেনি দুজনের কারণে। সিরিজ শুরুর আগে যে দুটি নাম নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা, এই ম্যাচের আগে তাঁরা দুজন একই তরণির মাঝি। মাঝদরিয়ায় ঝড়ে পড়ে দিশেহারা তরণি। এই ম্যাচের পরও ক্রিস গেইল সেটিতেই থেকে গেলেন। তবে অবশেষে কূলের দেখা পেলেন সুনীল নারাইন।
টেস্ট সিরিজে ৩৪৩ রানে মাত্র ৩ উইকেট। খুলনায় প্রথম দুই ওয়ানডেতে ৮৭ রানে মাত্র একটি। সব জারিজুরি ফাঁস হয়ে ‘রহস্য স্পিনার’ নিজেই যেন এক রহস্য! বিশ্বের বড় বড় সব ব্যাটসম্যানকে নাচিয়ে ছাড়া নারাইনকে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা এমন সাধারণ বানিয়ে ফেললেন কীভাবে!
এর আগে ৯৬.৩ ওভার বোলিং করে যাঁর ৪ উইকেট, কাল ১০ ওভারেই তিনি উইকেট পেয়ে গেলেন ৪টি। এর প্রথম তিনটি মাত্র নয় বলের মধ্যে। উদ্বোধনী জুটিতে ৫৭ রানের মোটামুটি শক্ত ভিত্তিকে একেবারেই নড়বড়ে বানিয়ে দেওয়ার মূলে এটিই। বাংলাদেশের টপ-অর্ডার যে চোখের পলকে নাই হয়ে গেল!
বাংলাদেশের স্পিনের জবাব স্পিন দিয়েই দিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ নেমেছিল বাড়তি একজন স্পিনার নিয়ে। বাঁহাতি পেরমলও যোগ দিলেন ধ্বংসযজ্ঞে। মাহমুদউল্লাহর ৫২ তাই একসময় দুই শ পেরোনো নিয়েও অনিশ্চয়তাটাই শুধু দূর করতে পারল।
গেইলকে শুরুতেই ফিরিয়ে মাশরাফি ২২৭-কেও একটু বড় মনে করিয়েছিলেন। কিন্তু পাওয়েল ও স্যামুয়েলসের ১১১ রানের জুটিতে আবারও সেটি স্বাভাবিক চেহারায়। পর পর কয়েকটি উইকেট পড়ে ২০-২৫টা রান কম হওয়ার আক্ষেপটাই শুধু বাড়াল!
বাংলাদেশ: ৪৯.১ ওভারে ২২৭
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৪৭ ওভারে ২২৮/৬
ফল: উইন্ডিজ ৪ উইকেটে জয়ী
No comments