যানজট নিরসনে বাস ও রিকশার সমন্বয় by মো. ওমর শরীফ
ইউরোপীয় শহরগুলোতে সর্বস্তরের মানুষের প্রয়োজন বা নিছক আনন্দ ভ্রমণে ব্যক্তিগত গাড়ি ও গণপরিবহনের পাশাপাশি বাইসাইকেলের ব্যবহার লক্ষণীয়। সামাজিক ও সাংস্কৃৃতিক বিবেচনায় রাজধানী ঢাকায় এমন ব্যাপক আকারে সম্ভব না হলেও একটি বড় বিকল্প সুবিধা রয়েছে রিকশা।
কিন্তু সাধারণ মানুষ কীভাবে চলাচল করবে বা বর্তমান পাবলিক বাস পদ্ধতি কতখানি কার্যকর, নারী, শিশু এবং বৃদ্ধদের জন্য কতখানি উপযুক্ত ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ চিন্তা না করেই যানজট নিরসনের লক্ষ্যে শহরের প্রধান প্রধান রাস্তা থেকে রিকশা চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে বিভিন্ন আবাসিক এলাকার মধ্য দিয়ে রিকশা এবং প্রধান সড়ক দিয়ে যে পাবলিক বাস চলাচল করছে, তার মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই। পাবলিক বাসের সীমাবদ্ধতা হচ্ছে, নির্দিষ্ট রুটে চলাচল করে নির্ধারিত স্টপেজে থামতে হয়। এই ব্যবস্থায় প্রত্যেক যাত্রীকে যার যার গন্তব্যের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া সম্ভব নয়। সমন্বয় ব্যবস্থাটা এমন হওয়া উচিত, যাতে করে একজন চাকরিজীবী রিকশাযোগে তার বাড়ি থেকে প্রধান সড়কে অবস্থিত বাস স্টপেজের কাছে এবং বাস থেকে নেমে রিকশাযোগে কর্মস্থলে, একইভাবে একজন ছাত্র তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, একজন গৃহবধূ তাঁর প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করতে বাজারে, একজন বয়স্ক ব্যক্তি বিকেলে হাঁটাহাঁটি করতে পার্কে যেতে পারে। বর্তমানে কোথায় কোন রাস্তায় গেলে সহজে এবং স্বল্প দূরত্বের মধ্যে বাস থেকে রিকশায় অথবা রিকশা থেকে বাসে ওঠা যাবে, তা বোঝা মুশকিল। এতে চলাচলে ভোগান্তির সঙ্গে অনেক সময়েরও অপচয় হচ্ছে। রাস্তায় যানজট কমাতে শুধু রিকশা তুলে দিলেই হবে না, গণপরিবহন পদ্ধতি ও যাত্রীসেবার মান উন্নতির পাশাপাশি ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। কিন্তু বর্তমান অবস্থায় মানুষ আরও বেশি করে ব্যক্তিগত যানবাহন ব্যবহারে উৎসাহিত হবে।
পশ্চিমা বিশ্বে ‘পার্ক অ্যান্ড রাইড’ নামে যে ধারণাটি কাজ করছে তাতে দেখা যায়, নাগরিকেরা তার ব্যক্তিগত গাড়িতে চড়ে বাড়ি থেকে কাছাকাছি কোনো ‘ট্রান্সপোর্ট হাবে’ অবস্থিত পার্কিং লটে গাড়ি পার্ক করে সেখান থেকে গণপরিবহনে শহরের কেন্দ্রস্থলে (যেখানে ঘনবসতিপূর্ণ এবং পার্কিং-ব্যবস্থা অপ্রতুল) সহজে এবং সাশ্রয়ীভাবে ভ্রমণ করতে পারে। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত গাড়ির বদলে আমাদের জন্য রিকশা হতে পারে একটি কার্যকর বিকল্প। রিকশা এবং বাসের সমন্বিত চলাচলে তিনটি বিষয়ের সফল বাস্তবায়ন জরুরি।
এক. বাস স্টপেজের কাছাকাছি স্থানে যথাযথ রিকশা স্টপেজের ব্যবস্থা করা, যাতে রিকশাগুলো সুশৃঙ্খলভাবে যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে নতুন যাত্রী নেওয়ার জন্যও অপেক্ষা করতে পারে। এই রিকশা স্টপেজ মূলত ‘পার্ক অ্যান্ড রাইড’ ব্যবস্থার বহুমুখী পার্কিংয়ের বিকল্প হিসেবে কাজ করবে। রিকশার বদলে কেউ যদি ব্যক্তিগত সাইকেল চালিয়ে আসতে চায়, তাহলে সাইকেল রাখার জন্য আলাদা ব্যবস্থা রাখতে হবে। ফলে যে কেউ দিনের শুরুতে সাইকেলে করে বাস স্টপেজে এসে সাইকেল রেখে কর্মস্থলে এবং দিন শেষে বাসে চড়ে তার আবাসিক এলাকার বাস স্টপেজে নেমে সংরক্ষিত স্থান থেকে সাইকেল নিয়ে তার বাসাবাড়িতে চলে যেতে পারবে।
দুই. বাসে চলাচলের ক্ষেত্রে সর্বসাধারণের অভিযোগ হচ্ছে, যত্রতত্র থামিয়ে যাত্রী ওঠানো-নামানো হয়, যা মোটেই নিরাপদ নয়। বিশেষ করে নারী, শিশু এবং বয়স্ক মানুষের জন্য নিরাপদে বাসে ওঠানামার ক্ষেত্রে বড় অন্তরায়। অনেক ক্ষেত্রে নির্ধারিত বাস স্টপেজের সামনে অন্য যানবাহন দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। ফলে বাসের চালকদের অনেকটা বাধ্য হয়েই রাস্তার মাঝে বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠাতে-নামাতে হয়। উন্নত বিশ্বে বাস স্টপেজের কিছুটা আগে থেকে শুরু করে স্টপেজ ছাড়িয়ে কিছু দূর পর্যন্ত ফুটপাতসংলগ্ন রাস্তার বাঁ দিকে একটা আলাদা লেন চিহ্নিত করা থাকে, যা শুধু পাবলিক বাস ব্যবহার করতে পারে। এই ছোট লেনটি খুবই নিরাপদ। সুশৃঙ্খলভাবে স্টপেজে বাস থামতে এবং যাত্রী নিয়ে বাধাহীনভাবে ছেড়ে যেতে সাহায্য করে।
তিন. রিকশা এবং বাস স্টপেজের মধ্যে যে ন্যূনতম দূরত্ব তা হেঁটে নিরাপদে অতিক্রম করার জন্য যথাযথ ফুটপাতের ব্যবস্থা থাকতে হবে, যা হবে প্রশস্ত, খানাখন্দবিহীন এবং রাতে নিরাপদে চলাচলের জন্য পর্যাপ্ত আলোকসমৃদ্ধ। বেদখল হয়ে থাকা ফুটপাত উদ্ধারের সঙ্গে সঙ্গে বর্তমানে রাস্তায় জ্যাম থাকলে ফুটপাত দিয়ে বেপরোয়াভাবে যেসব মোটরবাইক চলতে দেখা যায়, তা বন্ধ হওয়াও অপরিহার্য। নিরাপদ সড়কের পাশাপাশি নিরাপদ ফুটপাত সুনিশ্চিত করাটাও সমান জরুরি।
এই তিনটি বিষয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশে বাস রুট বা মেট্রোরেলের যেরকম মানচিত্র থাকে এই সমন্বিত ব্যবস্থার জন্যও অনুরূপ মানচিত্র তৈরি করতে হবে, যেখানে এই রিকশা এবং বাস স্টপেজগুলোর অবস্থান চিহ্নিত করা থাকবে। তাহলে যাত্রী সহজেই বুঝতে পারবে কোন পথে গেলে সে রিকশা থেকে নেমে স্বল্প দূরত্বের মধ্যে বাস স্টপেজ অথবা একই প্রক্রিয়ায় কীভাবে রিকশা স্টপেজে পৌঁছাতে পারবে। এতে করে যে কেউ এই মানচিত্র দেখে আগে থেকেই তার গন্তব্যের রুট ঠিক করে নিতে পারবে। ফলে প্রত্যেকেরই অনাহত শ্রম ও মূল্যবান সময় সাশ্রয় হবে।
এসব বিষয় নিশ্চিত করা গেলে আশা করা যায় ঢাকা শহরের মানুষ ব্যক্তিগত যানবাহনের পাশাপাশি গণপরিবহন ব্যবহারে উৎসাহিত হবে, যা কি না রাস্তায় যানজট কমাতে বাস্তব ভূমিকা রাখবে। শহরের পরিবহনে শৃঙ্খলাও অনেকটাই ফিরে আসবে। সবশেষে বলতে চাই, যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতির জন্য শুধু উড়ালসেতু বা পাতালরেল একমাত্র সমাধান নয়। আমাদের আর্থসামাজিক বাস্তবতা বিবেচনা রেখেই কার্যকর নীতি প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়ন করতে হবে।
মো. ওমর শরীফ: বদলে যাও বদলে দাও মিছিল ব্লগের নিয়মিত লেখক।
omr.srf@gmail.com
ই-মেইল: bjbd@prothom-alo.info facebook.com/bjbdmichhil
বর্তমানে বিভিন্ন আবাসিক এলাকার মধ্য দিয়ে রিকশা এবং প্রধান সড়ক দিয়ে যে পাবলিক বাস চলাচল করছে, তার মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই। পাবলিক বাসের সীমাবদ্ধতা হচ্ছে, নির্দিষ্ট রুটে চলাচল করে নির্ধারিত স্টপেজে থামতে হয়। এই ব্যবস্থায় প্রত্যেক যাত্রীকে যার যার গন্তব্যের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া সম্ভব নয়। সমন্বয় ব্যবস্থাটা এমন হওয়া উচিত, যাতে করে একজন চাকরিজীবী রিকশাযোগে তার বাড়ি থেকে প্রধান সড়কে অবস্থিত বাস স্টপেজের কাছে এবং বাস থেকে নেমে রিকশাযোগে কর্মস্থলে, একইভাবে একজন ছাত্র তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, একজন গৃহবধূ তাঁর প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করতে বাজারে, একজন বয়স্ক ব্যক্তি বিকেলে হাঁটাহাঁটি করতে পার্কে যেতে পারে। বর্তমানে কোথায় কোন রাস্তায় গেলে সহজে এবং স্বল্প দূরত্বের মধ্যে বাস থেকে রিকশায় অথবা রিকশা থেকে বাসে ওঠা যাবে, তা বোঝা মুশকিল। এতে চলাচলে ভোগান্তির সঙ্গে অনেক সময়েরও অপচয় হচ্ছে। রাস্তায় যানজট কমাতে শুধু রিকশা তুলে দিলেই হবে না, গণপরিবহন পদ্ধতি ও যাত্রীসেবার মান উন্নতির পাশাপাশি ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। কিন্তু বর্তমান অবস্থায় মানুষ আরও বেশি করে ব্যক্তিগত যানবাহন ব্যবহারে উৎসাহিত হবে।
পশ্চিমা বিশ্বে ‘পার্ক অ্যান্ড রাইড’ নামে যে ধারণাটি কাজ করছে তাতে দেখা যায়, নাগরিকেরা তার ব্যক্তিগত গাড়িতে চড়ে বাড়ি থেকে কাছাকাছি কোনো ‘ট্রান্সপোর্ট হাবে’ অবস্থিত পার্কিং লটে গাড়ি পার্ক করে সেখান থেকে গণপরিবহনে শহরের কেন্দ্রস্থলে (যেখানে ঘনবসতিপূর্ণ এবং পার্কিং-ব্যবস্থা অপ্রতুল) সহজে এবং সাশ্রয়ীভাবে ভ্রমণ করতে পারে। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত গাড়ির বদলে আমাদের জন্য রিকশা হতে পারে একটি কার্যকর বিকল্প। রিকশা এবং বাসের সমন্বিত চলাচলে তিনটি বিষয়ের সফল বাস্তবায়ন জরুরি।
এক. বাস স্টপেজের কাছাকাছি স্থানে যথাযথ রিকশা স্টপেজের ব্যবস্থা করা, যাতে রিকশাগুলো সুশৃঙ্খলভাবে যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে নতুন যাত্রী নেওয়ার জন্যও অপেক্ষা করতে পারে। এই রিকশা স্টপেজ মূলত ‘পার্ক অ্যান্ড রাইড’ ব্যবস্থার বহুমুখী পার্কিংয়ের বিকল্প হিসেবে কাজ করবে। রিকশার বদলে কেউ যদি ব্যক্তিগত সাইকেল চালিয়ে আসতে চায়, তাহলে সাইকেল রাখার জন্য আলাদা ব্যবস্থা রাখতে হবে। ফলে যে কেউ দিনের শুরুতে সাইকেলে করে বাস স্টপেজে এসে সাইকেল রেখে কর্মস্থলে এবং দিন শেষে বাসে চড়ে তার আবাসিক এলাকার বাস স্টপেজে নেমে সংরক্ষিত স্থান থেকে সাইকেল নিয়ে তার বাসাবাড়িতে চলে যেতে পারবে।
দুই. বাসে চলাচলের ক্ষেত্রে সর্বসাধারণের অভিযোগ হচ্ছে, যত্রতত্র থামিয়ে যাত্রী ওঠানো-নামানো হয়, যা মোটেই নিরাপদ নয়। বিশেষ করে নারী, শিশু এবং বয়স্ক মানুষের জন্য নিরাপদে বাসে ওঠানামার ক্ষেত্রে বড় অন্তরায়। অনেক ক্ষেত্রে নির্ধারিত বাস স্টপেজের সামনে অন্য যানবাহন দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। ফলে বাসের চালকদের অনেকটা বাধ্য হয়েই রাস্তার মাঝে বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠাতে-নামাতে হয়। উন্নত বিশ্বে বাস স্টপেজের কিছুটা আগে থেকে শুরু করে স্টপেজ ছাড়িয়ে কিছু দূর পর্যন্ত ফুটপাতসংলগ্ন রাস্তার বাঁ দিকে একটা আলাদা লেন চিহ্নিত করা থাকে, যা শুধু পাবলিক বাস ব্যবহার করতে পারে। এই ছোট লেনটি খুবই নিরাপদ। সুশৃঙ্খলভাবে স্টপেজে বাস থামতে এবং যাত্রী নিয়ে বাধাহীনভাবে ছেড়ে যেতে সাহায্য করে।
তিন. রিকশা এবং বাস স্টপেজের মধ্যে যে ন্যূনতম দূরত্ব তা হেঁটে নিরাপদে অতিক্রম করার জন্য যথাযথ ফুটপাতের ব্যবস্থা থাকতে হবে, যা হবে প্রশস্ত, খানাখন্দবিহীন এবং রাতে নিরাপদে চলাচলের জন্য পর্যাপ্ত আলোকসমৃদ্ধ। বেদখল হয়ে থাকা ফুটপাত উদ্ধারের সঙ্গে সঙ্গে বর্তমানে রাস্তায় জ্যাম থাকলে ফুটপাত দিয়ে বেপরোয়াভাবে যেসব মোটরবাইক চলতে দেখা যায়, তা বন্ধ হওয়াও অপরিহার্য। নিরাপদ সড়কের পাশাপাশি নিরাপদ ফুটপাত সুনিশ্চিত করাটাও সমান জরুরি।
এই তিনটি বিষয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশে বাস রুট বা মেট্রোরেলের যেরকম মানচিত্র থাকে এই সমন্বিত ব্যবস্থার জন্যও অনুরূপ মানচিত্র তৈরি করতে হবে, যেখানে এই রিকশা এবং বাস স্টপেজগুলোর অবস্থান চিহ্নিত করা থাকবে। তাহলে যাত্রী সহজেই বুঝতে পারবে কোন পথে গেলে সে রিকশা থেকে নেমে স্বল্প দূরত্বের মধ্যে বাস স্টপেজ অথবা একই প্রক্রিয়ায় কীভাবে রিকশা স্টপেজে পৌঁছাতে পারবে। এতে করে যে কেউ এই মানচিত্র দেখে আগে থেকেই তার গন্তব্যের রুট ঠিক করে নিতে পারবে। ফলে প্রত্যেকেরই অনাহত শ্রম ও মূল্যবান সময় সাশ্রয় হবে।
এসব বিষয় নিশ্চিত করা গেলে আশা করা যায় ঢাকা শহরের মানুষ ব্যক্তিগত যানবাহনের পাশাপাশি গণপরিবহন ব্যবহারে উৎসাহিত হবে, যা কি না রাস্তায় যানজট কমাতে বাস্তব ভূমিকা রাখবে। শহরের পরিবহনে শৃঙ্খলাও অনেকটাই ফিরে আসবে। সবশেষে বলতে চাই, যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতির জন্য শুধু উড়ালসেতু বা পাতালরেল একমাত্র সমাধান নয়। আমাদের আর্থসামাজিক বাস্তবতা বিবেচনা রেখেই কার্যকর নীতি প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়ন করতে হবে।
মো. ওমর শরীফ: বদলে যাও বদলে দাও মিছিল ব্লগের নিয়মিত লেখক।
omr.srf@gmail.com
ই-মেইল: bjbd@prothom-alo.info facebook.com/bjbdmichhil
No comments