বিতর্কিত চলচ্চিত্র নির্মাতা নকুলার এক বছর জেল

বিতর্কিত চলচ্চিত্র 'ইনোসেন্স অব মুসলিমস'-এর নির্মাতা নকুলা বাসেলি নকুলাকে গত বুধবার এক বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার একটি আদালত। তবে ইসলামবিরোধী চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য নয়, তিনি শাস্তি পেয়েছেন পৃথক একটি প্রতারণা মামলায় আদালতের শর্ত ভঙ্গের দায়ে। এ ছাড়াও ভুয়া নামে ড্রাইভিং লাইসেন্স সংগ্রহ করার অভিযোগও উঠেছে তার বিরুদ্ধে।


যুক্তরাষ্ট্রের ডিস্ট্রিক্ট জজ ক্রিস্টিনা স্নাইডার জানান, ৫৫ বছর বয়সী নকুলাকে ১২ মাস কারাগারে এবং এর পরের চার বছর নজরদারিতে থাকতে হবে। তবে আদালতের শর্ত ভঙ্গের অভিযোগে সরকারি কৌঁসুলি তাঁর দুই বছরের কারাদণ্ডের আবেদন করেছিলেন।
মার্কিন আদালতের চোখে নকুলা একজন সন্দেহভাজন ব্যক্তি। জালিয়াতি, প্রতারণাসহ বিভিন্ন অভিযোগ আছে নকুলার বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগে তাঁর নামে একাধিকবার মামলা করা হয়। মুসলিম অনুভূতিতে আঘাত দেওয়া চলচ্চিত্রটি নির্মাণের আগে ২০১০ সালে একবার জেলও খাটেন তিনি। সে বছর বিভিন্ন নামে ৬০টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে চেক জালিয়াতির জন্য ২১ মাসের কারাদণ্ড হয় তাঁর।
লস এঞ্জেলেস টাইমস জানিয়েছে, সে বছর জেলে গিয়ে মুসলমানদের খোঁচানোর দুর্বুদ্ধি ভর করে তাঁর মাথায়। জেলখানার অখণ্ড অবসরে বসে কোরআন পাঠ করেন তিনি। কিন্তু, পবিত্র ধর্মগ্রন্থটি পড়ে ইসলামের অনুশাসন সম্পর্কে তিনি মোটেই ভাবেননি বরং তাঁর ভাবনাজুড়ে ছিল হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর চরিত্র হননের চিত্রনাট্য রচনা। জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার সময় তাঁর ওপর কিছু শর্ত জুড়ে দেন আদালত। এর মধ্যে অন্যতম ছিল নজরদারি কর্মকর্তার (প্রবেশন অফিসার) অনুমতি ছাড়া পরবর্তী পাঁচ বছর তিনি কম্পিউটার বা ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন না।
সরকারি কৌঁসুলি জানান, নকুলা ছাড়া পাওয়ার পর কমপক্ষে চারবার শর্ত ভঙ্গ করেন বলে নজরদারিতে প্রমাণিত হয়। এরপর বিষয়টি আদালতে ওঠানো হলে তাঁকে এই শাস্তি দেওয়া হয়। তবে এই শাস্তির সঙ্গে বিতর্কিত চলচ্চিত্র 'ইনোসেন্স অব মুসলিমস' নির্মাণের কোনো সম্পর্ক নেই।
প্রসঙ্গত, নকুলা 'ইনোসেন্স অব মুসলিমস' নামের বিতর্কিত চলচ্চিত্রটি নির্মাণের পর ইউটিউবে ছবিটির কিছু অংশ প্রকাশ করলে মুসলমানদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ছবিটি ইউটিউব থেকে সরিয়ে ফেলা ও নকুলার শাস্তির দাবিতে বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের বিক্ষোভ শুরু হলে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে সহিংসতা ও হতাহতের ঘটনাও ঘটে। এর জের ধরে লিবিয়ায় মুসলমান কট্টরপন্থীরা মার্কিন দূতাবাসে হামলা চালালে সেদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিহত হন। বাংলাদেশের মুসলমানরাও এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানায় এবং কিছু ইসলামী সংগঠন নকুলার শাস্তির দাবিতে আন্দোলন করে। ছবিটি মুসলিম অনুভূতিতে আঘাত হানায় বাংলাদেশ সরকার ইউটিউব থেকে ছবির প্রকাশিত অংশবিশেষ সরিয়ে নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানায়। কিন্তু, ইউটিউব কর্তৃপক্ষ আইনগত জটিলতার কারণে এতে রাজি না হওয়ায় সরকারি নির্দেশে গেটওয়ে ব্লকের মাধ্যমে বাংলাদেশে ইউটিউবের কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ায় গত সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেপ্তার করা হয় নকুলাকে। সেই থেকে তিনি কারাবন্দি আছেন। সে সময় গ্রেপ্তার এড়াতে নকুলা নিজেকে স্যাম বাসিলে, নিকোলা বাসিলি ও মার্ক বাসেলি ইউসেফ নামেও নিজেকে পরিচয় দেন। ধারণা করা হয়, তিনি একজন মিসরীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকান খ্রিস্টান।
নকুলা বিতর্কিত এ ছবিটি নির্মাণের সঙ্গে জড়িত বলে মার্কিন কর্তৃপক্ষ জানালেও তিনিই তা ইন্টারনেটে ছেড়েছিলেন কি না, তারা নিশ্চিত করতে পারেনি।
এদিকে জেলে ঢোকার সময় নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে কটাক্ষ করতেও ছাড়েননি নকুলা। আইনজীবীর মাধ্যমে তিনি জানান, 'বারাক ওবামা ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করাতে পেরেছেন বটে, কিন্তু ওসামার আদর্শকে শেষ করে দিতে পারেননি।' সূত্র : বিবিসি ও ডন।

No comments

Powered by Blogger.