বাবার কথা by শৌভিক গঙ্গোপাধ্যায়
বাংলা সাহিত্যের সদ্যপ্রয়াত কথাসাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে নিয়ে প্রথম আলোর জন্য লেখকের একমাত্র পুত্রের স্মৃতিচারণা সেদিন অফিসের কাজ সেরে সবেমাত্র আমেরিকার বোস্টন শহরে আমার বাড়ির দরজায় এসে দাঁড়িয়েছি। হঠাৎ আমাদের কলকাতার বাড়ি থেকে ফোন। ধনঞ্জয়দা কাঁদতে কাঁদতে জানালেন, আমার বাবা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় আর নেই।
২২ অক্টোবর সোমবার দিবাগত রাত দুইটা পাঁচ মিনিটের দিকে হূদরোগে আক্রান্ত হয়ে চিরদিনের জন্য আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। কথাটা আমি কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। এমন কী হলো যে একেবারে বিনা নোটিশে গভীর রাতেই আমাদের ছেড়ে তাঁকে চলে যেতে হবে?
আমার চোখ থেকে তখন অজান্তেই জল গড়িয়ে পড়ছে। গাড়ি থেকে নেমে ঘরে ঢুকেছি। স্ত্রী চান্দ্রেয়ী লাহিড়ি অফিসফেরা আমাকে এ রকম বিপর্যস্ত দেখে হতচকিত হয়ে জানতে চাইল, ঘটনা কী? কোনো দুঃসংবাদ নয়তো? আমার ছয় বছরের শিশুপুত্র অয়ন এসেও জিজ্ঞেস করল, তোমার কী হয়েছে, বাবা? বললাম, তোমার দাদু আর নেই। আকাশে চলে গেছেন।
কলকাতায় গিয়ে বাবাকে শেষ দেখে এসেছিলাম জুলাই মাসে। এটা জানতাম যে, প্রোস্টেট গ্ল্যান্ড এনলার্জ্ড্ হওয়ায় বাবা কষ্ট পাচ্ছিলেন। কিন্তু কিছুতেই বুঝতে পারিনি, বড় কোনো রোগ বাবার শরীরে বাসা বেঁধে আছে। এভাবে যে বিনা নোটিশে বাবা চলে যাবেন, সেটি তো কল্পনায়ও ছিল না।
বাবা বলেছিলেন, শরীর ভালো থাকলে পুজোর পরে আমেরিকায় আসবেন। আমরা সবাই সেই আশায় প্রহর গুনছিলাম। বাবার চলে যাওয়ার খবরটা বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো এল। চলেও গেলেন দুর্গাপুজোর মধ্যেই, অষ্টমীর গভীর রাতে।
মৃত্যুর খবরটা শুনে কলকাতায় বাবার চিকিৎসক রঞ্জন ভট্টাচার্যকে ফোন করলাম। কথা বললাম মায়ের সঙ্গে। মাও মোটেই ধারণা করতে পারেননি, এভাবে রাতের গভীরে তাঁকে কোনো কথা না বলে হঠাৎ বাবা চলে যাবেন। মা রীতিমতো বিহ্বল হয়ে ছিলেন। তাঁকে জানালাম, বাবাকে শেষবারের জন্য দেখতে আমি আসছি।
অফিসকে জানিয়ে টিকিটের জন্য তড়িঘড়ি করে কথা বললাম ট্রাভেল এজেন্টের সঙ্গে। স্ত্রী ও আমাদের একমাত্র ছেলে অয়নকে রেখেই যাত্রা করলাম কলকাতায়। মিউনিখ ও মুম্বাই হয়ে কলকাতার নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু বিমানবন্দরে পৌঁছলাম বুধবার ভোর সাড়ে পাঁচটায়। ওখান থেকে আমাদের বালিগঞ্জের বাড়ি পারিজাত আবাসনে, বাবা-মায়ের ১০ তলার ফ্ল্যাটে।
আমাকে শেষবারের মতো দেখানোর জন্য বাবার মরদেহ রাখা হয়েছিল পিস হ্যাভেন নামে এক হিমঘরে। ছুটে গেলাম সেখানে। কিন্তু বাবাকে দেখা হলো না। পিস হ্যাভেন কর্তৃপক্ষ বাবার শবাধার রাখার কক্ষের দরজাটা খুলে দিলেও তাঁর মুখ আর দেখতে পারলাম না। ফিরে এলাম ভারী মন নিয়ে।
বাবা চেয়েছিলেন তাঁর মরদেহটা দান করে দিতে। বাবা ও মা দুজনেই তাঁদের মরদেহ ২০০৩ সালের ৪ এপ্রিল কলকাতার গণদর্পণকে দান করেছিলেন। আমি বাড়ি ফেরার পর মা বললেন, বাবার মরদেহটি তিনি সৎকার করতে চান। বাবার মৃত্যুর পর গণদর্পণের কর্মকর্তারা আমাদের বাড়িতে এসেছিলেন। মা তাদের বলে দিয়েছিলেন, বাবার দেহ তিনি দান করতে চান না। দান করার পর মৃতদেহটি যেভাবে কাটাছেঁড়া করা হবে, সেটা তিনি মেনে নিতে পারছিলেন না। মায়ের সঙ্গে সহমত আমরা বাবার সৎকারের উদ্যোগ নিই।
বাবার শেষ আনুষ্ঠানিকতা হয় বৃহস্পতিবার, কেওড়াতলায়। সে দিন কয়েকজন আত্মীয়ের সঙ্গে আমি ভোর ভোর চলে যাই পিস হ্যাভেনে। এ দিনই আমার বাবার মুখটি দেখার প্রথম সুযোগ ঘটে। সাদা ফুল ও মালায় সাজানো হলো বাবাকে। তাঁকে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হলো তাঁর দীর্ঘদিনের কর্মস্থল আনন্দবাজার পত্রিকার কার্যালয়ে। তারপর রবীন্দ্র সদনে, যাতে সাধারণ মানুষ তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে পারে। এরপর তাঁকে নেওয়া হলো সাহিত্য একাডেমি ভবনে। বাবা এর সভাপতি ছিলেন। সেখান থেকে বাবার বিদায়ী যাত্রা।
বাবা বলে গিয়েছিলেন তাঁর মৃত্যুর পর যেন কোনো শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান না হয়। তাই আমাদের পরিবার আর বাবার কৃত্তিবাস পত্রিকার উদ্যোগে ৪ নভেম্বর একটি স্মরণসভার আয়োজন করা হয়েছিল। রবীন্দ্র সদনে সে দিন তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। রবীন্দ্র সদনের বাইরেটাও উপচে পড়েছিল জনতায়। আমার ধারণা ছিল না, বাবার স্মরণসভায় এত মানুষের ভিড় হবে।
বাবা যে বড় মাপের লেখক ছিলেন, সে গর্বের তো আমিও একজন ভাগীদার ছিলাম। আমি বাবার মতো হতে পারিনি। সে প্রতিভা আমার ছিল না। বাবা ছিলেন লেখক, আমি হয়েছি প্রকৌশলী। ১৯৯০ সাল থেকে বোস্টনে আছি। এক ছেলে অয়ন মাত্র কদিন আগে, ৪ নভেম্বর, ছয় বছরে পা দিয়েছে। অয়নকে বাবা খুব ভালোবাসতেন। বোস্টনে এলে অয়নকে নিয়ে অনেকটা সময় কাটাতেন। ২০০০ সালে বাবা-মায়ের গাওয়া রবীন্দ্রসংগীতের একটি অ্যালবাম বের হয়েছে। অয়ন এখনো ভালোমতো বাংলা বলতে না পারলেও বাবা-মায়ের গাওয়া রবীন্দ্রসঙ্গংগীত ওর দারুণ পছন্দ। এখন আমি ওকে নিয়মিত ওকে বাবা-মায়ের গাওয়া রবীন্দ্রসংগীত শোনাচ্ছি।
বাবা প্রায় প্রতিবছরই মাকে নিয়ে বোস্টনে আসতেন। মাস দুয়েকের মতো থাকতেন। এখানে বসে লেখালেখির কাজই করতেন মূলত। বাবা চিরকাল হাতে লিখে গেছেন। কম্পিউটারের যুগ এলেও বাবা তাতে যোগ দেননি। মৃত্যুর সপ্তাহ দুই আগে হাতে লিখতে অসুবিধা হতো বলে রাহুল নামে এক অনুরাগীকে দিয়ে মুখে মুখে বলে লেখার চেষ্টা করেছেন। তবু তাঁর সর্বশেষ লেখা ছোটদের মহাভারত তিনি শেষ করে যেতে পারলেন না।
বাবার সাহিত্যসম্ভার তো বিপুল। আমি জানি না, কীভাবে স্মৃতিকে সংরক্ষণ করব। বাবার স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য একটি জাদুঘর ও মহাফেজখানা গড়ে তোলার একটি প্রস্তাব এসেছে। আমার বিশ্বাস, বাবার অনুরাগীরাই তাঁর স্মৃতিকে রক্ষা করবেন।
বাংলাদেশের মাদারীপুর জেলার মাইজপাড়া নামে যে গ্রামে বাবার জন্ম হয়েছিল, কখনো আমার সেখানে যাওয়া হয়নি। বাবার মুখে সেই গ্রাম আর বাংলাদেশ নিয়ে কত কথা শুনেছি। বাবা বেশি করে বলতেন বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসা আর আতিথেয়তার গল্প। আমি বাংলাদেশে গিয়েছিলাম আমার বয়স যখন আট বছর তখন। বাবার সঙ্গে তখন আরও ছিলেন দেশ পত্রিকার সম্পাদক সাগরময় ঘোষ। লেখক তারাপদ রায়ের টাঙ্গাইলের বাড়িতেও বাবা সেবার আমাদের নিয়ে গিয়েছিলেন। মনে পড়ে, খুব ভালো লেগেছিল বাংলাদেশকে।
১৮ নভেম্বর আমি বোস্টনে ফিরে যাব। কিছুদিন আমার কাছে রাখার জন্য মাকেও সঙ্গে নিয়ে যাব। মাকে আমার সঙ্গে থেকে যেতে বলেছিলাম। মা আমেরিকায় থেকে যেতে রাজি হননি। বাবাকেও যে কতবার আমেরিকায় থেকে যেতে বলেছি। বাবা রাজি হননি কখনো। তিনি বলতেন, কলকাতার চেয়ে আমার ভালো লাগার জায়গা আর কোথাও নেই।
এই কলকাতা থেকে আমি যখন বোস্টনে ফিরে যাব, বাবার জন্য আমার বুকটা ফাঁকা হয়ে থাকবে।
আমার চোখ থেকে তখন অজান্তেই জল গড়িয়ে পড়ছে। গাড়ি থেকে নেমে ঘরে ঢুকেছি। স্ত্রী চান্দ্রেয়ী লাহিড়ি অফিসফেরা আমাকে এ রকম বিপর্যস্ত দেখে হতচকিত হয়ে জানতে চাইল, ঘটনা কী? কোনো দুঃসংবাদ নয়তো? আমার ছয় বছরের শিশুপুত্র অয়ন এসেও জিজ্ঞেস করল, তোমার কী হয়েছে, বাবা? বললাম, তোমার দাদু আর নেই। আকাশে চলে গেছেন।
কলকাতায় গিয়ে বাবাকে শেষ দেখে এসেছিলাম জুলাই মাসে। এটা জানতাম যে, প্রোস্টেট গ্ল্যান্ড এনলার্জ্ড্ হওয়ায় বাবা কষ্ট পাচ্ছিলেন। কিন্তু কিছুতেই বুঝতে পারিনি, বড় কোনো রোগ বাবার শরীরে বাসা বেঁধে আছে। এভাবে যে বিনা নোটিশে বাবা চলে যাবেন, সেটি তো কল্পনায়ও ছিল না।
বাবা বলেছিলেন, শরীর ভালো থাকলে পুজোর পরে আমেরিকায় আসবেন। আমরা সবাই সেই আশায় প্রহর গুনছিলাম। বাবার চলে যাওয়ার খবরটা বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো এল। চলেও গেলেন দুর্গাপুজোর মধ্যেই, অষ্টমীর গভীর রাতে।
মৃত্যুর খবরটা শুনে কলকাতায় বাবার চিকিৎসক রঞ্জন ভট্টাচার্যকে ফোন করলাম। কথা বললাম মায়ের সঙ্গে। মাও মোটেই ধারণা করতে পারেননি, এভাবে রাতের গভীরে তাঁকে কোনো কথা না বলে হঠাৎ বাবা চলে যাবেন। মা রীতিমতো বিহ্বল হয়ে ছিলেন। তাঁকে জানালাম, বাবাকে শেষবারের জন্য দেখতে আমি আসছি।
অফিসকে জানিয়ে টিকিটের জন্য তড়িঘড়ি করে কথা বললাম ট্রাভেল এজেন্টের সঙ্গে। স্ত্রী ও আমাদের একমাত্র ছেলে অয়নকে রেখেই যাত্রা করলাম কলকাতায়। মিউনিখ ও মুম্বাই হয়ে কলকাতার নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু বিমানবন্দরে পৌঁছলাম বুধবার ভোর সাড়ে পাঁচটায়। ওখান থেকে আমাদের বালিগঞ্জের বাড়ি পারিজাত আবাসনে, বাবা-মায়ের ১০ তলার ফ্ল্যাটে।
আমাকে শেষবারের মতো দেখানোর জন্য বাবার মরদেহ রাখা হয়েছিল পিস হ্যাভেন নামে এক হিমঘরে। ছুটে গেলাম সেখানে। কিন্তু বাবাকে দেখা হলো না। পিস হ্যাভেন কর্তৃপক্ষ বাবার শবাধার রাখার কক্ষের দরজাটা খুলে দিলেও তাঁর মুখ আর দেখতে পারলাম না। ফিরে এলাম ভারী মন নিয়ে।
বাবা চেয়েছিলেন তাঁর মরদেহটা দান করে দিতে। বাবা ও মা দুজনেই তাঁদের মরদেহ ২০০৩ সালের ৪ এপ্রিল কলকাতার গণদর্পণকে দান করেছিলেন। আমি বাড়ি ফেরার পর মা বললেন, বাবার মরদেহটি তিনি সৎকার করতে চান। বাবার মৃত্যুর পর গণদর্পণের কর্মকর্তারা আমাদের বাড়িতে এসেছিলেন। মা তাদের বলে দিয়েছিলেন, বাবার দেহ তিনি দান করতে চান না। দান করার পর মৃতদেহটি যেভাবে কাটাছেঁড়া করা হবে, সেটা তিনি মেনে নিতে পারছিলেন না। মায়ের সঙ্গে সহমত আমরা বাবার সৎকারের উদ্যোগ নিই।
বাবার শেষ আনুষ্ঠানিকতা হয় বৃহস্পতিবার, কেওড়াতলায়। সে দিন কয়েকজন আত্মীয়ের সঙ্গে আমি ভোর ভোর চলে যাই পিস হ্যাভেনে। এ দিনই আমার বাবার মুখটি দেখার প্রথম সুযোগ ঘটে। সাদা ফুল ও মালায় সাজানো হলো বাবাকে। তাঁকে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হলো তাঁর দীর্ঘদিনের কর্মস্থল আনন্দবাজার পত্রিকার কার্যালয়ে। তারপর রবীন্দ্র সদনে, যাতে সাধারণ মানুষ তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে পারে। এরপর তাঁকে নেওয়া হলো সাহিত্য একাডেমি ভবনে। বাবা এর সভাপতি ছিলেন। সেখান থেকে বাবার বিদায়ী যাত্রা।
বাবা বলে গিয়েছিলেন তাঁর মৃত্যুর পর যেন কোনো শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান না হয়। তাই আমাদের পরিবার আর বাবার কৃত্তিবাস পত্রিকার উদ্যোগে ৪ নভেম্বর একটি স্মরণসভার আয়োজন করা হয়েছিল। রবীন্দ্র সদনে সে দিন তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। রবীন্দ্র সদনের বাইরেটাও উপচে পড়েছিল জনতায়। আমার ধারণা ছিল না, বাবার স্মরণসভায় এত মানুষের ভিড় হবে।
বাবা যে বড় মাপের লেখক ছিলেন, সে গর্বের তো আমিও একজন ভাগীদার ছিলাম। আমি বাবার মতো হতে পারিনি। সে প্রতিভা আমার ছিল না। বাবা ছিলেন লেখক, আমি হয়েছি প্রকৌশলী। ১৯৯০ সাল থেকে বোস্টনে আছি। এক ছেলে অয়ন মাত্র কদিন আগে, ৪ নভেম্বর, ছয় বছরে পা দিয়েছে। অয়নকে বাবা খুব ভালোবাসতেন। বোস্টনে এলে অয়নকে নিয়ে অনেকটা সময় কাটাতেন। ২০০০ সালে বাবা-মায়ের গাওয়া রবীন্দ্রসংগীতের একটি অ্যালবাম বের হয়েছে। অয়ন এখনো ভালোমতো বাংলা বলতে না পারলেও বাবা-মায়ের গাওয়া রবীন্দ্রসঙ্গংগীত ওর দারুণ পছন্দ। এখন আমি ওকে নিয়মিত ওকে বাবা-মায়ের গাওয়া রবীন্দ্রসংগীত শোনাচ্ছি।
বাবা প্রায় প্রতিবছরই মাকে নিয়ে বোস্টনে আসতেন। মাস দুয়েকের মতো থাকতেন। এখানে বসে লেখালেখির কাজই করতেন মূলত। বাবা চিরকাল হাতে লিখে গেছেন। কম্পিউটারের যুগ এলেও বাবা তাতে যোগ দেননি। মৃত্যুর সপ্তাহ দুই আগে হাতে লিখতে অসুবিধা হতো বলে রাহুল নামে এক অনুরাগীকে দিয়ে মুখে মুখে বলে লেখার চেষ্টা করেছেন। তবু তাঁর সর্বশেষ লেখা ছোটদের মহাভারত তিনি শেষ করে যেতে পারলেন না।
বাবার সাহিত্যসম্ভার তো বিপুল। আমি জানি না, কীভাবে স্মৃতিকে সংরক্ষণ করব। বাবার স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য একটি জাদুঘর ও মহাফেজখানা গড়ে তোলার একটি প্রস্তাব এসেছে। আমার বিশ্বাস, বাবার অনুরাগীরাই তাঁর স্মৃতিকে রক্ষা করবেন।
বাংলাদেশের মাদারীপুর জেলার মাইজপাড়া নামে যে গ্রামে বাবার জন্ম হয়েছিল, কখনো আমার সেখানে যাওয়া হয়নি। বাবার মুখে সেই গ্রাম আর বাংলাদেশ নিয়ে কত কথা শুনেছি। বাবা বেশি করে বলতেন বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসা আর আতিথেয়তার গল্প। আমি বাংলাদেশে গিয়েছিলাম আমার বয়স যখন আট বছর তখন। বাবার সঙ্গে তখন আরও ছিলেন দেশ পত্রিকার সম্পাদক সাগরময় ঘোষ। লেখক তারাপদ রায়ের টাঙ্গাইলের বাড়িতেও বাবা সেবার আমাদের নিয়ে গিয়েছিলেন। মনে পড়ে, খুব ভালো লেগেছিল বাংলাদেশকে।
১৮ নভেম্বর আমি বোস্টনে ফিরে যাব। কিছুদিন আমার কাছে রাখার জন্য মাকেও সঙ্গে নিয়ে যাব। মাকে আমার সঙ্গে থেকে যেতে বলেছিলাম। মা আমেরিকায় থেকে যেতে রাজি হননি। বাবাকেও যে কতবার আমেরিকায় থেকে যেতে বলেছি। বাবা রাজি হননি কখনো। তিনি বলতেন, কলকাতার চেয়ে আমার ভালো লাগার জায়গা আর কোথাও নেই।
এই কলকাতা থেকে আমি যখন বোস্টনে ফিরে যাব, বাবার জন্য আমার বুকটা ফাঁকা হয়ে থাকবে।
No comments