কর্মসংস্থানের তাগিদ দিয়ে শুরু সামাজিক ব্যবসা সম্মেলন by আসজাদুল কিবরিয়া
সামাজিক ব্যবসা মানুষের জন্য কতটা কর্মসংস্থান তৈরি করতে সক্ষম? চতুর্থ বৈশ্বিক সামাজিক ব্যবসা সম্মেলন শুরুর আগে প্রশ্নটি বারবার ঘুরেফিরে আসছিল। আর এটাকেই এখন বিবেচনা করা হচ্ছে সামাজিক ব্যবসার প্রকৃত সাফল্য পরিমাপের অন্যতম মাপকাঠি হিসেবে। আর তাই আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মেলনের উদ্বোধন পর্বে যখন জানানো হলো, বিশ্বব্যাপী এ পর্যন্ত প্রায় এক কোটি ৯৭ লাখ কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে; তখন বিস্ময়ের পাশাপাশি এ প্রশ্নও এল, এটা কীভাবে সম্ভব হলো!
অবশ্য এ ধারণার প্রবর্তক শান্তিতে নোবেল বিজয়ী বাংলাদেশি অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস তাৎক্ষণিকভাবে স্পষ্ট করে দিলেন বিষয়টি। বললেন, এ কর্মসংস্থানের বড় একটি অংশ তৈরি হয়েছে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের মাধ্যমে। কাজেই ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমকে পৃথক করে অন্যান্য সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে সৃষ্ট কর্মসংস্থানকে হিসাব করতে হবে।
সে হিসাব পাওয়াটা একটু সময়সাপেক্ষ। তাই বলে সামাজিক ব্যবসায় জড়িত ব্যক্তিরা উচ্চাকাঙ্ক্ষা থেকে বিরত থাকতে রাজি নন। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা প্রতিনিধিরা সবাই মিলে তাই জানিয়ে দিলেন, ২০১৫ সাল নাগাদ তাঁরা কর্মসংস্থান মোট দুই কোটি ২১ লাখে উন্নীত করতে চান। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় শুরু হওয়া চতুর্থ বৈশ্বিক সামাজিক ব্যবসা সম্মেলনের উদ্বোধন পর্বে এই আশাবাদ ব্যক্ত হলো বিপুল করতালি ও হর্ষধ্বনির মধ্য দিয়ে।
স্পেনের রানি সোফিয়া সকালে ভিয়েনার অস্ট্রিয়া সেন্টারে (আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র) তিন দিনব্যাপী এ সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী ভাষণে রানি সোফিয়া বলেন, ‘ক্ষুদ্রঋণের সাফল্যের পর মুহাম্মদ ইউনূসের নতুন প্রচেষ্টা এ সামাজিক ব্যবসা সমাজের আয়বৈষম্য কমাতে ভূমিকা রাখবে। আমরা আশা করি, গতানুগতিক ব্যবসার ধারণার বাইরে এসে ব্যবসায় উদ্যোক্তারাও এখন সামাজিক ব্যবসায় নিয়োজিত হবেন।’
জার্মানির গ্রামীণ ক্রিয়েটিভ ল্যাব এ সম্মেলনের মূল আয়োজক। শান্তিতে নোবেল বিজয়ী বাংলাদেশি অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সামাজিক ব্যবসা-দর্শনকে দুনিয়াজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রত্যয় নিয়ে ২০০৯ সাল থেকে প্রতিবছর আন্তর্জাতিকভাবে এ সম্মেলনের আয়োজন করা হচ্ছে। এবারেরটি চতুর্থ সম্মেলন। এবারের সম্মেলনে সারা বিশ্বের ৬০০ জনের বেশি গবেষক, বিশেষজ্ঞসহ রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারক, ব্যবসায়ী, শিক্ষাবিদ, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি অংশ নিচ্ছেন।
উদ্বোধন পর্বে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘মানুষের সৃজনশীল ক্ষমতার কাছে দুনিয়ার সব সমস্যা হার মানতে বাধ্য। কিন্তু আমরা এই সৃজনশীল ক্ষমতার প্রয়োগ ঘটাতে পারছি না। সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে সেই সৃজনশীল ক্ষমতা প্রয়োগ করা সম্ভব। কেননা, এখানে নতুন চিন্তা, নতুন ধ্যান-ধারণা প্রয়োজন।’
বিশ্ব অর্থনীতির সংকটকে বর্তমান অর্থনৈতিক দর্শন ও পদ্ধতির সীমাবদ্ধতার বিষয়ে জেগে ওঠার একটি বার্তা হিসেবে উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘এখনো আমরা জেগে উঠছি না। কিন্তু জেগে উঠতে হবেই। যে ব্যবস্থা মানুষকে সৃজনী ক্ষমতা ব্যবহারে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, মানুষের কাজের সুযোগ দেয় না, সেই ব্যবস্থাই কেন মেনে নিতে হবে? কাজেই, আমরা এ ব্যবস্থা থেকে সরে আসতে চাই। আমরা চাই দুনিয়ার সব সক্ষম মানুষের জন্য কাজের সুযোগ।’
অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, ‘সামাজিক ব্যবসা দিয়ে সবার কর্মসংস্থান হয়ে যাবে—এমন কোনো অবাস্তব কথা আমরা বলছি না। তবে আমরা বিশ্বাস করি, কিছুটা কর্মসংস্থান হবে, যা গোটা সমস্যার ছোট্ট একটি অংশ সমাধান করবে। এভাবেই আমরা এগিয়ে যেতে চাই।’
সম্মেলনের উদ্বোধন পর্ব সঞ্চালনা করেন অ্যালেন ওয়েবার। স্বাগত ভাষণ দেন সম্মেলনের প্রধান হ্যান্স রাইটজ। আরও উপস্থিত ছিলেন বাহরাইনের সামাজিক উন্নয়নমন্ত্রী ফাতিমা মোহাম্মদ আল বালোশি, জাতিসংঘের যুব দূত ও অভিনেত্রী মনিকো কোলম্যান, ইউনূস সোশ্যাল বিজনেসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাসকিয়া ব্রুয়েসটেন, মুহাম্মদ ইউনূসের মেয়ে মনিকা ইউনূস প্রমুখ। এ পর্বে বাংলাদেশ থেকে আসা প্রতিনিধিদের মঞ্চে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, সামাজিক ব্যবসায় উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীরা ব্যবসার মুনাফা বা লভ্যাংশ গ্রহণ করেন না। এ নীতি কঠোরভাবে অনুসরণ করা না হলে সামাজিক ব্যবসা প্রকৃত রূপ নেয় না। উদ্যোক্তা বা বিনিয়োগকারীরা শুধু তাঁদের মূল বিনিয়োগকৃত অর্থ ফেরত নিতে পারেন। এর বাইরে অন্য কোনো কিছু গ্রহণ করার সুযোগ নেই। আর মুনাফা প্রতিষ্ঠানের সম্প্রসারণে পুনর্বিনিয়োগ করা হয়। সমাজের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে ব্যবসার পদ্ধতি প্রয়োগ করার মাধ্যমে সামাজিক ব্যবসা এগিয়ে যায়।
সম্মেলনের মূল আয়োজন শেষ হবে আজ শুক্রবার সন্ধ্যায়। আর কাল শনিবার থাকবে কিছু আলোচনা।
এদিকে গত বুধবার মডুল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাবিদ ও ছাত্রছাত্রীরা পৃথকভাবে সামাজিক ব্যবসার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন। বিশেষত, বিশ্বের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে আসা ছাত্রছাত্রীরা নিজের দেশের পরিবেশ ও সামাজিক বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে সামাজিক ব্যবসা কীভাবে সহায়ক হতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা ও মতবিনিময় করেন। তাঁরা অধ্যাপক ইউনূসের কাছে বিভিন্ন বিষয়েও জানতে চান।
সে হিসাব পাওয়াটা একটু সময়সাপেক্ষ। তাই বলে সামাজিক ব্যবসায় জড়িত ব্যক্তিরা উচ্চাকাঙ্ক্ষা থেকে বিরত থাকতে রাজি নন। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা প্রতিনিধিরা সবাই মিলে তাই জানিয়ে দিলেন, ২০১৫ সাল নাগাদ তাঁরা কর্মসংস্থান মোট দুই কোটি ২১ লাখে উন্নীত করতে চান। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় শুরু হওয়া চতুর্থ বৈশ্বিক সামাজিক ব্যবসা সম্মেলনের উদ্বোধন পর্বে এই আশাবাদ ব্যক্ত হলো বিপুল করতালি ও হর্ষধ্বনির মধ্য দিয়ে।
স্পেনের রানি সোফিয়া সকালে ভিয়েনার অস্ট্রিয়া সেন্টারে (আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র) তিন দিনব্যাপী এ সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী ভাষণে রানি সোফিয়া বলেন, ‘ক্ষুদ্রঋণের সাফল্যের পর মুহাম্মদ ইউনূসের নতুন প্রচেষ্টা এ সামাজিক ব্যবসা সমাজের আয়বৈষম্য কমাতে ভূমিকা রাখবে। আমরা আশা করি, গতানুগতিক ব্যবসার ধারণার বাইরে এসে ব্যবসায় উদ্যোক্তারাও এখন সামাজিক ব্যবসায় নিয়োজিত হবেন।’
জার্মানির গ্রামীণ ক্রিয়েটিভ ল্যাব এ সম্মেলনের মূল আয়োজক। শান্তিতে নোবেল বিজয়ী বাংলাদেশি অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সামাজিক ব্যবসা-দর্শনকে দুনিয়াজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রত্যয় নিয়ে ২০০৯ সাল থেকে প্রতিবছর আন্তর্জাতিকভাবে এ সম্মেলনের আয়োজন করা হচ্ছে। এবারেরটি চতুর্থ সম্মেলন। এবারের সম্মেলনে সারা বিশ্বের ৬০০ জনের বেশি গবেষক, বিশেষজ্ঞসহ রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারক, ব্যবসায়ী, শিক্ষাবিদ, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি অংশ নিচ্ছেন।
উদ্বোধন পর্বে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘মানুষের সৃজনশীল ক্ষমতার কাছে দুনিয়ার সব সমস্যা হার মানতে বাধ্য। কিন্তু আমরা এই সৃজনশীল ক্ষমতার প্রয়োগ ঘটাতে পারছি না। সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে সেই সৃজনশীল ক্ষমতা প্রয়োগ করা সম্ভব। কেননা, এখানে নতুন চিন্তা, নতুন ধ্যান-ধারণা প্রয়োজন।’
বিশ্ব অর্থনীতির সংকটকে বর্তমান অর্থনৈতিক দর্শন ও পদ্ধতির সীমাবদ্ধতার বিষয়ে জেগে ওঠার একটি বার্তা হিসেবে উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘এখনো আমরা জেগে উঠছি না। কিন্তু জেগে উঠতে হবেই। যে ব্যবস্থা মানুষকে সৃজনী ক্ষমতা ব্যবহারে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, মানুষের কাজের সুযোগ দেয় না, সেই ব্যবস্থাই কেন মেনে নিতে হবে? কাজেই, আমরা এ ব্যবস্থা থেকে সরে আসতে চাই। আমরা চাই দুনিয়ার সব সক্ষম মানুষের জন্য কাজের সুযোগ।’
অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, ‘সামাজিক ব্যবসা দিয়ে সবার কর্মসংস্থান হয়ে যাবে—এমন কোনো অবাস্তব কথা আমরা বলছি না। তবে আমরা বিশ্বাস করি, কিছুটা কর্মসংস্থান হবে, যা গোটা সমস্যার ছোট্ট একটি অংশ সমাধান করবে। এভাবেই আমরা এগিয়ে যেতে চাই।’
সম্মেলনের উদ্বোধন পর্ব সঞ্চালনা করেন অ্যালেন ওয়েবার। স্বাগত ভাষণ দেন সম্মেলনের প্রধান হ্যান্স রাইটজ। আরও উপস্থিত ছিলেন বাহরাইনের সামাজিক উন্নয়নমন্ত্রী ফাতিমা মোহাম্মদ আল বালোশি, জাতিসংঘের যুব দূত ও অভিনেত্রী মনিকো কোলম্যান, ইউনূস সোশ্যাল বিজনেসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাসকিয়া ব্রুয়েসটেন, মুহাম্মদ ইউনূসের মেয়ে মনিকা ইউনূস প্রমুখ। এ পর্বে বাংলাদেশ থেকে আসা প্রতিনিধিদের মঞ্চে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, সামাজিক ব্যবসায় উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীরা ব্যবসার মুনাফা বা লভ্যাংশ গ্রহণ করেন না। এ নীতি কঠোরভাবে অনুসরণ করা না হলে সামাজিক ব্যবসা প্রকৃত রূপ নেয় না। উদ্যোক্তা বা বিনিয়োগকারীরা শুধু তাঁদের মূল বিনিয়োগকৃত অর্থ ফেরত নিতে পারেন। এর বাইরে অন্য কোনো কিছু গ্রহণ করার সুযোগ নেই। আর মুনাফা প্রতিষ্ঠানের সম্প্রসারণে পুনর্বিনিয়োগ করা হয়। সমাজের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে ব্যবসার পদ্ধতি প্রয়োগ করার মাধ্যমে সামাজিক ব্যবসা এগিয়ে যায়।
সম্মেলনের মূল আয়োজন শেষ হবে আজ শুক্রবার সন্ধ্যায়। আর কাল শনিবার থাকবে কিছু আলোচনা।
এদিকে গত বুধবার মডুল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাবিদ ও ছাত্রছাত্রীরা পৃথকভাবে সামাজিক ব্যবসার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন। বিশেষত, বিশ্বের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে আসা ছাত্রছাত্রীরা নিজের দেশের পরিবেশ ও সামাজিক বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে সামাজিক ব্যবসা কীভাবে সহায়ক হতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা ও মতবিনিময় করেন। তাঁরা অধ্যাপক ইউনূসের কাছে বিভিন্ন বিষয়েও জানতে চান।
No comments