রোজার বাজারে লঙ্কাকা- মনিটরিং টিমের ওপর হামলা- বেড়েছে তেল চিনি ছোলা ডাল মুড়ির দাম by মিজান চৌধুরী
রমজানের বাজারে চলছে লঙ্কাকা-। বৃহস্পতিবার এক দফা মনিটরিং টিমের ওপর হামলা করেছে ব্যবসায়ীরা। দায়ী ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পর্যাপ্ত র্যাব ও পুলিশ চেয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী চিঠি লিখেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে। এদিকে একই সঙ্গে চলছে বাজারে মূল্য সন্ত্রাসের দৌরাত্ম্য।
কোন পণ্যের দাম কমছে না। ইতোমধ্যে দাম কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ওই প্রতিশ্রুতি দিয়েও বাস্তবায়ন করা হয়নি। সব মিলে শঙ্কিত হয়ে পড়েছে সাধারণ ক্রেতা। নিত্যপণ্যের এমন এক অদ্ভুত আচরণের মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে ধর্মীয় বড় উৎসব পবিত্র রোজার মাস।
আজ শুক্রবার, সন্ধ্যার আকাশে চাঁদ দেখা দিলে শনিবার হচ্ছে প্রথম রোজা। রোজা এলেই জিনিসপত্রের দাম বাড়বে। এমন রেওয়াজ বিগত দিনগুলোর। এ বছরও তেমন ব্যত্যয় ঘটেনি। ইতোমধ্যে ভোজ্যতেল, চিনি, ছোলা, মুড়ি, ডালের দাম বেড়ে গেছে। যদিও বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে ইতোমধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান টিসিবি স্বল্প মূল্যে বাজারে চিনি, ডাল, ছোলা ও ভোজ্যতেল বিক্রি করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে রোজা সামনে রেখে বাজারে মূল্যসন্ত্রাস চলছে। মূল্যসন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করতে ১৪টি মনিটরিং টিম মাঠে নেমেছে। গোয়েন্দা সংস্থাও নজরদারি করছে। ওদিকে ব্যবসায়ীরা হয়ে উঠেছে বেপরোয়া। কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছে না মনিটরিং টিমের কার্যক্রমকে। বৃহস্পতিবার দয়াগঞ্জের বাজারে মনিটরিং টিমের পর্যবেক্ষণকালে হামলা চালানো হয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর দয়াগঞ্জ বাজারে বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের ডেপুটি চীফ শেখ লিয়াকত আলীর নেতৃত্বে বাজার মনিটরিং টিম অভিযান চালায়। এ সময় ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্বে ছিলেন নাসরিন সুলতানা। টিমের সদস্য সংখ্যা ছিল ৯ জন। সহায়তায় কয়েক পুলিশ ছিল। এ সময় স্থানীয় ব্যবসায়ী একটি গ্রুপ ওই টিমের ওপর পাথর ছুড়ে হামলা চালায়। এ সময় সদস্যরা আত্মরক্ষার জন্য পাশের দোকানে আশ্রয় গ্রহণ করেন। পরে বাজার কমিটির সহায়তায় মনিটরিং টিমের সদস্যরা সেখান থেকে বেরিয়ে আসেন।
এদিকে বাণিজ্যমন্ত্রী বৃহস্পতিবার মনিটরিং টিমের ওপর হামলার ঘটনার ব্যাপারে বলেছেন রমজান উপলক্ষে পণ্যের সরবরাহ চেইনে কেউ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন এক কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে জানান, বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য পর্যাপ্ত র্যাব ও পুলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। মাত্র চার পুলিশ ও র্যাব দিয়ে মনিটরিং টিম চালানো হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পর্যাপ্ত লোকজন চেয়েও পাওয়া যাচ্ছে না। এত অল্প সংখ্যক লোক দিয়ে বাজার মনিটরিং প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় যারা মনিটরিংয়ে যাচ্ছে তাদের জীবনের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
এদিকে বাজারে মূল্যসন্ত্রাসে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে সাধারণ ক্রেতারা। কোন পণ্যের দাম কমছে না। ইতোমধ্যে চিনির কেজি উঠেছে ৫৫ থেকে ৫৬ টাকা। কিছুদিন আগেও ৫২ টাকা ছিল। কিন্তু শিল্প মন্ত্রণালয় ৬০ টাকা নির্ধারণ করে বাজারে চিনি বিক্রি শুরু করে। এর ফলে বেসরকারী মিল মালিকরা ৫২ থেকে কেজিতে ৪ টাকা বাড়িয়ে ৫৬ টাকায় নিয়েছে। বেসরকারী মিলগুলোর চিনির দাম বাড়াতে সহায়তার জন্য সরকারের চিনির দাম ৬০ টাকা করা হয়েছে কি না, জনকণ্ঠের পক্ষ থেকে সম্প্রতি এক ব্রিফিংয়ে শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি উত্তর এড়িয়ে গেছেন। অবশ্য বর্তমান চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের চিনি ৫৫ টাকা করা হয়েছে।
এদিকে কোন কারণ ছাড়াই ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। রোজার মাসে প্রায় ১ লাখ ৭৫ হাজার মেট্রিক টন ভোজ্যতেল প্রয়োজন হয়। অন্য মাসের চাহিদার চেয়ে প্রায় ৫০ হাজার টন বেশি হচ্ছে। কিন্তু এই সুযোগে এক সপ্তাহের ব্যবধানে লিটারে ৮ টাকা বাড়ানো হয়েছে। প্রতি লিটার সয়াবিন কয়েকদিন আগেও বিক্রি হয়েছে ১১৮ টাকায়। ওই তেল এখন বিক্রি হচ্ছে ১২৬ টাকায়। এদিকে ভোজ্যতেলের মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে গোয়েন্দা সংস্থা কয়েক মিল মালিকের ওপর নজরদারি করছে। কারণ ওইসব ব্যবসায়ী ভোজ্যতেলের দাম বাড়াচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যে কোন সময় কয়েক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে।
মূল্যসন্ত্রাস চালানোর পরও ব্যবসায়ীরা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করছে না। বৃহস্পতিবার থেকে ভোজ্যতেলের দাম কমানোর প্রতিশ্রুতি দেয় মিল মালিকরা। কিন্তু বৃহস্পতিবার বিকেলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করে জানা গেছে মিল মালিকরা প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করেনি। এছাড়া লবণের দাম কমানোর প্রতিশ্রুতি দিলেও শেষপর্যন্ত হ্রাস করেনি।
No comments