চরাচর-গঙ্গাসাগর গণহত্যা by বিশ্বজিৎ পাল বাবু
একাত্তরের আগস্ট মাস। এক দুপুরে গ্রামের নিরাপত্তার জন্য পাহারা বসাতে সভা করার কথা বলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার মোগড়া ইউনিয়নের জাঙ্গাল ও টানমান্দাইল গ্রামের ১৩০ জনকে আনা হয় টানমান্দাইলের একটি বাড়িতে। সেখানে তাঁদের আটকে রেখে চলতে থাকে অবর্ণনীয় নির্যাতন। এমনকি পানি পর্যন্ত খেতে দেওয়া হয়নি।
পানি চাইলে মুখে প্রস্রাব তুলে দেওয়া হয়। একসময় বেছে বেছে যেসব পরিবারে মুক্তিযোদ্ধা আছে, সেসব পরিবারের ৩২ জনকে আলাদা করে নিয়ে যাওয়া হয় গঙ্গাসাগর দিঘির পাড়ে।
২৩ আগস্ট গভীর রাত। মুক্তিবাহিনীর পরিবারের ওই ৩২ জনকে সারি বেঁধে দাঁড় করানো হয়। টানা গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয় তাঁদের। গুলিতে মৃত্যু না হলে বেয়নেটের আঘাতে অনেকের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। কাউকে আবার অর্ধমৃত অবস্থায় কবর দেওয়া হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার গঙ্গাসাগর গণহত্যা নিয়ে এমনই তথ্য জানালেন সেদিন সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া একাধিক ব্যক্তি, স্থানীয় লোকজন ও মুক্তিযোদ্ধারা। তাঁরা আরো জানান, স্বাধীনতাযুদ্ধের পর কারো পকেটে থাকা রুমাল, পরনে থাকা জামা ও পাঞ্জাবি দেখে স্বজনরা লাশ শনাক্ত করেন।
টানমান্দাইল ও জাঙ্গাল গ্রামের ওই ৩২ মুক্তিকামী মানুষ শুয়ে আছেন গঙ্গাসাগর গণকবরে। গণকবরে যাঁরা শুয়ে আছেন, তাঁরা হলেন_আবুল ফায়েজ, রিয়াজ উদ্দিন, গোলাম কাদির, তারু মিয়া, সামছুল হক সরকার, ডা. আবু তাহের, আবুল হাসিম মোল্লা, গোলাম মাওলা মোল্লা, গনি মিয়া, আবুল বাসার, হায়দার আলী, আবদুস সোবহান, মালু মিয়া, রাজু মিয়া, তোতা মিয়া, আবদুল হান্নান, সারজুল হক, আবদুল মন্নাফ, আবদুল খালেক, তারা চান্দ মোল্লা, বাবরু মিয়া, খেলু মিয়া, জজু মিয়া, ওমর আলী, সাধন মিয়া, মোসলেম মিয়া, বেঙ্গুর আলী, মালু মিয়া, সমল মিয়া, আবদুল আলীমসহ অজ্ঞাত দুইজন।
সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া বাশার মৌলভী ও আবদুল মক্কি সম্প্রতি বর্ণনা দেন সেদিনকার ভয়াবহতার। তাঁরা জানান, আজও এ কথা মনে হলে গা শিউরে ওঠে। ওই ঘটনায় শহীদ আবদুল আলীমের স্ত্রী রাবেয়া খাতুন ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, 'অনেক হত্যারই বিচার হয়; কিন্তু এ রকম একটি গণহত্যার বিচার এখনো হলো না। মৃত্যুর আগে ঘাতকদের বিচার দেখে যেতে চাই।'
শহীদ ডা. আবু তাহেরের স্ত্রী বানু বিবি জানান, বঙ্গবন্ধুর গলায় মালা পরানোই ছিল তাঁর স্বামীর অপরাধ! যে কারণে পাকিস্তানি হানাদাররা তাঁকে খুঁজে বেড়াত। কখনো মাথা ন্যাড়া করে, কখনো অন্যভাবে চেহারার পরিবর্তন করেও তিনি হানাদারদের কবল থেকে রক্ষা পাননি। একাত্তরের বর্বরতার সাক্ষী এই গঙ্গাসাগর গণকবর। ২০০১ সালের ২৩ এপ্রিল গণকবরের স্মৃতি রক্ষায় ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। বেষ্টনী দেওয়া ছাড়া কোনো উদ্যোগই নেওয়া হয়নি গণকবর রক্ষায়। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে গণকবরটি বিলীন হতে চলেছে। এলাকাবাসী গণকবরটি রক্ষার জন্য সরকারের জরুবি উদ্যোগ দাবি করেছে।
বিশ্বজিৎ পাল বাবু
২৩ আগস্ট গভীর রাত। মুক্তিবাহিনীর পরিবারের ওই ৩২ জনকে সারি বেঁধে দাঁড় করানো হয়। টানা গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয় তাঁদের। গুলিতে মৃত্যু না হলে বেয়নেটের আঘাতে অনেকের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। কাউকে আবার অর্ধমৃত অবস্থায় কবর দেওয়া হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার গঙ্গাসাগর গণহত্যা নিয়ে এমনই তথ্য জানালেন সেদিন সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া একাধিক ব্যক্তি, স্থানীয় লোকজন ও মুক্তিযোদ্ধারা। তাঁরা আরো জানান, স্বাধীনতাযুদ্ধের পর কারো পকেটে থাকা রুমাল, পরনে থাকা জামা ও পাঞ্জাবি দেখে স্বজনরা লাশ শনাক্ত করেন।
টানমান্দাইল ও জাঙ্গাল গ্রামের ওই ৩২ মুক্তিকামী মানুষ শুয়ে আছেন গঙ্গাসাগর গণকবরে। গণকবরে যাঁরা শুয়ে আছেন, তাঁরা হলেন_আবুল ফায়েজ, রিয়াজ উদ্দিন, গোলাম কাদির, তারু মিয়া, সামছুল হক সরকার, ডা. আবু তাহের, আবুল হাসিম মোল্লা, গোলাম মাওলা মোল্লা, গনি মিয়া, আবুল বাসার, হায়দার আলী, আবদুস সোবহান, মালু মিয়া, রাজু মিয়া, তোতা মিয়া, আবদুল হান্নান, সারজুল হক, আবদুল মন্নাফ, আবদুল খালেক, তারা চান্দ মোল্লা, বাবরু মিয়া, খেলু মিয়া, জজু মিয়া, ওমর আলী, সাধন মিয়া, মোসলেম মিয়া, বেঙ্গুর আলী, মালু মিয়া, সমল মিয়া, আবদুল আলীমসহ অজ্ঞাত দুইজন।
সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া বাশার মৌলভী ও আবদুল মক্কি সম্প্রতি বর্ণনা দেন সেদিনকার ভয়াবহতার। তাঁরা জানান, আজও এ কথা মনে হলে গা শিউরে ওঠে। ওই ঘটনায় শহীদ আবদুল আলীমের স্ত্রী রাবেয়া খাতুন ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, 'অনেক হত্যারই বিচার হয়; কিন্তু এ রকম একটি গণহত্যার বিচার এখনো হলো না। মৃত্যুর আগে ঘাতকদের বিচার দেখে যেতে চাই।'
শহীদ ডা. আবু তাহেরের স্ত্রী বানু বিবি জানান, বঙ্গবন্ধুর গলায় মালা পরানোই ছিল তাঁর স্বামীর অপরাধ! যে কারণে পাকিস্তানি হানাদাররা তাঁকে খুঁজে বেড়াত। কখনো মাথা ন্যাড়া করে, কখনো অন্যভাবে চেহারার পরিবর্তন করেও তিনি হানাদারদের কবল থেকে রক্ষা পাননি। একাত্তরের বর্বরতার সাক্ষী এই গঙ্গাসাগর গণকবর। ২০০১ সালের ২৩ এপ্রিল গণকবরের স্মৃতি রক্ষায় ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। বেষ্টনী দেওয়া ছাড়া কোনো উদ্যোগই নেওয়া হয়নি গণকবর রক্ষায়। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে গণকবরটি বিলীন হতে চলেছে। এলাকাবাসী গণকবরটি রক্ষার জন্য সরকারের জরুবি উদ্যোগ দাবি করেছে।
বিশ্বজিৎ পাল বাবু
No comments