রেলে খুন-দমন করতে হবে দুর্বৃত্তদের
মাত্র এক মাসের মধ্যে ৪৭ জন মানুষ খুন হয়েছে রেলে। এটা যদি সারা বাংলাদেশের পরিসংখ্যান হতো, তাহলেও মেনে নেওয়া কঠিন হতো। অথচ এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের তথ্য জয়দেবপুর-টাঙ্গাইল রেলপথের কিছু অংশের। বাড়িমুখো যাত্রীদের টাকাকড়ি ছিনিয়ে নিচ্ছে ছিনতাইকারীরা।
কার্য উদ্ধার হলে যাত্রীকে চলন্ত ট্রেন থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিচ্ছে। বৃহস্পতিবার রাতেই তিনজনকে চলন্ত ট্রেন থেকে ধাক্কা দিয়ে খুন করেছে দুর্বৃত্তরা। তার আগে তাদের সর্বস্ব কেড়ে নিয়েছে। শুক্রবারও একজনকে খুন করেছে। কাজ শেষ করে ওরা নিরীহ যাত্রীদের চলন্ত গাড়ি থেকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়। আর এই নৃশংসতা বেড়েছে গত এক মাসে। পত্রিকা ও টেলিভিশন চ্যানেলগুলো বেশ কিছুদিন ধরে সংবাদ প্রকাশ করে চলছে। কিন্তু রেল পুলিশ বিশেষ একটা গা করেছে বলে মনে হয় না। যোগাযোগ ও রেলমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী, তিনি পত্রিকায় সেই সংবাদ পড়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তাঁর কথা থেকেও বেরিয়ে এসেছে রেলওয়ে বিভাগের নির্লিপ্ততার বিষয়টি। এত বড় ঘটনা ঘটছে রেলে, অথচ মন্ত্রীর কাছে বিভাগীয় কোনো প্রতিবেদন যায়নি। কিংবা কেউ তাঁকে বিষয়টি অবহিতও করেনি আনুষ্ঠানিকভাবে। মন্ত্রী জানিয়েছেন, কারণ অনুসন্ধানের জন্য তিনি তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছেন। এই দুর্ঘটনার জন্য যাদের পরোক্ষ কিংবা প্রত্যক্ষ দায় বহন করতে হবে, সেই মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমেই এই তদন্ত অনুষ্ঠিত হবে। ফলে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে, এই তদন্তের মাধ্যমে সঠিক কারণ বেরিয়ে আসবে কি না, কিংবা দোষী ব্যক্তিদের শাস্তিবিধান হবে কি না। এসব ঘটনার পেছনে ছিনতাইকারী ও মাদক ব্যবহারকারীদের হাত আছে বলে ছিনতাইয়ের কবলে পড়া মানুষের মুখে প্রকাশ পেয়েছে। আর কয়েকটি ক্রসিংয়ে নিয়মিত গাড়ি থেমে যাওয়ার তথ্যও বেরিয়ে এসেছে তাদের মুখ থেকেই। খুনের ঘটনাগুলোর বেশির ভাগই ওই সব ক্রসিংয়ে হচ্ছে। সংগত কারণেই সন্দেহ করা যায়, মাদক ব্যবসায়ী এবং রেলওয়ের কিছু কর্মীর মধ্যে এ ক্ষেত্রে যোগসাজশ রয়েছে। সেই সুবিধাটাই নিচ্ছে ছিনতাইকারীরা। রাতবিরাতে মাঝপথে গাড়ি থামিয়ে মাদক ওঠানো-নামানো কিংবা চোরাই মাল নামানোর কাজে দুর্বৃত্তদের সহযোগিতা করে রেলওয়ের কিছু লোক। এই অভিযোগ নতুন কিছু নয়। এটা বেশি হয়ে থাকে সীমান্ত এলাকার নিকটবর্তী রেলওয়েতে। কিন্তু এভাবে খুন করে ফেলে দেওয়ার মতো নৃশংসতা খুবই কম শোনা যায়। এই অবস্থা রেলওয়েকে আস্থাহীন করে তুলবে। দেশের আন্তনগর সংযোগ সড়কগুলোর দুরবস্থা এবং অতিরিক্ত যানজটের কারণে মানুষ রেলওয়েকে তাদের যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছে। আর সেই রেলওয়ের অবস্থাই যদি হয় এমন, তাহলে মানুষ যোগাযোগ ছেড়ে দিয়ে কি বসে থাকবে? এই দুরবস্থা থেকে যাত্রীদের উদ্ধার করতে না পারলে দেশে চূড়ান্ত অশান্তি সৃষ্টি হতে পারে।
No comments