বাংলাদেশে খাদ্য নিরাপত্তা

খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি যে কোন দেশের উন্নয়নের অন্যতম পূর্বশর্ত। খাদ্য নিরাপত্তার দিক দিয়ে এখনও পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার ছয়টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সবার নিচে। দ্য ইকোনমিস্ট ইনটেলিজেন্স প্রকাশিত বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা সূচক ২০১২-এ এই তথ্য প্রকাশ পেয়েছে।


বিশ্বের ১০৫টি দেশের নাগরিকদের ক্রয়ক্ষমতা, খাদ্যের সহজলভ্যতা ও খাদ্যমান বিবেচনা করে এই সূচক নির্ধারণ করা হয়। বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা সূচকে শ্রীলঙ্কা, ভারত, পাকিস্তান, মিয়ানমার ও নেপালের চেয়ে বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা অনেক কম। এই তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৮১তম। খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ে দ্য ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের এ প্রতিবেদন নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। এসব প্রতিবেদনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশকে মূল্যায়নের সুযোগ ঘটে; একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর উন্নয়নের বিষয়ে একটি ধারণা লাভের সুযোগ পাওয়া যায়। প্রায় এক দশক আগে বাংলাদেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে গভীর আশাবাদ সৃষ্টি হয়েছিল। সে সময় অনেকের ধারণা ছিল বাংলাদেশ হয়ত অচিরেই খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সক্ষম হবে। এ বিষয়ে সরকারী ও বেসরকারীভাবে ব্যাপক প্রচার অব্যাহত ছিল। বাংলাদেশে কৃষিখাতে অবিস্মরণীয় সাফল্যই এর কারণ। কিন্তু নানা ধরনের অব্যবস্থাপনার কারণে বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা থেকে পিছিয়ে যায়। এর অন্যতম কারণ এখানে অনিয়ন্ত্রিতভাবে জনসংখ্যা বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, প্রতিবছর বাংলাদেশে মানুষ বেড়েছে ২০ লাখেরও বেশি। অন্যদিকে নতুন আবাসন ও উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য প্রতিবছরই কয়েক হাজার হেক্টর কৃষি জমি কমছে। ফলে পর্যায়ক্রমে দেশের খাদ্য নিরাপত্তার অবনতি ঘটে।
দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের মতো এত ঘনবসতিপূর্ণ দেশ আর নেই। দেশটির মোট জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ দরিদ্র ; অনিয়ন্ত্রিতভাবে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারও এদের। ফলে প্রতিবছরই দেশে দরিদ্র অধিবাসীদের সংখ্যা বাড়ছে; একই কারণে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে সরকারের অনেক উন্নয়ন পরিকল্পনাই কার্যকর হচ্ছে না। ইকোনমিস্ট ইনটেলিজেন্স ইউনিট বাংলাদেশে কৃষিখাতে ৮টি বড় ধরনের দুর্বলতা খুঁজে পেয়েছে। এর মধ্যে আছে কৃষি গবেষণা ও উন্নয়নে সরকারের বরাদ্দের স্বল্পতা। অবশ্য তাদের এ তথ্যটি নিয়ে সমালোচনার অবকাশ রয়েছে। বাংলাদেশে কৃষিখাতে বিগত কয়েক দশকে সরকার ব্যাপক বরাদ্দ দিয়েছে; অনেক ক্ষেত্রেই ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে। ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট বাংলাদেশে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা বেশির কথা বলেছে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়ার ক্ষেত্রে এটা অন্যতম প্রতিবন্ধকতা।
বাংলাদেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা প্রতিবছর বাড়ছে। এ বিষয়ে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তোলা দরকার। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হলে বাংলাদেশে আমিষ জাতীয় খাদ্যের স্বল্পতা ও পুষ্টিহীনতা দূর হবে। একই সঙ্গে দেশে সর্বস্তরে অস্থিরতা ও দুর্নীতি দূর করা জরুরী। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে দরকার সমন্বিত মহাপরিকল্পনা। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে স্বনির্ভর ও ডিজিটাল বাংলাদেশ কখনই গড়ে তোলা সম্ভব হবে না।

No comments

Powered by Blogger.