সরেজমিন-এই মাংস খাচ্ছি আমরা!

প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের 'পশু জবাই ও মাংস পরীক্ষা' নীতিমালায় বলা হয়েছে, 'জবাইখানায় পশু রাখার শেড থাকতে হবে। সেই শেড শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হতে হবে এবং ঝুলিয়ে গরুর চামড়া ছাড়াতে হবে যাতে মাটি স্পর্শ করতে না পারে। কমপক্ষে তিন দিন পশু রেখে ডাক্তারি পরীক্ষায় সার্টিফিকেট মিললেই জবাইয়ের জন্য নেওয়া হবে।


চাকু দিয়ে চামড়া তোলা যাবে না, পুলিং চেইন ব্যবহার করতে হবে। জবাই করার পর মাংস কুলিং অবস্থায় আট থেকে ২৪ ঘণ্টা রাখতে হবে যাতে মাংসের ওপর চর্বির কোটিং পড়ে। এতে মাংস জীবাণুমুক্ত থাকবে। প্রসেসিং রুমে প্যাকেটিং করার আগে ভেটেরিনারি সার্জন পয়জন ও অ্যান্টিবায়োটিকসহ অন্যান্য পরীক্ষার পর সার্টিফিকেট দেবেন এটা বাজারজাত হবে কি না। বাজারজাতের উপযুক্ত হলে সিলম্যান গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়ার জন্য আলাদা আলাদা সিল দেবেন। সিটি করপোরেশনের চার্জ হিসেবে গরুর জন্য ৫০ টাকা, মহিষের জন্য ৭৫ টাকা, ছাগল/ভেড়ার জন্য ১০ টাকা করে দিতে হবে। প্রত্যেক জবাইখানায় আট ঘণ্টা হিসেবে প্রতি শিফটে একজন ভেটেরিনারি ডাক্তার, হুজুর, পরিদর্শক, সিলম্যান এবং ক্লিনার থাকবে।' এভাবে পশু জবাই হলেই কেবল স্বাস্থ্যসম্মত মাংস পাওয়া যাবে। জানা গেছে, এ নীতিমালার শর্ত মেনেই জবাই স্ল্যাবের ইজারাদার ইজারা নেন।
সরকার অনুমোদিত জবাইখানার বাইরে এবং সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া পশু জবাই করাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ বিধান রেখে গত বছরের ২৪ আগস্ট 'পশু জবাই ও মাংসের মান নিয়ন্ত্রণ বিল' ২০১১ পাস হয়েছে। এ বিলে বলা হয়েছে, বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে বিক্রির জন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান জবাইখানার বাইরে পশু জবাই করতে পারবে না। আইন লঙ্ঘনকারী ব্যক্তির ভ্রাম্যমাণ আদালত আইন ২০০৯ অনুসারে বিচার হবে। বিচারে কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত হলে অনূর্ধ্ব এক বছর বিনা শ্রম কারাদণ্ড অথবা নূ্যনতম পাঁচ হাজার এবং অনূর্ধ্ব ২৫ হাজার টাকা আর্থিক দণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
পাঠক, এবার চলুন কালের কণ্ঠের প্রতিবেদকদের সঙ্গে গভীর রাত থেকে সকাল পর্যন্ত ঢাকার প্রধান কয়েকটি জবাইখানায় ঘুরে দেখা যাক বাস্তবে কিভাবে পশু জবাই হচ্ছে এবং কী মাংস সবাই খাচ্ছি। দুই বছর আগেও একবার আমরা সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখেছিলাম জবাইখানাগুলোর ভয়াবহ চিত্র। এবার দেখা যায়, পরিস্থিতির উন্নতি তো হয়ইনি, বরং আরো খারাপ হয়েছে।
মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট : রবিবার ভোর পৌনে ৪টা। লম্বা স্যাঁতসেঁতে ঘরে গোটা পঞ্চাশেক ছোট আকারের রুগ্ণ গরুর পাশে বাঁধা চারটি মহিষ। তিনটি গরু মৃতের মতো সোজা হয়ে মেঝেতে পড়ে আছে। এক যুবক ও এক কিশোর ওই ঘরে ঢুকে একটি মহিষের সব পা বেঁধে ফেলে। এরপর মহিষটিকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে যুবক ছোট একটি ছুরি দিয়ে একাই জবাই করেন। কোনো দোয়া পড়তে শোনা গেল না। ছুরি চালানো হলো বেশ কিছু সময় ধরে। মহিষটির ধড় তখনো কাঁপছে। এরই মধ্যে চামড়া ছাড়ানো শুরু করেন জবাইকারী যুবক। মিনিট পাঁচেকের মধ্যে বালতি ও ছুরি হাতে ঢোকেন আরেক তরুণ। রোগা চেহারা, চোখ ঘুমে ঢুলুঢুলু। মেঝেতে পড়ে থাকা একটি গরুকে ধরে দেখলেন তরুণটি। গরুর সাড়া নেই। এবার এক বালতি পানি ছিটিয়ে দিতেই নড়ে ওঠে গরুটির কান। এবার মৃতপ্রায় গরুটির মাথা টেনে ড্রেনের পাশে আনা হয়। এরপর এক পা দিয়ে গলার ওপর চেপে ধরে একটি ছোট ছুরি ১০ বার চালানো হয় গরুটির গলায়। এবারও কোনো দোয়া পড়তে দেখা বা শোনা গেল না কাউকে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই গরুটির চামড়া ছাড়ানোর জন্য কয়েকটি ঘা দেওয়া হয়। এর পাঁচ মিনিটের মধ্যে আরেকটি মৃতপ্রায় গরু একই কায়দায় জবাই করেন তরুণ কসাই।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেট নতুন কাঁচাবাজার এলাকায় ঢাকা সিটি করপোরেশনের পশু জবাই স্ল্যাবে (জবাইখানা) এভাবেই পশু জবাই শুরু হয়ে চলল সকাল পর্যন্ত। সকাল ৭টা পর্যন্ত দেখা মেলেনি সিটি করপোরেশনের নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসক, মোল্লা, সিলম্যান বা ক্লিনারের।
একের পর এক মৃতপ্রায় গরু জবাইকারী তরুণটির নাম আরশাদ। থাকেন জেনেভা ক্যাম্প এলাকায়। গরু জবাই করছেন সাত বছর ধরে। আরশাদ জানালেন, তিনি কৃষি মার্কেটের মাংস ব্যবসায়ী গুড্ডুর গরু জবাই করছিলেন। এক রাত কাজের মজুরি ৩০০ টাকা। জবাইয়ের উদ্দেশ্যে জড়ো করা গরু-মহিষগুলো মার্কেটের ব্যবসায়ী মুন্না, গুড্ডু, কাইউম, পারভেজ ও গোলাম মোস্তফার। আরশাদের দাবি, দুই দিন আগে আনার পর গরুগুলো ভালোই ছিল। শনিবার হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছে। জবাইখানায় হুজুর ও চিকিৎসক আছে কি না জানতে চাইলে আরশাদ বলেন, 'শুনছি আছে। দেখি নাই'। দোয়া না পড়ে জবাইয়ের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে আরশাদ বলেন, 'বিসমিল্লাহ, আল্লাহু আকবার বলছি তো। আর আমি তো দুইবার পোচ দিছি।'
এরই মধ্যে বৃষ্টি শুরু হলে জবাইখানায় গোবর, উচ্ছিষ্ট, রক্ত ও বৃষ্টির পানি মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। ছড়াতে থাকে দুর্গন্ধ।
কসাইরা বলেন, তাঁদের কসাইখানায় জবাই করার কোনো 'হুজুর' নেই। চিকিৎসক আছে শুনেছেন, তবে কেউ দেখেননি। আর সকালে সিল দিতে আসবেন একজন 'ম্যানেজার'। তিনি জবাইয়ের জন্য নির্ধারিত ফিও তুলবেন। তবে এই সিলও স্রেফ আনুষ্ঠানিকতা।
গুড্ডু কসাই মহিষের মাংস কেটে ভাগ করলেন। তাঁর সহযোগী সুজন তা নিয়ে গেলেন পাশের মার্কেটে। সুজন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এইটা গোলাম মহাজনের মহিষের মাংস। মাংসের সিল লাগে না।' জবাইখানার পাশের এক মুদি দোকানদার জাহিদ বলেন, 'এখানে মহিষ জবাই হলেও মার্কেটে গিয়া পাইবেন না। সিল মারে সব গরুর। আমরা তো এইসব দেখতাছি বহুদিন ধইরাই।'
কাপ্তানবাজারেও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ : শনিবার রাত পৌনে ২টা। পাঁচ যুবক কসাই কাপ্তানবাজারে নোংরা পরিবেশেই জবাইখানায় পশু জবাই শুরু করলেন। দুই কসাই একটি মহিষ জবাই করতে না করতেই বাকি তিনজন প্রায় বিশটি খাসি জবাই করে ফেলেন। দেলোয়ার নামে এক কসাই বলেন, জবাই করার সময় সিটি করপোরেশনের লোক থাকার ব্যাপারে তিনি জানেন না।
শনিবার রাত ১টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত এ জবাইখানায় থেকে ঢাকা সিটি করপোরেশনের মোল্লা, চিকিৎসক বা পরিদর্শকসহ কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীকে দেখা যায়নি। সিল ছাড়াই পশুর মাংস বহনকারী ভ্যানগুলোকে বেরিয়ে যেতে দেখা গেল। সিটি করপোরেশনের লোক কোথায় আছে জানতে চাইলে কেউ বলেন ওপরে শুয়ে আছে, কেউ বলেন মাঝেমধ্যে আসে।
মিরপুরে দেখার কেউ নেই : শনিবার রাত ২টা। মিরপুর ১১ নম্বর কাঁচাবাজারে ডিসিসির জবাইখানা গরু-মহিষে ঠাসা। দুর্গন্ধময় নোংরা পরিবেশে গাদাগাদি করে রাখা হয়েছে প্রায় ১৫০টি পশু। রাত ৩টা ৪৫ মিনিটে সেখানে ঢোকেন কয়েকজন যুবক। একজনের নাম আলতাফ হোসেন। পরনে হাফপ্যান্ট, কোমরে গামছা। আলতাফ একাই একটি মহিষের পা বেঁধে মেঝেতে ফেলে দেন। এরপর মাথার দিকটা ধরেন তাহের নামের আরেকজন। অনেকটা মহিষের ওপর চড়ে হাতে থাকা পাঁচ ইঞ্চি (আনুমানিক) ছুরি দিয়ে জবাইয়ের কাজ সেরে ফেলেন আলতাফ। জবাইয়ের এক ফাঁকে এ প্রতিবেদককে আলতাফ জানান, আগে হুজুর ছিলেন একজন। তবে বেশ কয়েক বছর ধরে আলতাফই জবাই ও মাংস প্রস্তুতের কাজ করে আসছেন।
এখানেও দেখা গেল কসাইখানায় ঘিনঘিনে পরিবেশ। গরু ও মহিষ জবাই করে মাংস একসঙ্গে মিশিয়ে রাখা হচ্ছিল। পাশেই খোলা গোসলখানা। সাবান আর শ্যাম্পুর পানি গিয়ে পড়ছিল মেঝেতে রাখা মাংসের ওপর। কেউ বা জুতা পরেই মাংসে পা দিচ্ছে। এ কসাইখানায়ও ভেটেরিনারি কর্মকর্তা, পরিদর্শক, মোল্লা বা ক্লিনারের দেখা মেলেনি।
মোহাম্মদ রুবেল নামের স্থানীয় এক যুবক জানান, এ কসাইখানায় প্রতিদিন ১৫০-২০০ পশু জবাই করা হয়। এর পুরো দেখভালের কাজটি তিনি করে থাকেন। সকালে এসে ডিসিসির লোকজন তাঁর কাছ থেকে টাকা বুঝে নেন। পশু জবাই করতে স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সিল লাগে- এমন এক কথার উত্তরে রুবেল বলেন, 'ভাই, এখানে কোনো স্যার আসেন না। সব কাজ আমাকেই করতে হয়। সিলও আমার কাছে আছে। আমি আগে নিজে সিল দিতাম। এখন সিলও লাগে না। স্যারের কাছে ঠিকমতো টাকা দিলেই হয়।'
কারওয়ান বাজারে সবই মহিষ : রবিবার ভোর সাড়ে ৫টা। কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটের ১ নম্বর গেট দিয়ে ঢুকতেই চোখে পড়ল নোংরা মেঝেতে জবাই করে ফেলে রাখা কয়েকটি মহিষের মাংস কাটছেন কয়েকজন। পেছনের ফটকের পাশে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে দুটি মহিষ। পাশেই বসে ছোট মাংস বেছে আলাদা করছিলেন একজন। মোসলেম মোল্লা নামের ওই ব্যক্তি কালের কণ্ঠকে বলেন, কারওয়ান বাজারে কোনো গরু জবাই হয় না। ভোর ৪টার আগেই গতকাল সেখানে জবাই হয়েছে অন্তত ২০টি মহিষ। দোকানগুলোতে গরুর মাংস বলে যা বিক্রি হচ্ছে, তা সবই মহিষের। মোসলেম জানান, বিভিন্ন কৌশলে মহিষের মাংস এমনভাবে সংরক্ষণ করা হয়, যাতে গরু না মহিষের, বোঝা যায় না। তিনি তেজগাঁও থেকে হালিম তৈরিতে ব্যবহারের জন্য ছুটা মাংস কিনতে এসেছেন। রমজানে এ মাংসের ব্যাপক চাহিদা। প্রতি কেজি ৮০-৯০ টাকা।
মার্কেটে ঢুকে দেখা গেল, প্রতিটি মাংসের দোকানে গরুর মাংস ২৭৫ টাকা ও মহিষের মাংস ২৫০ টাকা লেখা আছে। দুই ধরনের মাংস আছে বলে দাবি করেন বিক্রেতারা। রবিউল নামে এক কসাই বলেন, মহিষের মাংস থেকে পাঁজরের হাড়গুলো ফেলে দেওয়া হয়। বড় শরীরকে আড়াআড়ি ভাগ করা হয়। এতে গরু না মহিষ বোঝার উপায় থাকে না।
ইউসুফ নামে এক কলিজা বিক্রেতা অকপটে স্বীকার করেন, তাঁর কাছে যত কলিজা আছে, সবই মহিষের। দাঁড় করিয়ে রাখা মহিষ দুটোকে ভোর পৌনে ৬টার দিকে নিয়ে যাচ্ছিল রাখাল উজ্জ্বল। তার ভাষ্য, 'এখানে ২০-২২টা মহিষ জবাই হইছে। গরু একটাও হয় না।' যে মহিষ দুটি উজ্জ্বল নিয়ে যাচ্ছিল, সেগুলো কারওয়ান বাজারের সবচেয়ে বড় মাংস ব্যবসায়ী চান মিয়ার। গরু জবাই হয়েছে কি না, জবাই কিভাবে হয় জানতে চাইলে চান মিয়া বলেন, 'আরে ভাই, ১০-১৫টা গরু তো জবাই হইল।' পরক্ষণে প্রমাণ উপস্থাপন করে আবার প্রশ্ন করা হলে বিব্রত চান মিয়া বলেন, 'গরুই মহিষ, মহিষই গরু।' এরপর সটকে পড়েন তিনি। আলাউদ্দিন ও জাহাঙ্গীর নামে অন্য দুই ব্যবসায়ীকে প্রশ্ন করা হলে তাঁরাও জবাব এড়িয়ে যান।
অবৈধ জবাইখানা : ভোর ৫টা। মোহাম্মদপুর টাউন হলের কাঁচাবাজারের মাংসের দোকানের সামনে যেতেই দেখা গেল ১৭টি গরু ও দুটি মহিষ জবাই করে ফেলে রাখা হয়েছে নোংরা পরিবেশে। কয়েকজন চামড়া ছাড়াচ্ছেন। কেউ কেউ মাংস কাটছেন। ব্যবসায়ীদের গড়ে তোলা ওই কসাইখানায় অবৈধভাবে গরু জবাই-পরবর্তী কার্যক্রমের ছবি তুলতে গেলে বাধা দেন কয়েকজন। কালের কণ্ঠের আলোকচিত্রীকে মার্কেট থেকে বের করে দেন তাঁরা। আলমগীর হোসেন নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, 'ভাই, আমরা ঠিকমতোই জবাই করি। ইন্সপেক্টর আহে।' ব্যবসায়ীরা জানান, জেনেভা ক্যাম্প, রায়েরবাজার, শ্যামলীসহ আশপাশের কয়েকটি জায়গায় গরু-মহিষ জবাই হয়। এগুলো সবই অবৈধ, অবস্থা আরো খারাপ।
মিরপুরেও ডিসিসির বৈধ জবাইখানা ছাড়া কয়েকটি অবৈধ কসাইখানার সন্ধান পাওয়া যায়। এগুলোর বেশির ভাগই পাবলিক টয়লেটের পাশে! গাবতলী পশুর হাট ও মিরপুর-১ নম্বর শাহ আলী আবাসিক হোটেলের নিচ তলায়ও রয়েছে অবৈধ জবাইখানা। এ দুটিই পাবলিক টয়লেটের গা ঘেঁষে। শনিবার রাত আড়াইটায় কথা হয় গাবতলী পশুর হাটে পাবলিক টয়লেটে দায়িত্বরত সবুজ নামের একজনের সঙ্গে। তিনি জানান, জবাইখানাটি পরিচালিত হয় হাট ইজারাদারের তত্ত্বাবধানে। এখানে প্রতি রাতে ৬০ থেকে ৭০টি পশু জবাই হয়। প্রতিটি পশু থেকে ১০০ টাকা নেওয়া হয়।
উত্তরার আজমপুর কাঁচাবাজারেও অনুমোদন ছাড়া গরু ও খাসির মাংস বিক্রি করা হচ্ছে। রাজউক কলেজের বিপরীতে প্রতি শুক্রবার অর্ধশতাধিক ছাগল ও ১০টি গরু জবাই হয়। মাংস বিক্রেতা আয়নাল বলেন, 'এ এলাকায় তো কোনো জবাইখানাই নেই। এখানে ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হয় না। এখন পর্যন্ত কোনো ঝামেলাও পোহাতে হয়নি। বর্জ্যগুলো ডাস্টবিনে ফেলে দিই।'
কর্মকর্তারা বলেন : সকাল ৭টার দিকে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের পশু জবাইখানায় আসেন সিলম্যান আবদুল মজিদ। মজিদ দাবি করেন, রাত ৩টা থেকেই তিনি ছিলেন জবাইখানায়। আগেই নিয়ে যাওয়া মহিষের মাংসগুলো দোকানে গিয়ে সিল দেওয়া হবে বলে জানান তিনি। মজিদ বলেন, সেখানে তিনি ও পাঁচজন ক্লিনার ছাড়া আর কোনো স্টাফ নেই। আগে হুজুর ও চিকিৎসক ছিলেন। এখন নেই। স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ফিরোজ মাহমুদ ও ভেটেরিনারি ইন্সপেক্টর হুমায়ুন কবির তদারক করতে আসেন। তবে কখন তাঁরা আসেন তা জানাতে পারেননি আবদুল মজিদ।
এ ব্যাপারে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন অঞ্চল-৫-এর ভেটেরিনারি পরিদর্শক হুমায়ুন কবির বলেন, 'আমাদের লোকবলের খুবই অভাব। তাই সবকিছু তদারক করা সম্ভব হয় না। আমি মোহাম্মদপুর জবাইখানায় প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত থাকি। এরপর তো আর থাকতে পারি না। জবাইখানার শেড ভেঙে গেছে। বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থাও খুব খারাপ। প্রশাসক সাহেব রোজার আগে কথা দিয়েছিলেন দুই মাসের মধ্যে শেড সংস্কার করে দেবেন; কিন্তু এখনো কোনো কাজ শুরু হয়নি।' মৃতপ্রায় গরুর ব্যাপারে বলেন, 'আপনারা যে গরুগুলো দেখেছেন এগুলো হারিয়ানা জাত। দেখতে একটু ছোটই হয়, তবে রোগা নয়।'
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নূর-উন-নবী বলেন, 'বর্তমান জবাইখানাগুলো স্বাস্থ্যকর নয়। গাবতলীতে আধুনিক জবাইখানা হওয়ার কথা রয়েছে; কিন্তু জায়গা বের করা সম্ভব না হওয়ায় সেটা করা যাচ্ছে না। উত্তরে স্বাস্থ্য বিভাগে লোকবল খুবই কম। ভেটেরিনারি সার্জন পর্যন্ত নেই। লোকবল চেয়ে আমরা মন্ত্রণালয়কে বারবার বললেও এখন পর্যন্ত দেওয়া হয়নি।'
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহ-আল হারুন বলেন, 'একজন মাত্র ভেটেরিনারি কর্মকর্তা থাকায় তাঁর পক্ষে সব কাজ করা সম্ভব হয় না। এ বিষয়ে আমারা মন্ত্রণালয়ে চিঠি লিখেছি। আশা করছি এর সমাধান খুব শিগগিরই হয়ে যাবে।' পরিদর্শক ও সিলম্যান কসাইখানায় উপস্থিত না থাকার ব্যাপারে তিনি বলেন, খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
(প্রতিবেদন করেছেন রেজোয়ান বিশ্বাস, এস এম আজাদ, রাব্বী রহমান, তোফাজ্জল হোসেন রুবেল, শরীফুল আলম সুমন ও মাসুদ রানা)।

No comments

Powered by Blogger.