যেন হঠাৎই থেমে গেল তারেক মাসুদের স্বপ্নময় পথচলা- মৃত্যুবার্ষিকীতে নানা কর্মসূচী
স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ও ভাবনা নিয়ে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ভুবনে পা রেখেছিলেন তারেক মাসুদ। ইতিহাসের সঙ্গে জীবনবোধ আর লোকজ সংস্কৃতিকে ধারণ করেই এগিয়ে চলেছিল তাঁর চলচ্চিত্রের স্বপ্নযাত্রা। নির্মাণ কৌশল, গল্প বলার ধরন কিংবা চিত্রধারণ সবখানেই নিজস্বতা। দেশের চলচ্চিত্রশিল্পের ম্রিয়মাণ সময়ে নান্দনিক ও শিল্পমানসমৃদ্ধ ছবির
ধারাকে পুনরুজ্জীবিত করতে হয়ে উঠেছিলেন ছবির ফেরিওয়ালা। দেশের সেলুলয়েডের আঙ্গিনায় চলমানতার পথে মাটির ময়না ছবি বানিয়ে জয় করেন প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে কান চলচ্চিত্র উৎসবের দুর্লভ সমালোচক পুরস্কার। তবে হঠাৎ করেই যেন থেমে গেল এ নির্মাতার স্বপ্নময় পথচলা। গত বছরের ১৩ আগস্ট নন্দিত এ নির্মাতা পৃথিবীকে জানিয়ে দিলেন চিরবিদায়। মুক্তিযুদ্ধ আশ্রিত মাটির ময়নার পর দেশ বিভাগের পটভূমিতে কাগজের ফুল নির্মাণের জন্য মানিকগঞ্জে শূটিং স্পট দেখে ফেরার পথে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন। পাড়ি দিলেন না ফেরার দেশে। আজ সোমবার তারেক মাসুদের প্রথম প্রয়াণ দিবস। তাঁর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী স্মরণে নেয়া হয়েছে নানা কর্মসূচী।
তারেক মাসুদের সঙ্গে একই সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান সিনেমা নির্মাণে তাঁর সহযাত্রী চিত্রগ্রাহক ও সম্প্রচার সাংবাদিকতার পথিকৃৎ মিশুক মুনীর। এই দুই গুণী ব্যক্তিত্ব স্মরণে গঠিত হয়েছে তারেক-মিশুক স্মৃতি পর্ষদ। এই পর্ষদের পক্ষ থেকে মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে নেয়া হয়েছে দুই দিনের কর্মসূচী। রবিবার থেকে শুরু হয় এ কর্মসূচী। সকাল ১১টায় সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান মিলনায়তনে প্রদর্শিত হয় তারেক মাসুদ নির্মিত ও মিশুক মুনীরের চিত্রায়িত ছবি রানওয়ে। বেলা আড়াইটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল সংলগ্ন সড়ক দ্বীপে তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীর স্মৃতি ভাস্কর্যের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। স্মৃতি ভাস্কর্য উন্মোচন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। দুপুর ৩টায় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় স্মরণসভা। তারেককে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন তাঁর সহযোদ্ধা ও বিশিষ্টজনরা। স্মৃতিচারণ শেষে ছিল প্রসূন রহমান পরিচালিত তারেক মাসুদের সাক্ষাতকারভিত্তিক ফেরা শিরোনামের প্রামাণ্যচিত্রের প্রদর্শনী। আজ সোমবারের কর্মসূচী শুরু হবে সকাল ৮টায়। সময় টেলিভিশনের কার্যালয়ের সামনে থেকে তারেক মাসুদের গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের ভাঙ্গা অভিমুখে যাত্রা করবে পর্ষদের সদস্যরা। চলতি পথে সকাল ১১টায় মানিকগঞ্জের জোকা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংক্ষিপ্ত যাত্রাবিরতির পর সেখানে একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। বেলা ১২টা ২৫ মিনিটে দুর্ঘটনাস্থল মানিকগঞ্জের জোকায় নিহতদের স্মরণে স্মৃতিফলক উন্মোচন করা হবে। বিকেল পাঁচটায় ফরিদপুরের ভাঙ্গায় তারেক মাসুদের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। এর পর অনুষ্ঠিত হবে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল। সন্ধ্যায় সবাইকে নিয়ে থাকবে ইফতারের আয়োজন।
তারেক মাসুদকে ভালবেসে সুদূর আমেরিকা থেকে বাংলাদেশে এসে পাড়ি জমিয়েছিলেন ক্যাথরিন মাসুদ। জীবনসঙ্গী হওয়ার পাশাপাশি হয়েছিলেন তারেকের সৃষ্টির সহযাত্রী। পৃথিবী থেকে তারেক বিদায় নিলেও বাংলাদেশ থেকে বিদায় নেননি ক্যাথরিন। রবিবার অনুষ্ঠিত স্মরণসভায় প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বললেন, এখনও মনে হয় একটা দুঃস্বপ্নের মধ্যে আছি। আজও মনে হয়, ১৩ আগস্ট বোধ হয় আমারও মৃত্যু হয়েছে। বেঁচে আছি কিনা তাও জানি না। এখনও যেন জেগে উঠতে পারছি না। আমার ভেতরের সেই আগের মানুষটা আর নেই। রোবটের মতো জীবনযাপন করছি। তবে এত কিছুর পরও ভেঙ্গে পড়ার সুযোগ পাইনি। কারণ, তারেক সব সময় দেশ ও জাতিকে সামনে রেখে কাজ করত। ওর মৃত্যুর পর তাই কাজটাকে চালিয়ে রাখলাম। গত এক বছর ধরে অমানুষিক পরিশ্রম করছি। আর শুধু তারেকের জন্য নয়, এই দেশের জন্যও কাজ করছি। আর সবার সমর্থনেই এই মানসিক শক্তিটা অর্জন করেছি।
দেশের চলচ্চিত্রকে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত করার প্রত্যয় নিয়েই সব সময় কাজ করেছেন তারেক মাসুদ। আর তিনি শুধু স্বপ্নই দেখেননি, হেঁটেছেন সেই স্বপ্নপূরণের পথে। ১৯৮৫ সালের শেষ দিকে পথিকৃৎ চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানকে নিয়ে নির্মাণ করেন জীবনের প্রথম প্রামাণ্যচিত্র আদম সুরত। এর পর ১৯৯৫ সালে নির্মাণ করেন মুক্তিযুদ্ধের ঘটনানির্ভর দু’টি প্রামাণ্যচিত্র মুক্তির গান ও মুক্তির কথা। এ দুটো প্রামাণ্যচিত্র দেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ছড়িয়ে দিতে দারুণ কার্যকর ভূমিকা রাখে। ২০০২ সালে নির্মাণ করেন প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা মাটির ময়না। মুক্তিযুদ্ধ আশ্রিত নান্দনিক এই সিনেমা কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হওয়ার পাশাপাশি জিতে নেয় সমালোচক পুরস্কার। এ ছাড়া প্রথম বাংলাদেশী সিনেমা হিসেবে অস্কার প্রতিযোগিতায় বিদেশী ভাষার চলচ্চিত্র বিভাগে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। এডিবনার্গ, মন্ট্রিল, কায়রো উৎসবেও ‘মাটির ময়না’ প্রদর্শিত হয়। পাশাপাশি ২০০২ সালে মারাকেশ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা চিত্রনাট্যের পুরস্কার লাভ করে। ২০০৩ সালে করাচী আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবেও সেরা ছবির পুরস্কার লাভ করে। ২০০৪ সালে ছবিটি ব্রিটেনের ডিরেক্টরস গিল্ড পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়। এর পর ২০০৬ সালে নির্মাণ করেন অন্তর্যাত্রা। এই ছবিটিও মাটির ময়নার মতো ব্যাপকভাবে দর্শক সমাদৃত হয়। গত বছর সর্বশেষ নির্মাণ করেন রানওয়ে ছবিটি। প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন নতুন ছবি কাগজের ফুল নির্মাণের। এ ছাড়াও তারেক মাসুদের উল্লেখযোগ্য ছবিগুলো হচ্ছে সোনার বেড়ি, একুশে ও নরসুন্দর।
বাংলাদেশের বিকল্প ধারার চলচ্চিত্র নির্মাতাদের সংগঠন শর্ট ফিল্ম ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য তারেক মাসুদ। ১৯৮৮ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত প্রথম আন্তর্জাতিক স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র উৎসবের কো-অর্ডিনেটর হিসেবে কাজ করেন। এ ছাড়া তিনি যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং এশিয়ার বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে যোগ দেয়ার পাশাপাশি নিয়মিত চলচ্চিত্র বিষয়ে লেখালেখি করতেন।
তারেক মাসুদের স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ একজন মার্কিন নাগরিক। ক্যাথরিন ও তারেক মিলে ঢাকায় গড়ে তুলেছিলেন চলচ্চিত্র নির্মাণ প্রতিষ্ঠান অডিও ভিশন। চলচ্চিত্র নির্মাণ ছাড়া তারেক মাসুদের আগ্রহের বিষয় ছিল লোকসঙ্গীত ও লোকধারা। জীবনের শেষভাগে তিনি বাংলাদেশের সিনেমা হলগুলোর পুনর্জাগরণের জন্য কর্মকা- শুরু করেছিলেন।
১৯৫৭ সালের ৬ ডিসেম্বর ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা থানায় তারেক মাসুদের জন্ম। বাবা মশিউর রহমান মাসুদ ও মা নুরুন নাহার মাসুদ। তারেক মাসুদের শৈশবে শিক্ষাজীবন শুরু হয় মাদ্রাসায়। ভাঙ্গা ঈদগাঁহ মাদ্রাসায় প্রথম পড়াশোনা। এর পর ঢাকার লালবাগের একটি মাদ্রাসা থেকে মৌলানা পাস করেন। ফরিদপুরের ভাঙ্গা পাইলট উচ্চবিদ্যালয় থেকে প্রাইভেট পরীক্ষার মাধ্যমে প্রথম বিভাগে এসএসসি পাস করেন। আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজে ছয় মাস পড়াশোনার পর বদলি হয়ে নটর ডেম কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে এইচএসসি পাস করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকেই তিনি বাংলাদেশের চলচ্চিত্র আন্দোলনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত থেকেছেন এবং দেশে-বিদেশে চলচ্চিত্র বিষয়ক অসংখ্য কর্মশালা এবং কোর্সে অংশ নিয়েছেন। ১৯৮৯ সালে বিয়ে করেন ক্যাথরিন মাসুদকে। তাঁদের একমাত্র সন্তান বিংহাম পুটার মাসুদ নিষাদ।
তারেক মাসুদের সঙ্গে একই সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান সিনেমা নির্মাণে তাঁর সহযাত্রী চিত্রগ্রাহক ও সম্প্রচার সাংবাদিকতার পথিকৃৎ মিশুক মুনীর। এই দুই গুণী ব্যক্তিত্ব স্মরণে গঠিত হয়েছে তারেক-মিশুক স্মৃতি পর্ষদ। এই পর্ষদের পক্ষ থেকে মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে নেয়া হয়েছে দুই দিনের কর্মসূচী। রবিবার থেকে শুরু হয় এ কর্মসূচী। সকাল ১১টায় সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান মিলনায়তনে প্রদর্শিত হয় তারেক মাসুদ নির্মিত ও মিশুক মুনীরের চিত্রায়িত ছবি রানওয়ে। বেলা আড়াইটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল সংলগ্ন সড়ক দ্বীপে তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীর স্মৃতি ভাস্কর্যের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। স্মৃতি ভাস্কর্য উন্মোচন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। দুপুর ৩টায় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় স্মরণসভা। তারেককে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন তাঁর সহযোদ্ধা ও বিশিষ্টজনরা। স্মৃতিচারণ শেষে ছিল প্রসূন রহমান পরিচালিত তারেক মাসুদের সাক্ষাতকারভিত্তিক ফেরা শিরোনামের প্রামাণ্যচিত্রের প্রদর্শনী। আজ সোমবারের কর্মসূচী শুরু হবে সকাল ৮টায়। সময় টেলিভিশনের কার্যালয়ের সামনে থেকে তারেক মাসুদের গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের ভাঙ্গা অভিমুখে যাত্রা করবে পর্ষদের সদস্যরা। চলতি পথে সকাল ১১টায় মানিকগঞ্জের জোকা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংক্ষিপ্ত যাত্রাবিরতির পর সেখানে একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। বেলা ১২টা ২৫ মিনিটে দুর্ঘটনাস্থল মানিকগঞ্জের জোকায় নিহতদের স্মরণে স্মৃতিফলক উন্মোচন করা হবে। বিকেল পাঁচটায় ফরিদপুরের ভাঙ্গায় তারেক মাসুদের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। এর পর অনুষ্ঠিত হবে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল। সন্ধ্যায় সবাইকে নিয়ে থাকবে ইফতারের আয়োজন।
তারেক মাসুদকে ভালবেসে সুদূর আমেরিকা থেকে বাংলাদেশে এসে পাড়ি জমিয়েছিলেন ক্যাথরিন মাসুদ। জীবনসঙ্গী হওয়ার পাশাপাশি হয়েছিলেন তারেকের সৃষ্টির সহযাত্রী। পৃথিবী থেকে তারেক বিদায় নিলেও বাংলাদেশ থেকে বিদায় নেননি ক্যাথরিন। রবিবার অনুষ্ঠিত স্মরণসভায় প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বললেন, এখনও মনে হয় একটা দুঃস্বপ্নের মধ্যে আছি। আজও মনে হয়, ১৩ আগস্ট বোধ হয় আমারও মৃত্যু হয়েছে। বেঁচে আছি কিনা তাও জানি না। এখনও যেন জেগে উঠতে পারছি না। আমার ভেতরের সেই আগের মানুষটা আর নেই। রোবটের মতো জীবনযাপন করছি। তবে এত কিছুর পরও ভেঙ্গে পড়ার সুযোগ পাইনি। কারণ, তারেক সব সময় দেশ ও জাতিকে সামনে রেখে কাজ করত। ওর মৃত্যুর পর তাই কাজটাকে চালিয়ে রাখলাম। গত এক বছর ধরে অমানুষিক পরিশ্রম করছি। আর শুধু তারেকের জন্য নয়, এই দেশের জন্যও কাজ করছি। আর সবার সমর্থনেই এই মানসিক শক্তিটা অর্জন করেছি।
দেশের চলচ্চিত্রকে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত করার প্রত্যয় নিয়েই সব সময় কাজ করেছেন তারেক মাসুদ। আর তিনি শুধু স্বপ্নই দেখেননি, হেঁটেছেন সেই স্বপ্নপূরণের পথে। ১৯৮৫ সালের শেষ দিকে পথিকৃৎ চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানকে নিয়ে নির্মাণ করেন জীবনের প্রথম প্রামাণ্যচিত্র আদম সুরত। এর পর ১৯৯৫ সালে নির্মাণ করেন মুক্তিযুদ্ধের ঘটনানির্ভর দু’টি প্রামাণ্যচিত্র মুক্তির গান ও মুক্তির কথা। এ দুটো প্রামাণ্যচিত্র দেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ছড়িয়ে দিতে দারুণ কার্যকর ভূমিকা রাখে। ২০০২ সালে নির্মাণ করেন প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা মাটির ময়না। মুক্তিযুদ্ধ আশ্রিত নান্দনিক এই সিনেমা কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হওয়ার পাশাপাশি জিতে নেয় সমালোচক পুরস্কার। এ ছাড়া প্রথম বাংলাদেশী সিনেমা হিসেবে অস্কার প্রতিযোগিতায় বিদেশী ভাষার চলচ্চিত্র বিভাগে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। এডিবনার্গ, মন্ট্রিল, কায়রো উৎসবেও ‘মাটির ময়না’ প্রদর্শিত হয়। পাশাপাশি ২০০২ সালে মারাকেশ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা চিত্রনাট্যের পুরস্কার লাভ করে। ২০০৩ সালে করাচী আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবেও সেরা ছবির পুরস্কার লাভ করে। ২০০৪ সালে ছবিটি ব্রিটেনের ডিরেক্টরস গিল্ড পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়। এর পর ২০০৬ সালে নির্মাণ করেন অন্তর্যাত্রা। এই ছবিটিও মাটির ময়নার মতো ব্যাপকভাবে দর্শক সমাদৃত হয়। গত বছর সর্বশেষ নির্মাণ করেন রানওয়ে ছবিটি। প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন নতুন ছবি কাগজের ফুল নির্মাণের। এ ছাড়াও তারেক মাসুদের উল্লেখযোগ্য ছবিগুলো হচ্ছে সোনার বেড়ি, একুশে ও নরসুন্দর।
বাংলাদেশের বিকল্প ধারার চলচ্চিত্র নির্মাতাদের সংগঠন শর্ট ফিল্ম ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য তারেক মাসুদ। ১৯৮৮ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত প্রথম আন্তর্জাতিক স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র উৎসবের কো-অর্ডিনেটর হিসেবে কাজ করেন। এ ছাড়া তিনি যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং এশিয়ার বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে যোগ দেয়ার পাশাপাশি নিয়মিত চলচ্চিত্র বিষয়ে লেখালেখি করতেন।
তারেক মাসুদের স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ একজন মার্কিন নাগরিক। ক্যাথরিন ও তারেক মিলে ঢাকায় গড়ে তুলেছিলেন চলচ্চিত্র নির্মাণ প্রতিষ্ঠান অডিও ভিশন। চলচ্চিত্র নির্মাণ ছাড়া তারেক মাসুদের আগ্রহের বিষয় ছিল লোকসঙ্গীত ও লোকধারা। জীবনের শেষভাগে তিনি বাংলাদেশের সিনেমা হলগুলোর পুনর্জাগরণের জন্য কর্মকা- শুরু করেছিলেন।
১৯৫৭ সালের ৬ ডিসেম্বর ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা থানায় তারেক মাসুদের জন্ম। বাবা মশিউর রহমান মাসুদ ও মা নুরুন নাহার মাসুদ। তারেক মাসুদের শৈশবে শিক্ষাজীবন শুরু হয় মাদ্রাসায়। ভাঙ্গা ঈদগাঁহ মাদ্রাসায় প্রথম পড়াশোনা। এর পর ঢাকার লালবাগের একটি মাদ্রাসা থেকে মৌলানা পাস করেন। ফরিদপুরের ভাঙ্গা পাইলট উচ্চবিদ্যালয় থেকে প্রাইভেট পরীক্ষার মাধ্যমে প্রথম বিভাগে এসএসসি পাস করেন। আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজে ছয় মাস পড়াশোনার পর বদলি হয়ে নটর ডেম কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে এইচএসসি পাস করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকেই তিনি বাংলাদেশের চলচ্চিত্র আন্দোলনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত থেকেছেন এবং দেশে-বিদেশে চলচ্চিত্র বিষয়ক অসংখ্য কর্মশালা এবং কোর্সে অংশ নিয়েছেন। ১৯৮৯ সালে বিয়ে করেন ক্যাথরিন মাসুদকে। তাঁদের একমাত্র সন্তান বিংহাম পুটার মাসুদ নিষাদ।
No comments