মেডিক্যালে ভর্তিতে আর পরীক্ষা নেওয়া হবে না-জিপিএ দেখে বাছাই, স্বচ্ছতা নিয়ে শঙ্কা
বাংলাদেশের সব মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজ মিলিয়ে মোট আট হাজার ৪৯৩টি আসন রয়েছে। এর বিপরীতে ৫১ হাজার ২৩৬ জন ভর্তীচ্ছু শিক্ষার্থী গত বছর ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়। গড়ে একটি আসনের জন্য ছয়জনের একটু বেশি প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে এ হার কম হলেও মেডিক্যালে ভর্তি নিয়ে চলে অনেক তোলপাড়।
কয়েক বছর ধরে মাঝেমধ্যেই প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ উঠেছে। সেই সঙ্গে চলে বেপরোয়া কোচিং-বাণিজ্য। পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এমন পরিস্থিতির মুখে এবার আগেভাগেই নড়েচড়ে বসেছে মন্ত্রণালয়। সিদ্ধান্ত নিয়েছে, পরীক্ষা পদ্ধতি বাদ দিয়ে এসএসসি ও এইচএসসির মেধাভিত্তিক ফলের ওপর নির্ভর করবে ভর্তি। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, মেডিক্যালে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে যে ঝামেলা তৈরি হয়, এখন থেকে আর তা থাকবে না। তবে অবশ্যই স্বচ্ছতা থাকবে।
মেধা আর স্বচ্ছতার মাধ্যমে এখন থেকে মেডিক্যালে ভর্তি করা হবে।
মন্ত্রী বলেন, আসলে বিষয়টি নতুন কিছু নয়। এত দিনও মেধার ভিত্তিতেই ভর্তি করা হতো। বিশেষ করে মোট ১০০ নম্বরের স্কোর ধরা হতো। এর মধ্যে ৫০ নম্বর থাকত এসএসসি ও এইচএসসির প্রাপ্ত মেধার ভিত্তিতে। বাকি ৫০ থাকত পরীক্ষা প্রক্রিয়ার অন্যান্য বিষয়ের ওপর। এখন ওই ৫০ বাদ দিয়ে মেধার ৫০ নম্বরকেই শতভাগ স্কোর ধরা হবে। এ জন্য আরো নিপুণভাবে নীতিমালা তৈরি করা হবে। তাই কোনো ধরনের সংশয় বা বিভ্রান্তির সুযোগ নেই।
গতকাল রবিবার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এমবিবিএস ভর্তি প্রক্রিয়া নীতিমালা প্রণয়ন সম্পর্কিত সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হক এতে সভাপতিত্ব করেন। সভায় আরো সিদ্ধান্ত হয়, সরকারি ও বেসরকারি উভয় মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির প্রক্রিয়া বরাবরের ন্যায় কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে। বাংলাদেশিদের জন্য এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় সম্মিলিতভাবে সর্বনিম্ন জিপিএ ৮ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা ভর্তির জন্য বিবেচিত হবে। বিদেশিদের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন গ্রেড ধার্য করা হয়েছে জিপিএ ৭। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, ভর্তিসংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি শিগগিরই গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হবে।
সভায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মুহম্মদ হুমায়ুন কবির, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. খন্দকার মো. সিফায়েত উল্লাহ, বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ, বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষসহ মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভার এ সিদ্ধান্ত বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত হওয়ার পর থেকেই ভর্তীচ্ছু শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ বিভিন্ন মহলে বিষয়টি নিয়ে সৃষ্টি হয় ব্যাপক কৌতূহল। দেখা দেয় মিশ্র প্রতিক্রিয়া। একই সঙ্গে অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন উপযুক্ত স্বচ্ছতা নিশ্চিত হওয়ার ব্যাপারে।
বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদ ই মাহবুব কালের কণ্ঠকে বলেন, পরীক্ষা না নিয়ে কোন পদ্ধতিতে যাচাই-বাছাই হবে তা এখনো পরিষ্কার করা হয়নি। কারণ জিপিএ ৮ পাওয়া প্রার্থী তো অনেকেই হতে পারে। যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমেই উপযুক্ত প্রার্থীকে ভর্তি করতে হবে। আর এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় কথাটি হলো স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা। পরীক্ষার বিকল্প যাচাই-বাছাই পদ্ধতি কতটা স্বচ্ছ থাকবে এর ওপরই নির্ভর করবে সব কিছু। এ জন্য আগে একটি নীতিমালা চূড়ান্ত করা দরকার।
জনস্বাস্থ্য সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ডা. ফয়জুল হাকিম লালা বলেন, আগে মেডিক্যালে ভর্তির সময় দলীয়করণের কোনো প্রচলন ছিল না। কিন্তু গত দুই-তিনটি সরকারের সময়ে দলীয়করণের ব্যাপক প্রভাব ছিল। এখন পরীক্ষা পদ্ধতি বাদ দিয়ে কেবল মেধার ভিত্তিতে ভর্তির বিষয়টি কতটা দলীয়করণমুক্ত থাকবে, সেটা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন থেকেই যায়।
ডা. লালা বলেন, একসময় মেডিক্যালে ভর্তির ক্ষেত্রে ডাক্তারদের সন্তানদের প্রতি পক্ষপাতিত্ব দেখানোর ব্যাপক অভিযোগ উঠত। পরীক্ষা পদ্ধতি বাদ দেওয়ায় এখন আবার সেই ডাক্তারের সন্তানদের ভর্তির দাপট ফিরে আসে কি না, সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। এক কথায়, পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গেই স্বচ্ছতার বিষয়টি জড়িয়ে আছে।
খুলনা মেডিক্যাল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ডা. কাজী হামিদ আজগর কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রতিবছর যে হারে জিপিএ ৫ পাচ্ছে, তাতে কেবল পাবলিক পরীক্ষার মেধাভিত্তিক ফলের ওপর নির্ভর করে কিভাবে নির্বিঘ্নে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যাবে, তা এখনই বোঝা যাচ্ছে না।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, 'মেধার ভিত্তিতে যারা ভর্তির সুযোগ পাবে না তাদের জন্য আমাদের কিছু করার থাকবে না। তারা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হবে।'
মেধা আর স্বচ্ছতার মাধ্যমে এখন থেকে মেডিক্যালে ভর্তি করা হবে।
মন্ত্রী বলেন, আসলে বিষয়টি নতুন কিছু নয়। এত দিনও মেধার ভিত্তিতেই ভর্তি করা হতো। বিশেষ করে মোট ১০০ নম্বরের স্কোর ধরা হতো। এর মধ্যে ৫০ নম্বর থাকত এসএসসি ও এইচএসসির প্রাপ্ত মেধার ভিত্তিতে। বাকি ৫০ থাকত পরীক্ষা প্রক্রিয়ার অন্যান্য বিষয়ের ওপর। এখন ওই ৫০ বাদ দিয়ে মেধার ৫০ নম্বরকেই শতভাগ স্কোর ধরা হবে। এ জন্য আরো নিপুণভাবে নীতিমালা তৈরি করা হবে। তাই কোনো ধরনের সংশয় বা বিভ্রান্তির সুযোগ নেই।
গতকাল রবিবার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এমবিবিএস ভর্তি প্রক্রিয়া নীতিমালা প্রণয়ন সম্পর্কিত সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হক এতে সভাপতিত্ব করেন। সভায় আরো সিদ্ধান্ত হয়, সরকারি ও বেসরকারি উভয় মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির প্রক্রিয়া বরাবরের ন্যায় কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে। বাংলাদেশিদের জন্য এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় সম্মিলিতভাবে সর্বনিম্ন জিপিএ ৮ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা ভর্তির জন্য বিবেচিত হবে। বিদেশিদের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন গ্রেড ধার্য করা হয়েছে জিপিএ ৭। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, ভর্তিসংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি শিগগিরই গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হবে।
সভায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মুহম্মদ হুমায়ুন কবির, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. খন্দকার মো. সিফায়েত উল্লাহ, বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ, বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষসহ মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভার এ সিদ্ধান্ত বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত হওয়ার পর থেকেই ভর্তীচ্ছু শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ বিভিন্ন মহলে বিষয়টি নিয়ে সৃষ্টি হয় ব্যাপক কৌতূহল। দেখা দেয় মিশ্র প্রতিক্রিয়া। একই সঙ্গে অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন উপযুক্ত স্বচ্ছতা নিশ্চিত হওয়ার ব্যাপারে।
বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদ ই মাহবুব কালের কণ্ঠকে বলেন, পরীক্ষা না নিয়ে কোন পদ্ধতিতে যাচাই-বাছাই হবে তা এখনো পরিষ্কার করা হয়নি। কারণ জিপিএ ৮ পাওয়া প্রার্থী তো অনেকেই হতে পারে। যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমেই উপযুক্ত প্রার্থীকে ভর্তি করতে হবে। আর এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় কথাটি হলো স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা। পরীক্ষার বিকল্প যাচাই-বাছাই পদ্ধতি কতটা স্বচ্ছ থাকবে এর ওপরই নির্ভর করবে সব কিছু। এ জন্য আগে একটি নীতিমালা চূড়ান্ত করা দরকার।
জনস্বাস্থ্য সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ডা. ফয়জুল হাকিম লালা বলেন, আগে মেডিক্যালে ভর্তির সময় দলীয়করণের কোনো প্রচলন ছিল না। কিন্তু গত দুই-তিনটি সরকারের সময়ে দলীয়করণের ব্যাপক প্রভাব ছিল। এখন পরীক্ষা পদ্ধতি বাদ দিয়ে কেবল মেধার ভিত্তিতে ভর্তির বিষয়টি কতটা দলীয়করণমুক্ত থাকবে, সেটা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন থেকেই যায়।
ডা. লালা বলেন, একসময় মেডিক্যালে ভর্তির ক্ষেত্রে ডাক্তারদের সন্তানদের প্রতি পক্ষপাতিত্ব দেখানোর ব্যাপক অভিযোগ উঠত। পরীক্ষা পদ্ধতি বাদ দেওয়ায় এখন আবার সেই ডাক্তারের সন্তানদের ভর্তির দাপট ফিরে আসে কি না, সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। এক কথায়, পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গেই স্বচ্ছতার বিষয়টি জড়িয়ে আছে।
খুলনা মেডিক্যাল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ডা. কাজী হামিদ আজগর কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রতিবছর যে হারে জিপিএ ৫ পাচ্ছে, তাতে কেবল পাবলিক পরীক্ষার মেধাভিত্তিক ফলের ওপর নির্ভর করে কিভাবে নির্বিঘ্নে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যাবে, তা এখনই বোঝা যাচ্ছে না।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, 'মেধার ভিত্তিতে যারা ভর্তির সুযোগ পাবে না তাদের জন্য আমাদের কিছু করার থাকবে না। তারা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হবে।'
No comments