মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ- যুদ্ধাপরাধী বিচার
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে ২৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।
ওই সময়ের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিতে না পারলে তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে বলেছেন ট্রাইব্যুনাল। রবিবার চেয়াম্যান বিচারপতি মোঃ নিজামুল হক নাসিমের নেতৃত্বে দুই সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ নির্দেশ দেন। একই ট্রাইব্যুনালে জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার তদন্ত কর্মকর্তার জেরা অব্যাহত রয়েছে। এদিকে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির রবিবার ট্রাইব্যুনাল পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, ট্রাইব্যুনালের অবকাঠামোগত উন্নয়নে তেমন কোন অগ্রগতি হয়নি। পাশাপাশি ট্রাইব্যুনাল হুমকির মধ্যে রয়েছে।
মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করার পর ট্রাইব্যুনাল বলেছে, ওই সময়ের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিতে না পারলেও তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে বলেছেন ট্রাইব্যুনাল। তবে তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদনে কি কি আছে ট্রাইব্যুনালের নিষেধাজ্ঞা থাকায় তা সাংবাদিকদের জানানো হয়নি বলে জানান প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সিমন। এর আগে রবিবার সকালে ট্রাইব্যুনালে মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দেন প্রসিকিউশন পক্ষের প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সিমন।
শাহরিয়ার কবীর
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারকৃতদের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পরিদর্শন করেছেন একাত্তর ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবীর। পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, ট্রাইব্যুনালের অবকাঠামোগত উন্নয়নে তেমন কোন অগ্রগতি হয়নি। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল হুমকিতে আছে। ট্রাইব্যুনালের বিচারক থেকে শুরু করে তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্মকর্তাকে প্রতিনিয়ত হুমকির সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
শাহরিয়ার কবির সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, গত বছর ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার একটি অর্গানোগ্রামের মাধ্যমে জনবলের তালিকা পাঠিয়েছিলেন, তা দেয়া হয়নি। তিনি বলেন, চলতি বছর আবারও জনবল চেয়ে অর্গানোগ্রাম পাঠানো হয়েছে। তারপরও আমরা দেখতে পেলাম কোন ধরনের জনবল সঙ্কট কাটেনি। ট্রাইব্যুনালে প্রয়োজনীয় রসদ ও নিরাপত্তার অভাব রয়েছে।
শাহরিয়ার কবির আরও বলেন, আমরা ট্রাইব্যুনালের রসদ সঙ্কটের বিষয়টি পর্যালোচনা করছি। এবং এ বিষয়টি সরকারের কাছে উত্থাপন করা হবে। ট্রাইব্যুনালে আটক ১০জনের বিচার ২০১৩ সালের মধ্যে শেষ করতে প্রয়োজনীয় রসদ আমরা সরকারের কাছে চাইব। এ বিষয়ে আজ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত বলা হবে। ট্রাইব্যুনালের লাইব্রেরী শুধু যে আইনজীবীর জন্য প্রয়োজন তা নয়, একজন সাংবাদিকদের জন্যও সমানভাবে প্রয়োজন। ট্রাইব্যুনালের যে কয়জন মহিলা আছে বা যে সকল মহিলা সংবাদ কর্মী আছে তাদের জন্য আলাদা টয়লেটের ব্যবস্থা নেই, বসার ব্যবস্থা নেই। সকাল এগারোটার দিকে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, প্রজন্ম-৭১, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সহায়ক মঞ্চসহ চারটি সংগঠনের কয়েকজন নেতা ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারপতিদের সঙ্গে সাক্ষাত করেন।
শাহরিয়ার কবিরের সঙ্গে এ সময় ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন, প্রজন্ম-৭১ এর সহ সভাপতি শাহিন রেজা নুর, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সহসভাপতি শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী প্রমুখ। এ সময় ডেপুটি রেজিস্ট্রার ব্যারিস্টার মেসবাহ উদ্দিন আহম্মেদ উপস্থিত ছিলেন।
মীর কাসেম আলী
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত জামায়াতের ইসলামীর নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে ২৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। ওই সময়ের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিতে না পারলে তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে বলেছেন ট্রাইব্যুনাল। রবিবার চেয়ারম্যান বিচারপতি মোঃ নিজামুল হক নাসিমের নেতৃত্বে দুই সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ নির্দেশ দেয়।
প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সিমন রবিবার মীর কাশেম আলীর বিরুদ্ধে অগ্রগতি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে গেলে ট্রাইব্যুনাল এ কথা জানায়। মীর কাশেম আলীকে ১৭ জুন গ্রেফতার করা হয়। ১৯ জুন তার জামিন আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠায় ট্রাইব্যুনাল। এর আগে ১৭ জনু সকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারের আবেদন করে। প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত বলেছেন, রবিবার দেয়া অগ্রগতি প্রতিবেদনে কি আছে তা সাংবাদিকদের যেমন জানানো হয়নি তেমনি সাংবাদিকরাও তা দিতে পারবেন না। তবে মীর কাসেম আলীর গ্রেফতারের সময় যে প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করা হয়েছিল তা অবশ্যই দেয়া যাবে। এতে কোন বাধা নেই। ১৭ জুন ট্রাইব্যুনালে মীর কাসেম আলীকে গ্রেফতারের জন্য যে আবেদন করা হয় সেখানে প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত যে তথ্য প্রদান করেছিলেন তার মধ্যে রয়েছে একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী সেনাদের সহযোগিতাকারী আলবদর বাহিনীর কমান্ডার ছিলেন। তার প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় একাত্তরে চট্টগ্রামে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাটসহ বিভিন্ন ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটানো হয়।
ঐ আবেদনে বলা হয়, মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের মীর কাসেমকে একাত্তরে চট্টগ্রামের মানুষ চিনত মিন্টু নামে। কলেজছাত্র থাকাকালে সেখানেই তিনি জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। পরে জামায়াতের অঙ্গসংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের দায়িত্বও নেন। মীর কাসেম আলীর নির্দেশেই চট্টগ্রামে রাজাকার বাহিনীর ক্যাম্পে বহু লোককে হত্যা ও নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের শেষভাগে পাকিস্তানী বাহিনী এ দেশের যে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে, তার তালিকা তৈরিতে মীর কাসেমও ছিলেন।
মীর কাসেম আলী স্বাধীনতার আগে চট্টগ্রামে লেখাপড়া করার সময় জামায়াতের অঙ্গসংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের দায়িত্ব পান ।
মীর কাসেম আলী চট্টগ্রামের আলবদর বাহিনীর প্রধান ছিলেন। ১৯৭৫ পরবর্তীতে তিনি ছাত্রশিবিরের সভাপতি নির্বাচিত হন। মানবতাবিরোধী মামলা চলাকালীন সময়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে গেছেন। সেখানে গিয়ে ট্রাইব্যুনালের কার্য্যক্রমকে বিঘিœত করার জন্য বিভিন্নভাবে অপপ্রচার চালিয়েছেন। স্বাধীনতাযুদ্ধের আগে বাবার চাকরির সুবাদে চট্টগ্রামে যান। চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্র থাকার সময় জড়িয়ে পড়েন মওদুদীর মৌলবাদী রাজনীতিতে।
মীর কাসেমের নির্দেশে চট্টগ্রামের টেলিগ্রাফ অফিসের লাগোয়া ডালিম হোটেলে রাজাকার বাহিনীর বন্দীশিবির খোলা হয়। সেখানে লোকদের ধরে এনে টর্চার করা হতো। বহু লোককে সেখানে নিয়ে খুন করা হয়। ১৭ ডিসেম্বর সেখান থেকে সাড়ে ৩শ’ বন্দীকে জীবন্মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। বুদ্ধিজীবী হত্যার তালিকা প্রণয়নকারীদের অন্যতম ছিলেন মীর কাসেম আলী। স্বাধীনতার পর মীর কাসেম পালিয়ে ঢাকায় চলে আসেন। মিন্টু নামে নিজের পরিচয় দিতেন তিনি, নিজেকে বলতেন মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু চিহ্নিত হয়ে পড়ার পর আরেক ঘাতক মঈনুদ্দিনের সঙ্গে পালিয়ে চলে যান লন্ডন। সেখান থেকে সৌদি আরব। সেখানে স্বাধীনতাবিরোধীদের সংগঠিত করতে থাকেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর দেশে ফিরে আসেন মীর কাসেম। ২৩ নবেম্বর আলবদর বাহিনীর সহায়তায় এএইচ চৌধুরীকে আন্দরকিল্লা থেকে ধরে হাত-পা বেঁধে ডালিম হোটেলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। ১৬ ডিসেম্বর শত্রুমুক্ত হবার পর তিনি মুক্ত হন।
সাঈদী
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে তদন্তকর্মকতার জেরা অব্যাহত রয়েছে। রবিবার ৪৭তম দিনের মতো রবিবার হেলাল উদ্দিনকে জেরা করেন জামায়াতের আইনজীবী মিজানুল ইসলাম। সোমবার ১৩ আগস্ট তদন্তকারী কর্মকর্তার এই জেরা শেষ হবে।
এর আগে ট্রাইব্যুনাল-১ নির্দেশ দিয়েছিলেন ৮ আগস্টের মধ্যে তদন্তকারী কর্মকর্তার জেরা শেষ করতে হবে। কিন্তু জামায়াতের আইনজীবীদের সময় বৃদ্ধির আবেদনের প্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনাল আরও ২টি দিন সময় দেয়ায় রবিবার ও সোমবার তার জেরার সময় বৃদ্ধি হয়। ট্রাইব্যুনালের শেষ নির্দেশ অনুযায়ী আজই হবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে কোন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তার শেষ জেরা।
কাদের মোল্লা
অপরদিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ মানবতাবিরোধী অপরাধে আটক জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লার সপ্তম সাক্ষী আব্দুল মজিদ পালোয়ানকে জেরা করেন জামায়াতের আইনজীবী আব্দুস সোবহান তরফদার। ট্রাইব্যুনাল-২ এর কার্যক্রম রবিবার দুপুর ২টায় শুরু হয়ে বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে শেষ হয়। আজ আবার তাকে জেরা করা হবে।
No comments