নির্বাচিত চার শ’ বই ৪০ ভাগ ছাড়ে বিক্রি দুর্লভ সুযোগ- আজিজ সুপার মার্কেটে ঈদ বই উৎসব by মোরসালিন মিজান
ঈদ মানে পাঞ্জাবি থ্রিপিস। শাড়ি গহনা। সেমাই, পোলাও। সুরমা, আতর। এভাবে ভেবে অভ্যস্ত সবাই। সবাই? আসলে না। অনেকেই এর বাইরে গিয়ে আনন্দ খোঁজেন। তাঁদের একটি অংশ বইপ্রেমিক। ভীষণ বই ভালবাসেন। পাঠ করে আনন্দ পান। একইভাবে বই তাঁদের উৎসব আনন্দকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়।
ফলে অন্য সময়ের মতো উৎসবে আনন্দে বই কেনেন তাঁরা। প্রিয়জনকেও উপহার দেন। সেই তাঁদের কথা ভেবে এবার প্রথমবারের মতো ঈদ বই উৎসবের আয়োজন করেছেন সৃজনশীল প্রকাশকদের একটি দল। গত বুধবার থেকে শাহবাগের আজিজ মার্কেটের নিচ তলার ৩৩ নম্বর কক্ষে চলছে এ উৎসব।
১২ দিনব্যাপী উৎসবের আয়োজক বই প্রকাশনা ও বিপণন সমবায় সমিতি। সৃজনশীল ২০ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান এতে অংশ নিয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ ঐতিহ্য, সন্দেশ, সূচীপত্র, জাগৃতি, র্যামন, শ্রাবণ, ম্যাগনাম ওপাস, উৎস, ভাষাচিত্র, বর্ষাদুপুর, সংহতি, জনান্তিক, মুক্তদেশ, মূর্ধন্য, সংবেদ, পারিজাত ও আদর্শ। এসব প্রতিষ্ঠানের নির্বাচিত ৪০০ বই দিয়ে সাজানো হয়েছে স্টল।
রবিবার সেখানে গিয়ে দেখা যায়, একেবারেই অন্য রকম একটি দৃশ্য। আশপাশের সব দোকানে যখন বাহারি পোশাক কেনার প্রতিযোগিতা তখন নিঃশব্দে বইয়ের পাতা উল্টাচ্ছেন বিভিন্ন বয়সী পাঠক। জায়গা কম। খুব নড়াচড়ার সুযোগ নেই। এর পরও যতটুকু সম্ভব জায়গা পরিবর্তন করছেন। একজন সরে গিয়ে অন্যজনকে জায়গা করে দিচ্ছেন। এভাবে উভয়েই খুঁজে নিচ্ছেন পছন্দের বই। পুরনো গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশনা যেমন আছে তেমনি এখানে রয়েছে এবার একুশে বইমেলায় প্রকাশিত বহু নতুন বই। তবে সংশ্লিষ্টদের জন্য খুব প্রয়োজনীয় তথ্য হচ্ছে, এখানে ৪০ ভাগ ছাড়ে বই বিক্রি হচ্ছে। একে বলতেই হবে দুর্লভ সুযোগ। কারণ, এত বেশি ছাড়ে বই বিক্রি প্রকাশকরা সচরাচর করেন না বললেই চলে। এ কারণে শুরু থেকেই বেচা বিক্রি ভাল বলে জানা যায়।
উৎসবে কথা হলো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী মাফরুহার সঙ্গে। ঈদের পোশাক কিনতে আজিজ সুপার মার্কেটে এসেছিলেন তিনি। টাকা বাঁচিয়ে বই কেনা তাঁর পুরনো অভ্যাস। সে অনুযায়ী উৎসব থেকে তিনটি বই কিনেছেন। জনকণ্ঠকে তিনি বললেন, বইয়ের দাম এখন অনেক। বিশেষ করে রচনা সমগ্র কিনতে ভাল টাকার দরকার হয়। তবে উৎসবে ৪০ ভাগ কমিশন দেয়ায় বেশ ভাল লাগছে। আরেক পাঠক রাসেল ভাল যুক্তি দিলেন। বললেন, এখন যদি ৪০ ভাগ কমিশনে বই দেয়া যায় তবে অন্য সময়ও দেয়া সম্ভব। প্রকাশকদের এ ব্যাপারে ভাবার পরামর্শ দেন তিনি। অবশ্য এখন মানুষের হাতে সময় কম। বই কখন পড়বে? এমন একটি কথা মাঝে মধ্যে শোনা যায়। তবে এ কথা উড়িয়ে দিলেন বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আশরাফ হোসেন। বললেন, আমার সারাদিনই কাজ থাকে। এর পরও বই পড়ার সময়ের কোন অভাব হয় না। আর ঈদে তো লম্বা ছুটি। সময়টা ভালভাবে কাজে লাগাতে চাই। সে জন্যই বই উৎসবে এসেছি। ঈদ বই উৎসব ব্যাপারটা কেমন লাগছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চমৎকার।
আয়োজন প্রসঙ্গে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ঐতিহ্যর কর্ণধার আরিফুর রহমান নাইম বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশে এ ধরনের আয়োজন করা হয়ে থাকে। বড় উৎসবে আয়োজনে প্রচুর বই বিক্রি হয়। এবার আমরা শুরু করলাম। এখন পর্যন্ত বিক্রি এত ভাল যে শুরুর দিকে তা কল্পনাও করিনি। তরুণ এ প্রকাশক জানান, প্রত্যেক প্রকাশকের উল্লেখযোগ্য কিছু বই এখানে রাখা হয়েছে। ফলে শুধু আইডিয়ার জন্য নয়, সংগ্রহের দিক থেকেও ঈদ বই উৎসব যথেষ্ট সমৃদ্ধ। ঈদে প্রিয়জনকে বই উপহার দেয়ার পরামর্শ দিয়ে অন্য প্রকাশকরা বলেন, এর চেয়ে স্থায়ী উপহার আর হয় না। বিশেষ এ উৎসব চাঁদ রাত পর্যন্ত চলবে।
No comments