উত্তরাঞ্চলে পুনরায় সংগঠিত হচ্ছে জঙ্গীরা!- কেন্দ্রস্থল বগুড়া
জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ জঙ্গী মৌলবাদীরা উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় পুনরায় সংগঠিত হচ্ছে। এখন হিংস্র হওয়ার কৌশল রপ্ত করছে। চতুরতার সঙ্গে অগ্রসর হচ্ছে। অতি গোপনীয়তার পাশাপাশি কোন প্রতিষ্ঠানের ভেতরে ঘাপটি মেরে থেকে ছদ্মাবরণে যোগাযোগ গড়ে তুলছে। একটি অংশ তাঁদের পুরনো জায়গাগুলোতে গিয়ে ছদ্মাবরণেই ঘাঁটি গেড়ে তুলছে।
উত্তরাঞ্চলের মধ্য শহর বগুড়ায় গত প্রায় তিন বছর ধরে তারা নেটওয়ার্ক তৈরিতে অনেকদূর এগিয়েছে। একাধিক সূত্র জানায়, বগুড়া এর আগেও ছিল বড় ঘাঁটি। সকল বিষয় নিয়ন্ত্রণ হতো বগুড়া থেকেই। অতি সূক্ষ্ম কৌশলে বগুড়াকে আড়াল করে রাখা কয়েছিল নেটওয়ার্ক বাড়ানোর সুবিধার্থে। এবারও সেই ফর্মুলাতেই উগ্র মৌলবাদীরা আগের পরিচয়ের রেশ ধরে ও পুরনো সাংগঠনিক তৎপরতার সূত্র ধরে বগুড়াকে সেন্টার পয়েন্ট করে বড় নেটওয়ার্ক গড়ে তুলছে। প্রসঙ্গত বাংলা ভাইয়ের (মৃত্যুদন্ড কার্যকর) অবাধ বিচরণকালে বগুড়া শহরের ঠনঠনিয়ায় বহুতল ভবনে শায়খ আব্দুর রহমান (মৃত্যুদ- কার্যকর) দীর্ঘদিন বহাল তবিয়তে অবস্থান করেছেন। তাঁর জামাই (জেএমবির অন্যতম নেতা) বগুড়ায় তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন। পুলিশের সামনে দিয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও ওই দুই নেতার টিকিও ছুঁতে পারেনি। বর্তমানে পূর্বের গোপনীয়তার মডেলের সঙ্গে আরও উন্নত ব্যবস্থা যোগ হচ্ছে। জঙ্গী মৌলবাদীরা আরও হিংস্র হতে উন্নত যত প্রযুক্তি ব্যবহার করা দরকার তাই করছে। খোঁজখবর করে জানা যায়, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতে ও গণতন্ত্র নস্যাত করতে তাদেরই একটি অংশ দেশজুড়ে সংগঠিত হচ্ছে। এদিকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগে সকল জেলা হতে যুদ্ধাপরাধীদের যে তালিকা চাওয়া হয়েছিল তা সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠানোর পরও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বগুড়ায় নিষিদ্ধ ঘোষিত জামাআ’তুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) নামের সংগঠনের অদৃশ্য ঘাঁটি ছিল। সেখান থেকে যে তিন জন যুদ্ধাপরাধীর নাম পাঠানো হয়েছে তাদের একজনকেও আটক করা হয়নি এবং কোন রিপোর্ট পাঠানো হয়নি। সূত্র জানায়, এই তিনজন হলেন আদমদীঘির আব্দুল মোমিন তালুকদার খোকা, গোকুলের ঠেঙ্গামারার আব্দুর রহমান ও নন্দীগ্রামের শফিউল আলম বুলু ডাক্তার। গত ২০১০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর বগুড়া জেলা প্রশাসন থেকে ৬৬৬ নম্বর স্মারকে এই তিনজনের নাম বিভাগীয় কমিশনার ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। সূত্র জানায়, এই তিনজনের প্রত্যেকেই শক্তিধর ও ক্ষমতাধর ব্যক্তি। নন্দীগ্রাম উপজেলার ধুন্দার গ্রামের চৈতন্যনাথ দাস শফিউল আলমের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বগুড়ার আদালতে মামলা দায়ের করেন। এর আগে আদমদীঘির কয়েক মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মোমিন তালুকদারের বিরুদ্ধেও মামলা দায়ের করেন। শুধু গোকুলের ঠেঙ্গামারার আব্দুর রহমানের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, এই আব্দুর রহমানের সঙ্গে শায়খ আব্দুর রহমানের (জেএমবি নেতা) যোগাযোগ ছিল। বগুড়ায় ২০০৩ সাল থেকে জঙ্গীদের যে নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হয় তখন তিনি সকল ধরনের সহযোগিতা করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় এই আব্দুর রহমান ছিলেন হানাদার পাকিস্তানী বাহিনীর দোসর। তাঁর বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী যথেষ্ট অপরাধ রয়েছে বলে জানা যায়। এক সূত্র জানায়, তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে যখনই কোন কর্মকর্তা গেছেন (এবং এখনও যাচ্ছেন) তখনই ‘অদৃশ্য’ কারণে সেই রিপোর্ট আর নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছে না। এই আব্দুর রহমানের সঙ্গে আছেন বড় একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠান। সেই প্রতিষ্ঠানের অনেক কিছুই দেখভাল করেন তিনি।
No comments