যাত্রাবাড়ীতে ফ্লাইওভারের নিচের সড়ক যেন ডোবা by জসীম রেজা
গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের নিচের সড়কে এখন ছোট-বড় মিলিয়ে কয়েক শ গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির পানি জমে অনেকটা ডোবার আকার ধারণ করেছে সড়কটি। বিপজ্জনক এ সড়ক দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে চলছে ঈদে ঘরে ফেরা মানুষ। সরেজমিনে এমন চিত্রই দেখা গেছে।
গত ৯ আগস্ট রাত ১০টা। বাবুল বেপারী নামের এক ট্রাকচালক রাজধানী সুপার মার্কেটের পূর্ব পাশের গলি দিয়ে সায়েদাবাদের দিকে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ ট্রাকের এক পাশের চাকা পানি জমে থাকা একটি গর্তে পড়ে যায়। এতে রাস্তার পাশে উল্টে যায় গমবোঝাই ট্রাকটি। অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান বাবুল বেপারী। পাশে অবস্থিত র্যাব-৩-এর সদস্যরা এসে তাঁকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তার ফ্লাইওভারের নিচে কাঁচপুর, পোস্তগোলা, মাতুয়াইল রাস্তার প্রবেশমুখে কাদার স্তূপ। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ময়লা-আবর্জনা ও ড্রেনের দুর্গন্ধময় পানি।
ঈদ উপলক্ষে যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা দিয়ে চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লা, চাঁদপুর, ফরিদপুর, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জসহ ১৫ থেকে ২০ জেলার কয়েক লাখ লোক ঢাকা ছাড়ে। একদিকে বেহাল রাস্তা, তাতে আবার রাস্তার ওপরই দোকানপাট। এসব কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যাত্রীদের যানজটে আটকে থাকতে হচ্ছে। যাত্রাবাড়ী থানার পুলিশের দালালরা এসব দোকান বসিয়ে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা থেকে পশ্চিম দিকে একটু এগোলেই সায়েদাবাদ ব্রিজের মোড়ে চলছে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কাজ। এই মোড় দিয়ে গাড়ি চলাচল তো দূরের কথা, মানুষের হেঁটে চলাই দায়। বেশির ভাগ গাড়িচালক সায়েদাবাদ এলাকার ফ্লাইওভারের নিচের এ রাস্তাটি ব্যবহার না করে দয়াগঞ্জ খালপাড়ের নতুন রাস্তাটি ব্যবহার করছেন। বিকল্প রাস্তাটি দিয়ে রাজধানী সুপার মার্কেটের কাছে এলে চালকদের পড়তে হয় বিশাল যানজটে। রাজধানী সুপার মার্কেটের কাছে ঘণ্টাখানের যানজট পার হয়ে জয়কালী মন্দিরের কাছে এলে পাড়ি দিতে হয় গর্তে ভরা রাস্তা। যাত্রাবাড়ী এলাকার বাসিন্দা মাসুদ আলম বলেন, 'এ রাস্তা দিয়ে চলার সময় মনে হয় যেন কালবৈশাখীর মধ্যে পদ্মা নদী পাড়ি দিচ্ছি।'
পানি জমে থাকা ভাঙা রাস্তায় সিএনজিচালিত গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটে বেশি। নারায়ণগঞ্জ-গুলিস্তান রুটে চলাচলকারী বন্ধন গাড়ির মালিক সমিতির সদস্য হোসেন মিয়া বলেন, 'যাত্রাবাড়ী থেকে গুলিস্তানের রাস্তাটির খুবই খারাপ অবস্থা। এ রাস্তায় আমাদের কয়েকটি গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল। এখন গাড়িগুলো বিকল্প রাস্তা ধোলাইপাড়-দয়াগঞ্জের রাস্তা দিয়ে চলাচল করে। এতেও নিস্তার নেই। গুলিস্তান জয়কালী মন্দির এলাকার রাস্তাটিরও দুরবস্থা।'
সায়েদাবাদ এলাকার বাসিন্দা নূরে আলম খন্দকারের কাপড়ের ব্যবসা রয়েছে গুলিস্তানে। তিনি বলেন, 'আগে রিকশায় বাসা থেকে গুলিস্তান যেতাম। কয়েকবার রিকশা গর্তের মধ্যে পড়ে জামাকাপড় নষ্ট হয়েছে। এখন দয়াগঞ্জর রাস্তা দিয়ে হেঁটে গুলিস্তান যেতে হচ্ছে।'
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এক কর্মকর্তা বলেন, গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের কাজ শুরু হয় ২০১০ সালের ২২ জুন। মাঝে ছয় মাস কাজ বন্ধ ছিল ঢাকা ওয়াসা, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ কম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল), ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানি (ডিপিডিসি) ও তিতাস গ্যাস কম্পানির কাজের জন্য। ফ্লাইওভারের কাজ আবার পুরোদমে শুরু হয় এ বছরের ৯ এপ্রিল থেকে। কিন্তু ওই কম্পানিগুলো নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করতে পারেনি। আর যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান ফ্লাইওভারের কাজের জন্য দুই বছর ধরে রাস্তাটি মেরামত না করা এবং খোঁড়াখুঁড়ির কারণে সড়কটি যাতায়াতের পুরোপুরি অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বয় না থাকায় রাস্তাটির এমন দশা।
No comments