ইরানে ভূমিকম্প-মৃত ২২৭, উদ্ধারকাজ সমাপ্ত

ইরানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে দুই দফা শক্তিশালী ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ২২৭ বলে জানিয়েছে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আহত হয়েছে এক হাজার ৩৮০ জন। প্রথম দিকে মৃতের সংখ্যা আড়াই শ উল্লেখ করা হলেও পরে তা সংশোধন করা হয়।


গতকাল রবিবারই নিখোঁজদের অনুসন্ধান এবং উদ্ধার তৎপরতা সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়। জোর গতিতে ত্রাণ তৎপরতা চলছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত শনিবার বিকেলে দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশে ৬ দশমিক ৪ এবং ৬ দশমিক ৩ মাত্রায় দুই দফা ভূমিকম্প হয়। দুটি ভূমিকম্পের মধ্যে সময়ের ব্যবধান ছিল মাত্র ১১ মিনিট। গতকালও ৫০টির মতো ভূমিকম্প-পরবর্তী কম্পন টের পাওয়া গেছে। স্থানীয় এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে ইরানের সংবাদ সংস্থা আইআরএনএ জানায়, সবচেয়ে বেশি মানুষ হতাহত হয়েছে ভারজাগান ও আহার শহরে। পার্শ্ববর্তী বড় শহর তাবরিজেও ভূমিকম্প অনুভূত হয়। তবে এতে তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোস্তাফা মোহাম্মাদ নাজার বলেন, 'অনুসন্ধান ও উদ্ধার তৎপরতা শেষ হয়েছে। আমরা এখন দুর্গতদের আশ্রয় ও খাদ্য সহায়তা নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছি।' তিনি জানান, ওই অঞ্চলে অবস্থিত ৬০০ গ্রামের প্রায় অর্ধেকই ধসে গেছে বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্তত ১৬ হাজার লোক খোলা আকাশের নিচে বাস করতে বাধ্য হচ্ছে। নাজার জানান, প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদ দ্রুত বাড়িঘর নির্মাণ শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন। স্থানীয় রেড ক্রিসেন্ট ইতিমধ্যেই তাঁবু বসানোর কাজ শুরু করেছে।
ধারণা করা হচ্ছে, ভূমিকম্প বিধ্বস্ত এলাকার বাড়িগুলো ছোট ছোট, গ্রামবাসীর পরস্পরকে চেনা-জানা থাকা এবং ঠিক কোন কোন স্থানে খুঁজতে হবে সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকার কারণেই উদ্ধার তৎপরতা এত দ্রুত শেষ করা সম্ভব হয়েছে। তবে এই ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের স্বজন হারানো আর দুর্ভোগের চিত্রও সামনে আসতে শুরু করেছে। মির্জা আলী কান্দি গ্রামের ১৩ বছরের শিশু জয়নাব বলে, 'ভূমিকম্পের সময় বাড়ির বাইরে খেলছিলাম। দৌড়ে ঘরে ঢুকে দেখি আমার ভাই (৮) কংক্রিটের বড় একটা স্তূপের তলে চাপা পড়েছে। স্তূপ সরানোর চেষ্টার সময় কানে এলো আমার বোনের (১৬) চিৎকার। গিয়ে দেখি ওর মাথায় একটা বড় পাথর এসে পড়েছে। ওদের কাউকে বাঁচাতে পারিনি আমি।'
জানা গেছে বেঁচে যাওয়া ভাগ্যবান লোকদের গল্পও। কানবার মেহদিজাদে নামে ৪০ বছরের এক কৃষক জানান, ভূমিকম্পের সময় পরিবারের সব সদস্য মিলে মাঠে কাজ করছিলেন। ফলে বেঁচে গেছেন সবাই।
ভূমিকম্পে নিহতদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। উদ্ধারকর্মী আলীরেজা হায়দারি কাজ করছেন বাজে বাজ গ্রামে। বললেন, 'গ্রামটা গণকবরে পরিণত হয়েছে।' গ্রামের ৪১৪ অধিবাসীর মধ্যে ৩৩ জন নিহত হয়েছে। তিনি জানান, ওই অঞ্চলে এমন বহু গ্রাম আছে, যেখানে বাড়িঘর আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।
এর আগে ২০০৩ সালে ইরানের বাম শহরে ৬ দশমিক ৬ মাত্রার ভূমিকম্পে ৩১ হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারায়। সূত্র : বিবিসি, এএফপি।

No comments

Powered by Blogger.