চরাচর-ঢাকার হারিয়ে যাওয়া পথশিল্পী by স্বপন কুমার দাস
প্রাচীন নগরী ঢাকা। এই নগরীতে একসময় অসংখ্য পথশিল্পী দেখা যেত। রাস্তার মোড়ে নিরিবিলি স্থানে বসে কিংবা ফুটপাতে দাঁড়িয়ে তারা নানাভাবে সাধারণ মানুষকে আনন্দ দিত। কাজ শেষে কর্মস্থল থেকে বাড়ি ফেরা মানুষ পড়ন্ত বিকেলে দুদণ্ড বসে বা দাঁড়িয়ে পথশিল্পীদের প্রতিভা দেখে মুগ্ধ হয়ে যেত।
পকেট থেকে দু-চার আনা দিয়ে তারা হাসিমুখে বাড়ি ফিরে যেত।
সেকালে ঢাকার সাধারণ মানুষের জন্য ছিল না কোনো বিনোদনের ব্যবস্থা। রমনার রেসকোর্স মাঠে রবিবারের ঘোড়দৌড় ছাড়া একসঙ্গে বহু লোকের উপভোগ করার মতো আর কোনো ব্যবস্থা ছিল না। রেডিও-টিভি তখন ছিল না। পথশিল্পীরাই ছিল একমাত্র ভরসা, পথশিল্পীরা বিচিত্র উপায়ে মানুষকে আনন্দ দিত। তাদের কেউ দেখাত জাদুর খেলা কিংবা শারীরিক কসরৎ। কেউ দেখাত ভল্লুকের খেলা, বানরের খেলা কিংবা সাপের খেলা। কেউ বাঁশি বা বেহালা বাজিয়ে পুরো শহর ঘুরে বেড়াত। আবার, কেউ হারমোনিয়াম গামছা দিয়ে গলায় বেঁধে কন্যাসন্তান সঙ্গে নিয়ে গলা ছেড়ে ভাটিয়ালি বা মরমি গান ধরত। তাদের গানের সুরে মানুষ ফিরে যেত তার শৈশবে। ফেলে আসা পল্লীজীবনের কথায়। প্রিয়জনদের মনে পড়ে যেত। এভাবেই ঢাকা নগরীর সাধারণ মানুষ নিত্যদিন উপভোগ করত পথশিল্পীদের কসরত।
এরপর নগরজীবনে আধুনিকতার ছাপ লাগে। বিনোদনব্যবস্থাও পাল্টাতে থাকে। নাগরিক জীবনে আসে কলের গান, মাইক, রেডিও-টিভি, সিনেমা, থিয়েটার, ফুটবল খেলা ইত্যাদি। এসবের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে পথশিল্পীদের জীবনে। সাপের খেলা ও বানর খেলা এখন আর মানুষকে আকর্ষণ করে না। মানুষ সচেতন হওয়ায় বন্য প্রাণীকে উপজীব্য করে অর্থ উপার্জন কঠিন হয়ে পড়েছে। ভালো গায়ক কিংবা বেহালা বা বংশীবাদকরা নানা অনুষ্ঠানে গানের সুযোগ লাভ করে। তা ছাড়া ব্যস্ত নাগরিক জীবন এবং পথের পাশে বসে খেলা দেখালে যানজটের সৃষ্টি হয় বলে পুলিশি বাধার কারণে পথশিল্পীরা আগের মতো উপার্জন করতে পারে না। দুঃসময়ের মুখোমুখি হয় তারা, ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে থাকে।
তার পরও আজো নগরীর বিভিন্ন প্রান্তে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু পথশিল্পী দেখা যায়। তবে তারা তাদের ব্যবসার ধরন বা কৌশল পাল্টিয়েছে। মানুষের গোপন ব্যাধির চিকিৎসার জন্য ভেষজ ও প্রাণিজ ওষুধের গুণাগুণের কথা বলে তা বিক্রির চেষ্টা করে। চিকিৎসকরা বলেন, এসব ওষুধ শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। কিন্তু তারা কথার মায়াজাল বিস্তার করে খদ্দেরের মন জয় করে ওষুধ গছিয়ে দেয়। তা ছাড়া ফুটপাতে বসে হাতের রেখা দেখে কিছু মানুষকে আজো জীবিকা অর্জন করতে দেখা যায়। শুক্রবার বন্ধের দিন মহল্লায় সাপের খেলাও মাঝেমধ্যে দেখা যায়। সাপুড়েদের কাছে এখন আর ঝাঁপি ভরা সাপ দেখা যায় না। দু-চারটা নির্বিষ কালনাগিনী, লাউডগা আর দাঁড়াশ এবং এর সঙ্গে একটি বিষধর কালকেউটে থাকে। কিছুদিন পর তা-ও হয়তো দেখা যাবে না। এভাবেই ঢাকার পথশিল্পীরা আজ হারিয়ে যেতে বসেছে।
স্বপন কুমার দাস
সেকালে ঢাকার সাধারণ মানুষের জন্য ছিল না কোনো বিনোদনের ব্যবস্থা। রমনার রেসকোর্স মাঠে রবিবারের ঘোড়দৌড় ছাড়া একসঙ্গে বহু লোকের উপভোগ করার মতো আর কোনো ব্যবস্থা ছিল না। রেডিও-টিভি তখন ছিল না। পথশিল্পীরাই ছিল একমাত্র ভরসা, পথশিল্পীরা বিচিত্র উপায়ে মানুষকে আনন্দ দিত। তাদের কেউ দেখাত জাদুর খেলা কিংবা শারীরিক কসরৎ। কেউ দেখাত ভল্লুকের খেলা, বানরের খেলা কিংবা সাপের খেলা। কেউ বাঁশি বা বেহালা বাজিয়ে পুরো শহর ঘুরে বেড়াত। আবার, কেউ হারমোনিয়াম গামছা দিয়ে গলায় বেঁধে কন্যাসন্তান সঙ্গে নিয়ে গলা ছেড়ে ভাটিয়ালি বা মরমি গান ধরত। তাদের গানের সুরে মানুষ ফিরে যেত তার শৈশবে। ফেলে আসা পল্লীজীবনের কথায়। প্রিয়জনদের মনে পড়ে যেত। এভাবেই ঢাকা নগরীর সাধারণ মানুষ নিত্যদিন উপভোগ করত পথশিল্পীদের কসরত।
এরপর নগরজীবনে আধুনিকতার ছাপ লাগে। বিনোদনব্যবস্থাও পাল্টাতে থাকে। নাগরিক জীবনে আসে কলের গান, মাইক, রেডিও-টিভি, সিনেমা, থিয়েটার, ফুটবল খেলা ইত্যাদি। এসবের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে পথশিল্পীদের জীবনে। সাপের খেলা ও বানর খেলা এখন আর মানুষকে আকর্ষণ করে না। মানুষ সচেতন হওয়ায় বন্য প্রাণীকে উপজীব্য করে অর্থ উপার্জন কঠিন হয়ে পড়েছে। ভালো গায়ক কিংবা বেহালা বা বংশীবাদকরা নানা অনুষ্ঠানে গানের সুযোগ লাভ করে। তা ছাড়া ব্যস্ত নাগরিক জীবন এবং পথের পাশে বসে খেলা দেখালে যানজটের সৃষ্টি হয় বলে পুলিশি বাধার কারণে পথশিল্পীরা আগের মতো উপার্জন করতে পারে না। দুঃসময়ের মুখোমুখি হয় তারা, ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে থাকে।
তার পরও আজো নগরীর বিভিন্ন প্রান্তে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু পথশিল্পী দেখা যায়। তবে তারা তাদের ব্যবসার ধরন বা কৌশল পাল্টিয়েছে। মানুষের গোপন ব্যাধির চিকিৎসার জন্য ভেষজ ও প্রাণিজ ওষুধের গুণাগুণের কথা বলে তা বিক্রির চেষ্টা করে। চিকিৎসকরা বলেন, এসব ওষুধ শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। কিন্তু তারা কথার মায়াজাল বিস্তার করে খদ্দেরের মন জয় করে ওষুধ গছিয়ে দেয়। তা ছাড়া ফুটপাতে বসে হাতের রেখা দেখে কিছু মানুষকে আজো জীবিকা অর্জন করতে দেখা যায়। শুক্রবার বন্ধের দিন মহল্লায় সাপের খেলাও মাঝেমধ্যে দেখা যায়। সাপুড়েদের কাছে এখন আর ঝাঁপি ভরা সাপ দেখা যায় না। দু-চারটা নির্বিষ কালনাগিনী, লাউডগা আর দাঁড়াশ এবং এর সঙ্গে একটি বিষধর কালকেউটে থাকে। কিছুদিন পর তা-ও হয়তো দেখা যাবে না। এভাবেই ঢাকার পথশিল্পীরা আজ হারিয়ে যেতে বসেছে।
স্বপন কুমার দাস
No comments