কপোতাক্ষ নদ-বেদনার শিরোনাম আর কত?

মধুকবির স্মৃতিবিজড়িত কপোতাক্ষ নদের করুণ দশা বেদনাদায়ক সন্দেহ নেই; কিন্তু স্রোতস্বিনীটি রক্ষায় বারবার নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগ যেভাবে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হচ্ছে, তা আরও বেশি হতাশার জন্ম দেয়। নদীটি যেভাবে স্রোতশূন্য হয়ে পড়ছে, তাতে করে বৃহস্পতিবার সমকালের লোকালয় পাতায় প্রকাশিত শিরোনাম এখন সর্বজনীন শঙ্কা_


কপোতাক্ষ বাঁচবে তো! দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পাঁচ জেলার মধ্যে প্রবাহিত কমবেশি সাড়ে তিনশ' কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের কপোতাক্ষ একসময় ছিল ওই অঞ্চলের অর্ধকোটি মানুষের যোগাযোগ, সেচ ও মৎস্যসম্পদের প্রধান উৎস। প্রকৃতির ওই আশীর্বাদ এখন অভিশাপে পরিণত হয়েছে। আমরা দেখেছি, গত কয়েক দশকে নদীটি বহুবার সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে। সভা-সেমিনারও কম হয়নি। বড় কথা, নদীটি রক্ষায় ২০০০ সাল থেকে প্রায় প্রতিবছরই অর্থ বরাদ্দ হয়েছে। কিন্তু কেন কাজ হয়নি, তা বলাই বাহুল্য। আমরা চাই, সমকালের প্রতিবেদনে কপোতাক্ষ খননের অর্থ নয়ছয় হওয়ার যে অভিযোগ উঠেছে, তা অবিলম্বে খতিয়ে দেখা হোক। লাখ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা ও প্রতিবেশ রক্ষার প্রাণপ্রবাহ কতিপয় ব্যক্তির লোভের কাছে জিম্মি হতে দেওয়া যায় না। একই সঙ্গে নীতিনির্ধারকদের এও বুঝতে হবে যে, কেবল বিচ্ছিন্নভাবে কপোতাক্ষ নদ উদ্ধার করা কঠিন। তথাকথিত উন্নয়ন প্রকল্পের নামে গত কয়েক দশকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জলাধার ও প্রবাহগুলোর ওপর যে অত্যাচার করা হয়েছে, কপোতাক্ষের দুর্গতি তারই কুফল। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে নদীটির উৎস পদ্মার উজানের পানি প্রত্যাহার। কপোতাক্ষের প্রাণ ফিরিয়ে দিতে হলে সামগ্রিক ও সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি। কিন্তু জাতীয়-আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়া ও বিপুল অর্থঘনিষ্ঠ ওই উদ্যোগের জন্য হাত গুটিয়ে বসে থাকার অবকাশ নেই। স্বল্পমেয়াদি পদক্ষেপ হিসেবে খননকাজ চালিয়ে যেতে হবে। সেক্ষেত্রে কেবল বরাদ্দ নয়, স্বচ্ছতা ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। দুর্ভাগ্যজনকভাবে গত কয়েক বছর ধরে কেবল অর্থই জলে ঢালা হয়েছে। একদিকে বছরের পর বছর অর্থ বরাদ্দ হয়েছে, অন্যদিকে কপোতাক্ষের ক্রমাবনতি হয়েছে। এই দুষ্টচক্র আর চলতে দেওয়া যায় না।

No comments

Powered by Blogger.