গাইবান্ধা টিটিসি ভবন নির্মাণ কাজে অনিয়মের অভিযোগ
গাইবান্ধা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (টিটিসি) প্রশাসনিক ও আবাসিক ভবন নির্মাণকাজে অনিয়ম ও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গাইবান্ধা সদর উপজেলার খোলাহাটি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান কাজী ইব্রাহীম খলিল বলেন, নির্মাণাধীন টিটিসি ভবন নির্মাণে মাটির নিচে ৪৮ ফুট পাইলিং করার কথা থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে ৩০ থেকে ৩৫ ফুট পাইলিং করা হচ্ছে।
এ ক্ষেত্রে ৪৮ ফুট লম্বা আরসিসি খুঁটি ব্যবহার করার পর অবশিষ্ট ১০-১৫ ফুট অংশের ঢালাই ভেঙে রড কেটে নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া পুরোনো ঢালাইগুলো মেশিনে ভেঙে আবার তা নতুন ঢালাইকাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।
গাইবান্ধা গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পূর্ত মন্ত্রণালয় প্রায় ১৮ কোটি ২১ লাখ টাকা ব্যয়ে গাইবান্ধা সদর উপজেলার খোলাহাটি ইউনিয়নের ফারাজিপাড়া গ্রামে টিটিসি নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করে। এর মধ্যে প্রশাসনিক ও আবাসিক ভবন নির্মাণকাজের দায়িত্ব পান বগুড়ার ঠিকাদার মোমিনুল ইসলাম। এ দুটি কাজে ব্যয় ধরা হয় প্রায় ১৪ কোটি টাকা। প্রকল্প এলাকায় মাটির নিচে ৪৪৬টি আরসিসি খুঁটি পাইলিং করা হবে। এ পর্যন্ত ৪৪২টি খুঁটি পাইলিং করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশ করে ঠিকাদার প্রশাসনিক ও আবাসিক ভবনের নকশা অনুযায়ী ৪৮ ফুট লম্বা আরসিসি খুঁটি পাইলিং করার কথা থাকলেও তা করছেন না। এ ছাড়া খুঁটি ঢালাইয়ের কাজে পুরোনো ইটের খোয়া ব্যবহার করা হচ্ছে।
গাইবান্ধা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ১৮ জুন রাত নয়টার দিকে পাইলিং করার জন্য তৈরি করা একটি আরসিসি খুঁটি ভেঙে রড বের করার সময় স্থানীয় জনগণ গণপূর্ত বিভাগকে খবর দেয়। ওই রাতেই নির্বাহী প্রকৌশলী ঘটনাস্থলে গেলে প্রকল্প এলাকার বৈদ্যুতিক বাতি নিভিয়ে দেওয়া হয়। পরে পুলিশ গিয়ে বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালানোর পর ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়। এ ঘটনায় ঠিকাদারের প্রকল্প এলাকার প্রকৌশলী খোকন মিয়া ও ব্যবস্থাপক সাদ্দাম হোসেনকে থানায় ডেকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।
গাইবান্ধা গণপূর্ত বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আবুল কাশেম বলেন, ‘রাতের বেলা প্রকল্প এলাকায় কাজ না করার ব্যাপারে নিষেধ থাকা সত্ত্বেও ঠিকাদারের লোকজন কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে আমরা বিব্রতকর অবস্থায় আছি।’
ঠিকাদার মোমিনুল ইসলাম নির্মাণকাজে অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আরসিসি পাইলিং করার সময় ৫-৭ ফুট অংশ দাবানো সম্ভব না হওয়ায় তা ভেঙে ফেলা হয়। তবে আরসিসি পাইলিং ভেঙে রড বের করে নেওয়ার বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী দেবাশিস সাহা বলেন, সরেজমিনে নির্মাণকাজের দুর্নীতির প্রমাণ পেয়ে একটি খুঁটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। পাইলিং করা আরও চার-পাঁচটি আরসিসি খুঁটি চিহ্নিত করা হয়েছে। আরসিসি পিলার ভেঙে রড চুরির বিষয়ে ওই ঠিকাদারকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। পুরো বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
No comments