মানবিক অনুভূতি ও ইসলাম by মাসউদুল কাদির
মানবিক অনুভূতিটা কি সবাই হারিয়ে ফেলেছি! এপ্রিলের শুরুতে চট্টগ্রাম থেকে কনটেইনারে করে আল আমীন ও দীন ইসলাম যান সিঙ্গাপুরে। অন্ধকার প্রকোষ্ঠে আটকা পড়ে আল আমীন কনটেইনারেই প্রাণ হারান। দীন বেঁচে গিয়ে উদ্ধারের পর জায়গা পান সিঙ্গাপুরের মতো দেশের হাসপাতালে।
আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্রের মানবিক অনুভূতিটা এত দুর্বল! কোনো এনজিওর কর্মকর্তারা মানবিক হতে পারলেন না, পারলেন না চট্টগ্রামের সেসব কনটেইনারের মালিকরাও। আল আমীনের লাশ অবশেষে বাংলাদেশের মাটি স্পর্শ করতে পারেনি। শুধুই টাকার অভাবে। গরিবরা এ দেশে থাকার অধিকার রাখে। রাখে না শুধু রাষ্ট্রীয় কোনো সহযোগিতা পাওয়ার কোনো যোগ্যতা! এক মাসেরও বেশি সময় ধরে সিঙ্গাপুরের হিমঘরে থাকার পর আল আমীনকে সে দেশের মাটিতেই দাফন করা হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'ও আমার দেশের মাটি তোমার 'পরে ঠেকাই মাথা' গানটা হয়তো প্রায়ই গাইত জাহাজের কোনো মাথায় বসে বসে। নিজেরই সুযোগ হলো না নিজের দেশে মাথা রাখার। পটুয়াখালীর আল আমীনের ভাই আলমগীরের বক্তব্য হলো, টাকার অভাবেই ভাইয়ের লাশ আনতে পারিনি।
ভিন দেশি হাসপাতালে শুয়ে শুয়ে এখনও দেশে ফেরার প্রহর গুনছে দীন ইসলাম। হতভাগ্য ডক শ্রমিক দীন ইসলামকে ফিরিয়ে আনার কোনো দায়িত্বই সরকার নিচ্ছে না। কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে তার ভাই বিলাল জানান, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে আবেদনের পরও কোনো সাড়া মেলেনি।
কোনো ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই জাহাজ ছেড়ে দিয়েছিল। যে কারণে আল আমীন দুনিয়া ত্যাগ করল আর দীন ইসলাম ভিন দেশি হাসপাতালে ধুঁকে ধুঁকে মরছে! সূরায়ে মায়েদায় আল্লাহতায়ালা স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, 'যদি কেউ অন্য কোনো ব্যক্তিকে হত্যার পরিবর্তে অথবা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করার অপরাধ ছাড়া (অন্যায়ভাবে) কাউকে হত্যা করে, সে যেন সব মানুষকে হত্যা করল।'
বুখারি ও মুসলিমে আছে, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'কোনো ব্যক্তি আমাদের কোনো মসজিদ অথবা বাজার অতিক্রমকালে তার সঙ্গে যদি তীর থাকে, তবে সে যেন তার অগ্রভাগ সাবধানে রাখে অথবা হাতের মুঠোর মধ্যে রাখে।'
আজকে দীন ইসলামকে কেউ নিজের দাবি করতে পারছি না। রাষ্ট্রযন্ত্রও এ ব্যাপারে নীরব। অথচ মহাগ্রন্থ আল কোরআন এ বিষয়ে খুব চমৎকার বলেছে, 'তোমরা সবাই আল্লাহর ইবাদত করো, তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক করো না। মা-বাবার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো এবং নিকটাত্মীয়, এতিম ও মিসকিনদের সঙ্গেও ভালো ব্যবহার করো। নিকট প্রতিবেশী, দূর প্রতিবেশী, চলার সাথি, পথিক-মুসাফির এবং তোমাদের অধীন দাস-দাসীদের প্রতি অনুগ্রহ করো।' (সূরা নিসা : ৩৬) বুখারি ও মুসলিমেও অধীন ও প্রতিবেশীর ওপর গুরুত্ব আরোপ করে অনেক বর্ণনা উঠে এসেছে।
আমরা দায় এড়াতে পারি না। আল আমীন আমার ভাই ছিলেন। দীন ইসলাম আমার ভাই। আমি বাঙালি। একজন বাঙালি হিসেবে দীন ইসলামকে সিঙ্গাপুরের হাসপাতালের বেডে অসহায় অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে খুবই অসহায়ত্ব বোধ করছি।
একটি গল্প দিয়ে শেষ করছি। এক রাজা তার কর্মচারীদের কাজ ভাগ করে লিস্ট ধরিয়ে দিল। এক বিকেলে রাজার ছেলে পুকুরের জলে পড়ে গেল। সবাই নিজেদের লিস্ট দেখে নিল। কারও লিস্টেই রাজার ছেলেকে জল থেকে তোলার কাজটি লেখা ছিল না। তাই কেউ আর সে কাজটি করতে যায়নি। ফলে রাজার ছেলে জীবন হারাল।
আমরা বাঁচতে চাই। রাজার ছেলের মতো জীবন হারাতে চাই না। রাষ্ট্রযন্ত্র যদি একটু মানবিক হয়, দায়িত্ব না এড়ায়, তাহলে আমাদের সুখপাখিরা একেবারে হারিয়ে
যাবে না।
mkadir1983@gmail.com
ভিন দেশি হাসপাতালে শুয়ে শুয়ে এখনও দেশে ফেরার প্রহর গুনছে দীন ইসলাম। হতভাগ্য ডক শ্রমিক দীন ইসলামকে ফিরিয়ে আনার কোনো দায়িত্বই সরকার নিচ্ছে না। কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে তার ভাই বিলাল জানান, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে আবেদনের পরও কোনো সাড়া মেলেনি।
কোনো ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই জাহাজ ছেড়ে দিয়েছিল। যে কারণে আল আমীন দুনিয়া ত্যাগ করল আর দীন ইসলাম ভিন দেশি হাসপাতালে ধুঁকে ধুঁকে মরছে! সূরায়ে মায়েদায় আল্লাহতায়ালা স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, 'যদি কেউ অন্য কোনো ব্যক্তিকে হত্যার পরিবর্তে অথবা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করার অপরাধ ছাড়া (অন্যায়ভাবে) কাউকে হত্যা করে, সে যেন সব মানুষকে হত্যা করল।'
বুখারি ও মুসলিমে আছে, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'কোনো ব্যক্তি আমাদের কোনো মসজিদ অথবা বাজার অতিক্রমকালে তার সঙ্গে যদি তীর থাকে, তবে সে যেন তার অগ্রভাগ সাবধানে রাখে অথবা হাতের মুঠোর মধ্যে রাখে।'
আজকে দীন ইসলামকে কেউ নিজের দাবি করতে পারছি না। রাষ্ট্রযন্ত্রও এ ব্যাপারে নীরব। অথচ মহাগ্রন্থ আল কোরআন এ বিষয়ে খুব চমৎকার বলেছে, 'তোমরা সবাই আল্লাহর ইবাদত করো, তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক করো না। মা-বাবার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো এবং নিকটাত্মীয়, এতিম ও মিসকিনদের সঙ্গেও ভালো ব্যবহার করো। নিকট প্রতিবেশী, দূর প্রতিবেশী, চলার সাথি, পথিক-মুসাফির এবং তোমাদের অধীন দাস-দাসীদের প্রতি অনুগ্রহ করো।' (সূরা নিসা : ৩৬) বুখারি ও মুসলিমেও অধীন ও প্রতিবেশীর ওপর গুরুত্ব আরোপ করে অনেক বর্ণনা উঠে এসেছে।
আমরা দায় এড়াতে পারি না। আল আমীন আমার ভাই ছিলেন। দীন ইসলাম আমার ভাই। আমি বাঙালি। একজন বাঙালি হিসেবে দীন ইসলামকে সিঙ্গাপুরের হাসপাতালের বেডে অসহায় অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে খুবই অসহায়ত্ব বোধ করছি।
একটি গল্প দিয়ে শেষ করছি। এক রাজা তার কর্মচারীদের কাজ ভাগ করে লিস্ট ধরিয়ে দিল। এক বিকেলে রাজার ছেলে পুকুরের জলে পড়ে গেল। সবাই নিজেদের লিস্ট দেখে নিল। কারও লিস্টেই রাজার ছেলেকে জল থেকে তোলার কাজটি লেখা ছিল না। তাই কেউ আর সে কাজটি করতে যায়নি। ফলে রাজার ছেলে জীবন হারাল।
আমরা বাঁচতে চাই। রাজার ছেলের মতো জীবন হারাতে চাই না। রাষ্ট্রযন্ত্র যদি একটু মানবিক হয়, দায়িত্ব না এড়ায়, তাহলে আমাদের সুখপাখিরা একেবারে হারিয়ে
যাবে না।
mkadir1983@gmail.com
No comments