শিশু গৃহকর্মীর উপর বিদ্যুতের ডিজিএম দম্পতির মধ্যযুগীয় বর্বরতা by জাহাঙ্গীর সুমন
মোবাইল চুরির মিথ্যা অপবাদে পারভেজ মোশারফ (১৪) নামে এক গৃহকর্মীকে পল্লী বিদ্যুতের মুন্সিগঞ্জের ডিজিএম (ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার) বৈদ্যুতিক তার দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে নির্যাতন করার অভিযোগ করেছে নির্যাতিতের পরিবার।
প্রভাবশালী ওই ডিজিএম ও তার স্ত্রীর ভয়ে নির্যাতিত পারভেজ মোশারফ তার ভগ্নিপতির বাসায় থেকে গোপনে চিকিৎসা নিচ্ছে।
পারভেজ মোশারফ বাংলানিউজকে জানান, গত সাড়ে তিন বছর ধরে ধানমন্ডির শংকরে ৩৯০/১ পল্লী বিদ্যুতের মুন্সিগঞ্জের ডিজিএম ইমদাদুল ইসলামের বাসায় গৃহকর্মী কাজ করতো। ৫ জুলাই শবে বরাতের রাতে তার সাহেব মোবাইল ফোন নিয়ে মসজিদে যান এবং সেখানে মোবাইল ফোন হারিয়ে ফেলে।
কিন্তু পরদিন শুত্রবার ৬ জুলাই মোবাইল চুরির অপরাধে তাকে বৈদ্যুতিক তার (রাবার দিয়ে পেচানো) দিয়ে বেধড়ক মারপিট করে, এতে তার পিঠে, হাতে, ঘাড়ে,মাথায় লাল হয়ে ফুলে যায়। ওই দিন ডিজিএম এর স্ত্রী জামেলা আক্তার তাকে বাসার একটি ঘরে আটকে রাখে ও চড়-থাপ্পর মেরে অনাহারে রেখে নির্যাতন চালায়।
পরে শুক্রবার রাতের কোনো এক সময় পারভেজ ওই বাসা থেকে পালিয়ে যায় তার ভগ্নিপতি বাসার উদ্দেশ্যে, কিন্তু ঢাকার সে কিছুই চেনে না, অনেক কষ্ঠে লোকজনকে জিজ্ঞেস করে গভীর রাতে রোকেয়া স্বরণীর তালতলা বাস স্ট্যান্ডে আসে।
এ সময় শেরে বাংলা নগর থানা পুলিশের এসআই আব্দুর রাজ্জাক সন্দেহজনক ঘোরাফেরা করায় তাকে থানায় নিয়ে ডিউটি অফিসার এসআই তন্তয় কুমারের কাছে দিয়ে আসেন।
জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে নির্যাতনের কথা জানালে শেরে নগর থানার এসআই তন্তয় কুমার তার ভগ্নিপতি লোকমান হোসেনের জিম্মায় পারভেজকে বুঝিয়ে দেন।
ভগ্নিপতি লোকমান তার নির্যাতনের চিহ্ন গুলো দেখিয়ে বাংলানিউজকে বলেন, “বেত কিংবা লাঠি দিয়ে পিটিয়ে মানুষকে শাসন করা হয় কিন্তু এ কোনো ধরনের বর্বরতা, মধ্যযুগীয় নির্যাতন কেও হার মানায়। তিনি এ জন্য নির্যাতনকারী ডিজিএম ইমদাদুল ইসলাম ডিজিএম এর স্ত্রী জামেলা আক্তার এর বিচার দাবি করেন।”
তিনি আরও বলেন, “পারভেজের চিকিৎসা চলছে,সুস্থ্য হলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে থানায় শিশু নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করবো।”
পারভেজের নির্যাতনকারী ডিজিএম স্ত্রী জামেলা আক্তারকে বাংলানিউজ থেকে টেলিফোন নির্যাতনের কথা জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি এ ব্যাপারে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
তবে মুন্সিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ এর ডিজিএম ইমদাদুল ইসলামের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি নির্যাতনের কথা এরিয়ে গিয়ে রিপোর্ট না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, “আমরা পারভেজের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করছি, বিষয়টি তিনি সমাধান করবেন।”
পারভেজের বাবা শাহাবুদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, ময়মনশিংহের নান্দাইল উপজেলার রাইসখালী গ্রামে তাদের বাড়ি। অভাবের সংসারের কারণে তিনি পারভেজকে সাড়ে তিন বছর আগে এক আত্মীয়ের মাধ্যমে ইমদাদুল ইসলামের বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করার জন্য পাঠান।
তিনি তার সন্তানের ওপর নির্যাতনকারী ডিজিএম দম্পত্তির উপযুক্ত শাস্তি দাবি করেন।
No comments