জাতীয় প্রেসক্লাবে মজীনা-বাংলাদেশ নিয়ে মার্কিন ক্রেতাদের উদ্বেগ রয়েছে

কর্মপরিবেশের মান ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে বাংলাদেশের পণ্য নিয়ে মার্কিন ক্রেতাদের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে। ভবিষ্যতে পরিস্থিতির উন্নতি না হলে বাংলাদেশের পণ্য কিনে নিজেদের সুনাম নষ্টের ঝুঁকি নেবেন না মার্কিন ব্যবসায়ীরা।


ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজীনা গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাব আয়োজিত মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেছেন। এ ছাড়া বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর ঋণচুক্তি বাতিল করায় তিনি হতাশা প্রকাশ করেছেন।
গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে সাংবাদিকদের সঙ্গে দেড় ঘণ্টার এ অনুষ্ঠানে তিনি বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের পরিস্থিতি এবং এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব, চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আসন্ন নির্বাচনসহ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রথমে বক্তব্য দেন। এরপর তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। এ ছাড়া গত রোববার শেষ হওয়া তাঁর দুই সপ্তাহ মার্কিন সফরের প্রসঙ্গ নিয়েও ড্যান মজীনা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
জাতীয় প্রেসক্লাব আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ক্লাবের সভাপতি কামালউদ্দিন সবুজ। স্বাগত বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ এবং অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য জহিরুল আলম।
পদ্মার চুক্তি বাতিলে হতাশা: পদ্মা সেতুর ঋণচুক্তি বাতিল নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে মজীনা বলেন, ‘বাংলাদেশের জন্য এই সেতু অত্যন্ত জরুরি। বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর ঋণচুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় আমি অত্যন্ত হতাশ হয়েছি। বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংক নিজেদের মধ্যে এ ব্যাপারে সমঝোতায় আসতে না পারাটা আমাকে হতাশ করেছে।’
পদ্মা সেতুর নির্মাণ-প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘এ ব্যাপারে কোনো প্রমাণ আমি দেখতে পাইনি। এ নিয়ে কানাডায় তদন্ত চলছে। আর তদন্তাধীন বিষয় নিয়ে মন্তব্য করার কোনো সুযোগ নেই।’
ব্যবসার পরিবেশে উদ্বেগ: বাংলাদেশের শ্রমিকদের কর্মপরিস্থিতি, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগ পরিবেশ নিয়ে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় মজীনা আলোচনা করেছেন। আলোচনায় এসেছে পোশাকশ্রমিক নেতা ও বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার্স সলিডারিটির (বিসিডব্লিউএস) নেতা আমিনুল ইসলামের হত্যার প্রসঙ্গটিও।
মজীনা জানান, বিসিডব্লিউএসের সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান মার্কিন ট্রেড ইউনিয়নগুলোর জোট এএফএল-সিআইওর (আমেরিকান ফেডারেশন অব লেবার অ্যান্ড কংগ্রেস অব ইন্ডাস্ট্রিয়াল অর্গানাইজেশন) কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ সফরে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশের জিএসপি (শুল্ক ছাড়ের সুবিধা) বন্ধ করতে মার্কিন কংগ্রেসে পিটিশন করেছে এএফএল-সিআইও। ওই পিটিশনের ব্যাপারে কংগ্রেসের সিদ্ধান্ত নেতিবাচক হলে তা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের কর্মপরিবেশের নিরাপত্তার অভাব, ট্রেড ইউনিয়নের অভাবসহ নানা কারণে বাংলাদেশের পণ্য কেনা নিয়ে মার্কিন ক্রেতাদের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে।
রাজনৈতিক সংকট দূর হবেই: আগামী নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক শিবিরের চরম মতপার্থক্য থাকলেও সংকট নিরসনে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ড্যান মজীনা।
দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে নিজের আলোচনার উল্লেখ করে মজীনা বলেন, ‘সংলাপ আয়োজন যদিও সহজ নয়, তবে সংলাপ নিয়ে আমি আশাবাদী। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি সমুন্নত রাখতেই আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়া উচিত।’

No comments

Powered by Blogger.