মিরসরাই ট্র্যাজেডির এক বছর-এখনো থামেনি কান্না by শারফুদ্দীন কাশ্মীর

আজ ১১ জুলাই। চট্টগ্রামের মিরসরাইবাসীর শোকের দিন। গত বছরের এই দিনে ফুটবল খেলা দেখতে গিয়ে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায় মিরসরাইয়ের কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনেক শিক্ষার্থী। ভয়াবহ সেই ঘটনার স্মরণে আজ মিরসরাইয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।


২০১১ সালের ১১ জুলাই মিরসরাই সদর স্টেডিয়ামে খেলা দেখে মিনি ট্রাকে করে বাড়ি ফিরছিল মিরসরাইয়ের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ প্রায় ৮০ জন। আবুতোরাব-বড়তাকিয়া সড়কের সৈদালী এলাকায় চালকের গাফিলতিতে ট্রাকটি উল্টে খাদে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হয় ৩৮ শিক্ষার্থীসহ ৩৯ জন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও পাঁচজন মারা যায়। এতে ওই দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৪ জনে।
সেদিন খেলা দেখতে বাবার চোখ ফাঁকি দিয়ে ট্রাকে উঠে পড়েছিল আশরাফ উদ্দিন। ভেবেছিল, বাবা দেখতে পাননি। কিন্তু ট্রাকে চড়তেই বাবার চোখে চোখ পড়ে যায়। মুচকি হাসি দিয়ে চেষ্টা চালায় বাবার মন জয়ের। সে চেষ্টায় সফলও হয়েছিল সে। যেতে বাধা দেননি বাবা। এই ছিল বাবার সঙ্গে সন্তানের শেষ দেখা। খেলা শেষে বাড়ি ফিরেছিল আশরাফের লাশ।
আবুতোরাব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র আশরাফকে হারিয়ে বাবা নিজাম উদ্দিন পাগলপ্রায়। এখনো ছেলে হারানোর শোক কাটিয়ে উঠতে পারেননি তিনি। সন্তানের শেষ মুহূর্তের হাসির স্মৃতিটুকু আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছেন তিনি।
শুধু নিজাম উদ্দিন নন, ওই দুর্ঘটনায় নিহত সব শিক্ষার্থীর পরিবারে এখনো চলছে শোকের মাতম। নিহত শিক্ষার্থীদের মা-বাবারা জানান, হারিয়ে যাওয়া সন্তানদের স্মৃতি আঁকড়ে ধরে তাঁরা বেঁচে আছেন। তাঁরা হারিয়ে যাওয়া সন্তানদের ভুলতে পারবেন না। কখনো বন্ধ হবে না তাঁদের এ কান্না।
শুধু পরিবারের সদস্যরা নয়, হারিয়ে যাওয়া শিক্ষার্থীদের শোকে কাতর তাদের সহপাঠীরাও। আর আহত শিক্ষার্থীরা এখনো ভুলতে পারেনি সেই যন্ত্রণাময় স্মৃতি। সেদিনের ভয়াল স্মৃতি এখনো তাড়া করে ফেরে তাদের।
বন্ধ হয়নি ট্রাকে চড়া: এত বড় দুর্ঘটনার পরও ট্রাকে করে খেলা দেখতে যাওয়া বন্ধ করতে পারেননি প্রশাসনের কর্মকর্তারা। এবারও খেলা দেখে দর্শকেরা ট্রাকে করে বাড়ি ফিরেছে। বিষয়টি স্বীকার করলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহম্মদ আশরাফ হোসেন ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. হারুন-উর-রশিদ। তাঁরা বলেন, শিক্ষার্থী ও দর্শকেরা ঝুঁকি নিয়ে ট্রাকে করে যাতায়াত করেছে। তাদের বারণ করেও এটা রোধ করা সম্ভব হয়নি।
কর্মসূচি: ইউএনও মুহম্মদ আশরাফ হোসেন বলেন, উপজেলা পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আজ মিরসরাইয়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শোক পালন করা হবে। শিক্ষার্থীরা কালো ব্যাজ ধারণ করবে। এ ছাড়া প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মিলাদ মাহফিল ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।
এ ছাড়া আজ সকাল ১০টায় স্থানীয় সাংসদ মোশাররফ হোসেন দুর্ঘটনাস্থলে স্মৃতিস্তম্ভ ‘অন্তিম’ এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। পরে তিনি আবুতোরাব উচ্চবিদ্যালয় মাঠে নিহতদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিফলক ‘আবেগ’-এ শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।
মিরসরাইয়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোরআনখানি ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য প্রার্থনা হবে জগন্নাথ বাড়িতে। দুপুরে আবুতোরাব উচ্চবিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ভোজের আয়োজন করেছে উপজেলা পরিষদ।

No comments

Powered by Blogger.