বিল পাসের প্রক্রিয়া-গতিশীল হোক যাচাই-বাছাই
জরুরি ও জনগুরুত্বসম্পন্ন হলেও প্রস্তুতি থেকে শুরু করে জাতীয় সংসদের মাধ্যমে একটি বিলের পাস হওয়ার প্রক্রিয়া দীর্ঘ ও জটিল। স্বীকার করতে হবে, দীর্ঘ প্রক্রিয়াটি যুক্তিসঙ্গত, প্রয়োজনীয়ও বটে। নতুন বিল তৈরির আগে সেটি বিদ্যমান আইন, বিধির সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিনা তা বিবেচনা করা জরুরি।
জনস্বার্থের জন্য প্রণীত হলেও, কোথাও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কিনা তাও খতিয়ে দেখা কর্তব্য। ফলে মন্ত্রণালয়গুলো মন্ত্রিসভায় উত্থাপনের আগে পূর্বাপর বিচার করে বিল প্রস্তুত করবে সেটিই প্রত্যাশিত। মন্ত্রিসভাও নিয়ম অনুসারে পর্যবেক্ষণ করে একটি বিলকে অনুমোদন দেয়। মন্ত্রিসভার অনুমোদন ও প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির সুপারিশক্রমে একটি বিল সংসদের বিবেচনার জন্য পেশ করা হয়। পেশ করেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী। জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালি বিধি অনুসারে সরকারি বিল উত্থাপন করে ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী বিলের ক্ষেত্রে কয়েকটি প্রস্তাব পেশ করতে পারেন। ক. অবিলম্বে বা নির্দিষ্ট কোনো দিনে বিলটি বিবেচনা; খ. কোনো স্থায়ী কমিটিতে প্রেরণ; গ. কোনো বাছাই কমিটির কাছে প্রেরণ ও ঘ. জনমত যাচাইয়ের জন্য বিলটির প্রচার। স্থায়ী বা বাছাই কমিটিতে পাঠানোর পর কমিটির দায়িত্ব হলো, প্রয়োজনীয় সময় নিয়ে বিলটি যাচাই-বাছাই করা। প্রয়োজনীয় সংশোধন প্রস্তাব করা। তাদের প্রস্তাবের ভিত্তিতে বিলটি সংসদে উত্থাপিত হলে সদস্যদের ভোটে তা পাস বা বাতিল হতে পারে। সম্প্রতি কথা উঠেছে, স্থায়ী কমিটিগুলো বিল যাচাই-বাছাইয়ের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সময় নিচ্ছে। একটি বিল যাচাই-বাছাইয়ের জন্য প্রয়োজনীয় সময় কমিটি নিতে পারে, সময় বাড়াতেও পারে। কিন্তু নির্দিষ্ট কোনো বিল কমিটির কাছে আছে কিনা সে বিষয়টি নিয়েই যদি বিভ্রান্তি তৈরি হয় তবে চিন্তার কথা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এ ধারণাও তৈরি হতে পারে যে, জরুরি ও জনগুরুত্বপূর্ণ অনেক বিল স্থায়ী কমিটির যথেষ্ট মনোযোগ পাচ্ছে না। দীর্ঘ প্রক্রিয়ার কথা মনে রেখেও যত দ্রুত বিলগুলো পাস হয়ে কার্যকর হওয়ার কথা ক্ষেত্রবিশেষে সে সীমাও অতিক্রান্ত হয়ে যাচ্ছে। দু'বছর আগে সংসদে এসেছিল ব্যাংক কোম্পানি (সংশোধন) বিল ২০১০ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান (সংশোধন) বিল। অত্যন্ত দরকারি হলেও বিল দুটি দীর্ঘসূত্রতার শিকার হয়েছে। এক বছর আগে উত্থাপিত দুর্নীতি দমন কমিশন (সংশোধন) বিল। বিবেচনার অপেক্ষায় আছে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিলও। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে কমিটিগুলো সকল পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে, সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধান খতিয়ে দেখে। সে ক্ষেত্রে সময় বৃদ্ধিকে সমর্থন না করার যুক্তি নেই। কিন্তু কেউ কেউ অভিযোগ করেন, কিছু ক্ষেত্রে সংসদীয় কাজে মনোযোগের অভাবের কারণটি বড় হয়ে ওঠে। সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার ঘটে যখন অনেক দফতর ঘুরে সংসদে পাস হওয়ার পর একটি বিলে গুরুতর ভুল ধরা পড়ে। অনেক ক্ষেত্রে কমিটির সদস্যদের অনুপস্থিতি, ব্যস্ততা ইত্যাদি বড় কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এসব ক্ষেত্রে তাগাদা দেওয়া জরুরি। একটি বিল পাসের জন্য যদি তিন-চার বছর সময় লেগে যায় তবে জরুরি প্রয়োজনগুলো মিটবে কবে? আমরা আশা করব, প্রয়োজনীয় বিলগুলো যথাসময়ে পাস হোক। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলের আন্তরিক পদক্ষেপই প্রক্রিয়াটিকে গতিশীল করতে পারে।
No comments