প্রক্টরের দায়িত্ব কী? by জাকারিয়া পলাশ
প্রক্টর মহোদয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বিধানের জন্য দায়িত্বশীল পদাধিকারী ব্যক্তি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থির ছাত্ররাজনীতির কারণে প্রক্টর মহোদয়ের কাজ দিন দিন কঠিন হচ্ছে। তাই এখন প্রক্টরের সহায়তার জন্য সাহসী শিক্ষকদের একটি বাহিনী নিয়ে 'প্রক্টরিয়াল বডি' গঠন করা হয় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে।
তারপরও কিছু ঘটলেই প্রক্টরের ব্যর্থতার অভিযোগ ওঠে। আর আমাদের দেশে ব্যর্থতার দায় নিয়ে নিজে সরে দাঁড়ানোর সংস্কৃতি যেহেতু খুব একটা নেই সেহেতু যে কোনো পরিস্থিতিতেই প্রক্টর বডি নিজেদের ভূমিকাকেই সঠিক মনে করেন। ফলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব হয় প্রক্টরের।
'৭৩-এর অধ্যাদেশ অনুসারে প্রক্টরের পদমর্যাদা হলো প্রভোস্টদের চেয়েও নিচে। তবে একটি কারণে প্রক্টরকে মহান বলা যায়। 'প্রক্টরে'র দায়িত্ব হলো সেই মহান দায়িত্ব যা পালন করতে গিয়ে ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী সরকারের পুলিশের গুলিতে শহীদ হয়েছেন ড. শামসুজ্জোহা। প্রক্টরিয়াল বডির যে কোনো শিক্ষক নিজেকে শহীদ ড. শামসুজ্জোহার উত্তরসূরি মনে করতে পারেন। অবশ্য ড. শামসুজ্জোহার আত্মদানের কারণ সবাই অবগত কি-না_ এ ব্যাপারে আমার যথেষ্ট সংশয় আছে। ড. শামসুজ্জোহা ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর। ১৯৬৯ সালে ছাত্ররা সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়। সেদিন ছিল ১৮ ফেব্রুয়ারি। মিলিটারি বাহিনীর আক্রমণ থেকে ছাত্রদের নিরাপদ করার জন্য তিনি গুলির সামনে নিজের বুক পেতে দিয়েছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্ররাজনীতির চেয়ে শিক্ষক রাজনীতিই এখন বেশ চাঙ্গা। দীর্ঘদিন ধরে ছাত্র সংসদ নির্বাচন না থাকায় ক্যাম্পাসগুলোর ছত্ররাজনীতি এখন জাদুঘরে। ভিন্ন মতের বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের সহাবস্থান তো কল্পনার বিষয়। যারাই ক্ষমতায় থাকবেন তারাই দখল করে রাখবেন ক্যাম্পাস। আর লুটেপুটে খাবেন। কিন্তু শিক্ষকদের বিভিন্ন ফোরামের নির্বাচন চালু আছে। যেমন শিক্ষক সমিতি, সিনেট, সিন্ডিকেট, অর্থ কমিটি, ডিন ইত্যাদি (ভিসি নির্বাচন বাদে)। লাল, নীল, সাদা নানা দলের সহাবস্থানও (!) আছে। তারা হাতাহাতি আর মুখোমুখি হলেও অস্ত্র নিয়ে মারামারি করেন না। তাদের হাতিয়ার হলো শিক্ষার্থী। কখনও প্রত্যক্ষ কখনও পরোক্ষ। এক রঙের সঙ্গে অন্য রঙের দ্বন্দ্ব। এক পক্ষের ক্লাস বর্জন। মাঝখানে শাখের করাতে দ্বিখণ্ডিত ছাত্রছাত্রীর জীবন। ছাত্রের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া আর হামলার নির্দেশ দেওয়া তো 'অব দ্য রেকর্ডের ব্যাপার'। প্রমাণ করা দায়। এসব জটিল শিক্ষক রাজনীতির মধ্যে গিনিপিগের মতো অসহায় হলো শিক্ষার্থীরা। আর এই গিনিপিগদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকেন নিধিরাম সর্দার (!) মাননীয় প্রক্টর। তাদের নিরাপত্তার জন্য সিনিয়র কোনো শিক্ষক প্রয়োজন হয় না। প্রক্টরিয়াল বড়ির অধিকাংশ শিক্ষক থাকেন খুবই জুনিয়র। তাই এখন সাধারণত কোনো বিশ্ববিদ্যালয়েই ড. শামসুজ্জোহার মতো প্রক্টরের দেখা মেলা ভার। এ অবস্থার পরিবর্তন কি করা যায় না?
স বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র
সাংবাদিক ও বিতার্কিক
zpolashju@gmail.com
'৭৩-এর অধ্যাদেশ অনুসারে প্রক্টরের পদমর্যাদা হলো প্রভোস্টদের চেয়েও নিচে। তবে একটি কারণে প্রক্টরকে মহান বলা যায়। 'প্রক্টরে'র দায়িত্ব হলো সেই মহান দায়িত্ব যা পালন করতে গিয়ে ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী সরকারের পুলিশের গুলিতে শহীদ হয়েছেন ড. শামসুজ্জোহা। প্রক্টরিয়াল বডির যে কোনো শিক্ষক নিজেকে শহীদ ড. শামসুজ্জোহার উত্তরসূরি মনে করতে পারেন। অবশ্য ড. শামসুজ্জোহার আত্মদানের কারণ সবাই অবগত কি-না_ এ ব্যাপারে আমার যথেষ্ট সংশয় আছে। ড. শামসুজ্জোহা ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর। ১৯৬৯ সালে ছাত্ররা সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়। সেদিন ছিল ১৮ ফেব্রুয়ারি। মিলিটারি বাহিনীর আক্রমণ থেকে ছাত্রদের নিরাপদ করার জন্য তিনি গুলির সামনে নিজের বুক পেতে দিয়েছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্ররাজনীতির চেয়ে শিক্ষক রাজনীতিই এখন বেশ চাঙ্গা। দীর্ঘদিন ধরে ছাত্র সংসদ নির্বাচন না থাকায় ক্যাম্পাসগুলোর ছত্ররাজনীতি এখন জাদুঘরে। ভিন্ন মতের বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের সহাবস্থান তো কল্পনার বিষয়। যারাই ক্ষমতায় থাকবেন তারাই দখল করে রাখবেন ক্যাম্পাস। আর লুটেপুটে খাবেন। কিন্তু শিক্ষকদের বিভিন্ন ফোরামের নির্বাচন চালু আছে। যেমন শিক্ষক সমিতি, সিনেট, সিন্ডিকেট, অর্থ কমিটি, ডিন ইত্যাদি (ভিসি নির্বাচন বাদে)। লাল, নীল, সাদা নানা দলের সহাবস্থানও (!) আছে। তারা হাতাহাতি আর মুখোমুখি হলেও অস্ত্র নিয়ে মারামারি করেন না। তাদের হাতিয়ার হলো শিক্ষার্থী। কখনও প্রত্যক্ষ কখনও পরোক্ষ। এক রঙের সঙ্গে অন্য রঙের দ্বন্দ্ব। এক পক্ষের ক্লাস বর্জন। মাঝখানে শাখের করাতে দ্বিখণ্ডিত ছাত্রছাত্রীর জীবন। ছাত্রের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া আর হামলার নির্দেশ দেওয়া তো 'অব দ্য রেকর্ডের ব্যাপার'। প্রমাণ করা দায়। এসব জটিল শিক্ষক রাজনীতির মধ্যে গিনিপিগের মতো অসহায় হলো শিক্ষার্থীরা। আর এই গিনিপিগদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকেন নিধিরাম সর্দার (!) মাননীয় প্রক্টর। তাদের নিরাপত্তার জন্য সিনিয়র কোনো শিক্ষক প্রয়োজন হয় না। প্রক্টরিয়াল বড়ির অধিকাংশ শিক্ষক থাকেন খুবই জুনিয়র। তাই এখন সাধারণত কোনো বিশ্ববিদ্যালয়েই ড. শামসুজ্জোহার মতো প্রক্টরের দেখা মেলা ভার। এ অবস্থার পরিবর্তন কি করা যায় না?
স বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র
সাংবাদিক ও বিতার্কিক
zpolashju@gmail.com
No comments